পানের মধ্যে ঔষধি গুনাগুন আছে এবং আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে পান পাতার ব্যবহার বহুদিন ধরে হয়ে চলেছে। পান পাতার মধ্যে পাওয়া যায়, অ্যালকালয়েড, ফ্লাভোনয়েড, ট্যানিন এবং সাপোনিন সহ একাধিক উপাদান। এছাড়াও পানের মধ্যে থাকে অ্যান্টি-মাইক্রোবাল, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ক্যান্সার উপাদান।
তাই নিয়মিত পান খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস দ্বারা সংঘটিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। আমাদের পাচনতন্ত্র এবং হজম ক্ষমতা অনেক উন্নত হয়। নিয়মিত পান গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। তাই নিয়মিত পান খাওয়ার উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শুধু তাই নয় পান পাতা প্রাকৃতিক মাউথ ফ্রেশনার হিসেবেও কাজ করে। আমরা দৈনন্দিন জীবনে নিয়মিত ভাবে পান খেয়ে বা গ্রহণ করে থাকি কিন্তু এই পান খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের জানা আছে কি ? তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় পান পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্ক।
পান পাতার উপকারিতা কি?
পান পাতার পুষ্টিগত গুনাগুন বা নিউট্রেশন ফ্যাক্ট,
একটি সতেজ পান পাতার মধ্যে,
- ৩ থেকে ৩.৫ % প্রোটিন পাওয়া যায়,
- ২.৩ থেকে ৩.২ % খনিজ উপাদান পাওয়া যায়,
- ০.৪ থেকে ১ % ফ্যাট পাওয়া যায়,
- ২.৩ % ফাইবার পাওয়া যায়,
- ০.২৫ % ক্লোরোফিল পাওয়া যায়।
এছাড়াও পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান যেরকম,
ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ফসফরাস, আয়রন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি।
ব্যথা কমাতে সাহায্য করে :
অনেক সময় আমরা দেখেছি আঘাতের ফলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন স্থান ফুলে যায় এবং যন্ত্রনা বা ব্যথা হয়। এছাড়াও আমাদের মধ্যে কিছু ব্যথা থাকে যেরকম কোমরে ব্যথা, হাঁটুতে ব্যথা, পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা ইত্যাদি। এই ব্যথা বা যন্ত্রণার জন্য আমার নিয়মিত পান খেতে বা গ্রহণ করতে পারি।
তার কারণ পান পাতার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান যেরকম ফিনোলিক উপাদান, ফ্লাভোনয়েড এবং টারপিনয়েড যা আমাদের ব্যথা বা যন্ত্রনাকে কম করতে সাহায্য করে। তাই পান পাতা গ্রহণ করলে বা খেলে আমাদের ব্যথা বা যন্ত্রণা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে :
নিয়মিত পান খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের হজম ক্ষমতা অনেক উন্নত হয়। তার কারণ পান খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের প্যানক্রেটিক ডাইজেস্টিভ এনজাইম এর পরিমাণ বৃদ্ধি হয়। এই এনজাইম আমাদের খাদ্য হজমে অনেক সাহায্য করে।
এছাড়াও পানের মধ্যে কিছু ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান থাকে যা আমাদের গ্যাস্ট্রিক আলসার হওয়ার সম্ভাবনাকে অনেক কম করে। শুধু তাই নয় পানের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার, তাই ফাইবার আমাদের খাদ্য পচনে বা পাচনতন্ত্রকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
পানের মধ্যে থাকা এই ফাইবার আমাদের পেটের মধ্যে গুড ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণকে বাড়িয়ে দেয় বা নিয়ন্ত্রণে রাখে এর ফলে আমাদের হজম ক্ষমতা অনেকাংশে বেড়ে যায়, এবং আমাদের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য বা কনস্টিপেশনের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। তাই উন্নত পাচনতন্ত্রের জন্য পান খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি খাদ্য।
রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ :
