চুলের যত্নে বায়োটিন এর উপকারিতা সম্পর্কে অবাক করা ৭ টি তথ্য

Share With Your Friends

চুলের যত্নে বায়োটিন

আমাদের শরীরে বায়োটিন বা ভিটামিন বি৭ এর অভাবে আমাদের চুল উঠে যাওয়া চুলের বৃদ্ধি না হওয়া এবং চুলের ঘনত্ব কমে যাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তাই আমাদের চুলের বৃদ্ধি এবং চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধির জন্য বায়োটিন বা ভিটামিন বি৭ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। 

বিভিন্ন খাদ্যের মধ্যে আমরা বায়োটিন কে পেয়ে থাকি, যেহেতু ভিটামিন বি জলে দ্রাব্য তাই অতিরিক্ত পরিমাণ ভিটামিন বি আমাদের শরীর থেকে রেচন এর মাধ্যমে বেরিয়ে যায় অর্থাৎ প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ বায়োটিন বা ভিটামিন বি৭ সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা আমাদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। 

 

চুলের যত্নে বায়োটিন এর উপকারিতা : 

সাধারণত বায়োটিন ব্যবহৃত হয় ফ্যাটি অ্যাসিড এবং গ্লুকোজ কে রূপান্তর করতে এনার্জি বা শক্তি তে। যা আমাদের শরীরকে চালনা করার জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয়।  শুধু তাই নয় কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফ্যাট থেকে আমাদের শরীরের জন্য নিউট্রেশন বা পুষ্টি সংগ্রহ করতে বায়োটিনের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

  • দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণ বায়োটিন যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করলে আমাদের চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ আমাদের চুল খুব পাতলা হয়ে ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 
  • বায়োটিন সাহায্য করে আমাদের মাথায় নতুন চুল উৎপন্ন করতে এবং চুলের গোড়াকে শক্ত করতে। 
  • আমরা যদি বায়োটিন যুক্ত খাবার অথবা বায়োটিন যুক্ত সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করি তাহলে আমাদের চুল খুব দ্রুত লম্বা বা বৃদ্ধি হয়। 
  • বায়োটিন সাহায্য করে আমাদের মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকল গুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিউট্রেশান বা পুষ্টি এবং অক্সিজেন সরবরাহ করতে রক্তের মাধ্যমে। 

এছাড়াও বায়োটিন এর উপকারিতা আমাদের ত্বক এবং নখের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যদিও বায়োটিন সম্পর্কে আমাদের আরো অনেক তথ্য এবং পরীক্ষার প্রয়োজন আছে। 

 

বায়োটিন এর প্রয়োজনীয়তা? 

দৈনিক কতটা বায়োটিন আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজন সেটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে আমাদের ওজন, বয়স এবং শারীরিক গঠনের উপর। 

  • সদ্যজাত শিশু থেকে ৩ বছরের শিশুদের দৈনিক ১০ থেকে ২০ মাইক্রগ্রাম বায়োটিনের প্রয়োজন হয়। 
  • ৪ থেকে ৬ বছর বয়সের শিশুদের দৈনিক ২০ থেকে ২৫ মাইক্রগ্রাম বায়োটিনের প্রয়োজন হয়। 
  • ৭ থেকে ১০ বছর বয়সের শিশুদের দৈনিক ৩০ মাইক্রগ্রাম বায়োটিনের প্রয়োজন হয়।
  • ১০ থেকে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৩০ থেকে ১০০ মাইক্রগ্রাম বায়োটিনের প্রয়োজন হয়। 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : শীতকালে অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ এবং প্রতিরোধ করার উপায়

 

বায়োটিন যুক্ত খাবার : 

বিভিন্ন খাদ্যের মধ্যে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স পাওয়া যায় তবে আমাদের আলোচ্য বিষয় সেই খাদ্য গুলি সম্পর্কে যাদের মধ্যে ভিটামিন বি৭ বা বায়োটিন উচ্চমাত্রায় পাওয়া যায় যেরকম, 

  • একটি ডিমের মধ্যে ১০ মাইক্রগ্রাম বায়োটিন পাওয়া যায়। বিভিন্ন প্রকার মাংসের মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে বায়োটিন পাওয়া যায় যেরকম, মুরগি, ছাগল, ভেড়া। বিভিন্ন প্রকার মাছের মধ্যেও পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে বায়োটিন যেরকম রুই, কাতলা, মৃগেল, চিংড়ি ও সামুদ্রিক মাছ। 
  • বিভিন্ন প্রকার শস্য দানার মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে বায়োটিন পাওয়া যায় যেরকম সয়াবিন, গোটা মুগ, ছোলা, মসুর ডাল ইত্যাদি।
  • ১০০ গ্রাম আলমন্ড বাদামের মধ্যে ৫৭ গ্রাম বায়োটিন পাওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন বাদামের মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে বায়োটিন পাওয়া যায়, যেরকম কাজুবাদাম, আখরোট, চিনা বাদাম ইত্যাদি। 
  • ১০০ গ্রাম দই এর মধ্যে ৩.৭ মাইক্রগ্রাম বায়োটিন পাওয়া যায়। দুগ্ধজাত দ্রব্য যেরকম ঘি, মাখন, পনির ইত্যাদি খাদ্যের মধ্যেও অনেক বেশি পরিমাণে বায়োটিন পাওয়া যায়। 
  • কিছু প্রকার সবজির মধ্যেও পাওয়া যায় পর্যাপ্ত পরিমাণে বায়োটিন যেরকম, মিষ্টি আলু, ব্রোকলি, কাঁচকলা, এবং বিভিন্ন প্রকার মাশরুম। 
  • ফলের মধ্যে বেশি পরিমাণ বায়োটিন পাওয়া যায় অ্যাভোকাডো এবং পাকা কলা তে।

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : শীতকালে চুলে অতিরিক্ত খুশকি কেন হয়? খুশকি দূর করার উপায়

 

বায়োটিনের অভাবে কি হয়? 

ভিটামিন বি৭ বা বায়োটিন এর অভাবে আমাদের মধ্যে নানান রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে যেরকম, 

  • দ্রুত চুল উঠে যাওয়া অথবা চুলের ঘনত্ব কমে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। 
  • আমাদের শরীরের ত্বকে বিভিন্ন প্রকার ইনফেকশন বা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
  • আমাদের নখ অনেক বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে বা ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। 
  • আমাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
  • আমাদের মধ্যে হৃদয় সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
  • বায়োটিনের অভাবে আমাদের শরীরে শক্তির অভাব বা অলসতা বৃদ্ধি পায়। 

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য : আমাদের চুলের জন্য বায়োটিন যতটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ততটাই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গুলি হল উচ্চমাত্রায় প্রোটিন, জিংক এবং আয়রন। অতিমাত্রায় বায়োটিন আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। তাই বায়োটিন যুক্ত শ্যাম্পু, কন্ডিশনার বা কোনরকম সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার বা ব্যবহার করার পূর্বে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেবেন। 

 

 


Share With Your Friends

Leave a Comment