ভিটামিন এ আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। ভিটামিন এ এর সহায়তায় আমাদের দৃষ্টিশক্তি, ত্বক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক উন্নত হয়। আমাদের শরীর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিটামিন এ উৎপন্ন করতে পারে না। ভিটামিন এ জাতীয় খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের শরীর ভিটামিন এ এর চাহিদাকে পূরণ করতে পারে।
ভিটামিন এ এর রাসায়নিক নাম কি? ভিটামিন এ এর রাসায়নিক নাম রেটিনল যা তেলে দ্রাব্য বা ফ্যাট সলিউবল। এই রেটিনল আমরা প্রাণী জাতীয় খাদ্য বা পশুজাত দ্রব্য গ্রহণের মাধ্যমে পেয়ে থাকি যেরকম দুধ, ঘি, পনির, ডিম, মাংস, বিভিন্ন প্রাণীর যকৃত বা লিভার ইত্যাদি। তবে ভিটামিন এ এর আরেকটি উৎস বেটা ক্যারোটিন যাকে আমরা প্রোভিটামিন বলে থাকি। এই বেটা ক্যারোটিন বিভিন্ন সবজি এবং ফলের মধ্যে থাকে যা গ্রহণ করে আমাদের শরীর ভিটামিন এ উৎপন্ন করতে পারে।
যেহেতু ভিটামিন এ জলে দ্রাব্য নয় তাই খুব বেশি পরিমাণ ভিটামিন এ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা ক্ষতির দিক থাকতে পারে। তাই আমরা চেষ্টা করব ভিটামিন এ জাতীয় খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের শরীরে ভিটামিন এ এর ঘাটতি পূরণ করতে। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় ভিটামিন এ জাতীয় খাবার তালিকা নিয়ে।
ভিটামিন এ জাতীয় খাবার তালিকা :
কোন কোন খাবারে ভিটামিন এ আছে বা ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার গুলিকে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করেছি তার গুণগতমান এবং বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে।
ভিটামিন এ সমৃদ্ধ ফল :
১০০ গ্রাম আমের মধ্যে | ৫৪ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ পাওয়া যায় |
১০০ গ্রাম পাকা পেঁপের মধ্যে | ৪৭ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ পাওয়া যায় |
১০০ গ্রাম সরবতি লেবুর মধ্যে | ৫৮ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ পাওয়া যায় |
১০০ গ্রাম তরমুজের মধ্যে | ২৮ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ পাওয়া যায় |
১০০ গ্রাম কমলালেবুর মধ্যে | ৩৪ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ পাওয়া যায় |
১০০ গ্রাম পেয়ারার মধ্যে | ৩১ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ পাওয়া যায়। |
ভিটামিন এ সমৃদ্ধ সবজি :
১০০ গ্রাম মিষ্টি আলুর মধ্যে | ৯৬০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ পাওয়া যায় |
১০০ গ্রাম গাজরের মধ্যে | ৮৩৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ পাওয়া যায় |
১০০ গ্রাম ক্যাপসিকাম এর মধ্যে | ১৫৭ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ পাওয়া যায় |
১০০ গ্রাম পালং শাকের মধ্যে | ২৮৩ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ পাওয়া যায় |
১০০ গ্রাম কুমড়ো মধ্যে | ২৮০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ পাওয়া যায় |
১০০ গ্রাম কড়াইশুঁটির মধ্যে | ৩৮ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ পাওয়া যায় |
১০০ গ্রাম টমেটোর মধ্যে | ৩২ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ পাওয়া যায় |
ভিটামিন এ সমৃদ্ধ অন্যান্য খাবার :
আমরা অনেক প্রাণীর থেকে বিভিন্ন রূপে খাদ্য পেয়ে থাকি যাদের পশুজাত দ্রব্য বলে যা ভিটামিন এ এর উৎস। পশুজাত দ্রব্য খাবারের মধ্যে ভিটামিন এ অনেক বেশি পরিমাণ পাওয়া যায় যেরকম,
- দুধ, পনির, ঘি এবং মাখন।
- সেদ্ধ ডিম।
- বিভিন্ন প্রকার মাংস যেরকম মুরগি, খাসি, গরু ইত্যাদি।
- বিভিন্ন প্রাণীর যকৃত বা লিভার।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : ভিটামিন বি জাতীয় খাবার সম্পর্কে ৯ টি অজানা তথ্য।
ভিটামিন এ এর উপকারিতা :
- আমারা যখন কিছু চোখ দিয়ে দেখি তখন নিউরনের মাধ্যমে কিছু সংকেত আমাদের ব্রেনে পৌঁছায়। যার ফলে আমরা বস্তুটিকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারি। ভিটামিন এ খুবই সাহায্য করে আমাদের চোখ থেকে ব্রেন পর্যন্ত এই সংকেত টিকে পৌঁছে দিতে।এছাড়াও খুব উজ্জ্বল আলোকরশ্মি আমাদের চোখে পড়লে দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা হতে পারে। ভিটামিন এ নিয়মিত গ্রহণ করলে আমাদের ওই জাতীয় সমস্যা হবার প্রবণতা কমে যায়। তাই ভিটামিন এ এর উপকারিতা আমাদের দৃষ্টি এবং চোখের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক মানুষ আছে যাদের রাতের বেলায় দেখতে অসুবিধা হয় অথবা দৃষ্টি শক্তি কমে যায় সে সব মানুষদের জন্য ভিটামিন এ এর উপকারিতা অনেক বেশি।
