আমাদের পেটের চর্বি কমাতে সকালের ৭ টি অভ্যাস! পেটের চর্বি কমানোর উপায়

Share With Your Friends

পেটের চর্বি কমানোর উপায়

অনেক সময় আমাদের পেটে অনেক বেশি পরিমাণ চর্বি বা মেদ বৃদ্ধি পায়, যার প্রভাব পড়ে আমাদের শারীরিক গঠন এবং সৌন্দর্যের উপরে। অনেকে ভাবেন এটি জেনেটিকস বা বংশগত সমস্যা তবে আমরা কিছু নির্ধারিত অভ্যাস পরিবর্তন এর মাধ্যমে খুব সহজেই আমাদের পেটের চর্বি কে কম করতে পারি। 

শুধু তাই নয় আমাদের পেটে অতিরিক্ত চর্বি হওয়া আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। পেটে অতিরিক্ত চর্বি হলে আমাদের ফ্যাটি লিভার অর্থাৎ যকৃত সম্পর্কিত রোগ, হৃদয় সম্পর্কিত রোগ এবং রক্তে সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া সম্ভাবনা থাকে। তাই পেটের চর্বি কমানোর উপায় সম্পর্কে আমাদের অবগত হওয়া বিশেষ প্রয়োজন। 

 

পেটের চর্বি কমানোর উপায় : 

আমরা দৈনিক যে খাদ্য গ্রহণ করে থাকি তা আমাদের শরীরের মধ্যে গিয়ে ক্যালোরি বা শক্তিতে রূপান্তর হয়। প্রতিদিন আমাদের শরীরকে সঠিকভাবে চালনা করার জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালোরি বা শক্তির প্রয়োজন। 

যদি এই নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালোরির থেকে আমরা যদি বেশি পরিমাণ ক্যালোরি গ্রহণ করি তাহলে সেই ক্যালোরি আমাদের শরীর চর্বি বা মেদ রূপে সঞ্চয় করে রাখে পরবর্তী সময়ে ব্যবহারের জন্য, অর্থাৎ বেশি পরিমাণ ক্যালোরি খাদ্যের মাধ্যমে গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে চর্বি বা মেদ বৃদ্ধি পায় এবং সাথে বৃদ্ধি পায় আমাদের ওজন। 

 

পেটের চর্বি কমানোর জন্য পানীয় : 

আমরা যদি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে উষ্ণ গরম জল গ্রহণ করি তাহলে আমাদের পেটের চর্বি কমার সম্ভাবনা অনেক বৃদ্ধি পায়। সারারাত ঘুমানোর পর আমাদের শরীরে জলের চাহিদা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায় এবং আমরা যদি সকালে ঘুম থেকে উঠে উষ্ণ গরম জল গ্রহণ করি তাহলে আমাদের শরীরে ক্যালোরি খরচা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায় ফলস্বরূপ আমাদের পেটে চর্বি বা মেদ অনেক কমে যায়। 

  • সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা ব্ল্যাক কফি পানীয় রূপে গ্রহণ করতে পারি। কারণ ব্ল্যাক কফি আমাদের শরীরে বিপাক ক্রিয়াকে বৃদ্ধি করে যার ফলস্বরূপ আমাদের মধ্যে বেশি পরিমাণ ক্যালোরি বা শক্তি ক্ষয় হয়। যা আমাদের দ্রুত পেটের চর্বি কে কম করতে সাহায্য করে। 
  • আমরা প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন উষ্ণ গরম জলের সাথে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে গ্রহণ করতে পারি। যার ফলে আমাদের শরীরে ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ হয় এবং আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয় পাতি লেবু জলের সাথে মিশিয়ে খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের পেট দীর্ঘ সময় ধরে ভরা অনুভব হয় যার ফলে আমাদের মধ্যে অতিরিক্ত পরিমাণ ক্ষিদে পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 
  • গ্রিন টি আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি পানীয়। গ্রিন টি এর মধ্যে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান। সকালে গ্রিন টি খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের মেটাবলিজম রেট বা বিপাকীয় হার অনেক বৃদ্ধি পায় এবং আমাদের পেটের চর্বি কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।  

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : খালি পেটে গরম জল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে ৯ টি বিস্ময়কর তথ্য

 

পেটের চর্বি কমানোর ব্যায়াম : 

প্রতিদিন সকালে ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করা আমাদের শরীরের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করলে আমাদের শরীরে অনেক বেশি ক্যালোরি ক্ষয় হয় যার ফলস্বরূপ আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। 

আমারা সাধারণত ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ কে দুই ভাগে ভাগ করে থাকি প্রথমটি ওয়েট লিফটিং বা শরীরের শক্তি প্রয়োগ করে ওজন তোলা এবং দ্বিতীয়টি কার্ডিও অর্থাৎ হৃদস্পন্দন সম্পর্কিত ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ। 

এই দুই প্রকার ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ সাহায্য করে আমাদের পেটের চর্বিকে কম করতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে। তবে বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে কার্ডিও অথবা নিয়মিত সকালে হাঁটা আমাদের পেটের চর্বি কম করতে বিশেষ প্রয়োজনীয়। 

