চুলে তেল দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্ময়কর ৭ টি তথ্য

Share With Your Friends

চুলে তেল দেওয়ার নিয়ম

 

আমরা সবাই জানি তেল আমাদের চুলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত চুলে তেল ব্যবহার করলে আমাদের চুলের গোড়া অনেক শক্ত হয়, চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায় এবং আমাদের চুল অনেক উজ্জ্বল হয়। তবে চুলে তেল দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা থাকা খুবই প্রয়োজন। 

চুলে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন প্রকার তেল পাওয়া যায়, যার গুণগত মান আমাদের চুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সঠিক পদ্ধতিতে চুলে তেল ব্যবহার না করার জন্য ওই তেল গুলির সম্পূর্ণ উপকারিতা পাওয়া যায় না। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় চুলে তেল দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। 

 

চুলে তেল দেওয়ার নিয়ম কি ? 

প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন আমরা আমাদের চুলে তেল প্রয়োগ করতে পারি। যাদের স্কিন বা ত্বক একটু বেশি তৈলাক্ত তাদের ক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন মাথার চুলে তেল ব্যবহার করা যায়। 

পদ্ধতি : 

  • পর্যাপ্ত পরিমাণ তেল কে সরাসরি আমাদের মাথার ত্বকে ব্যবহার করতে হবে। 
  • তারপর আমাদের আঙুলের অগ্রভাগ দিয়ে গোল আকৃতি ভাবে ম্যাসাজ বা অঙ্গমর্দন করতে হবে চার থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য।
  • মাথায় ভালো করে তেল লাগানোর পর এক থেকে দুই ঘন্টার জন্য একটি পাতলা কাপড় বা আবরণ দিয়ে চুল এবং মাথা ঢেকে রাখা উচিত।
  • তারপর জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে আমাদের চুল পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে।

চুলে তেল দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনায় একটি কথা বলে রাখা খুবই প্রয়োজন, অনেক মানুষ রাতের বেলায় মাথায় তেল প্রয়োগ করে শুয়ে পড়ে এবং পরের দিন সকালে শ্যাম্পু ব্যবহার করে পরিষ্কার করে চুল ধুয়ে নেয়। এই পদ্ধতিতে চুলে তেল ব্যবহার করলে চুলের কোনরকম ক্ষতি হয় না বরং চুলের গোড়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণ তেল পৌছায়। তবে যাদের খুব সহজে ঠান্ডা লেগে যাওয়ার প্রবণতা থাকে তাদের এই পদ্ধতি ব্যবহার না করাই ভালো। 

আমাদের চুলে তেল ব্যবহারের পূর্বে, চুলে ব্যবহার যোগ্য তেল কে কিছু সেকেন্ডের জন্য গরম করতে পারি। তারপর উষ্ণ গরম তেল আমাদের চুলে ব্যবহার করতে পারি। উষ্ণ গরম তেল খুব সহজেই আমাদের চুলের গোড়ায় পৌঁছাতে পারে যা আমাদের ফলিকল গুলির কার্যকারিতা কে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। 

 

চুলে ব্যবহারযোগ্য তেল কি কি ? 

চুলে তেল দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনায় চুলে ব্যবহারযোগ্য তেলগুলি সম্পর্কে অবগত থাকা উচিত। চুলে ব্যবহারযোগ্য তেলের দুইটি প্রকারভেদ হয় যেরকম, 

বাহক বা ক্যারিয়ার অয়েল :

এই প্রকার তেল গুলি আমাদের চুলে সরাসরি ব্যবহার করতে পারি এবং এই তেল গুলির সাথে কিছু প্রয়োজনীয় দ্রব্য যেরকম ডিম, অ্যালোভেরা জেল, পেঁয়াজের রস ইত্যাদি মিশিয়ে আমাদের চুলে প্রয়োগ করতে পারি। বাহক বা ক্যারিয়ার অয়েল আমরা প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করতে পারি এবং এই তেল ব্যবহার করলে কোনরকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অ্যালার্জেটিক রিয়াকশন হবার সম্ভাবনা অনেক কম। 

বাহক বা ক্যারিয়ার অয়েল গুলির মধ্যে নারকেল তেল, আলমন্ড অয়েল, অলিভ অয়েল, ক্যামেলিয়া অয়েল এবং ক্যাস্টর অয়েল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

প্রয়োজনীয় বা এসেন্সিয়াল অয়েল : 