- ভিটামিন এ আমাদের ত্বকের উপরে অবস্থিত মৃত কোষ গুলোকে সরিয়ে পুনরায় নতুন কোষ উৎপন্ন করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় আমাদের ত্বকের উপর কালো দাগ বা ব্ল্যাক স্পট, আঁচিল এবং নানান ইনফেকশন বা সংক্রমণ হবার প্রবণতাকে কম করে। নিয়মিত ভিটামিন এ গ্রহণ করলে আমাদের ত্বকের রুক্ষ এবং শুষ্ক ভাব অনেক কমে যায় এবং আমাদের ত্বক অনেক মসৃণ হয়।
- আমাদের শরীরের হাড় কে উন্নত এবং শক্ত করতে ক্যালসিয়ামের ভীষণ প্রয়োজন। আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণ করতে ভিটামিন ডি এর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক একইভাবে আমাদের হাড় কে শক্ত এবং দৃঢ় করতে ভিটামিন এ এর ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিয়মিত ভিটামিন এ গ্রহণ করলে আমাদের শরীরের হাড় শক্ত, দৃঢ় হয় এবং শারীরিক গঠন অনেক উন্নত হয়।
- ভিটামিন এ অনেক সাহায্য করে আমাদের রক্তের শ্বেত কণিকা উৎপন্ন করতে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতে। নিয়মিত ভিটামিন এ জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে আমাদের চোখ, ফুসফুস এবং পেটের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ঘটিত ইনফেকশন বা সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। শুধু তাই নয় নিয়মিত ভিটামিন এ গ্রহণে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম অনেক বেশি উন্নত হয়।
- প্রতিনিয়ত অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণে আমাদের শরীরে প্রজনন ক্ষমতা অনেক কমে গেছে। পূর্বের তুলনায় এখন পুরুষদের শরীরে সক্রিয় শুক্রাণু এবং মেয়েদের শরীরে সক্রিয় ডিম্বাণু উৎপন্নের হার কমে গেছে। কিন্তু আমরা যদি প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করি তাহলে আমাদের প্রজনন ক্ষমতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায় এবং আমাদের বন্ধ্যাত্ব হবার প্রবণতাকে কম করে।
- যখন আমাদের শরীরে অ্যাবনরমাল কোষ ক্রমাগত বাড়তে থাকে এবং কোনমতেই নিয়ন্ত্রণে আসতে চায় না, তখন আমাদের ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। আমরা যদি নিয়মিত ভিটামিন এ গ্রহণ করি তাহলে আমাদের শরীরে অ্যাবনরমাল কোষ উৎপন্ন হওয়ার প্রবণতা কমে যায় এবং সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নতুন কোষ উৎপন্ন হয়। যার ফলে আমাদের ক্যান্সার হবার প্রবণতা কমে যায়। তাই ভিটামিন এ এর উপকারিতা ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ভিটামিন এ এর অভাবজনিত রোগ :
- ভিটামিন এ সাহায্য করে আমাদের চোখের দৃষ্টি শক্তি উন্নত করতে। আমরা যা দেখছি তা নিউরনের মাধ্যমে আমাদের ব্রেন বা মস্তিষ্কে পৌঁছাতে ভিটামিন এ এর ভূমিকা অসামান্য। তাই ভিটামিন এর অভাবে আমাদের দৃষ্টি শক্তিতে সমস্যা হতে পারে। এমনকি রাতের বেলা দেখতে অসুবিধা হতে পারে।
- ভিটামিন এ সাহায্য করে আমাদের ত্বকের উপরের মৃত কোষগুলোকে সরিয়ে পুনরায় নতুন কোষ উৎপন্ন করতে যার ফলে আমাদের ত্বক ভালো থাকে এবং অনেক বেশি মসৃণ হয়। তাই ভিটামিন এর অভাবে আমাদের ত্বক অনেক বেশি রুক্ষ এবং শুষ্ক হয়ে পড়ে। এমনকি আমাদের ত্বকে কালো দাগ বা ডার্ক স্পট, আঁচিল, ব্রন ইত্যাদি বেড়ে যাওয়া সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
- ভিটামিন এ সাহায্য করে আমাদের শরীরের নতুন কোষ উৎপন্ন করতে এবং বৃদ্ধিতে যা আমাদের শারীরিক গঠন উন্নত করতে অনেক সাহায্য করে। তাই ভিটামিন এর অভাবে ছোট শিশুদের পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃদ্ধিতে সমস্যা হয়। এমনকি ছোট শিশুদের শারীরিক গঠন খুব বেশি উন্নত হয় না।
- ভিটামিন এ অনেক বেশি সাহায্য করে আমাদের শরীরে শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু উৎপন্ন করতে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতে যার ফলে আমাদের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই ভিটামিন এ এর অভাবে পুরুষ এবং নারীর মধ্যে বন্ধ্যাত্ব বৃদ্ধি পায় এবং প্রজনন ক্ষমতা কমতে থাকে।
