আমলকি খাওয়ার উপকারিতা বিষয়ে ৮ টি অবিশ্বাস্য তথ্য

Share With Your Friends

আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

আমলকির মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন C, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান এবং ফাইবার পাওয়া যায়। তাই নিয়মিত আমলকি খাওয়ার উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

আমলকি প্রাচীন ভারতবর্ষের একটি ফল যা সারা বিশ্বে gooseberry নামে পরিচিত। ভারতবর্ষের প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি হল আয়ুর্বেদ এবং আয়ুর্বেদে আমলা বা আমলকি নিয়ে প্রচুর তথ্য পাওয়া গেছে।আমলকির পুষ্টিগত গুনাগুন বা নিউট্রেশনাল ফ্যাক্ট অনেক বেশি তাই আমলকি কে সুপার ফুড (super food) বলা হয়। 

দৈনিক সামান্য পরিমাণ কাঁচা আমলকি খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের ব্লাড সুগার, কোলেস্টেরল এবং ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়াও আমলকির অনেক উপকারিতা রয়েছে তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় আমলকি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।

 

আমলকি খাওয়ার উপকারিতা :

আমলকির পুষ্টিগত গুনাগুন বা নিউট্রেশনাল ফ্যাক্ট : 

২০০ গ্রাম আমলকিতে আছে,

  • ক্যালোরি ৪৪%
  • কার্বোহাইড্রেট ২০.৩৬ গ্রাম (ডায়েটারি ফাইবার ৮.৬ গ্রাম)
  • টোটাল ফ্যাট ১.১৬ গ্রাম
  • প্রোটিন ১.৭৬ গ্রাম

 

 বিভিন্ন ভিটামিন এবং মিনারেল :

  • ভিটামিন A
  • ভিটামিন B১, B২, B৩, B৫, B৬, B৯
  • ভিটামিন C
  • ভিটামিন E
  • ক্যালসিয়াম
  • কপার
  • আয়রন
  • ম্যাগনেসিয়াম
  • ফসফরাস
  • পটাশিয়াম
  • সোডিয়াম
  • জিংক ইত্যাদি।

 

 ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট উপাদান :

  • ফ্লাবোনল্স
  • অ্যান্থোসায়ানিন
  • অ্যারোমেটিক অ্যাসিড
  • অর্গানিক অ্যাসিড

 

  • আমলকি তে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট পাওয়া যায়। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং ভিটামিন C যা আমাদের বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। তাই আমলকি নিয়মিত গ্রহণ করলে বা খেলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে বা ইমিউনিটি সিস্টেম উন্নত হয়।
  • আমলকি খাওয়ার উপকারিতা আমাদের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমলকিতে থাকে ডায়েটারি ফাইবার যা শরীরে অতিরিক্ত সুগারকে শোষণ করে নেয় এবং আমাদের রক্তে সুগারের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় আমলকি তে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড পাওয়া যায়। এই ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড সাহায্য করে আমাদের শরীরের অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট কে শোষণ করতে যার ফলে আমাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ কমতে থাকে। তাই নিয়মিত আমলকি খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের ব্লাড সুগার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 
  • যদি আমাদের শরীরে আয়রনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তাহলে আমাদের মস্তিষ্কে বা ব্রেনের কোষ গুলোতে ও আয়রনের পরিমাণ বাড়তে থাকে, যার ফলে আমাদের শরীরে ফ্রি-রেডিকেল বেড়ে যায়। এই ফ্রি-রেডিকেল যদি আমাদের শরীরে খুব বেশি বৃদ্ধি পায় তাহলে আমাদের মস্তিষ্কের এবং শরীরের বিভিন্ন অংশের কোষগুলি ক্রমাগত ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও বেড়ে যায়। যার ফলে আমাদের মস্তিষ্ক সংক্রান্ত নানান রোগব্যাধি হবার প্রবণতা বেড়ে যায় যেরকম, অ্যালজাইমা এবং স্ট্রোক। আমলকিতে থাকে অর্গানিক অ্যাসিড যার মধ্যে ২০ মিলিগ্রামের কাছাকাছি সাইট্রিক অ্যাসিড‌ থাকে একটি আমলকি তে, যা আমাদের শরীর এবং কোষের মধ্যে থাকা আয়রনের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং আমাদেরকে অ্যালজাইমা এবং স্ট্রোক এর হাত থেকে রক্ষা করে।
  • আমলকিতে পাওয়া যায় অনেক বেশি পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান যেরকম, ফ্লাবোনল্স, অ্যান্থোসায়ানিন, অ্যারোমেটিক অ্যাসিড। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান গুলি সাহায্য করে আমাদের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলিকে পুনরায় সুস্থ এবং সতেজ করতে। শুধু তাই নয় যদি আমাদের শরীরে অ্যাবনর্মাল কোষ বাড়তে থাকে এবং নিয়ন্ত্রণে না আসে তাহলে পরবর্তীকালে তা ক্যান্সারের রূপ ধারণ করতে পারে তাই নিয়মিত আমলকি গ্রহণ করলে বা খেলে আমাদের ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা কমে যায় কারণ আমলকিতে আছে কিছু ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট এবং ভিটামিন C যা ওই অ্যাবনর্মাল কোষকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বা কম করতে সাহায্য করে। 
  • আমাদের হৃদয়ের জন্য আমলকি খাওয়ার উপকারিতা অসামান্য, তার কারণ আমলকি তে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান যা সাহায্য করে আমাদের রক্তে LDL ব্যাড কোলেস্টেরল এর পরিমাণকে কম করতে বা নিয়ন্ত্রণ রাখতে। শুধু তাই নয় ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট যেরকম, ফ্লাবোনল্স এবং অ্যান্থোসায়ানিন সাহায্য করে আমাদের শরীরে রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। তাই নিয়মিত আমলকি খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের হৃদয় সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 
  • আমলকিতে থাকে ডায়েটারি ফাইবার যা আমাদের খাদ্য পচনে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে। তাই নিয়মিত আমলকি খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের হজম ক্ষমতা বা ডাইজেস্টিভ সিস্টেম অনেক উন্নত হয়। আমাদের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য বা কস্টিপেশনের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। শুধু তাই নয় যেহেতু আমলকি তে ফাইবারের পরিমাণ অনেক বেশি এবং ক্যালোরির পরিমাণ অনেক কম তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ আমলকি গ্রহণ করলে আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রনে থাকে। 
  • আমাদের ত্বকের জন্য আমলকি খাওয়ার উপকারিতা অসামান্য, তার কারণ আমলকিতে থাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন C এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান। এই উপাদান গুলি আমাদের ত্বক কে রক্ষা করে সূর্যের প্রখর রোদ এবং আলট্রাভায়োলেট রশ্মির ক্ষতি থেকে। শুধু তাই না নিয়মিত আমলকি খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের ত্বকের উপর কোন রকম ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস সংগঠিত ইনফেকশন বা সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়। 
  • আমলকির উপকারিতা আমাদের চুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমলকির মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট পাওয়া যায় যা সাহায্য করে আমাদের চুলের গোড়াকে শক্ত করতে এবং চুলকে দ্রুত বৃদ্ধি করতে। তাই আমলকি কে ভালো করে পেশাই করে নির্যাতিত রস নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে আমাদের চুলে ব্যবহার করতে পারি, অথবা বাজার বা মার্কেট থেকে আমলকিযুক্ত তেল কিনে এনে আমাদের চুলে ব্যবহার করতে পারি। 

