প্রাকৃতিক ভাবে খুশকি দূর করার উপায় – Healthy Bangla

Share With Your Friends

খুশকি দূর করার উপায়

 

আমাদের মাথার ত্বকের উপরের পাতলা আবরণ যখন খোসা হয়ে উঠতে থাকে তখন আমরা সেটিকে খুশকি বা ড্যানড্রাফ বলে থাকি। এই খুশকি বা ড্যানড্রাফের কারণে আমাদের নানান ধরনের সমস্যা হয় যেরকম চুলকুনি, স্কাল্প ইনফেকশন, ত্বক সম্পর্কিত সমস্যা এবং চুল উঠে যাওয়া ইত্যাদি।

খুশকি দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তর আলোচনার পূর্বে আমাদের অবশ্যই জানতে হবে খুশকি কেন হয় এবং আমরা যদি খুশকি কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারি তাহলে আমাদের কি সমস্যার সম্ভাবনা হতে পারে বা খুশকির ক্ষতির দিক।

আমাদের মাথার ত্বকের উপরের কোষগুলি যখন খুব দ্রুতহারে মারা যায় তখন খোসা হয়ে খুশকি বা ড্যানড্রাফ এর আকার ধারণ করে। তবে এর জন্য ম্যালাসেজিয়া নামক এক ফাঙ্গাস যথেষ্ট ভাবে দোষী। ওই ফাঙ্গাস গুলি মূলত পরজীবী যা আমাদের ত্বকের উপর বাস করে এবং পুরোপুরি আমাদের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে এবং আমাদের ত্বক থেকে যথার্থ পরিমাণ পুষ্টি বা নিউট্রিশন গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। ওই ফাঙ্গাস এর কারণে মূলত আমাদের খুশকি বা ড্যানড্রাফ হয়ে থাকে।

মূলত শীতকালে খুব শুষ্ক আবহাওয়ার জন্য সব থেকে বেশি খুশকি দেখা যায় ছোট বাচ্চাদের এবং প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা ও পুরুষদের মধ্যে। তাই আজ আমরা সঠিক পদ্ধতিতে খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করছি।

খুশকি কেন হয় বা মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ কি?

আমাদের মাথায় বিভিন্ন কারণে খুশকি হয়ে থাকে যেরকম,

  • শুষ্ক ত্বক বা ড্রাই স্কিন আমাদের মাথায় খুশকি হওয়ার অন্যতম কারণ। এই শুষ্ক ত্বক বা ড্রাই স্কিন সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে আমাদের আবহাওয়া এবং ত্বকের উপর। আমরা যদি নিয়মিত যথার্থ পরিমাণ জল পান না করি তাহলে আমাদের ত্বক শুষ্ক বা ড্রাই হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। শীতকালে আবহাওয়া খুবই শুষ্ক এবং ড্রাই হয় তাই শীতকালে আমাদের ত্বক বা স্কিন ও খুব শুষ্ক বা ড্রাই হয় তাই শীতকালে আমাদের খুশকি হওয়ার প্রবণতা অনেক বেড়ে যায়।

 

  • বিভিন্ন খাদ্য অথবা বস্তুতে আমাদের অ্যালার্জি থাকতে পারে। এই অ্যালার্জি আমাদের ত্বক বা স্কিনের মধ্যে চুলকানি অথবা ফুলে যাওয়া অথবা শুষ্ক ভাব তৈরি করে এবং এর কারণে আমাদের খুশকি হবার প্রবণতা বেড়ে যায়। তাই অ্যালার্জি আমাদের মাথায় খুশকি হবার আরেকটি কারণ।

 

  • আমরা যদি আমাদের চুলকে প্রতিদিন পরিষ্কার এবং যত্ন না করি তাহলেও আমাদের খুশকি হবার প্রবণতা বেড়ে যায়। নিয়মিত আমাদের চুলে শ্যাম্পু এবং তেল ও অন্যান্য বস্তু যেরকম পাতি লেবু, অ্যাপেল সিডার ভিনিগার, ডিম, পিয়াজের রস ইত্যাদি সঠিক ভাবে না ব্যবহার করি তাহলে আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্প পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে না এবং আমাদের চুলের সঠিক যত্ন নেওয়া হয় না তার ফলে আমাদের খুশকি হবার প্রবণতা বেড়ে যায়।

 

  • আমরা যদি খুব বেশি সময় সূর্যের প্রখর তাপে কাজ করি বা দাঁড়িয়ে থাকি তাহলেও আমাদের খুশকি হবার প্রবণতা বেড়ে যায় তার কারণ সূর্যের প্রখর তাপ আমাদের স্কিন এবং স্কাল্পের আদ্রতাকে খুব বেশি বাড়িয়ে দেয় যার ফলে আমাদের স্কাল্পে ইনফেকশন বা সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।

 

