গ্রিন টি এর উপকারিতা সম্পর্কে চমৎকার ৮ টি তথ্য

Share With Your Friends

গ্রিন টি এর উপকারিতা

গ্রিন টির মধ্যে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান এবং ক্যাফাইন পাওয়া যায়। গ্রিন টি সাহায্য করে আমাদের ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং হৃদয় সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনাকে কম করতে। তাই গ্রিন টি এর উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

সর্বপ্রথম গ্রিন টি ব্যবহার হয় চীন দেশে এবং পরবর্তীকালে সারাবিশ্বে। সব থেকে বেশি পরিমাণ গ্রিন টি চীন দেশে পাওয়া যায়, তারপর ভারতবর্ষে এবং পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে।

চীনদেশে যে গ্রিন টি পাওয়া যায় তার নাম ক্যামেলিয়া সাইনেন্সিস এবং ভারতবর্ষের আসাম রাজ্যে যে গ্রিন টি পাওয়া যায় তার নাম ক্যামেলিয়া সাইনেন্সিস আসামিকা।

আমরা কমবেশি সবাই গ্রিন টি খেয়েছি বা গ্রিন টি সম্পর্কে শুনেছি তবে গ্রিন টি এর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে আমাদের শরীরের জন্য। এই গ্রিন টি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি পানীয় আমাদের জন্য। সারা বিশ্বে পানীয় হিসাবে চা বা Tea দ্বিতীয় স্থানে গণ্য করা হয়। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় গ্রিন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

 

গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা :

গ্রিন টি এর পুষ্টিগত গুনাগুন বা নিউট্রিশন ফ্যাক্ট :

১ কাপ গ্রিন টি এর মধ্যে থাকে,

  • ২.৫ % ক্যালোরি
  • ০.৫ গ্রাম প্রোটিন
  • পটাশিয়াম ২০ মিলি গ্রাম
  • সোডিয়াম ২.৫ মিলি গ্রাম
  • ক্যাফাইন ২৯.৫ মিলি গ্রাম

 

এছাড়াও থাকে কিছু ফাইটোকেমিক্যাল যেরকম,

  •  ফ্ল্যাভোনল্স
  • কটেচিনস
  • থেআফ্লাভিনস

 

