শীতকালে অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ এবং প্রতিরোধ করার উপায়

Share With Your Friends

অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ

চুল পড়া এখনকার দিনে খুব সাধারণ একটি সমস্যা। নারী পুরুষ সকলকেই প্রতিনিয়ত এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তবে শীতকাল পড়তেই এই অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যা বেড়ে যায়। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় শীতকালে অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ এবং প্রতিরোধ করার উপায় সম্পর্কে।

 

শীতকালে অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ : 

বিভিন্ন কারণের জন্য আমাদের চুল পড়ে যেমন আবহাওয়া, দূষণ, অযত্ন ইত্যাদি হলো চুল পড়ার অন্যতম কারণ। এছাড়াও শারীরিক সমস্যার জন্য বা স্ক্যাল্পে কোনো রকমের ইনফেকশন বা সংক্রমণ এর জন্য চুল পড়া বেড়ে যায়।

  • শীতকালে চুল পড়ার অন্যতম কারণ হলো শুষ্ক মাথার ত্বক। শীতকালে আমাদের মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় আর এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো এই সময় তাপমাত্রা হ্রাস পায়। শুষ্ক ঠান্ডা আবহাওয়ায় মাথার ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায়। এছাড়াও এই সময় আমাদের ঘাম কম হয় এবং আমরা জল পান ও অনেক কম করি। ফলে শরীর হাইড্রেট থাকে না শুষ্ক হয়ে যায়।
  • আমাদের চুলকে সুস্থ রাখতে সবথেকে বেশি প্রয়োজন সঠিক খাদ্যের অভ্যাসের। আমাদের চুলের জন্য প্রোটিন ও বায়োটিন খুবই প্রয়োজনীয় দুটি উপাদান। তাই আমাদের নিয়মিত প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল যুক্ত খাবার গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু শীতকালে আমরা তুলনামূলক কম সুষম  খাবার গ্রহণ করি। শীতে আমাদের ভাজাভুজি, মিষ্টি, ফাস্টফুড ইত্যাদি খাবার প্রবণতা বেড়ে যায়। যা আমাদের জন্য একদমই ঠিক নয়। তাই আমাদের চুলের যত্নের জন্য সঠিক খাদ্যের অভ্যাস গড়ে তোলা ভীষণভাবে প্রয়োজনীয়।
  • শীতকালে আমাদের সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসা অনেক কম হয়। ফলে শীতে সূর্যের আলোর সংস্পর্শে কম থাকার কারণে আমাদের দেহে ভিটামিন ডি এর অভাব ঘটে ফলে মাথার ত্বক ও চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সূর্যালোক হল ভিটামিন ডি এর প্রাকৃতিক উৎস। এই ভিটামিন ডি চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণভাবে উপকারী।
  • শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা একদম কমে যাওয়ার জন্য বায়ু দূষণের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। তাই শীতকালে আমাদের মাথার ত্বকে বা স্ক্যাল্পে অতিরিক্ত পরিমাণ সংক্রমণ বা ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই ইনফেকশন বা সংক্রমণ থেকে আমাদের চুল পড়ার বা উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : শীতকালে চুলে অতিরিক্ত খুশকি কেন হয়? খুশকি দূর করার উপায়।

  • শীতকালে অতিরিক্ত ঠান্ডার জন্য আমাদের দৈনিক চুল ধোয়া বা পরিষ্কার করার প্রবণতা অনেক কমে যায়। এই অযত্নের ফলস্বরূপ আমাদের চুল এবং মাথার স্ক্যাল্প হয়ে পড়ে অপরিষ্কার। যার ফলে আমাদের শীতকালে অতিরিক্ত চুল পড়ার সম্ভাবনা থাকে। 

 

শীতকালে অতিরিক্ত চুল পড়া প্রতিরোধ করার উপায় : 

শীতকালে চুল পড়া একটি সাধারণ সমস্যা। তবে সঠিক যত্নের মাধ্যমে আমরা এটি প্রতিরোধ করতে পারি। আমাদের উচিত চুল পড়া সমস্যাটিকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা এবং তার সমাধান করা। তাই আমরা এখন জেনে নেব কিভাবে শীতকালে অতিরিক্ত চুল পড়া প্রতিরোধ করা সম্ভব, 

 

ঠান্ডা জলের ব্যবহার : 

আমরা চুল পরিষ্কার করার সময় বা মাথা ধোয়ার সময় ঠান্ডা বা সামান্য গরম জল ব্যবহার করব। কারণ অতিরিক্ত গরম জল আমাদের চুলের জন্য ভীষণ ক্ষতিকারক।

 

মাথার ত্বক মশ্চারাইস রাখতে হবে : 

