আমরা যে যে সবজি খেয়ে থাকি তার মধ্যে গাজর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার কারণ গাজরের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং মিনারেল যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।
গাজর সর্ব প্রথম আফগানিস্তান এ পাওয়া যায় এবং পরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ গুলিতে এবং ঠিক এই ভাবে আমাদের দেশে ও। আমরা বিভিন্ন রান্নাতে গাজরের ব্যবহার করে থাকি যেরকম গাজরের হালুয়া, ভেজিটেবল, সালাদ, চাউমিন এবং বিভিন্ন তরকারি তে।
যদিও গাজর আমাদের খুবই ভালো লাগে কিন্তু গাজর খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের জানা আছে কি? তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় গাজর খাওয়ার উপকারিতা গুলি সম্পর্কে।
দৈনিক গাজর খাওয়ার উপকারিতা :
গাজরে কি কি উপাদান আছে ?
আমরা ১০০ গ্রাম গাজরের পুষ্টিগত গুনাগুন বা নিউট্রেশন সম্পর্কে জানাচ্ছি
- ৪১ ক্যালোরি
- ৯.৫৮ গ্রাম কার্বোহইড্রেট
- ২.৮ গ্রাম ফাইবার
- ৪.৭৪ গ্রাম সুগার
- ০.৯৩ গ্রাম প্রোটিন
গাজরে কোন কোন ভিটামিন ও মিনারেল থাকে ?
গাজরে আছে অনেক ভিটামিন ও মিনারেল, যেরকম
- ভিটামিন A
- ভিটামিন K
- ভিটামিন C
- পটাশিয়াম
- ফাইবার
- ক্যালসিয়াম
- আয়রন ইত্যাদি।
- আমাদের শরীরে যদি ভিটামিন A এর অভাব হয় তাহলে তার প্রভাব আমাদের চোখ এবং ত্বকের উপর পড়ে। আমাদের দৃষ্টি শক্তিতে সমস্যা হয় এমনকি রাতে দেখতে না পাওয়ার সমস্যা হতে পারে এবং আমাদের ত্বক হয়ে উঠে অনেক রুক্ষ। গাজরের মধ্যে ভিটামিন A অনেক বেশি পরিমানে থাকে তাই আমাদের ত্বক ও চোখ এর জন্যে দৈনিক গাজর খাওয়া খুবই ভালো।
- আমাদের হৃদয় এর জন্য গাজর খাওয়ার উপকারিতা অসামান্য, কারন গাজরের মধ্যে থাকে অনেক বেশি পরিমাণে পটাশিয়াম, আয়রন যা আমাদের রক্ত সঞ্চালনের জন্য সহায়তা করে। আমাদের শরীরে যদি রক্ত সঞ্চালন সঠিক ভাবে হয় তাহলে আমাদের ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপের এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে যার ফলে হৃদয় ভালো থাকে এবং হৃদয়ঘটিত রোগ হওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
- কাঁচা গাজর খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি কারণ গাজরের মধ্যে থাকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান যেরকম ক্যারোটিনয়েড এবং অ্যান্থোসায়ানিন। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান গুলি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং আমাদের শরীর কে ক্যান্সার সেল বা কোষগুলির সাথে লড়াই করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত গাজর খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়।
- গাজরের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। এই ফাইবার জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে আমাদের রক্তে ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায় যার ফলে আমাদের ব্লাড সুগার হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়। শুধু তাই নয় ফাইবার আমাদের ডাইজেস্টিভ সিস্টেম বা পাচনতন্ত্রকে উন্নত করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত গাজর খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের হজম ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য বা কনস্টিপেশনের সমস্যা হয় না।
- গাজরের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার, ভিটামিন এবং মিনারেল। আমরা জানি সলিউবল ফাইবার বা দ্রাব্য শর্করা সাহায্য করে আমাদের শরীর থেকে চর্বি বা মেদকে কম করতে। তাই ওজন কমানোর জন্য অথবা সঠিকভাবে ডায়েট করার জন্য গাজর খাওয়ার উপকারিতা অসামান্য।
- গাজরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন A এবং ভিটামিন C পাওয়া যায়। ভিটামিন A এবং ভিটামিন C সাহায্য করে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে। তাই নিয়মিত গাজর খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পায় এবং খুব সহজে রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়।
- গাজরের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ভিটামিন K। এই ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ভিটামিন k আমাদের শরীরের হাড় কে শক্ত, দৃঢ় এবং গঠন করতে সাহায্য করে তাই দৈনিক ক্যালসিয়াম যুক্ত খাদ্য যেরকম, গাজর কে গ্রহণ করলে আমাদের শরীরের হাড় অনেক উন্নত এবং দৃঢ় হয়।
গাজর রাখবো কি ভাবে?
গাজর কে বাজার থেকে কিনে আনার পর ভালো করে জলে ধুয়ে নিতে হবে কারণ এখন সবজিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে। ভালো করে ধুয়ে একটি কাপড়ের উপর রেখে ১ ঘন্টা ধরে ভালো করে শুকিয়ে নিয়ে তার পর একটি এয়ার টাইট ব্যাগ বা পাত্র করে ফ্রিজের মধ্যে রেখে দিতে হবে।
গাজর খাওয়ার অপকারিতা?
সেরকম ভাবে কোনো অপকারিতা নেই, কিন্তু খুব বেশি গাজর খাওয়া ঠিক না। কাঁচা গাজর খাওয়ার অপকারিতা ও থাকে যেরকম, গাজরের মধ্যে থাকে বেটা ক্যারোটিন যা আমাদের ত্বক এর রঙ পরিবর্তন করতে পারে এবং খুব বেশি পরিমাণ ভিটামন A থাকে গাজরে যেটা খুব বেশি শরীরে গেলে ত্বক এবং দৃষ্টিতে অসুবিধা ও হতে পারে এবং কিছু মানুষের অ্যালার্জি থাকতে পারে যে কোনো সবজিতে তাই প্রথমে একটু খেয়ে দেখা উচিৎ।