কাঁচা হলুদের উপকারিতা সম্পর্কে ৮ টি আশ্চর্যজনক তথ্য

Share With Your Friends

কাঁচা হলুদের উপকারিতা

কাঁচা হলুদের মধ্যে কার্কিউমিন নামক একপ্রকার উপাদান পাওয়া যায় যা কাঁচা হলুদের ঔষধিক গুণাগুণকে বৃদ্ধি করে। কাঁচা হলুদ সাহায্য করে আমাদের ব্যথা বা যন্ত্রণা কে কম করতে। কাঁচা হলুদ সাহায্য করে আমাদের ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতাকে কম করতে, এছাড়াও আমরা কাঁচা হলুদ গ্রহণ করে থাকি ঠান্ডা বা কাশি এবং জ্বর কে কম করতে। তাই কাঁচা হলুদের উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। 

আমরা কাঁচা হলুদ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নিয়মিত গ্রহণ এবং ব্যবহার করে থাকি কিন্তু কাঁচা হলুদের উপকারিতা এবং কাঁচা হলুদের ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের জেনে রাখা খুবই প্রয়োজন। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। 

 

কাঁচা হলুদের উপকারিতা কি ?

১০০ গ্রাম কাঁচা হলুদের পুষ্টিগুণ বা নিউট্রিশনাল ফ্যাক্ট,

  • ক্যালোরি ৩১২
  • প্রোটিন ৯.৬৮ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট ৬৭.১ গ্রাম (ডায়েটারি ফাইবার ২২.৭ গ্রাম)
  • টোটাল ফ্যাট 3.25 গ্রাম

 

এছাড়াও আছে অনেক ভিটামিন এবং মিনারেল যেরকম,

  • ভিটামিন C
  • ভিটামিন B৬
  • ভিটামিন E
  • ভিটামিন K
  • ক্যালসিয়াম
  • আয়রন
  • ম্যাগনেসিয়াম
  • ফসফরাস
  • পটাশিয়াম
  • সোডিয়াম
  • জিংক
  • কপার
  • ম্যাঙ্গানিজ
  • সেলেনিয়াম ইত্যাদি।

 

  • কাঁচা হলুদের উপকারিতা ব্যথা বা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তার কারণ কাঁচা হলুদে কার্কিউমিন নামক এক প্রকার অ‍্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান রয়েছে যেগুলি আমাদের শরীরে বিভিন্ন ব্যাথাকে কম করতে অনেক সাহায্য করে। তাই নিয়মিত কাঁচা হলুদ গ্রহণ করলে বা খেলে আমাদের বিভিন্ন রকম ব্যথা এবং যন্ত্রণা কমে যায় যেরকম আর্থ্রাইটিস এর ব্যথা, পড়ে গিয়ে চোট পাওয়া ব্যথা, এছাড়াও কোমরে এবং হাঁটুতে ব্যথা।
  • যদি আমাদের শরীরে অ্যাবনরমাল কোষ ক্রমাগত বাড়তে থাকে তাহলে আমাদের ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। আমরা যদি নিয়মিত কাঁচা হলুদ গ্রহণ করি বা খাই তাহলে আমাদের ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়। তার কারণ কাঁচা হলুদে বিশেষ কিছু অ‍্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা ওই অ‍্যাবনরমাল কোষগুলোকে ক্রমাগত বাড়তে বাধা দেয় এবং ক্যান্সারসেল বা কোষ গুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
  • কাঁচা হলুদের উপকারিতা আমাদের লিভার বা যকৃতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তার কারণ কাঁচা হলুদে বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যেগুলি আমাদের লিভারে বা যকৃতে উৎপন্ন টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থকে আমাদের শরীর থেকে বের করতে সাহায্য করে। এর ফলে আমাদের যকৃত এবং শরীরকে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
  • কাঁচা হলুদের মধ্যে কিছু অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে যা আমাদের লান্স বা ফুসফুস কে বিভিন্ন সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করে। তাই কাঁচা হলুদ নিয়মিত গ্রহণ করলে আমাদের সাধারণ সর্দি কাশি হবার প্রবণতা কমে যায় এবং আমাদের লান্স বা ফুসফুস ভালো থাকে।
  • কাঁচা হলুদের মধ্যে অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান রয়েছে যা আমাদের ত্বককে বিভিন্ন ফাঙ্গাল এবং ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করে এবং আমাদের ত্বকের উপরের মৃত কোষগুলিকে সরিয়ে পুনরায় নতুন কোষ সৃষ্টি করতে সাহায্য করে তাই কাঁচা হলুদ আমাদের ত্বকের উপর ব্যবহার করলে বিভিন্ন কালো দাগ বা স্পট এবং আঁচিল কমে যায় এবং আমাদের ত্বককে অনেক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। তাই হলুদের উপকারিতা ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • কাঁচা হলুদের মধ্যে অনেক পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেলস, অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। যা আমাদের শরীরে ভিটামিন এবং মিনারেল বা খনিজ পদার্থের প্রয়োজনীয়তা কে পূরণ করে এবং বিশেষ করে ভিটামিন C যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধি করতে খুবই সাহায্য করে।
  • নিয়মিত কাঁচা হলুদ গ্রহণ করলে বা খেলে আমাদের শরীরে এল-ডি-এল বা ব্যাড কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কমতে থাকে এবং গুড কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়তে থাকে। আমাদের শরীরে ব্যাড কোলেস্টেরল যদি বাড়তে থাকে তাহলে আমাদের হৃদয় ঘটিত রোগ হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায় যেরকম হার্ট অ্যাটাক। কাঁচা হলুদ গ্রহণ করলে আমাদের ওই জাতীয় সমস্যা হয় না তাই কাঁচা হলুদের উপকারিতা আমাদের হৃদয় এবং আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • আমাদের ব্রেনের মধ্যে বি-ডি-এন-এফ (ব্রেন ড্রাইভ নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর) এর মাত্রা কমতে থাকলে আমাদের মধ্যে নানান রকম সমস্যা দেখা দেয় যেরকম, খুব সহজে কোন কিছু ভুলে যাওয়া, অ্যালজাইমার বা অলসতা, ডিপ্রেশন বা অত্যাধিক দুশ্চিন্তা। শুধু তাই নয় আমাদের বয়স বেড়ে যাওয়ার সাথে আমাদের মস্তিষ্কের মধ্যে নানান রকম সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু আমরা যদি নিয়মিত কাঁচা হলুদ গ্রহণ করি তাহলে আমাদের ওই জাতীয় সমস্যা হবার প্রবণতা কমে যায় তার কারণ বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে কাঁচা হলুদ বি-ডি-এন-এফ এর মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তাই কাঁচা হলুদের গুণাগুণ আমাদের মস্তিষ্কের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : পালং শাকের উপকারিতা বিষয়ে ১০ টি অজানা তথ্য