যদি আমাদের শরীরে ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা কমে যায় তাহলে আমাদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যা আমাদের হাই ব্লাড সুগার এর অন্যতম কারণ। পান পাতার মধ্যে অ্যান্টি-ডায়াবেটিক উপাদান পাওয়া যায়।
যা আমাদের শরীরে ইনসুলিনের সংবেদনশীলতাকে বৃদ্ধি করে এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই নিয়মিত পান খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে তাই ব্লাড সুগার অথবা ডায়াবেটিক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : কলমি শাকের উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে ৯ টি বিস্ময়কর তথ্য।
মাউথ ফ্রেশনার হিসেবে কাজ করে :
পানির মধ্যে অ্যান্টি-মাইক্রোবাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান পাওয়া যায়। তাই নিয়মিত পান খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের মুখের মধ্যে বিভিন্ন রকম ইনফেকশন বা সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম হয়, আমাদের মুখের ভেতরের অংশ পরিষ্কার থাকে, দাঁত ও মাড়ি সুস্থ থাকে এবং মুখের ভেতরের রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
শুধু তাই নয় পান খেলে আমাদের মুখো নিঃসৃত লালা রসের মধ্যে অ্যাসকরবিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে যা আমাদের মুখো গহবর এর মধ্যে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াল বা ফাংগাল ইনফেকশনের সম্ভাবনাকে কম করে।
ক্যান্সার রোধ করে :
পান পাতার মধ্যে অ্যান্টি-কারসিনোজেনিক বৈশিষ্ট্য থাকে তার কারণ পানের মধ্যে পলিফেনাল উপাদান পাওয়া যায়। লুটেওলিন এবং আপিজেনিন দুইটি ফেনোলিক উপাদান যা আমাদের শরীরে ক্যান্সার কোষের ক্রমাগত বৃদ্ধিকে বন্ধ করতে পারে।
তাই নিয়মিত পানপাতা গ্রহণ করলে বা খেলে আমাদের শরীরে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। যদিও এই বিষয়ে আরো অনেক তথ্য ও গবেষণার প্রয়োজন আছে।
অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টি-ফাংগাল বৈশিষ্ট্য :
অনেক সময় আমরা দেখেছি আমাদের শরীরের ত্বকের উপর এবং বিশেষ করে আমাদের পায়ে বিভিন্ন প্রকার ফাংগাল ইনফেকশন বা সংক্রমণ হয়। সঠিকভাবে চিকিৎসা না করলে এই সংক্রমণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে।
পান পাতার মধ্যে এসেন্সিয়াল অয়েল বা অপরিহার্য তেল পাওয়া যায়। এই তেল অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান রূপে আমাদের শরীরে কাজ করে। তাই ইনফেক্টেড জায়গায় অথবা সংক্রমিত স্থানে যদি আমরা পান পাতার রস ব্যবহার করতে পারি তাহলে খুব দ্রুত আমাদের ফাঙ্গাস দ্বারা ঘটিত সংক্রমণ ঠিক হয়ে যাবে এবং আমরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবো
শুধু তাই নয় পান পাতার মধ্যে কিছু অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে যা আমাদের ত্বকের উপর ব্যাকটেরিয়া সংঘটিত সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনাকে কম করে।
সর্দি কমাতে সাহায্য করে :
আমাদের যদি খুব ঠান্ডা লাগা বা সর্দি লাগার প্রবণতা থাকে তাহলে পান পাতা আমাদের জন্য ভীষণভাবে উপকারী। তার কারণ পান পাতার মধ্যে অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান পাওয়া যায়। যা ব্যাকটেরিয়া সংঘটিত বিভিন্ন সংক্রমণকে কম করতে সাহায্য করে। যার ফলে দ্রুত ঠান্ডা লেগে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
এছাড়াও পান পাতার মধ্যে কিছু অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান থাকে যা আমাদের এস্থামা বা শ্বাস সম্পর্কিত সমস্যাকে কম করতে সাহায্য করে।
চুলের যত্নে পান পাতার ব্যবহার :
পান পাতার মধ্যে এসেনশিয়াল ওয়েল বা অপরিহার্য তেল পাওয়া যায়, এছাড়াও পাওয়া যায় অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। যা আমাদের মাথার ত্বকের বা স্কাল্পের উপর বিভিন্ন ফাংগাল এবং ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ বা ইনফেকশন কে কম করতে সাহায্য করে।
