পেয়ারার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন C, পটাশিয়াম, ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান পাওয়া যায়। তাই পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সারা বিশ্বে প্রথম পেয়ারা পাওয়া যায় মেক্সিকোতে যেটি মধ্য আমেরিকায় অবস্থিত এবং পরবর্তীকালে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। সব থেকে বেশি পরিমাণ পেয়ারা উৎপন্ন হয় ভারতবর্ষে তারপর চীন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং পাকিস্তানে।
পেয়ারা বিভিন্ন প্রজাতির হয় কিছু পেয়ারা একটু বেশি দামি এবং কিছু পেয়ারা তুলনামূলক কম দাম, তবে প্রতিটি প্রজাতির পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য প্রায় সমান বা এদের পুষ্টিগত গুনাগুন কাছাকাছি।
পেয়ারা এমন একটি ফল যা খুব সহজে বাজারে বা মার্কেটে পাওয়া যায় স্বল্প মূল্যে এবং আমরা কমবেশি সবাই পেয়ারা খেয়ে থাকি, কিন্তু পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের অবগত হওয়া খুবই প্রয়োজন। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে।
পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা :
১০০ গ্রাম পেয়ারার পুষ্টিগত গুনাগুন বা নিউট্রেশন ফ্যাক্ট :
- ক্যালোরি ৬৮ %
- কার্বোহাইড্রেট ১৪.৩ গ্রাম (ডায়েটারি ফাইবার ৫.৪ গ্রাম)
- টোটাল ফ্যাট ০.৯৫ গ্রাম (সাচুরেটেড ফ্যাট ০.৩ গ্রাম)
- প্রোটিন ২.৫৫ গ্রাম
- জল ৮০.৮ গ্রাম
এছাড়াও আছে বিভিন্ন ভিটামিন এবং মিনারেল যেরকম,
- ভিটামিন C
- ভিটামিন B৬
- ভিটামিন A
- ভিটামিন E
- ভিটামিন K
- ক্যালসিয়াম
- আয়রন
- ম্যাগনেসিয়াম
- ফসফরাস
- পটাশিয়াম
- সোডিয়াম
- জিংক
- কপার
- সিলেনিয়াম ইত্যাদি।
- প্রতিদিন পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা আমাদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ তার কারণ পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন C এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান পাওয়া যায় যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বিভিন্ন ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে তাই নিয়মিত পেয়ারা খেলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধি পায়।
- পেয়ারা তে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার পাওয়া যায়। ফাইবার সাহায্য করে আমাদের রক্তে অবস্থিত ইনসুলিন গুলির সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করতে। যার ফলে আমাদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং আমাদের হাই ব্লাড সুগার, বহুমূত্র রোগ বা ডাইবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। শুধু তাই নয় পেয়ারা খেলে আমাদের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুব বেশি বৃদ্ধি পায় না তাই হঠাৎ আমাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়।
- পেয়ারাতে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম, সোডিয়াম এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান। রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পটাশিয়াম এবং সোডিয়াম এর ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। শুধু তাই নয় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান গুলি সাহায্য করে আমাদের শরীরে LDL ব্যাড কোলেস্টেরল এর পরিমাণকে কম করে গুড কোলেস্টেরল এর পরিমাণকে বৃদ্ধি করতে। তাই নিয়মিত পেয়ারা খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের হৃদয় সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
- আমাদের দৈনিক যে পরিমাণ ফাইবার বা শর্করা জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজন একটি পেয়ারা খেলে বা গ্রহণ করলে তার ১২ শতাংশ ফাইবার এর চাহিদা পূরন হয়। অর্থাৎ আমরা বুঝতে পারছি যে পেয়ারাতে খুব বেশি পরিমাণ ডায়েটরি ফাইবার থাকে। এই ফাইবার আমাদের খাদ্য পচনে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে তাই নিয়মিত পেয়ারা গ্রহণ করলে বা খেলে আমাদের পাচনতন্ত্র অনেক উন্নত হয় এবং হজম ক্ষমতা বা ডাইজেস্টিভ সিস্টেম বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত পেয়ারা খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য বা কস্টিপেশনের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। শুধু তাই নয় পেয়ারা তে থাকে অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান যা আমাদের শরীরে অবস্থিত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া কে বিনাশ করতে সাহায্য করে, তাই ডায়রিয়া তে পেয়ারে খাওয়ার উপকারিতা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
- আমাদের শরীরে ফ্রি-রেডিকেল বৃদ্ধি পেলে, শরীরের বিভিন্ন অংশের কোষ বা সেল গুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয় যা আমাদের শরীরে ক্যান্সার হওয়ার মুখ্য কারণ। পেয়ারাতে পাওয়া যায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যেরকম, লিউকোপিনি এবং ভিটামিন C ও অন্যান্য পলিফেনাল বা জৈব উপাদান। যা আমাদের শরীরে ক্যান্সার সেল বা কোষের ক্রমাগত বৃদ্ধিকে রোধ করে এবং আমাদের শরীরে ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতাকে কম করে। যদিও এই বিষয়ে আরো অনেক গবেষণার প্রয়োজন।