 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : খেজুরের উপকারিতা সম্পর্কে আশ্চর্যজনক ৮ টি তথ্য

আমলকি খাওয়ার নিয়ম বা আমলকি খাওয়ার সময় কি?

আমরা আমলকি বিভিন্নভাবে খেয়ে থাকি যেরকম,

  • ছোট ছোট টুকরো করে ভালো করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে যত্ন করে কোন কাঁচের শিশিতে রেখে তারপর খেতে পারি।
  • ভালো করে ধুয়ে টুকরো টুকরো করে কাঁচা আমলকি আমরা খেতে পারি। 
  • বাজারে প্রচুর আমলকি পাউডার বা সিরাপ পাওয়া যায় আমরা সেটাও খেতে পারি।

তবে আমাদের শরীরের জন্য কাঁচা আমলকি খাওয়া বা গ্রহণ করা সবথেকে বেশি উপকারী। তার কারণ কাঁচা আমলকির পুষ্টিগত গুনাগুন বা নিউট্রিশন ফ্যাক্ট সব থেকে বেশি হয়ে থাকে।  

আমরা খালি পেটে আমলকি পাউডার বা সিরাপ জলের সাথে মিশিয়ে খেতে পারি অথবা খাওয়া দাওয়ার পর আমরা আমলকির ছোট টুকরো খেতে পারি।

তবে সব সময় মনে রাখবো খুব বেশি আমলকি আমরা খাব না, সর্বোচ্চ এক চামচ আমলকির পাউডার বা সিরাপ অথবা ২ থেকে ৩ টি আমলকি টুকরো আমাদের জন্য যথেষ্ট।

 

আমলকি খাওয়ার অপকারিতা?

সাধারণত আমলকিতে সেরকম কোনো প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা নেই কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমলকি আমাদের জন্য উপকারী নয় যেরকম,

  • আপনার যদি কোনরকম কোন অপারেশন হয় তাহলে আমলকি না খাওয়াই ভালো, তার কারণ আমলকি বেশি পরিমাণ খেলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
  • আমলকিতে প্রচুর পরিমাণ অর্গানিক অ্যাসিড থাকে এবং খুব বেশি অ্যাসিড আমাদের দাঁতের জন্য ভালো না। 
  • যাদের প্রথম থেকেই শরীরে অ্যাসিডের প্রবলেম থাকে তাদের জন্য বেশি আমলকি খাওয়া ভালো না। 
  • এরকম অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে যে গর্ভবতী অবস্থায় বেশি আমলকি খেলে সামান্য অসুবিধা হতে পারে তাই ওই সময় আমলকি বেশি না খাওয়াই ভালো।

 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : মিষ্টি আলুর উপকারিতা বিষয়ে বিস্ময়কর ৭ টি তথ্য

 

 

 


Share With Your Friends

Leave a Comment