মধুর মধ্যে পাওয়া যায় সুগার, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ভিটামিন, মিনারেল, আয়রন, জিংক এছাড়াও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। নিয়মিত মধু খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের মধ্যে অ্যাস্থমা বা হাঁপানি, সর্দি, কাশি, হৃদয় সম্পর্কিত রোগ, ডায়াবেটিস এবং স্নায়ুতন্ত্র সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। তাই মধু খাওয়ার উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
মধু খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা পুরোপুরি নির্ভর করে তার গুণমান এবং তৈরি করার পদ্ধতির উপর। মধু বিভিন্ন প্রকারের হয় যেরকম প্রাকৃতিক মধু বা ন্যাচারাল হানি, নিম মধু, সরষে মধু, ইউক্যালিপটাস মধু ইত্যাদি।
সাধারণত আমাদের সবার বাড়িতে কমবেশি মধুর একটা কৌটো পাওয়া যায় কিন্তু আমাদের উচিত মধু সম্পর্কে সম্পূর্ণ জেনে তারপরই মধু গ্রহণ করা তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
মধু খাওয়ার উপকারিতা :
১০০ গ্রাম মধুর পুষ্টিগত গুনাগুন বা নিউট্রিশনাল ফ্যাক্ট:
- ক্যালোরি ৩০৪
- প্রোটিন ০.৩ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট ৮২.৪ গ্রাম (ডায়াটেরি ফাইবার ০.২ গ্রাম)
- জল ১৭.১ গ্রাম
এছাড়াও আছে অনেক ভিটামিন এবং মিনারেল যেরকম,
- ভিটামিন C ০.৫ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন B৬ ০.০২৪ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম
- আয়রন
- ম্যাগনেসিয়াম
- ফসফরাস
- পটাশিয়াম
- সোডিয়াম
- জিংক
- কপার
- সেলেনিয়াম
- ম্যাঙ্গানিজ
- যখনই আমাদের আবহাওয়া পরিবর্তন হয় তখন প্রতিটা মানুষেরই একটা সাধারণ সমস্যা থাকে সেটি হলো ঠান্ডা লেগে যাওয়া, ভেতরে কফ জমে যাওয়া এবং শ্বাসে সমস্যা ইত্যাদি, এবং সেই সময় যদি আমরা নিয়মিতভাবে মধু গ্রহণ করি বা খেয়ে থাকি তাহলে আমাদের ওই জাতীয় সমস্যা আর হবে না তার কারণ মধুতে কিছু অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে যেগুলি সাহায্য করে আমাদের শরীরকে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস ঘটিত রোগের সাথে লড়তে। তাই নিয়মিত মধু খেলে আমাদের শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ বা রেসপিরেটরি ইনফেকশন কম হয় এবং সর্দি কাশির জন্য মধু আদর্শ আয়ুর্বেদিক ঔষধ।
- যদি আমাদের শরীরে ফ্রি-রেডিক্যাল বাড়তে থাকে তাহলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা সেল ড্যামেজ হয় যার ফলে আমাদের মধ্যে দেখা দেয় নানা ধরনের রোগ যেরকম, হৃদয় সম্পর্কিত রোগ, টাইপ-টু-ডায়াবেটিস, ক্যান্সার এবং স্নায়ুতন্ত্র সম্পর্কিত রোগ। মধুর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ বায়ো-অ্যাক্টিভ উপাদান এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান যেরকম ফ্ল্যাভোনয়েড এবং অ্যাসকরবিক অ্যাসিড পাওয়া যায়। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান গুলি সাহায্য করে আমাদের শরীরে ফ্রি-রেডিক্যাল এবং প্রতিক্রিয়াশীল অক্সিজেনের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বা কম করতে। যার ফলে আমাদের শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলি পুনরায় সক্রিয় এবং কার্যকর হয় এবং সেল ড্যামেজ হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়। তাই নিয়মিত মধু গ্রহণ করলে আমাদের মধ্যে ওই সমস্ত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
- মধুতে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে যার মধ্যে থাকে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড এবং গ্লুকোজ অক্সিডাইস যাদের পি-এইচ (potential hydrogen) অনেক কম। এই অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান গুলি সাহায্য করে ব্যাকটেরিয়ার ক্রমাগত বৃদ্ধিকে বন্ধ করতে এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান সাহায্য করে আমাদের যন্ত্রণা বা ব্যথা কে কম করতে। তাই পুড়ে যাওয়া বা আঘাত পাওয়া ক্ষতস্থানে আমরা মধু ব্যবহার করতে পারি। এছাড়াও যাদের গালে ব্রণ ও বা পিম্পলস থাকে তারা মধু সরাসরি ত্বকের উপর ব্যবহার করলে অনেক ভালো ফলাফল পেতে পারে।