শীতকালে নিয়মিত মাথায় তেল দেওয়া উচিত। নিয়মিত মাথায় তেল ব্যবহার করলে মাথার স্ক্যাল্প বা ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে। মাঝেমধ্যে আমাদের মাথার ত্বক বা স্ক্যাল্পে তেল দিয়ে ভালো করে মাসাজ করা বা মালিশ করা উচিত।  ফলে মাথার ত্বকে আর্দ্রতা বজায় থাকবে, সাথে খুশকি, চুলকানি আর চুলে নানা ধরনের সমস্যা দূর হবে এবং চুল পড়ার সমস্যাও অনেকটা কমে যাবে।

 

চুলে শ্যাম্পুর ব্যবহার : 

নিয়মিত চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার করলে আমাদের মাথার ত্বক বা স্ক্যাল্প পরিষ্কার থাকে যার ফলে কোনরকম সংক্রমণ বা ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। শুধু তাই নয় পর্যাপ্ত পরিমাণ শ্যাম্পু ব্যবহার করলে আমাদের চুলে খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম হয়। আমাদের মাথার ত্বক পরিষ্কার থাকলে নতুন চুল উৎপন্ন হতে অনেক সুবিধা হয়। তাই নিয়মিত শ্যাম্পুর ব্যবহার আমাদের চুলের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এখানে শ্যাম্পু বলতে শুধুমাত্র জৈব বা অর্গানিক শ্যাম্পুর কথা বলা হয়েছে। 

 

নিয়মিত চুল কাটা : 

আমাদের উচিত প্রতি এক দুই মাস অন্তর চুলের নিচের দিকটা একটু কেটে নেওয়া বা ট্রিম করে নেওয়া। নিয়মিত চুল কাটা আমাদের চুলে যত্ন নেওযার সঠিক উপায়। এর ফলে শীতকালে চুল পড়া সম্ভবনা অনেকটা কমতে পারে।

 

চুলের নানা ধরনের তাপ উৎপন্নকারী যন্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করা : 

বিভিন্ন ধরনের তাপ উৎপাদনকারী যন্ত্র ব্যবহার করে আমরা আমাদের চুলকে শুকিয়ে নিয়ে থাকি। এছাড়া চুলকে সোজা করার জন্য আমরা স্ট্রেটনার ব্যবহার করে থাকি বা কারলিং এর জন্য বিভিন্ন ধরনের স্টাইলিং সরঞ্জাম ব্যবহার করে থাকি। এই সমস্ত স্টাইলিং সরঞ্জামের অত্যাধিক ব্যবহার আমাদের চুলের ভীষণ রকম ক্ষতি করতে পারে। তাই এই সমস্ত স্টাইলিং সরঞ্জামের ব্যবহার না করে আমাদের উচিত প্রাকৃতিকভাবে চুলকে সোজা করা ও শুকিয়ে নেওয়া।

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : শক্ত, লম্বা এবং উজ্জ্বল চুলের জন্য, কতদিন অন্তর মাখবেন তেল?

 

সঠিক খাদ্যের অভ্যাস : 

আমরা যদি নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ না করি তাহলে আমাদের শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা দেবে, ফলে আমাদের চুল পড়ার প্রবণতা বাড়তে থাকবে। নিয়মিত কিছু পরিমাণ খাদ্য বা খাবার গ্রহণ করে আমরা আমাদের চুল পড়ার পরিমাণকে কমাতে পারি। যেমন আমরা যদি নিয়মিত ডিম খাই তাহলে আমাদের চুল পড়া অনেকটাই কম হতে পারে। ডিমের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও বায়োটিন। প্রোটিন আমাদের চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত করে। এছাড়া ডিমের মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের উপকারী উপাদান, তাই নিয়মিত ডিম খাওয়া বা গ্রহণ করা আমাদের চুলের জন্য ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়াও আমরা আমাদের খাদ্য তালিকায় গাজর, পালং শাক, মিষ্টি আলু ইত্যাদি খাবার গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে পারি। এই সমস্ত খাদ্যের মধ্যে থাকা ভিটামিন এ, ভিটামিন সি আমাদের চুলের জন্য ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ দুটি উপাদান।

আয়রনের অভাবের ফলে চুল পড়া খুব সাধারণ একটি কারণ।  তাই আমাদের খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন রকমের ডাল যেমন – মুগ ডাল, মসুর ডাল,  ছোলার ডাল, নানা রকমের শাকসবজি ও মাংস অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। মাংসের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং আয়রন। আয়রন আমাদের চুলের ফলিকলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ করতে সাহায্য করে। তাই সপ্তাহে অন্তত এক থেকে দুদিন মাংস খাওয়া আমাদের চুলের জন্য ভীষণভাবে উপকারী।

শীতকালে চুল পড়া একটা সামান্য সমস্যা। সঠিক যত্নের মাধ্যমে আমরা এদিকে প্রতিরোধ করতে পারি এবং চুলকে সুস্থ মজবুত রাখতে পারি।

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য : উপরে উল্লেখিত উপায় অবলম্বন করার পরও আপনার যদি অতিরিক্ত পরিমাণে চুল পড়তে থাকে তাহলে অবশ্যই একবার ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।

 


Share With Your Friends