ডাবের জলের উপকারিতা সম্পর্কে ৯ টি আশ্চর্যজনক তথ্য

Share With Your Friends

ডাবের জলের উপকারিতা

ডাবের জলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ খনিজ উপাদান, ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান পাওয়া যায়। নিয়মিতভাবে জল পান করলে আমাদের শরীরে ডিহাইড্রেশন বা জলের অভাব হয় না। শুধু তাই নয় নিয়মিত ডাবের জল পান করলে আমাদের হৃদয় এবং কিডনি সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়, তাই ডাবের জলের উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

ডাব এবং নারকেল কে আমরা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে থাকি যেরকম, নারকেল থেকে বিভিন্ন রকম তেল তৈরি হয় যা আমাদের রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয় এবং আমাদের চুলে ও ত্বকে ব্যবহৃত হয়। এমনকি আমরা নারকেলের সাদা অংশকে ভালো করে পেশাই করে দুধ তৈরি করি যাকে আমরা কোকোনাট মিল্ক বলে থাকি। 

গ্রীষ্মকালে পানীয় হিসেবে আমরা সব থেকে বেশি ডাবের জল গ্রহণ বা পান করে থাকি এছাড়া আমরা সব সময় দেখেছি যখনই আমরা অসুস্থ হয়েছি তখন আমাদের কে ডাক্তারবাবু ডাবের জল পান করতে বা গ্রহণ করতে বলেছেন এবং তার বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় ডাবের জলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। 

 

ডাবের জলের উপকারিতা : 

১০০ গ্রাম ডাবের জলের পুষ্টিগত গুনাগুন বা নিউট্রেশন ফ্যাক্ট:

  • ক্যালোরি ১৯%
  • প্রোটিন ০.৭২ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট ৩.৭১ গ্রাম
  • জল ৯৫ গ্রাম

 

ডাবের জলে রয়েছে বিশেষ কিছু ভিটামিন এবং মিনারেল যেরকম,

  • ভিটামিন C ২.৪ মিলি গ্রাম
  • ভিটামিন B৬ ০.০৩২ গ্রাম
  • ক্যালসিয়াম
  • ম্যাগনেসিয়াম
  • ফসফরাস
  • পটাশিয়াম
  • সোডিয়াম
  • কপার
  • ম্যাঙ্গানিজ
  • সেলেনিয়াম
  • জিংক
  • আয়রন ইত্যাদি।

 

ডাবের জলে কোন অ্যাসিড থাকে ?

ডাবের জলে থাকে ফ্যাটি অ্যাসিড যাকে আমরা ৩ ভাগে ভাগ করে থাকি যেরকম,

  • টোটাল স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড
  • টোটাল মোনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড
  • টোটাল পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড।

 