  • গ্রিন টি নিয়মিত গ্রহণ করলে বা পান করলে আমাদের মেটাবলিক রেট বা বিপাকীয় হার বৃদ্ধি পায় এবং তার ফলে আমাদের শরীরের ক্যালোরি খরচ হয় এবং ফ্যাট বা চর্বি অক্সিডেশন এর হার বাড়ে তার ফলে আমাদের শরীর থেকে চর্বি কমতে থাকে। শুধু তাই না গ্রিনটিতে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যাটেচিনস এবং ক্যাফাইন যা আমাদের শরীরে ফ্যাটি অ্যাসিডকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে এবং ফ্যাট বা চর্বি কে রূপান্তর করে এনার্জি বা শক্তিতে।তাই আমাদের ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা গুরুত্বপূর্ণ।
  • গ্রিন টি এর উপকারিতা আমাদের মস্তিষ্কের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ তার কারণ গ্রিনটিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যাফাইন এবং এল-থেনাইন থাকে এবং বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে যে ক্যাফাইন আমাদের মস্তিষ্ক উন্নত করার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এক উপাদান। ক্যাফাইন আমাদের মস্তিষ্ক কে বিভিন্নভাবে সাহায্য করে থাকে যেরকম মস্তিষ্ক এর কার্যকারিতা, অনুভূতি এবং স্মৃতিকে উন্নত করে।
  • গ্রিন টি তে থাকে একপ্রকার অ্যামাইনো অ্যাসিড যাকে এল-থেনাইন (L-theanine) বলে। এই এল-থেনাইন আমাদের নার্ভ সিস্টেমকে বা স্নায়ুতন্ত্র কে উন্নত করে এবং আরো অনেক ফাইটোকেমিক্যাল থাকে যা আমাদের শরীরের এনার্জি বা শক্তিকে বাড়িয়ে তোলে এবং যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে আমাদের মনোযোগ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে বা গ্রহণ করলে আমাদের শরীর থেকে ঝিমানো বা অলস ভাব এবং মনোযোগের অভাব দূর হয়। 
  • গ্রিনটিতে প্রচুর পরিমাণ পলিফেনল পাওয়া যায়। পলিফেনল একপ্রকার উপকারী উপাদান যা ফ্ল্যাভোনয়েড, ফেনোলিক অ্যাসিড এছাড়াও অনেক যৌগ দ্বারা গঠিত। এই পলিফেনল সাহায্য করে সূর্যের প্রখর রশ্মি বা আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে আমাদের ত্বক বা স্কিন কে রক্ষা করতে। তাই নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে বা গ্রহণ করলে আমাদের স্কিন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। এছাড়াও গ্রিনটিতে থাকে কিছু অ‍্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান যেগুলি আমাদের শরীরের ক্যান্সার সেল বা কোষ এর পরিমাণকে কমাতে সাহায্য করে এবং ক্যান্সার হবার প্রবণতা কে কম করে থাকে। বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া গেছে যে নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে ২০% ব্রেস্ট ক্যান্সার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার হবার প্রবণতা কমে যায়। তবে এ বিষয়ে এখনও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। আরেকটি বিষয় হলো যখনই আমরা গ্রিন টি বা চায়ের সাথে দুধ এবং চিনি ব্যবহার করি তখনই তার অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পরিমাণ কমতে  থাকে।
  •  গ্রিন টি তে উপরে আলোচিত প্রচুর পরিমাণ ফাইটোকেমিক্যালস থাকে যেগুলি আমাদের শরীরের টোটাল কোলেস্টেরল কে উন্নত করে বা গুড কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং ব্যাড কোলেস্টেরল বা LDL কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কে কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও গ্রিনটিতে পাওয়া যায় পলিফেনাল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান যা আমাদের রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। আমাদের কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকলে  হৃদয় সম্পর্কিত রোগ কম হয়। জাপানে একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত গ্রিন টি পান করত তাদের হার্ট অ্যাটাকের পরিমাণ বা হৃদয় ঘটিত রোগে মৃত্যুর পরিমাণ ভীষণ কম।
  • যখন আমাদের শরীর নতুন করে ইনসুলিন উৎপন্ন করতে পারে না এবং ইনসুলিন রেজিস্টেন্স হয়ে যায় তখন আমাদের টাইপ 2 ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। নিয়মিত গ্রিন টি পান বা গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বেড়ে যায় তার ফলে আমাদের রক্তে গ্লুকোজ এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে যার ফলে আমাদের ব্লাড সুগার এবং টাইপ-টু-ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। তাই গ্রিন টি এর উপকারিতা আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 
  • বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগের জন্য আমাদের মুখের মধ্যে, ফুসফুসে এবং গলাতে নানান ধরনের ইনফেকশন বা সংক্রমণ দেখা দেয়। গ্রিন টি তে কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান এবং ফাইটোকেমিক্যাল পাওয়া যায়, যা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়তে পারে।  তাই নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে আমাদের ব্যাকটেরিয়া ঘটিত ইনফেকশন বা সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।  যদিও কোনরকম সংক্রমণ বা ইনফেকশন হলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা খুবই প্রয়োজন। 
  • যদি আমাদের শরীরে ফ্রি-রেডিক্যাল বৃদ্ধি পায় তাহলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশের কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একইভাবে আমাদের মস্তিষ্কের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীকালে যার ফলে আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হয় অ্যালজাইমার রোগ বা স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। গ্রিন টির মধ্যে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ ফাইটো-কেমিক্যাল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান। যা আমাদের শরীরের ফ্রি-রেডিক্যাল কে কম করতে সাহায্য করে এবং অ্যালজাইমার রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কে কম করে। 

 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে চমৎকার ১০ টি তথ্য। 

গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম বা গ্রিন টি কখন খাওয়া উচিত?

গ্রিন টি পান বা গ্রহণ করার নির্ধারিত কোন সঠিক সময় নেই।  তবে ব্রেকফাস্ট বা সকালে খাবারের ২ ঘণ্টা পর এবং লাঞ্চ বা দুপুরে খাবারের ২ ঘণ্টা পর গ্রিন টি পান করা বা খাওয়া উচিত এবং তার ফলে গ্রিন টি এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান গুলি আমাদের শরীরের সবথেকে বেশি কার্যকর হয়ে থাকে।

 

ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম?

নিয়মিত ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ এর ১ ঘন্টা পূর্বে বা ১ ঘন্টা পরে গ্রিন টি গ্রহণ করলে আমাদের শরীরের ফ্যাট বা চর্বি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও গ্রিন টি পান করলে বা গ্রহণ করলে আমাদের এনার্জি এবং মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।

 

গ্রিন টি বানানোর নিয়ম এবং গ্রিন টি করার উপায়?