- ১০০ গ্রামের পেয়ারা তে মাত্র ৬৮ ক্যালোরি পাওয়া যায়। শুধু তাই নয় পেয়ারা তে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ ফাইবার, ভিটামিন এবং মিনারেল। ফাইবার সাহায্য করে আমাদের পেট ভর্তি অনুভব করাতে। অর্থাৎ একটি পেয়ারা খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের অনেকক্ষণ পর্যন্ত খিদে পাওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়। শুধু তাই নয়, ওজন কমানোর জন্য ভিটামিন এবং মিনারেল যুক্ত খাদ্য গ্রহণের ভূমিকা অনেক বেশি। যেহেতু পেয়ারা তে ক্যালোরির পরিমাণ অনেক কম তাই ওজন কমাতে পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
- ভিটামিন B৯ এর প্রাকৃতিক গঠনকে ফোলেট বা ফলিক অ্যাসিড বলে। ফোলেট বা ফলিক অ্যাসিড যা গর্ভাবস্থায় মায়ের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় এবং উপকারী তার কারণ ফলিক অ্যাসিড বাচ্চার স্নায়ুতন্ত্র বা নার্ভ সিস্টেমকে উন্নত করে এবং বিভিন্ন অক্ষমতা থেকে দূরে রাখে। এছাড়াও ভিটামিন B কমপ্লেক্স আমাদের কোষ কে বিভাজিত হয়ে ডিএনএ (DNA) গঠন করতে সাহায্য করে। তাই গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
- পেয়ারাতে কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকে যেরকম, ক্যারোটিনি, লিউকোপিনি এবং থাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন A আর ভিটামিন C যা ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান এবং ভিটামিন সাহায্য করে আমাদের ত্বক বা স্কিন কে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস ঘটিত ইনফেকশন বা সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে। ত্বকের উপরে মৃত কোষ গুলির পরিমাণ কে কম করতে যার ফলে আমাদের ত্বক অনেক বেশি উজ্জ্বল এবং পরিষ্কার হয়, আমাদের ত্বকে কালো দাগ বা চোখের নিচে কালো দাগ কম হয়। শুধু তাই নয় পেয়ারাতে কিছু অ্যান্টি মাইক্রোবাল উপাদান পাওয়া যায় যা আমাদের ত্বকে ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে বিনাশ করে। তাই নিয়মিত পেয়ারা খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের ত্বক বা স্কিনে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়।
- সকালে যদি আমরা পেয়ারা খাই বা গ্রহণ করি তাহলে আমাদের এনার্জি বা শক্তি খুব দ্রুতগতি তে বেড়ে যায় তার ফলে সারাদিন কাজের জন্য ক্লান্তি লাগে না। এছাড়াও আমরা যদি প্রতিদিন সকালে ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করি তাহলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশের পেশীতে ব্যথা বা টান লাগতে পারে এবং নিয়মিত পেয়ারা খেলে সেই ব্যথা কমে যায় তার কারণ পেয়ারাতে ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা আমাদের শরীরের পেশীকে শিথিল করে দেয়। শুধু তাই নয় পেয়ারা তে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান পাওয়া যায় তাই নিয়মিত পেয়ারা খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা বা যন্ত্রণা অনেক কমে যায়।
- পেয়ারার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন C এবং আয়রন পাওয়া যায়। এই ভিটামিন C সাহায্য করে আমাদের ফুসফুস এবং শ্বাসযন্ত্র বা রেস্পেক্টরি সিস্টেম কে বিভিন্ন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংঘটিত সংক্রমণ বা ইনফেকশনের থেকে রক্ষা করতে। তাই নিয়মিত পেয়ারা খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের খুব বেশি ঠান্ডা লাগা বা কফ জমে যাওয়া এবং ফুসফুসে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। তাই আমাদের শ্বাসযন্ত্রের জন্য পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম।
পেয়ারা খাওয়ার নিয়ম বা পেয়ারা খাওয়ার সঠিক সময়?
- সকালে খাবারের পর বা ব্রেকফাস্টের পর পেয়ারা খাওয়া ভালো।
- দুপুরে খাবারের পর বা লাঞ্চের পর পেয়ারা খাওয়া ভালো।
তবে সকালে খালি পেটে বা রাতে খাবারের পর পেয়ারা না খাওয়াই ভালো।
পেয়ারা কিভাবে রাখবো?
বাজার বা মার্কেট থেকে কিনে এনে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে তারপর ফ্রিজে রেখে দেবো, এবং আমরা চেষ্টা করব ততটাই পেয়ারা কিনে আনার যতটা আমরা এক সপ্তাহের মধ্যে খেয়ে নিতে পারব, তার কারণ পেয়ারা তে দ্রুত পচন ধরে।
কি কি ভাবে আমরা পেয়ারা খেতে পারি?
- আমরা পেয়ারা কে নানান ভাবে খেয়ে থাকি, যেরকম ছোট ছোট টুকরো করে সামান্য একটু লবণ মিশিয়ে বা লবণ ছাড়াও খেয়ে থাকি।
- আবার অন্যান্য ফলের সাথে মিশিয়ে ফ্রুট স্যালাড হিসাবে খেয়ে থাকি।
পেয়ারার অপকারিতা বা পেয়ারা খাওয়ার অপকারিতা?
- সাধারণত পেয়ারা খেলে কোন অসুবিধা হয় না। কিন্তু খালি পেটে খুব বেশি পেয়ারা খাওয়া উচিত না তার কারণ খালি পেটে খুব বেশি পেয়ারা খেলে পেটে ব্যথা হতে পারে।
- বিভিন্ন মানুষের ফলে বা সবজিতে অ্যালার্জি থাকে, তাই পেয়ারা খেলেও কিছু মানুষের অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: পেয়ারা খাওয়ার পূর্বে আপনার ডাক্তারের সাথে অবশ্যই একবার কথা বলে নেবেন।