অত্যাধিক খুশকি যেরকম আমাদের চুলের জন্য ক্ষতিকারক ততটাই প্রভাবশীল আমাদের সৌন্দর্যের উপর। এছাড়াও এই খুশকি বা ড্যানড্রাফের কারণে আমাদের নানান ধরনের সমস্যা হয় যেরকম স্কাল্প ইনফেকশন, ত্বক সম্পর্কিত সমস্যা এবং চুল উঠে যাওয়া ইত্যাদি। শুধু তাই নয় মাথায় অত্যাধিক খুশকি আমাদেরকে বাধ্য করে খুশকি দূর করার উপায় গুলি সম্পর্কে আলোচনা করতে।
আমাদের মাথার ত্বকের উপরের কোষগুলি যখন খুব দ্রুতহারে মারা যায় তখন খোসা হয়ে খুশকি বা ড্যানড্রাফ এর আকার ধারণ করে। তবে এর জন্য ম্যালাসেজিয়া নামক এক ফাঙ্গাস যথেষ্ট ভাবে দোষী। ওই ফাঙ্গাস গুলি মূলত পরজীবী যা আমাদের ত্বকের উপর বাস করে এবং পুরোপুরি আমাদের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে এবং আমাদের ত্বক থেকে যথার্থ পরিমাণ পুষ্টি বা নিউট্রিশন গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। ওই ফাঙ্গাস এর কারণে মূলত আমাদের খুশকি বা ড্যানড্রাফ হয়ে থাকে।
মূলত শীতকালে খুব শুষ্ক আবহাওয়ার জন্য সব থেকে বেশি খুশকি দেখা যায় ছোট বাচ্চাদের এবং প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা ও পুরুষদের মধ্যে। তাই খুশকি দূর করার উপায় সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা থাকা খুবই প্রয়োজন। সঠিক ধারণা আমাদেরকে সাহায্য করে খুশকি কে কম করতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে যদিও খুশকি কেন হয় সেই সম্পর্কেও আমাদের অবগত হওয়া উচিত।
খুশকি দূর করার উপায় কি?
- নিয়মিত নারকেল তেল ব্যবহার করে আমরা আমাদের চুলের খুশকি কে দূর করতে পারি। প্রতি সপ্তায় দুই থেকে তিনবার নারকেল তেল ব্যবহার করলে আমাদের স্কাল্প বা মাথার ত্বকের ড্রাই বা শুষ্ক ভাব কে কমাতে পারি এবং নিয়মিত নারকেল তেল ব্যবহার করা আমাদের ত্বক বা স্কিনের জন্য খুবই উপকারী এবং নারকেল তেলের মধ্যে অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান রয়েছে যার ফলে আমাদের চুলে কোনরকম ইনফেকশন বা সংক্রমণ হয় না। তাই নারকেল তেলকে আমরা খুশকি দূর করার তেল রূপে ব্যবহার করতে পারি।
- আমরা যদি আমাদের চুলে অ্যালোভেরা ব্যবহার করি তাহলে আমাদের খুশকি হওয়ার প্রবণতা কমে যায় তার কারণ অ্যালোভেরা জেল এর মধ্যে কিছু পরিমাণ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে যা আমাদের স্কিন বা ত্বককে বিভিন্ন ইনফেকশন বা সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করে। অ্যালোভেরা আমাদের রুক্ষ, পুড়ে যাওয়া বা ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক বা স্কিনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই অ্যালোভেরার ব্যবহার চুলের খুশকি দূর করার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
- গ্রিন টি অথবা চা গাছের তেলের ব্যবহার চুলের খুশকি দূর করার আরেকটি উপায়। গ্রিন টি বা চা গাছের তেলের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান রয়েছে যা আমাদের চুলকে এবং স্কাল্প বা ত্বককে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাস এর হাত থেকে রক্ষা করে তার ফলে আমাদের চুলের গোড়া যথেষ্ট শক্ত হয় এবং আমাদের স্কাল্প বা ত্বক বিভিন্ন ইনফেকশন বা সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পায় ফলে আমাদের খুশকি হবার প্রবণতাও কমে যায় তাই নিয়মিত গ্রিন টি অথবা চা গাছের তেল ব্যবহার করা আমাদের খুশকি দূর করার অন্যতম একটি পদ্ধতি।
- অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের আমাদের শরীরে বিভিন্ন প্রকারের উপকারিতা আছে এবং তার মধ্যে একটি আমাদের খুশকি দূর করা। অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে অ্যাসিড এর মাত্রা অনেক বেশি যা আমাদের স্কিন বা ত্বকের পি এইচ বা পটেনশিয়াল অফ হাইড্রোজেন এর পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ রাখে। শুধু তাই নয় অ্যাপেল সিডার ভিনিগার আমাদের ত্বক বা স্কিনের উপরের মৃত কোষের আবরণকে সরিয়ে নতুন কোষ উৎপন্ন হতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াল এবং ফাঙ্গাল ইনফেকশন থেকে আমাদের ত্বক বা স্কিনকে রক্ষা করে। তাই নিয়মিত অ্যাপেল সিডার ভিনিগার চুলে ব্যবহার করা আমাদের চুল পড়া ও খুশকি দূর করার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
- সাধারণত আমাদের কাছে অ্যাসপিরিন অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান বা ঔষধ রূপে পরিচিত তবে অ্যাসপিরিন ব্যবহার করে আমরা আমাদের খুশকি কে দূর করতে পারি কারণ অ্যাসপিরিন এর মধ্যে স্যালিসিলিক অ্যাসিড থাকে যা আমাদের চুলের খুশকি দূর করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অ্যাসিড। স্যালিসিলিক অ্যাসিড কে বিভিন্ন অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু তে ব্যবহার করা হয় খুশকি দূর করার জন্য তবে আমরা দুইটি অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট কে ভালো করে গুঁড়ো করে আমাদের জৈব শ্যাম্পু এর সাথে মিশিয়ে আমাদের চুলে ব্যবহার করতে পারি। ফলে আমরা খুশকি এবং অন্যান্য সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাই।
