নিয়মিত পালং শাক খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের চোখের দৃষ্টি শক্তি অনেক উন্নত হয়, আমাদের রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং আমাদের শরীরের হাড় অনেক শক্ত ও দৃঢ় হয় এমনকি ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। পালং শাক এর পুষ্টিগত গুনাগুনের উপর নির্ভর করে আমরা পালং শাককে সুপার ফুড বলে থাকি। তাই পালং শাকের উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পালং শাক শীতকালে সব থেকে বেশি পরিমাণে চাষ হয় কিন্তু আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির কারণে এখন পালং শাক সারা বছরই পাওয়া যায়। পালং শাক খুব সহজেই মার্কেট বা বাজারে পাওয়া যায় এবং এর মূল্য খুবই কম।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পালং শাক কে আমরা বিভিন্নভাবে খেয়ে বা গ্রহণ করে থাকি এবং পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য নিয়ে আলোচনা করা খুবই প্রয়োজন তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় পালং শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
পালং শাকের উপকারিতা কি ?
১০০ গ্রাম পালং শাকের পুষ্টিগত গুণাগুণ বা নিউট্রেশনাল ফ্যাক্ট,
- ক্যালোরি ২৩
- প্রোটিন ২.৮৬ গ্রাম
- ফ্যাট ০.৩৯ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট ৩.৬৩ গ্রাম (ডায়েটারি ফাইবার ২.২ গ্রাম)
- জল ৯১.৪ গ্রাম
পালং শাকে কোন কোন ভিটামিন এবং মিনারেল থাকে?
- ভিটামিন C
- ভিটামিন B৬
- ভিটামিন A
- ভিটামিন E
- ভিটামিন K
- ক্যালসিয়াম
- আয়রন
- ম্যাগনেসিয়াম
- ফসফরাস
- পটাশিয়াম
- সোডিয়াম
- জিংক
- কপার
- সেলেনিয়াম
- যেকোনো শাকের মধ্যে বা গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদের মধ্যে ক্লোরোফিল থাকে, যার জন্য উদ্ভিদের রং সবুজ হয়। এই ক্লোরোফিল এর মধ্যে কিছু অ্যান্টিক্যান্সার এনজাইম রয়েছে এবং কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যেগুলি আমাদের শরীরের ফ্রি-রেডিকেল বাড়তে দেয় না তাই আমরা যদি নিয়মিত পালং শাক গ্রহণ করি বা খাই তাহলে আমাদের ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
- পালং শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ মিনারেলস বা খনিজ পদার্থ থাকে এবং বিশেষ করে পটাশিয়াম। নিয়মিত পালং শাক গ্রহণ করলে বা খেলে আমাদের শরীরে পটাশিয়ামের অভাব হবে না। আর এই পটাশিয়াম আমাদের শরীরের রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তাই পালং শাকের উপকারিতা আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস এর একটি শ্রেণী ক্যারটিনয়েডস। জিক্স্যানথিন এবং লুটেইন এই দুই ধরনের ক্যারটিনয়েডস পালং শাকের মধ্যে পাওয়া যায়। যা আমাদের দৃষ্টি শক্তিকে উন্নত করে এবং সূর্যের প্রখর রোদে আমাদের চোখকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। ওই ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস গুলি আমাদের চোখে ছানি পড়ার প্রবণতাকে কম করে। এছাড়াও পালং শাকে ভিটামিন A প্রচুর পরিমাণ পাওয়া যায় যা আমাদের চোখের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।
- পালং শাকের মধ্যে আলফা-লিপইক অ্যাসিড নামে এক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা আমাদের রক্তে ইনসুলিনের সংবেদনশীলতাকে বাড়িয়ে দেয় ফলে আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই পালং শাকের উপকারিতা আমাদের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- পালং শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং প্রায় ৯০ শতাংশ জল থাকে। আমাদের খাদ্য পচনে ফাইবার খুবই সহায়তা করে তাই নিয়মিত পালং শাক গ্রহণ করলে বা খেলে আমাদের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য বা কনস্টিপেশনের সমস্যা হয় না।
- পালং শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল বা খনিজ পদার্থ থাকে যেরকম ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম ইত্যাদি। ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের হাড় কে শক্ত এবং দৃঢ় করার জন্য প্রয়োজনীয় একটি খনিজ পদার্থ। পালং শাকে ভিটামিন K এবং ক্যালসিয়াম থাকে এবং ওই ভিটামিনের সাহায্যে আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের শোষণ হয় এবং আমাদের শরীরের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয়।
- পালং শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং মিনারেল থাকে। এছাড়াও পালং শাকের মধ্যে বিশেষ কিছু ফাইটোকেমিক্যাল থাকে এবং বিশেষ করে ভিটামিন C যা আমাদের শরীর কে বিভিন্ন রোগের সাথে লড়তে সাহায্য করে এবং আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম কে উন্নত করে।
- শীতকালে প্রবল ঠান্ডার প্রভাবে আমাদের ত্বকের বিভিন্ন অংশ ফেটে যায় এবং গ্রীষ্মকালে প্রবল গরমে আমাদের ত্বকে ঘামাচি এবং বিভিন্ন ইনফেকশন হবার সম্ভাবনা থাকে। ভিটামিন A আমাদের ত্বকের জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয় একটি উপাদান যা আমাদের ওইসব সমস্যা থেকে রক্ষা করে। পালং শাকে অনেক বেশি পরিমাণ ভিটামিন A পাওয়া যায়। তাই নিয়মিত পালং শাক গ্রহণ করা আমাদের ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- আমাদের লান্স বা ফুসফুসে যখন কোন ব্যাকটেরিয়াল এবং ভাইরাল সংক্রমণ বা ইনফেকশন হয় তখন আমাদের মধ্যে নানান ধরনের সমস্যা দেখা দেয় যেরকম শ্বাসকষ্ট বা অ্যাস্থমা, কাশি, সর্দি ইত্যাদি। আমাদের ফুসফুস বা লান্সের জন্য ভিটামিন C, ভিটামিন E এবং ভিটামিন A খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ভিটামিন গুলি পালং শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। ওই ভিটামিন গুলি আমাদের ফুসফুস বা লান্স এর কার্যকারীতা কে অনেক বাড়িয়ে দেয় তাই নিয়মিত পালং শাক গ্রহণ করলে আমাদের শ্বাসকষ্ট বা অ্যাস্থমা হবার প্রবণতা অনেক কমে যায়।
- আমাদের রক্তে যখন আয়রনের অভাব বা ঘাটতি হয় তখন আমাদের অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। পালং শাকে প্রচুর পরিমাণ মিনারেল বা খনিজ পদার্থ থাকে তার মধ্যে আয়রন একটি। তাই নিয়মিত পালং শাক গ্রহণ করলে আমাদের রক্তে আয়রনের অভাব বা ঘাটতি হয় না এবং অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা হওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : আদা খাওয়ার উপকারিতা বিষয়ে অবাক করা ১০ টি তথ্য।
পালং শাক খাওয়ার নিয়ম কি ?