  • যদি আমাদের শরীরে ফ্রি-রেডিকেল বৃদ্ধি পায় তাহলে আমাদের মধ্যে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দেখা যায়। ডাবের জলে প্রচুর পরিমাণ খনিজ উপাদান, ভিটামিন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান পাওয়া যায়। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান আমাদের সাহায্য করে ফ্রি-রেডিকেল এর পরিমাণ কে কম করতে যার ফলে আমাদের মধ্যে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়। এছাড়াও ডাবের জলের মধ্যে ভিটামিন C এবং ভিটামিন B পাওয়া যায় যা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন রোগের সাথে লড়াই করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে অনেক সাহায্য করে। শুধু তাই নয় নিয়মিত ডাবের জল পান করলে আমাদের শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় পদার্থ বের হয়ে যায় এবং আমাদের শরীর অনেক বেশি সতেজ হয়।
  • আমরা নিয়মিত ব্যায়াম বা এক্সারসাইজের পর ডাবের জল পান করতে পারি। তার কারণ এক্সারসাইজ বা ব্যায়ামের সময় আমাদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ মিনারেল বা খনিজ পদার্থ ঘাম বা রেচনের মাধ্যমে শরীর থেকে নিঃসারিত হয়ে যায়। তার ফলে আমাদের শরীর খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়ে এমনকি আমাদের মাঝে মাঝে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে অসুবিধা হয়। সেই ক্লান্তিকে পুরোপুরি আগের জায়গায় বা শরীরে আবার এনার্জি বা শক্তি সঞ্চয়ের জন্য ডাবের জল পান করা খুবই প্রয়োজনীয়। কারণ ডাবের জলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ খনিজ উপাদান বা মিনারেল পাওয়া যায় যেরকম পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম এবং ক্যালসিয়াম যা আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। 
  • আমাদের কিডনি তে ক্যালসিয়াম অক্সালেট এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান জমা হয়ে পাথর বা ক্রিস্টাল আকার ধারণ করে। ২০১৩ তে একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত ডাবের জল পান করে তাদের কিডনি তে স্টোন বা পাথর হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। তার কারণ ডাবের জল আমাদের শরীরের মধ্যে জমে থাকা অত্যাধিক পরিমাণ পটাশিয়াম, ক্লোরাইড এবং সাইট্রেট কে আমাদের ইউরিন বা প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে নিঃসৃত করতে সাহায্য করে। যার ফলে আমাদের কিডনি তে ক্রিস্টাল বা পাথর সৃষ্টি হতে পারে না। 
  • নিয়মিত ডাবের জল পান করলে আমাদের রক্তে কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড এর পরিমাণ কম হয় অথবা নিয়ন্ত্রণে থাকে। শুধু তাই নয় ডাবের জলে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে এবং আমরা জানি পটাশিয়াম আমাদের রক্ত সঞ্চালন বা ব্লাড প্রেসার কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। আমাদের কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড এর পরিমাণ এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকলে হৃদয় সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। তাই ডাবের জলের উপকারিতা আমাদের হৃদয়ের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। 
  • নিয়মিত ডাবের জল পান করলে আমাদের ব্লাড সুগার এবং টাইপ-টু-ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। তার কারণ ডাবের জলের মধ্যে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম। এই ম্যাগনেসিয়াম সাহায্য করে আমাদের রক্তে ইনসুলিনের সেনসিটিভিটি বা সংবেদনশীলতা কে বৃদ্ধি করতে। যার ফলে আমাদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হাই ব্লাড সুগার এবং টাইপ-টু-ডায়াবেটিস রোগ হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়। 
  • ডাবের জলের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণ ন্যাচারাল মিনারেল বা খনিজ উপাদান, যা আমাদের শরীরের জন্য ভীষণ প্রয়োজন তাই ডাবের জলকে ন্যাচরাল ইলেক্ট্রোলাইস ওয়াটার বলে। তাই ডাবের জলের উপকারিতা গরমকালে আমাদের এনার্জি বা শক্তি কে উন্নত করতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। গ্রীষ্মকালে আমাদের সকলেরই একটা সাধারণ সমস্যা হয়ে থাকে সেটি হল শরীরে জলের অভাব বা ডিহাইড্রেশন। ডাবের জলে মিনারেল অনেক বেশি পরিমাণ থাকে সঙ্গে থাকে সামান্য পরিমাণ সুগার এবং ডাবের জল খেতেও খুব ভালো তাই ডাবের জল আদর্শ পানীয় হিসেবে গ্রহণ করা হয় ডিহাইড্রেশনের জন্য। 
  • আমরা পানীয় হিসেবে বিভিন্ন প্রকার কোল্ড ড্রিংকস (Cold Drinks) গ্রহণ করে থাকি।  যার মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণ সুগার বা চিনি জাতীয় দ্রব্য এবং খাওয়ার যোগ্য সোডা। এই খুব বেশি সুগার এবং সোডা আমাদের শরীরের জন্য ভালো নয়। শুধু তাই নয় এই কোল্ড ড্রিংকস খুব বেশি পরিমাণ পান করলে আমাদের ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কিন্তু ডাবের জল খেতে অত্যাধিক সুস্বাদু যার মধ্যে মিষ্টি ভাব ও আছে। ডাবের জলে অন্যান্য পানীয় গুলির তুলনায় ক্যালোরি ও অনেক কম। তাই আমাদের ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডাবের জলের উপকারিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 
  • নিয়মিত ডাবের জল পান করলে বা গ্রহণ করলে আমাদের ত্বকের আদ্রতা বা ময়েশ্চার নিয়ন্ত্রনে থাকে। শুধু তাই নয় ডাবের জল পান করলে আমাদের শরীর ফ্রি-রেডিকেল দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। যার ফল স্বরূপ আমাদের ত্বকের উপর বার্ধক্য জনিত সমস্যা অনেক কমে যায়। ডাবের জল সরাসরি আমাদের ত্বক বা স্কিনের উপর ব্যবহার করতে পারি।ডাবের জলে কিছু অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান পাওয়া যায় যা আমাদের ত্বকের উপর বিভিন্ন সংক্রমণ এবং ব্রন কে কম করতে সাহায্য করে। এছাড়াও ডাবের জলে আছে কিছু অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান যেগুলি আমাদের ত্বক বা স্কিনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • ডাবের জলে নিউট্রেশান বা পুষ্টিগত গুনাগুন রয়েছে অনেক এক কথায় বলতে পারেন বিভিন্ন মিনারেলস বা খনিজ পদার্থ এবং ভিটামিনের সমন্বয় তৈরি হয় এই ডাবের জল। গর্ভাবতী অবস্থায় ডাবের জল গ্রহণ বা পান করলে প্রাতঃকালীন অসুস্থতা এবং বমি ভাব অনেক কম হয়। গর্ভাবতী অবস্থায় নিয়মিত ডাবের জল গ্রহণ বা পান করলে গর্ভে থাকা ফিউট বা ভ্রূন এর বিকাশ খুব ভালো হয়। তাই গর্ভবতী অবস্থায় ডাবের জলের উপকারিতা আমাদের জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয়, যদিও ডাবের জল গ্রহণ করার পূর্বে আমাদের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা অত্যাধিক প্রয়োজন।

