বাজারে অনেক সবজি আছে তার মধ্যে কিছু সবজির মূল্য অনেক বেশি আর কিছু সবজির মূল্য অনেক কম তাই সাধারণত আমরা সবজির মূল্য দেখে উপকারিতা বিচার করি যেটা আমাদের সবথেকে বড় ভুল। কুমড়োর দাম খুব সস্তা বলে আমরা খুব একটা এটাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি না কিন্তু আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যাবে যখন আমরা কুমড়ো খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অবগত হব।
সারা বিশ্বে কুমড়ো অনেক দেশেই পাওয়া যায় কিন্তু সব থেকে বেশি পরিমাণ পাওয়া যায় চায়না, ভারত, ইউক্রেন, রাশিয়া, ইউনাইটেড স্টেট, স্পেন এই সব দেশ গুলোতে।
কুমড়ো এবং তার বীজের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেলস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যার উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় কুমড়ো খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
কুমড়ো খাওয়ার উপকারিতা কি?
আসুন জেনেনি ১০০ গ্রাম কুমড়োর পুষ্টিগত গুনাগুন বা নিউট্রেশন ফ্যাক্ট :
- ক্যালোরি ২৬
- কার্বোহাইড্রেট ৬.৫ গ্রাম
- স্যাচুরেটেড ফ্যাট ০.১ গ্রাম
- সোডিয়াম ১ গ্রাম
- পটাসিয়াম ৩.৪০ গ্রাম
- ফাইবার ০.৫ গ্রাম
- সুগার ২.৪ গ্রাম
- প্রোটিন ১ গ্রাম
এছাড়াও আছে অনেক ভিটামিন আর মিনারেল যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী যেরকম :
- ভিটামিন A
- ভিটামিন K
- ভিটামিন E
- ভিটামিন B6
- ভিটামিন C
- কপার
- আয়রন
- ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি।
- কুমড়োতে থাকে প্রচুর পরিমাণ বেটা ক্যারেটিন নামক এক প্রকার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান। পরবর্তী সময় আমাদের শরীর এই বেটা ক্যারেটিন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কে ভিটামিন A তে রূপান্তর করে এবং আমরা সবাই জানি ভিটামিন A আমাদের শরীরের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।
- কুমড়োর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম এবং ফাইবার পাওয়া যায়। পটাশিয়াম সাহায্য করে আমাদের রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং ফাইবার সাহায্য করে আমাদের রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। তাই নিয়মিত কুমড়ো খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের হৃদয় ঘটিত রোগ হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়।
- কুমড়ো তে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ বেটা ক্যারেটিন যা পরবর্তী সময় রূপান্তর হয় ভিটামিন A তে। ভিটামিন A আমাদের চোখের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের চোখের মধ্যে অবস্থিত রেটিনা কে উজ্জ্বল আলোকরশ্মি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে ভিটামিন A। এছাড়াও কুমড়োতে থাকে ভিটামিন C এবং ভিটামিন E যা আমাদের চোখকে বিভিন্ন ইনফেকশন অথবা সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করে। শুধু তাই নয় ভিটামিন E সাহায্য করে আমাদের দৃষ্টি শক্তিকে উন্নত করতে। তাই কুমড়ো খাওয়ার উপকারিতা আমাদের চোখের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- কুমড়ো তে থাকে বেটা ক্যারোটিন নামক এক প্রকার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান যা আমাদের শরীরে কে অ্যাবনর্মাল কোষ এবং ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ বা সেলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত কুমড়ো খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা অনেকটাই কমে যায়।
- ভিটামিন A, ভিটামিন E এবং ভিটামিন C আমাদের ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ভিটামিন। ভিটামিন A সাহায্য করে আমাদের ত্বকের উপর অবস্থিত মৃত কোষ গুলিকে সরিয়ে নতুন কোষ উৎপন্ন করতে এবং সূর্যের প্রখর রোদ, বিশেষ করে আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে আমাদের ত্বক বা স্কিনকে রক্ষা করতে। ভিটামিন E এবং ভিটামিন C সাহায্য করে আমাদের ত্বককে বিভিন্ন সংক্রমণ বা ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা করতে। তাই কুমড়ো খাওয়ার উপকারিতা আমাদের ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তার কারণ কুমড়োর মধ্যে ওই ভিটামিন গুলো অনেক বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।
- কুমড়োতে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। এই ফাইবার সাহায্য করে আমাদের ডাইজেস্টিভ সিস্টেম বা পাচনতন্ত্র কে উন্নত করতে। তাই নিয়মিত কুমড়ো খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের হজম শক্তি অনেক উন্নত হয় এবং কনস্টিপেশন বা কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়। তাই কুমড়ো খাওয়ার উপকারিতা আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- ফাইবার সাহায্য করে আমাদের রক্তে অবস্থিত ইনসুলিন গুলির সংবেদনশীলতা কে বৃদ্ধি করতে। যার ফলে আমাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। আমরা জানি এই ফাইবার কুমড়ো তে অনেক বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় তাই নিয়মিত কুমড়ো খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের ব্লাড সুগার এবং ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
- কুমড়োতে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C, ভিটামিন A এবং ভিটামিন E এছাড়াও অনেক মিনারেল বা খনিজ পদার্থ। যা সাহায্য করে আমাদের শরীরেকে বিভিন্ন রোগের সাথে লড়তে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে। তাই নিয়মিত কুমড়ো খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম অনেক উন্নত হয়।
কুমড়ো কি ভাবে রাখব?
এখন কার দিনে সব সবজিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হয় চাষের জন্যে তাই বাজার থেকে কিনে এনে ভালো করে ধুয়ে কিছুক্ষণ শুকিয়ে নিয়ে তার পর ফ্রিজে রেখে দিতে হবে এবং প্রয়োজনবোধে রান্না করতে হবে।
একটা কথা এখানে বলা খুবই প্রয়োজনীয় যেটা হলো কুমড়োর বীজ আমাদের জন্য খুব উপকারী তাই ওটা ফেলে না দিয়ে যত্ন করে ধুয়ে রেখে দিন। পরে আমরা কুমড়োর বীজ সম্পর্কে অনেক আলোচনা করবো।
কুমড়োর অপকারিতা :
অনেক মানুষের অ্যালার্জি থাকে অনেক সবজিতে তাই মিষ্টি কুমড়ো খাওয়ার অপকারিতা ও থাকতে পারে, খুব বেশি কুমড়ো খেলে বমি, বাত এর সমস্যা হতে পারে তাই কোনো কিছু খুব বেশি আমাদের শরীরের জন্য ঠিক নয়।