তাই যদি আমরা পান পাতার রস আমাদের চুলে ব্যবহার করি তাহলে আমাদের মাথার ত্বকে বিভিন্ন ইনফেকশন বা সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। যার ফলে আমাদের মাথার ত্বকে খুশকি এবং বিভিন্ন সংক্রমনের জন্য ক্রমাগত চুল উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম হয় এবং আমাদের চুলের গোড়া অনেক শক্ত হয়। তাই পান পাতার রস আমাদের চুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।
এছাড়াও পান পাতা শরীরের মেটাবালিজম বা বিপাকীয় হার কে বৃদ্ধি করতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে সারা শরীরে ব্লাড সার্কুলেশন বা রক্ত সঞ্চালন সঠিকভাবে হয়।
পান পাতা আমাদের শরীরের পিএইচ (potential of hydrogen) এর মাত্রা কে সঠিক রাখতে সাহায্য করে। আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকারক পদার্থ বা টক্সিন এর পরিমাণকে কম করতে সাহায্য করে।
পান পাতার ব্যবহার :
সাধারণত খাবার পরে বা অনুষ্ঠান বাড়িতে খাওয়া-দাওয়ার পরে পান খাওয়ার রীতি বহুদিন ধরে প্রচলিত।
- পান পাতাটি অবশ্যই পরিষ্কার করে ধুয়ে নিয়ে তারপর খাওয়া উচিত।
- পান পাতা চিবানোর ফলে আমাদের মুখে লালা গ্রন্থির নিঃসরণ বেড়ে যায় এবং সেটি আমাদের খাবারকে হজম করার ক্ষেত্রে ভীষণভাবে সহায়ক।
- পান পাতায় মৌরি, এলাচ এবং লবঙ্গ মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
পান খাওয়ার কোন সঠিক নিয়ম নেই, তবে খাদ্য গ্রহণের পরে পান খাওয়ার রীতি প্রচলন রয়েছে তবে অনেকেই সখ করে নিজের ইচ্ছায় এই পান খেয়ে থাকেন।
এছাড়াও বিভিন্ন মসলা সহযোগে পান খেলে সুগন্ধ বা সুবাস তৈরি হয় এবং বেশ তৃপ্তি বোধ হয়।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : মেথি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অবাক করা ৯ টি তথ্।
পান খাওয়ার অপকারিতা :
পান আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী হওয়ার পাশাপাশি এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। সেগুলো আমাদের জেনে রাখা উচিত। কারণ কোন কিছুই অত্যাধিক পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত নয়। এর ফলে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে।
- শুধু পান পাতা চিবিয়ে খেলে সেটা আমাদের হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। এর অপকারিতার দিক সেরকম নেই। তবে জর্দা, চুন এবং সুপারি মোটেই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয়, এটি ক্ষতিকর বলেই বিবেচিত হয়।
- জর্দা, চুন, সুপারি যুক্ত পান আমাদের দাঁতের জন্য ক্ষতিকারক। ক্রমাগত জর্দা বা তামাক যুক্ত পান গ্রহণ করলে আমাদের মুখগহবরে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
- ছোট বাচ্চাদের এবং গর্ভবতী মায়েদের পান খাওয়া একদম উচিত নয়।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : পান পাতা গ্রহণের পূর্বে বা গ্রহণ করার পর যদি কোন রকম কোন সমস্যার সম্মুখীন হন তবে অবশ্যই নিকটবর্তী কোন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
Thank you everyone for coming to our website www.healthybangla.in and a warm welcome to all of you.
Hi, my name is Arunima Morial and I am from Kolkata, India.
I have been writing health related articles for the last 3 years.
All the articles me and my team write are always reviewed by Sagar Ghosh (Science Graduate, Location- Shyamnagar, West Bengal) and Dr Gautam Ghosh (B.H.M.S, M.D in Homoeopathy, Location- Shyamnagar, West Bengal).
We always share the reference web page link from where we get correct information in the article.
Please feel free to contact me on my email ID sg133322@gmail.com