পেটের চর্বিকে কম করতে সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ যেরকম, প্ল্যাংক, স্কোয়াড, সিট আপ, লেগ রেইস, জাম্পিং রোপ বা লাফ দড়ি ইত্যাদি। 

 

চর্বি কমানোর খাবার তালিকা : 

আমরা যদি সঠিকভাবে আমাদের পেটের চর্বি বা মেদ কে কম করতে চাই তাহলে খাদ্য গ্রহণের প্রতি আমাদেরকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ আমরা যদি অতিরিক্ত পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করি তাহলে আমাদের প্রয়োজনের থেকে বেশি ক্যালোরি বা শক্তি আমাদের শরীরে পৌঁছাবে। যার ফলস্বরূপ আমাদের শরীরে বেশি পরিমাণ চর্বি দেখা দিতে পারে। 

অর্থাৎ আমাদের দৈনিক যতটা ক্যালোরির প্রয়োজন তার থেকে কম পরিমাণ ক্যালোরি গ্রহণ করতে হবে। ফলস্বরূপ আমাদের পেটের চর্বি বা মেদ অনেক কমে যাবে। আমাদের কে সব সময় কম ক্যালোরি যুক্ত এবং উচ্চমাত্রায় ফাইবার ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। 

  • নিয়মিত আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে দুগ্ধজাত দ্রব্য যেরকম দই এবং পনির। 
  • উচ্চমাত্রায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য যেরকম ডিম, মাছ এবং মুরগির মাংস। 
  • গুড ফ্যাট বা হেলদি ফ্যাট সমৃদ্ধ খাদ্যের জন্য গ্রহণ করতে হবে বিভিন্ন প্রকার বাদাম যেরকম আলমন্ড, কাজু এবং চিনা বাদাম। 
  • আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে অনেক বেশি পরিমাণে সবুজ শাক এবং সবজি যার ফলে আমাদের শরীরে ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানের অভাব হবে না এবং বিভিন্ন শাক, সবজির মধ্যে শর্করা বা ফাইবারের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে যা সাহায্য করে আমাদের পেটের চর্বি বা মেদ কে কম করতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে। 

তল পেটে চর্বি কমানোর উপায় সম্পর্কিত আলোচনায় আমাদের একটি বিষয় ভালো করে বুঝে নেওয়া দরকার যে শুধুমাত্র পেটের চর্বিকে কম করা খুবই কঠিন আমাদের কাছে। আমাদের পুরো শরীরের চর্বি বা মেদ এর পরিমাণ কে কম করলে আমাদের পেটের চর্বি ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে যাবে। তবে একটি কথা আমাদের জেনে রাখা উচিত আমাদের পেটের চর্বি সবার শেষে কম হয় শরীরের বাকি অংশ তুলনায়। 

 

পেটের চর্বি কমানোর জন্য ঘুমের গুরুত্ব : 

আমাদের মানসিক এবং শারীরিক বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম বিশেষ প্রয়োজনীয়। এখনকার দিনে অনিয়মিত জীবন যাপনের জন্য আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম হয় না। রাত্রিবেলা ঘুমানোর পূর্বে কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের ব্যবহার আমাদের ঘুমের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকারক। শুধু তাই নয় অ্যালকোহল এবং সিগারেট পান আমাদের ঘুমের উৎকর্ষের মাত্রা কে নষ্ট করে। 

পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে আমাদের শরীর সঠিকভাবে বিশ্রাম পায়না ফলস্বরূপ আমাদের মধ্যে চর্বি বা ফ্যাট বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই দৈনিক আমাদের সঠিক সময় এবং সঠিক পরিবেশে ঘুমানো অভ্যেস করা বিশেষ প্রয়োজন। 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : শীতকালে বেড়ে যায় শ্বাসকষ্টের সমস্যা? ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করার সঠিক পদ্ধতি

 

চর্বি কমানোর জন্য মানসিক স্বাস্থ্য : 

আমাদের শরীর সঠিক ভাবে কাজের জন্য মস্তিষ্কের সাথে শরীরের প্রতিটি পেশীর উন্নত মানের সম্পর্ক স্থাপন বিশেষ প্রয়োজন। আমরা যদি অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি তাহলে আমাদের শরীরে ফ্যাট বা চর্বি বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। 

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমাদের ধ্যান বা মেডিটেশন করা বিশেষ প্রয়োজনীয় আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য। শুধু তাই নয় নিয়মিত সকালে এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য কে উন্নত করে এবং আমাদের মধ্যে একাগ্রতা বৃদ্ধি করে। 

আমাদের পেটে থেকে চর্বি কমানো খুব একটি কঠিন কাজ নয় তবে প্রতিদিন নিয়ম মেনে জীবন যাপন করা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়ার অন্যতম উপায়।

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য : খুবই অল্প পরিমাণ খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে দ্রুত আমাদের শরীরের চর্বি বা ওজনকে কমানো একদমই উচিত নয়। সঠিক পদ্ধতিতে আমাদের শরীর থেকে চর্বি কমাতে ছয় মাস থেকে এক বছর সময়ও লাগতে পারে।

 


Share With Your Friends

Leave a Comment