- নিয়মিত পাতিলেবু ব্যবহার করে আমরা আমাদের খুশকি কে দূর করতে পারি। কারণ পাতিলেবু তে থাকে জৈব অ্যাসিড বা অর্গানিক অ্যাসিড যা আমাদের ত্বক এবং চুলের পি এইচ বা পটেনশিয়াল অফ হাইড্রোজেন এর পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে যার ফলে আমাদের বিভিন্ন রকমের ইনফেকশন বা সংক্রমণ এবং খুশকি হবার প্রবণতা কমে যায়। শুধু তাই নয় পাতিলেবুর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন C থাকে যা আমাদের ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন পাতি লেবুর রস ভালো করে পুরো মাথায় মেখে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- নিয়মিত মাথায় নিম তেল ব্যবহার করে আমরা আমাদের খুশকি কে দূর করতে পারি। বাজার বা মার্কেটে প্রচুর রকম নিম তেল পাওয়া যায় যেটি চুলের জন্য ব্যবহার যোগ্য অথবা নিম পাতা ভালো করে পেশাই করে নারকেল তেলের সাথে ভালো করে মিশিয়ে আমরা আমাদের চুলে ব্যবহার করতে পারি। নিম তেল অথবা নিম পাতার রস অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল। তাই নিম তেল অথবা নিম পাতার রস ব্যবহার করলে আমাদের মাথার স্কাল্প বা ত্বকে কোনরকম সংক্রমণ বা ইনফেকশন এবং খুশকি হওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
- যদি আমাদের মাথায় খুশকির পরিমাণ খুব বেশি বেড়ে যায় তাহলে আমরা বেকিং সোডা ব্যবহার করতে পারি। বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে বেকিং সোডার মধ্যে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে। তাই আমরা যদি আমাদের মাথায় বেকিং সোডা ব্যবহার করি তাহলে বিভিন্ন ফাঙ্গাস, চুলকুনি এবং খুশকির হাত থেকে পুরোপুরি রক্ষা পাবে।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : চুল পড়া বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে সঠিক ধারণা।
খাদ্য অভ্যাস এর মাধ্যমে খুশকি দূর করার উপায় :
আমরা যদি নিয়মিত ভালো খাদ্য বা হেলদি ফুড গ্রহণ করি যার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেলস এবং প্রোটিন থাকে তাহলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম অনেক উন্নত হয়। যার ফলে আমাদের স্কিন বা ত্বকে কোনরকম সংক্রমণ বা ইনফেকশন এবং খুশকি হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। বিভিন্ন ফল যেরকম আপেল, কলা, পেয়ারা, লেবু ইত্যাদি।
- টক দই এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ গুড ব্যাকটেরিয়া থাকে তাই টক দইকে আমরা ন্যাচারাল প্রোবায়োটিক বলে থাকি। নিয়মিত টক দই গ্রহণ করলে আমাদের হজম ক্ষমতা বা ডাইজেস্টিভ সিস্টেম উন্নত হয় এবং আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
- এরকম খাদ্য নিয়মিত গ্রহণ করা উচিত যার মধ্যে ওমেগা থি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যেরকম ডিম এবং মাছ। এই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের স্কিন বা ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।
- খুব বেশি প্রাণীর মাংস বা রেড মিট, প্রসেস ফুড, প্যাকেজ ফুড, কেক, পেস্ট্রি, সুইট বা মিষ্টি এবং ফাস্টফুড আমাদের গ্রহণ করা উচিত না তার কারণ ওই জাতীয় খাদ্য গুলি আমাদের হজম শক্তি বা ডাইজেস্টিভ সিস্টেমকে দুর্বল করে এবং আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে শুধু তাই নয় আমাদের স্কিন বা ত্বককে খুব রুক্ষ করে তোলে এবং বিভিন্ন শারীরিক রোগ এবং খুশকি হবার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : চুল পড়ার কারণ সম্পর্কে অবাক করা ৮ টি তথ্য।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলি ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একবার আপনার ডক্টরের সাথে পরামর্শ করে নেবেন।
Thank you everyone for coming to our website www.healthybangla.in and a warm welcome to all of you.
Hi, my name is Arunima Morial and I am from Kolkata, India.
I have been writing health related articles for the last 3 years.
All the articles me and my team write are always reviewed by Sagar Ghosh (Science Graduate, Location- Shyamnagar, West Bengal) and Dr Gautam Ghosh (B.H.M.S, M.D in Homoeopathy, Location- Shyamnagar, West Bengal).
We always share the reference web page link from where we get correct information in the article.
Please feel free to contact me on my email ID sg133322@gmail.com