- আমরা চিনি খাওয়ার পরিবর্তে সামান্য পরিমাণ মধু গ্রহণ করতে পারি তার কারণ মধু খাওয়ার উপকারিতা চিনির থেকে অনেক বেশি। নিয়মিত খুব বেশি পরিমাণ চিনি খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যার ফলস্বরূপ আমাদের মধ্যে দেখা যায় নানান রকমের শারীরিক অসুস্থতা যেরকম, হাই ব্লাড সুগার, কিডনি এবং হার্ট বা হৃদয় সম্পর্কিত রোগ। মধুতে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান তাই নিয়মিত মধু গ্রহণ করলে আমাদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে যার ফলে আমাদের মধ্যে টাইপ-টু-ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
- মধু খাওয়ার উপকারিতা আমাদের খাদ্য হজমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার কারণ মধুর মধ্যে প্রি-বায়োটিক উপাদান পাওয়া যায় যা আমাদের অন্ত্রে অবস্থিত গুড ব্যাকটেরিয়ার জন্য খুবই উপকারী। তাই নিয়মিত মধু খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে গুড ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং ডাইজেস্টিভ সিস্টেম অনেক উন্নত হয়। হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি নামক এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া সংঘটিত আলসার আমাদের গলা এবং পেটের মধ্যে বিভিন্ন অংশে হয়ে থাকে। নিয়মিত মধু গ্রহণ করলে ব্যাকটেরিয়া সংঘটিত আলসার হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়। শুধু তাই নয় ডায়রিয়া রোগ কমানোর জন্য আমরা মধু গ্রহণ করে থাকি যদিও এ বিষয় আরো অনেক তথ্যের প্রয়োজন।
- মধুতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C, ভিটামিন B এবং মিনারেলস যা আমাদের শরীরে ভিটামিন এবং মিনারেল বা খনিজ উপাদান এর চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। সাথে থাকে কিছু ফাইটো কেমিক্যাল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান যা আমাদের শরীর কে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস ঘটিত রোগের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম কে অনেক উন্নত করে তাই আমরা মধুকে প্রাকৃতিক ঔষধ বলে থাকি।
- মধুতে থাকে পলিফেনল যা আমাদের মাথার হিপোক্যাম্পাস অংশের যন্ত্রণাকে কমাতে পারে এবং আমাদের স্মৃতিশক্তিকে আরো উন্নত করতে সাহায্য করে তাই নিয়মিত মধু খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের মাথা যন্ত্রণা কম হয় শুধু তাই নয় আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য মধু খাওয়ার উপকারিতা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
- মধু খাওয়ার উপকারিতা আমাদের মুখের ভেতরের অংশের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ তার কারণ মধুতে আছে কিছু ফাইটো কেমিক্যাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা আমাদের মুখের ভেতর বিভিন্ন সংক্রমণ বা মাউথ ইনফেকশন সম্পর্কিত রোগ হওয়ার প্রবণতা কে অনেক কম করে। এমনকি দাঁতের গোড়ায় বা মাড়িতে ব্যাথা হওয়া এবং মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কে অনেক কম করতে সাহায্য করে।
- এক চামচ মধুতে ৬৪ ক্যালোরি পাওয়া যায়, তাই সকালে ব্যায়াম বা এক্সারসাইজের পূর্বে উষ্ণ গরম জলের সাথে মধু মিশিয়ে আমরা খেতে পারি। তার কারণ মধুতে থাকে প্রচুর ক্যালোরি, মিনারেল এবং ভিটামিন যা আমাদের শরীরের শক্তি বা এনার্জি কে বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে এবং আমাদের ব্যায়াম বা এক্সারসাইজের জন্য শক্তি বা এনার্জির যোগান দেয়।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : ডাবের জলের উপকারিতা সম্পর্কে ৯ টি আশ্চর্যজনক তথ্য।
মধু খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও সময় কি ?