 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : গ্রিন টি এর উপকারিতা সম্পর্কে চমৎকার ৮ টি তথ্য

ডাবের জল কখন খেতে হয় ?

  • সকালে খালি পেটে আপনি ডাবের জল খেতে পারেন তার কারণ ওই সময় ডাবের জল খেলে আপনার শক্তি বা এনার্জি অনেক বৃদ্ধি পাবে তার ফলে সারাদিন কাজের জন্য আপনার শরীরে যথেষ্ট পরিমাণ শক্তি সঞ্চয় থাকবে।
  • সকালে খাবার বা ব্রেকফাস্টে ১-২ ঘণ্টা পর আপনি ডাবের জল গ্রহণ করতে পারেন।
  • দুপুরে খাবার বা লাঞ্চের ১-২ ঘণ্টা পর আপনি ডাবের জল গ্রহণ করতে পারেন।
  • সকালে ব্যায়াম বা এক্সারসাইজের এক ঘন্টা পূর্বে অথবা এক ঘণ্টা পরে আপনি ডাবের জল গ্রহণ করতে পারেন।

 

 

ডাবের জলের অপকারিতা?

  • যদি আপনার ডাবের জল খাবার পর শরীরে কোন জায়গায় ‍অ‍্যালার্জি দেখা দেয় তাহলে ডাবের জল আপনার জন্য অ‍্যালার্জির কারণ হতে পারে আর সেই সময় ডাবের জল না খাওয়াই ভালো।
  • আমরা যদি ডাবের জল কে অনেকক্ষণ রেখে দিয়ে তারপর খাই তাহলে সেই জল যে কোন কারণবশত পচন ধরতে পারে এবং ওই জল খেলে আমাদের ডায়রিয়া বা বমি ভাব হতে পারে।
  • ডাবের জলে খুব বেশি পরিমাণ পটাশিয়াম, সোডিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় কিন্তু অত্যাধিক পরিমাণ ডাবের জল খেলে বা পান করলে আমাদের শরীরে পটাশিয়াম, সোডিয়াম ও অন্যান্য খনিজ পদার্থের পরিমাণ বেড়েও যেতে পারে যা আমাদের শরীরের জন্য একদমই ভালো না।
  • ডাবের জলে কার্বোহাইড্রেট এবং ক্যালোরি থাকে এবং যদি আপনার প্রথম থেকে ব্লাড সুগারের সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে বেশি পরিমাণ ডাবের জল না পান করাই ভালো কারণ বেশি পরিমাণ ডাবের জল পান করলে আপনার শরীরে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে নাও থাকতে পারে বা ভারসাম্য হারাতে পারে।

 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে চমৎকার ১০ টি তথ্য

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য : ডাবের জল গ্রহণ বা পান করার পূর্বে আপনার ডক্টরের সাথে অবশ্যই একবার পরামর্শ করে নেবেন।

 

 

 


Share With Your Friends