  • খুব বেশি ধুলোবালি বা ডাস্ট এবং অপরিষ্কার পরিবেশে কাজ করলে বা বেশি সময় থাকলে আমাদের স্কাল্পের ইনফেকশন বা সংক্রমণ হবার প্রবণতা বেড়ে যায় এবং আমাদের স্কাল্প খুবই শুষ্ক হয়ে ওঠে এবং আমাদের চুলকুনি, চুলের গোড়া নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং খুশকি হবার প্রবণতা খুব বেড়ে যায়।

 

  • ম্যালাসেজিয়া নামক এক ফাঙ্গাসের জন্য আমাদের খুশকি হয়। আমাদের চুল এবং ত্বক যদি আমরা নিয়মিত পরিষ্কার না করি তাহলে ওই ফাঙ্গাস আমাদের ত্বকের উপর বসবাস করে এবং সম্পূর্ণভাবে আমাদের উপর নির্ভর থাকে এবং আমাদের ত্বকের উপরের অংশ বা কোষগুলিকে ক্রমাগত ক্ষতিগ্রস্ত করে, যার ফলে আমাদের খুশকি হয়।

 

  • আমাদের যদি কোন কঠিন রোগ হয়ে থাকে এবং তার নিরাময়ের জন্য আমরা যদি নিয়মিত ঔষধ বা মেডিসিন গ্রহণ করি তাহলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া স্বরূপ আমাদের ত্বকের উপরের অংশ শুষ্ক এবং অমসৃণ হতে থাকে এবং আমাদের খুশকি হওয়ার প্রবণতা ও বেড়ে যায়।

খুশকি দূর করার উপায় কি?

আসুন আমরা আলোচনা করি খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে।

  • নিয়মিত নারকেল তেল ব্যবহার করে আমরা আমাদের চুলের খুশকি কে দূর করতে পারি। প্রতি সপ্তায় দুই থেকে তিনবার নারকেল তেল ব্যবহার করলে আমাদের স্কাল্প বা মাথার ত্বকের ড্রাই বা শুষ্ক ভাব কে কমাতে পারি এবং নিয়মিত নারকেল তেল ব্যবহার করা আমাদের ত্বক বা স্কিনের জন্য খুবই উপকারী এবং নারকেল তেলের মধ্যে ‍অ‍্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান রয়েছে যার ফলে আমাদের চুলে কোনরকম ইনফেকশন বা সংক্রমণ হয় না। তাই নারকেল তেলকে আমরা খুশকি দূর করার তেল রূপে ব্যবহার করতে পারি।

 

  • আমরা যদি আমাদের চুলে অ্যালোভেরা ব্যবহার করি তাহলে আমাদের খুশকি হওয়ার প্রবণতা কমে যায় তার কারণ অ‍্যালোভেরা জেল এর মধ্যে কিছু পরিমাণ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে যা আমাদের স্কিন বা ত্বককে বিভিন্ন ইনফেকশন বা সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করে। অ্যালোভেরা আমাদের রুক্ষ, পুড়ে যাওয়া বা ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক বা স্কিনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই অ্যালোভেরার ব্যবহার চুলের খুশকি দূর করার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায়।

 

  • গ্রিন টি অথবা চা গাছের তেলের ব্যবহার চুলের খুশকি দূর করার আরেকটি উপায়। গ্রিন টি বা চা গাছের তেলের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান রয়েছে যা আমাদের চুলকে এবং স্কাল্প বা ত্বককে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাস এর হাত থেকে রক্ষা করে তার ফলে আমাদের চুলের গোড়া যথেষ্ট শক্ত হয় এবং আমাদের স্কাল্প বা ত্বক বিভিন্ন ইনফেকশন বা সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পায় ফলে আমাদের খুশকি হবার প্রবণতাও কমে যায় তাই নিয়মিত গ্রিন টি অথবা চা গাছের তেল ব্যবহার করা আমাদের খুশকি দূর করার অন্যতম একটি পদ্ধতি।

 

  • অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের আমাদের শরীরে বিভিন্ন প্রকারের উপকারিতা আছে এবং তার মধ্যে একটি আমাদের খুশকি দূর করা। অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে অ্যাসিড এর মাত্রা অনেক বেশি যা আমাদের স্কিন বা ত্বকের পি এইচ বা প্রোটেনশিয়াল অফ হাইড্রোজেন এর পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ রাখে। শুধু তাই নয় অ্যাপেল সিডার ভিনিগার আমাদের ত্বক বা স্কিনের উপরের মৃত কোষের আবরণকে সরিয়ে নতুন কোষ উৎপন্ন হতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াল এবং ফাঙ্গাল ইনফেকশন থেকে আমাদের ত্বক বা স্কিনকে রক্ষা করে। তাই নিয়মিত অ্যাপেল সিডার ভিনিগার চুলে ব্যবহার করা আমাদের চুল পড়া ও খুশকি দূর করার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।

 