পালং শাকের সব থেকে বেশি পুষ্টিগত গুণাগুণ পেতে হলে দুপুরে বা রাতে খাবারের সাথে পালং শাক খেতে বা গ্রহণ করতে হবে।
আমরা বিভিন্নভাবে পালং শাক খেয়ে বা গ্রহণ করে থাকি যেরকম,
পালং শাক দিয়ে বিভিন্ন তরকারি বানিয়ে খেয়ে থাকি। পালং শাক ছোট ছোট টুকরো করে কেটে আমরা বিভিন্ন ডাল বা তরকারি রান্নাতে ব্যবহার করতে পারি। পালং শাক বিভিন্ন স্যালাডে ব্যবহৃত হয়।
পালং শাক এর অপকারিতা কি ?
যদি আমরা অল্প পরিমাণ পালং শাক নিয়মিত খাই বা গ্রহণ করি তাহলে খুব বেশি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবার সম্ভাবনা নেই। তবে খুব বেশি পালং শাক খাওয়ার অপকারিতা আছে যেরকম,
- পালং শাকের মধ্যে অক্সালিক অ্যাসিড থাকে যা ক্যালসিয়ামের সাথে মিশ্রিত হয়ে অক্সালেট, অদ্রাব্য পদার্থ তৈরি করে যা আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের শোষণ কমিয়ে ঘাটতি আনতে পারে।
- পালং শাকে প্রচুর পরিমাণ মিনারেল বা খনিজ পদার্থ থাকে বিশেষ করে ক্যালসিয়াম। যা খুব বেশি আমাদের শরীরে জমতে থাকলে কিডনিতে স্টোন বা পাথর হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- পালং শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ অর্গানিক অ্যাসিড আছে যা খুব বেশি আমাদের শরীরের জন্য ভালো নয়। তার কারণ খুব বেশি অর্গানিক অ্যাসিড বা জৈব অ্যাসিড আমাদের পেটের সমস্যার কারণ হতে পারে যেরকম বদহজম, গ্যাস এবং অ্যাসিডিটি।
- আমাদের শরীরের জন্য ভিটামিন K এর ভীষণ প্রয়োজন কারণ আমাদের কোথাও কেটে গেলে বা কোন দুর্ঘটনায় চোট পেলে যদি রক্ত বেরোতে থাকে তাহলে ভিটামিন K আমাদের রক্ত জমাট হতে সাহায্য করে। কিন্তু খুব বেশি ভিটামিন K এবং মিনারেলস আমাদের রক্ত কে গাড়ো করে তোলে, যা আমাদের স্ট্রোক এবং হৃদয় ঘটিত রোগের কারণ। তাই খুব বেশি পালং শাক খাওয়া আমাদের জন্য ভালো নয় কারণ পালং শাকে ভিটামিন K এর পরিমাণ অনেক বেশি।
পালং শাক কি ভাবে রাখবো ?
মার্কেট বা বাজার থেকে পালং শাক কিনে এনে জলে ধুয়ে পরিষ্কার করে ব্যবহার করতে পারব। আবার পালং শাক কে ভালো করে শুকিয়ে নিয়ে কিছুদিনের জন্য ফ্রিজে রাখতে পারব পরবর্তী ব্যবহারের জন্য। তবে খুব বেশিদিন পালং শাক কে ফ্রিজে রেখে ব্যবহার করা ভালো নয় তার কারণ পালং শাকে খুব তাড়াতাড়ি পচন ধরে।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : পুদিনা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে অভূতপূর্ন ৮ টি তথ্য।
Thank you everyone for coming to our website www.healthybangla.in and a warm welcome to all of you.
Hi, my name is Arunima Morial and I am from Kolkata, India.
I have been writing health related articles for the last 3 years.
All the articles me and my team write are always reviewed by Sagar Ghosh (Science Graduate, Location- Shyamnagar, West Bengal) and Dr Gautam Ghosh (B.H.M.S, M.D in Homoeopathy, Location- Shyamnagar, West Bengal).
We always share the reference web page link from where we get correct information in the article.
Please feel free to contact me on my email ID sg133322@gmail.com