আমাদের মাথায় ব্যবহারযোগ্য কিছু তেল আছে যে তেল গুলির নির্দিষ্ট কিছু কাজ আছে যেরকম, কিছু তেল ব্যবহার করে আমাদের চুলকে দ্রুত বৃদ্ধি করা হয়, আবার আমাদের চুল পড়া বন্ধ করার জন্য কিছু তেল ব্যবহার করতে পারি, অথবা চুলে খুশকি বা ইনফেকশনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু তেল ব্যবহার করতে পারি। এই তেল গুলিকে প্রয়োজনীয় বা এসেন্সিয়াল অয়েল বলে তবে প্রয়োজনীয় বা এসেন্সিয়াল অয়েল ব্যবহারের পূর্বে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত। 

১০ থেকে ১৫ ফোটা প্রয়োজনীয় বা এসেন্সিয়াল অয়েল এর সাথে দুই থেকে তিন চামচ বাহক বা ক্যারিয়ার অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারি আমাদের চুলে।

প্রয়োজনীয় বা এসেন্সিয়াল অয়েল গুলির মধ্যে ল্যাভেন্ডার অয়েল, পেপারমিন্ট অয়েল, রোজমেরি অয়েল, লেমন গ্রাস অয়েল, টি ট্রি অয়েল বা চা গাছের থেকে নিঃসারিত তেল, আমলা অয়েল বা আমলকি থেকে নিঃসারিত তেল, অনিয়ন অয়েল বা পেঁয়াজ থেকে প্রস্তুত তেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

 

প্রতি সপ্তাহে কতবার চুলে তেল দেওয়া উচিত? 

চুলে তেল দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কিত আলোচনায়, প্রতি সপ্তাহে কতবার চুলে তেল দেওয়া উচিত সেই বিষয়ে আমাদের জেনে রাখা খুবই প্রয়োজন। আয়ুর্বেদে বলে প্রতিদিন মাথায় তেল দিতে, যা কিনা “দিনাচারিয়া” এর একটি অংশ। তবে প্রতিদিন মাথায় তেল দিয়ে জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে ধুয়ে নেওয়া আমাদের পক্ষে খুবই কঠিন তাই প্রতি সপ্তাহে ন্যূনতম দুই দিন মাথায় তেল দেওয়া উচিত। 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ :  চুলের গোড়া শক্ত করার উপায় সম্পর্কে অভূতপূর্ন ৭ টি তথ্য

 

চুলে তেল ব্যবহারের কারণ কি ?  

  • চুলে তেল দিয়ে যখন আমরা ম্যাসাজ বা অঙ্গমর্দন করি তখন আমাদের মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যার ফলে আমাদের মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকল গুলি অনেক বেশি কার্যকরী হয়ে ওঠে, যা আমাদের চুলের জন্য খুবই উপকারী। 
  • বিভিন্ন তেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং মিনারেল পাওয়া যায় যা আমাদের চুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সব থেকে বেশি পরিমাণ ভিটামিন ই তেলের মধ্যে পাওয়া যায় যা আমাদের চুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 
  • বেশিরভাগ তেল গুলির মধ্যে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবোল উপাদান পাওয়া যায় যা আমাদের মাথার ত্বককে বিভিন্ন সংক্রমণ বা ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা করে। যার ফলে আমাদের চুলে খুশকি হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায় এবং আমাদের চুল বিভিন্ন ইনফেকশন এর হাত থেকে রক্ষা পায়। 
  • নিয়মিত চুলের তেল দিলে চুলের রুক্ষ ভাব অনেক কমে যায়, চুল ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায় এবং নতুন চুল গজানোর সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : চুলের যত্ন নেওয়ার উপায় সম্পর্কে চমৎকার ৮ টি তথ্য

 

কিছু সতর্কতা : 

চুলে তেল দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনায় কিছু সতর্কতা আমাদের জেনে রাখা খুবই প্রয়োজন যেরকম,

  • মাথার চুলে তেল লাগানোর কিছুক্ষণ পর চিরুনি ব্যবহার করা একদম উচিত নয়। তেল লাগানোর পর চিরুনি ব্যবহার করলে আমাদের চুলের গোড়া ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। 
  • চুলে তেল লাগানোর ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে আমরা যদি চুল ধুয়ে ফেলি তাহলে তেল টির গুণগতমান বা উপকারিতা আমরা পাইনা। তাই ন্যূনতম ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা আমাদের চুলের তেল ব্যবহারের পর সময় দেওয়া উচিত।  
  • আমরা উপরে আলোচনা করেছি যে আমাদের চুলে হট অয়েল বা উষ্ণ গরম তেল ব্যবহার করা উচিত। তবে খুব বেশি গরম তেল আমাদের চুলের জন্য এবং মাথার ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক। তাই খুব সামান্য গরম তেল ব্যবহার করা উচিত। 
  • চুলে তেল ব্যবহারের পর কেমিক্যাল বা রাসায়নিক মুক্ত জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত।। খুব বেশি কেমিক্যাল যুক্ত শ্যাম্পু আমাদের চুলের জন্য ভালো নয়। 

 

 


Share With Your Friends