বাড়িতে গ্রিন টি বানানো বা তৈরি করা খুবই সহজ। আসুন আমরা জেনে নিই কিভাবে গ্রিন টি তৈরি করব, বাজারে বা মার্কেটে দুইরকম গ্রিন টি আমরা পেয়ে থাকি প্রথমত ছোট ছোট চায়ের পাতা বা লুজ গ্রিন টি এবং পাউচ গ্রিন টি বা ছোট কাগজের টুকরোর মধ্যে থাকা গ্রিন টি।

আমরা ছোট একটি পাত্রে জল কে গরম করে বা ফুটিয়ে নেব।

তারপর গরম জলের পাত্র টি কে একটি নিরাপদ জায়গায় রেখে ওই গরম জলের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্রিন টি মিশিয়ে পাত্রটির ঢাকনা চাপা দিতে হবে বা বন্ধ করতে হবে ২ থেকে ৩ মিনিটের জন্য। 

 ঠিক ২ থেকে ৩ মিনিটের পর আমাদের গ্রিন টি পানের জন্য উপযুক্ত হয়ে যাবে।

 

গ্রিন টি এর অপকারিতা কি ?

প্রতিদিন দুই থেকে তিন কাপ গ্রিন টি পান করলে বা গ্রহণ করলে আমাদের কোনো রকম ক্ষতি হয় না তবে যদি কোন সাধারণ মানুষ প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ কাপের বেশি গ্রিন টি গ্রহণ করে বা পান করে তাহলে সেটি শরীরের জন্য খুব বেশ উপকারী নয়। পানীয় হিসাবে খুব বেশি পরিমাণ গ্রিন টি নিয়মিত পান করলে বা গ্রহণ করলে তার সামান্য কিছু অপকারিতা রয়েছে আমাদের শরীরের জন্য।

  • গ্রিন টিতে খুব বেশি পরিমাণ ক্যাফাইন থাকে যা খুব অল্প পরিমাণ আমাদের শরীরের জন্য ভালো। কিন্তু বেশি পরিমাণ ক্যাফাইন আমাদের শরীরের জন্য একদমই ভালো না। তাই খুব বেশি গ্রিন টি পান করলে বা গ্রহণ করলে আমাদের মাথা ব্যথা হতে পারে এবং বমি ভাব হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • রাতের দিকে ঘুমের পূর্বে গ্রিন টি খাওয়া একদম উচিত না। তার কারণ গ্রিন টি খাওয়ার কিছু মুহূর্ত পরে আমাদের শরীরে এনার্জি বা শক্তি এবং মনোযোগ বৃদ্ধি পায় তার ফলে রাতে ঘুম আসতে চায়না এবং অনিদ্রার সমস্যায় পড়তে হয়।
  • গ্রিন টিতে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ক্যাফাইন থাকে সেই কারণে খুব বেশি গ্রিন টি গ্রহণ করলে আমাদের লিভার বা যকৃতে সমস্যা হতে পারে।
  • গ্রিন টি তে বিশেষ কিছু অ‍্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যেগুলো আমাদের শরীরে আয়রন শোষণক্রিয়ার পরিমাণকে কম করতে পারে। ফলে আমাদের রক্তে আয়রনের পরিমাণ কমে যেতে পারে এবং আমাদের অ্যানিমিয়া দেখা দিতে পারে। তাই খুব বেশি গ্রিন টি পান বা গ্রহণ করা আমাদের শরীরের জন্য ভালো না।
  • খালি পেটে গ্রিন টি সেবন বা পান করা একদমই উচিত না তার কারণ খালি পেটে গ্রিন টি গ্রহণ করলে শরীরে অ‍্যাসিডের পরিমাণ বাড়তে পারে এবং আমাদের হজমে বা ডাইজেস্টিভ সিস্টেমে সমস্যা হতে পারে।

 

গ্রিন টি কি দিয়ে তৈরি হয়?

ক্যামেলিয়া সাইনেন্সিস গাছের পাতা থেকে তৈরি হয় গ্রিন টি এবং ওই একই গাছের পাতা থেকে তৈরি হয় ব্ল্যাক টি।

 

গ্রিন টি কিভাবে তৈরি হয় ?

প্রথমে ক্যামেলিয়া সাইনেন্সিস গাছের পাতাগুলোকে ভালো করে ধুয়ে অল্প সেদ্ধ করা হয় – তারপর সেগুলিকে ঠান্ডা করে ঘূর্ণায়মান যন্ত্রে রাখা হয় – এবং ৭০° থেকে ১১০° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় শুকানো হয় – এবং তারপর আবার একবার ভালো করে ঘূর্ণায়মান যন্ত্রে রাখা হয় – এবং ৮০° থেকে ১২০° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় শুকানো হয় এবং ঠিক এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয় গ্রিন টি।

 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : পাতিলেবুর উপকারিতা সম্পর্কে অভূতপূর্ন ১০ টি তথ্য

 


Share With Your Friends

Leave a Comment