- সকালে উষ্ণ গরম জলে পাতিলেবুর সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে আমরা খেতে পারি আমাদের এক্সারসাইজ বা ব্যায়ামের পূর্বে।
- সকালে গ্রীন টি বা লিকার চায়ের সাথে সামান্য মধু মিশিয়ে আমরা খেতে পারি।
- দুপুরে লাঞ্চ বা খাবারের এক ঘন্টা পর আমরা সরাসরি এক চামচ মধু গ্রহণ করতে পারি বা খেতে পারি।
- রাতে ডিনারের এক ঘন্টা পর আমরা এক চামচ মধু সরাসরি গ্রহণ করতে বা খেতে পারি।
- এছাড়া যদি আমাদের শরীর খারাপ বা ঠান্ডা লেগে থাকে তাহলে উষ্ণ গরম জলে তুলসী পাতা এবং আদার সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে আমরা গ্রহণ করতে পারি।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : বয়স ক্যালকুলেটর বা Age Calculator – Healthy Bangla.
মধু খাওয়ার অপকারিতা কি ?
- সব থেকে বড় ভুল আমাদের একদম ছোট বাচ্চাকে মধু খাওয়ানো। একদম ছোট বাচ্চাকে বা এক বছরের নিচের বাচ্চাকে একদমই মধু খাওয়ানো উচিত না তার কারণ মধুতে কিছু ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে যা, ওই ছোট বাচ্চার পেটের মধ্যে গিয়ে সামান্য পরিমাণ ক্ষতিকর জাতীয় পদার্থ বা টক্সিক উৎপন্ন করে।
- সাধারণভাবে মধু খাওয়া আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং উপকারী তবে কিছু মানুষের মধু খেলে শরীরে এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- যদি আপনার প্রথম থেকে ব্লাড সুগারের সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে বেশি পরিমাণ মধু গ্রহণ করলে বা খেলে আপনার শরীরের ইনসুলিনের ভারসাম্যতা হারাতে পারে এবং ব্লাড সুগারের মাত্রা বাড়তে পারে।
- আমাদেরকে বাজার বা মার্কেট থেকে এয়ার টাইট কাচের পাত্রে মধু কিনে আনার পর যত্ন সহকারে ব্যবহার করে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জায়গায় রেখে দিতে হবে যেখানে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, না হলে মধুতে খুব দ্রুত ফাঙ্গাস বা ব্যাকটেরিয়া প্রভাব পড়ে এবং ওই মধু যদি আমরা গ্রহণ করি বা খেয়ে থাকি তাহলে আমাদের পেটে ব্যথা হয় এমনকি ডায়রিয়া ও হতে পারে।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : গ্রিন টি এর উপকারিতা সম্পর্কে চমৎকার ৮ টি তথ্য।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : মধু গ্রহণ করার পূর্বে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে নেবেন।
Thank you everyone for coming to our website www.healthybangla.in and a warm welcome to all of you.
Hi, my name is Arunima Morial and I am from Kolkata, India.
I have been writing health related articles for the last 3 years.
All the articles me and my team write are always reviewed by Sagar Ghosh (Science Graduate, Location- Shyamnagar, West Bengal) and Dr Gautam Ghosh (B.H.M.S, M.D in Homoeopathy, Location- Shyamnagar, West Bengal).
We always share the reference web page link from where we get correct information in the article.
Please feel free to contact me on my email ID sg133322@gmail.com