কাঁচা হলুদ খাওয়ার নিয়ম বা কাঁচা হলুদ কখন খাওয়া উচিত ?

কাঁচা হলুদ আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী এবং আমাদের কাঁচা হলুদ সঠিকভাবে ব্যবহার করার নিয়ম জেনে রাখা খুবই প্রয়োজনীয়।

  • প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক টুকরো কাঁচা হলুদ (৫ গ্রাম) ভালো করে পরিষ্কার করে ধুয়ে আমরা সরাসরি গ্রহণ করতে পারি মধুর সাথে। এর ফলে আমাদের সর্দি-কাশি বা ঠান্ডা লেগে যাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
  • হলুদে অ্যান্টিভাইরাল উপাদান রয়েছে যা আমাদের বিভিন্ন ভাইরাল ফিভার বা জ্বর থেকে রক্ষা করে তাই রাতে ঘুমানোর পূর্বে এক চামচ হলুদের গুঁড়ো গরম দুধের সাথে মিশিয়ে আমরা গ্রহণ করতে পারি যদি আমাদের ভাইরাল ফিভার বা জ্বর হয়ে থাকে। তাই দুধ হলুদের উপকারিতা বিভিন্ন ভাইরাল ফিভার বা জ্বর এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • কাঁচা হলুদ ভালো করে বেটে আমাদের ত্বকের উপর ব্যবহার করতে পারি। কাঁচা হলুদ এবং সামান্য দুধ বা কাঁচা হলুদ, নিমপাতা এবং সামান্য সরষের তেল একসাথে পেশাই করে ১৫ মিনিটের জন্য আমাদের ত্বকের উপর ব্যবহার করতে পারি কিন্তু তারপর ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এর ফলে আমাদের ত্বক অনেক বেশি উজ্জ্বল এবং পরিষ্কার থাকবে।
  • কাঁচা হলুদ ভালো করে সূর্যের প্রখর রোদে শুকিয়ে ভালো করে পেশাই করে হলুদ গুড়ো বা পাউডার তৈরি করতে পারি প্রয়োজনে বিভিন্ন তরকারি বা সবজিতে ব্যবহার করতে পারি।

 

কাঁচা হলুদের অপকারিতা কি ?

  • কিছু মানুষের হলুদ খাওয়া বা গ্রহণ করার পর খুব অস্থির ভাব এবং সারা শরীরে ছোট ছোট দাগ বা স্পট যদি সৃষ্টি হয় তাহলে বুঝে নিতে হবে কাঁচা হলুদ খেলে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে। তাই যাদের কাঁচা হলুদ খেলে অ্যালার্জি হয় তাদের কাঁচা হলুদ না খাওয়াই ভালো।
  • কাঁচা হলুদের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ বায়ো-অ‍্যাকটিভ উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু খুব বেশি কাঁচা হলুদ গ্রহণ করলে আমাদের হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমাদের পেটের মধ্যে গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড এর পরিমাণ বাড়তে পারে ফলে আমাদের গ্যাসের প্রবলেম হতে পারে।
  • কাঁচা হলুদ নিয়মিত গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে ব্যাড কোলেস্টেরল কমতে থাকে যা আমাদের জন্য খুবই ভালো কিন্তু খুব বেশি কাঁচা হলুদ গ্রহণ করলে আমাদের রক্তের ঘনত্ব পাতলা হতে থাকে যা আমাদের জন্য খুব একটা ভালো নয়।
  • কাঁচা হলুদ নিয়মিত গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে কিন্তু খুব বেশি কাঁচা হলুদ গ্রহণ করলে আমাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ কমতে থাকে এবং আমাদের লো ব্লাড সুগার হবার প্রবণতা বেড়ে যায়।
  • কাঁচা হলুদে প্রচুর পরিমাণ ফাইটো কেমিক্যাল রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু গর্ভবতী মায়েদের এবং ছোট বাচ্চাদের কাঁচা হলুদ গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই একবার ডক্টরের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত।

 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : আদা খাওয়ার উপকারিতা বিষয়ে অবাক করা ১০ টি তথ্য


Share With Your Friends

Leave a Comment