  • সাধারণত আমাদের কাছে অ্যাসপিরিন অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান বা ঔষধ রূপে পরিচিত তবে অ্যাসপিরিন ব্যবহার করে আমরা আমাদের খুশকি কে দূর করতে পারি কারণ অ্যাসপিরিন এর মধ্যে স্যালিসিলিক অ্যাসিড থাকে যা আমাদের চুলের খুশকি দূর করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অ্যাসিড। স্যালিসিলিক অ্যাসিড কে বিভিন্ন অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু তে ব্যবহার করা হয় খুশকি দূর করার জন্য তবে আমরা দুইটি অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট কে ভালো করে গুঁড়ো করে আমাদের জৈব শ্যাম্পু এর সাথে মিশিয়ে আমাদের চুলে ব্যবহার করতে পারি। ফলে আমরা খুশকি এবং অন্যান্য সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাই।

 

  • নিয়মিত পাতিলেবু ব্যবহার করে আমরা আমাদের খুশকি কে দূর করতে পারি। কারণ পাতিলেবু তে থাকে জৈব অ্যাসিড বা অর্গানিক অ্যাসিড যা আমাদের ত্বক এবং চুলের পি এইচ বা পটেনশিয়াল অফ হাইড্রোজেন এর পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে যার ফলে আমাদের বিভিন্ন রকমের ইনফেকশন বা সংক্রমণ এবং খুশকি হবার প্রবণতা কমে যায়। শুধু তাই নয় পাতিলেবুর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন C থাকে যা আমাদের ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। প্রতি সপ্তায় এক থেকে দুই দিন পাতি লেবুর রস ভালো করে পুরো মাথায় মেখে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

 

  • নিয়মিত মাথায় নিম তেল ব্যবহার করে আমরা আমাদের খুশকি কে দূর করতে পারি। বাজার বা মার্কেটে প্রচুর রকম নিম তেল পাওয়া যায় যেটি চুলের জন্য ব্যবহার যোগ্য অথবা নিম পাতা ভালো করে পেশাই করে নারকেল তেলের সাথে ভালো করে মিশিয়ে আমরা আমাদের চুলে ব্যবহার করতে পারি। নিম তেল অথবা নিম পাতার রস অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল। তাই নিম তেল অথবা নিম পাতার রস ব্যবহার করলে আমাদের মাথার স্কাল্প বা ত্বকে কোনরকম সংক্রমণ বা ইনফেকশন এবং খুশকি হওয়ার প্রবণতা কমে যায়।

 

  • যদি আমাদের মাথায় খুশকির পরিমাণ খুব বেশি বেড়ে যায় তাহলে আমরা বেকিং সোডা ব্যবহার করতে পারি। বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে বেকিং সোডার মধ্যে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে। তাই আমরা যদি আমাদের মাথায় বেকিং সোডা ব্যবহার করি তাহলে বিভিন্ন ফাঙ্গাস, চুলকুনি এবং খুশকির হাত থেকে পুরোপুরি রক্ষা পাবে।

খাদ্য অভ্যাস এর মাধ্যমে খুশকি দূর করার উপায় :

  • আমরা যদি নিয়মিত ভালো খাদ্য বা হেলদি ফুড গ্রহণ করি যার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেলস এবং প্রোটিন থাকে তাহলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম অনেক উন্নত হয়। যার ফলে আমাদের স্কিন বা ত্বকে কোনরকম সংক্রমণ বা ইনফেকশন এবং খুশকি হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। বিভিন্ন ফল যেরকম আপেল, কলা, পেয়ারা, লেবু ইত্যাদি।

 

  • টক দই এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ গুড ব্যাকটেরিয়া থাকে তাই টক দইকে আমরা ন্যাচারাল প্রোবায়োটিক বলে থাকি। নিয়মিত টক দই গ্রহণ করলে আমাদের হজম ক্ষমতা বা ডাইজেস্টিভ সিস্টেম উন্নত হয় এবং আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।

 

  • এরকম খাদ্য নিয়মিত গ্রহণ করা উচিত যার মধ্যে ওমেগা থি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যেরকম ডিম এবং মাছ। এই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের স্কিন বা ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।

 

  • খুব বেশি প্রাণীর মাংস বা রেড মিট, প্রসেস ফুড, প্যাকেজ ফুড, কেক, পেস্ট্রি, সুইট বা মিষ্টি এবং ফাস্টফুড আমাদের গ্রহণ করা উচিত না তার কারণ ওই জাতীয় খাদ্য গুলি আমাদের হজম শক্তি বা ডাইজেস্টিভ সিস্টেমকে দুর্বল করে এবং আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে শুধু তাই নয় আমাদের স্কিন বা ত্বককে খুব রুক্ষ করে তোলে এবং বিভিন্ন শারীরিক রোগ এবং খুশকি হবার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

 

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য : উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলি ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একবার আপনার ডক্টরের সাথে পরামর্শ করে নেবেন।


Share With Your Friends

Leave a Comment