- ভিটামিন এ আমাদের শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রূপে কাজ করে এবং নিয়মিত ভিটামিন এ জাতীয় খাবার গ্রহণে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই ভিটামিন এর অভাবে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম কমতে থাকে। যার ফলে আমাদের মধ্যে বিভিন্ন ইনফেকশন বা সংক্রমণ হবার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। ভিটামিন এ এর অভাবে সব থেকে বেশি পরিমাণ সংক্রমণ বা ইনফেকশন আমাদের ফুসফুস, গলা এবং বুকে হয়ে থাকে। যাকে রেসপিরেটরি ট্র্যাক ইনফেকশন বলে।
- ভিটামিন এ সহায়তা করে আমাদের শরীরের হাড় কে শক্ত ও দৃঢ় করতে এবং এই ক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি এর ভূমিকা সব থেকে বেশি। তবে ভিটামিন এর অভাবে আমাদের শরীরে হাড় দুর্বল হয় এবং খুব সহজে ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : বয়স ক্যালকুলেটর বা Age Calculator – Healthy Bangla.
ভিটামিন এ এর অপকারিতা :
যেহেতু ভিটামিন এ তেলে দ্রাব্য বা ফ্যাট সলিউবল তাই অত্যাধিক ভিটামিন এ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব একটা ভালো নয়। যদি কেউ প্রতিদিন ৩০০০ মাইক্রোগ্রামের বেশি ভিটামিন এ গ্রহণ করে তাহলে তার অনেক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে যেরকম,
- বমি ভাব,
- মাথা যন্ত্রণা,
- অস্পষ্ট দৃষ্টি,
- ডায়রিয়া,
- শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা যেরকম হাঁটু, কোমর, ঘাড়।
- ত্বকের উপর জ্বালাপোড়া ভাব ইত্যাদি।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : ১৩ টি সব থেকে বেশি ভিটামিন সি জাতীয় খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
কিছু প্রশ্ন উত্তর :
প্রতিদিন কতটা ভিটামিন এ খাওয়া উচিত?
একটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের জন্য ৭০০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ প্রতিদিন গ্রহণ করা উচিত।
একটি প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার জন্য ৬০০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ প্রতিদিন গ্রহণ করা উচিত।
ভিটামিন এ কি ?
ভিটামিন এ একটি মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। সাধারণত আমাদের শরীরে দুইটি উপায়ে ভিটামিন এ পৌঁছায়। পশু জাতীয় দ্রব্য থেকে রেটিনল অথবা ভিটামিন এ আমরা পেয়ে থাকি আবার বিভিন্ন সবজি বা ফল থেকে আমরা প্রোভিটামিন কেরোটিনয়েড পেয়ে থাকি যা পরবর্তীকালে আমাদের শরীরে ভিটামিন এ তে রূপান্তর হয়।
ভিটামিন এ এর অপর নাম কি ?
ভিটামিন এ রেটিনল নামে পরিচিত যা তেলে দ্রাব্য বা ফ্যাট সলিউবল। এছাড়াও আমাদের শরীর ভিটামিন এ উৎপন্ন করতে পারে প্রোভিটামিন কেরোটিনয়েড থাকে।
ভিটামিন এ এর অভাবে শিশুদের কি রোগ হয় ?
ভিটামিন এ এর অভাবে শিশুদের সবথেকে বেশি সমস্যা হয় দৃষ্টি শক্তিতে। ভিটামিন এর অভাবে দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে এবং রাতকানা হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। ভিটামিন এর অভাবে শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি ও গঠনে সমস্যা হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : উপরে উল্লেখিত দ্রব্য গুলি গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই একবার আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেবেন।
Thank you everyone for coming to our website www.healthybangla.in and a warm welcome to all of you.
Hi, my name is Arunima Morial and I am from Kolkata, India.
I have been writing health related articles for the last 3 years.
All the articles me and my team write are always reviewed by Sagar Ghosh (Science Graduate, Location- Shyamnagar, West Bengal) and Dr Gautam Ghosh (B.H.M.S, M.D in Homoeopathy, Location- Shyamnagar, West Bengal).
We always share the reference web page link from where we get correct information in the article.
Please feel free to contact me on my email ID sg133322@gmail.com