অতিরিক্ত ঘুম কমানোর উপায় সম্পর্কে অবিশ্বাস্য ৯ টি তথ্য

Share With Your Friends

ঘুম কমানোর উপায়

শরীর সুস্থ রাখতে আমাদের প্রয়োজন ভালো খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমের। ঘুম যে শুধুমাত্র আমাদের শরীরের ক্লান্তি দূর করে এমন নয় শরীরের প্রতিটি টিস্যু বা কোষ কে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। নিয়মিত আমদের যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম হয় তাহলে আমাদের শরীর অনেক বেশি তরতাজা অনুভব হয়। আমাদের শরীরের জন্য খাদ্য, জল এবং বাতাস যেরকম প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন আছে। কিন্তু অনেকেই কম ঘুম হওয়ার জন্য ভুগে থাকেন আবার অনেকেরই ঘুম অনেক বেশি হয়। এই কম ঘুম হওয়া বা অনেক বেশি ঘুম হওয়া কোনটাই কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেই ভালো নয়। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় অতিরিক্ত ঘুম কমানোর উপায় সম্পর্কে।

 

অতিরিক্ত ঘুম কমানোর উপায় কি?

আমাদের যদি নিয়মিত সাত থেকে আট ঘন্টা গভীরভাবে ঘুম হয় তাহলে সেটা আমাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে যথেষ্ট। কিন্তু রাতের বেলা যদি আমাদের সঠিকভাবে গভীর ঘুম না হয় তাহলে ১০ ঘন্টা থেকে১২ ঘন্টা ঘুমানোর পরও আমাদের অনেক ক্লান্ত লাগে। আমাদের এই প্রয়োজনের তুলনায় বেশিক্ষণ ধরে ঘুমানোকে বলা হয় হাইপারসোমেনিয়া। 

অনিদ্রা যেমন আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক সে রকম অতিরিক্ত ঘুমও কিন্তু আমাদের শরীর কে ক্ষতি করে। যারা দিনে ১০-১২ ঘন্টা করে ঘুমান তাদের শরীরে নানান ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন, ওজন বেড়ে যাওয়া, মাথাব্যথা ,পিঠে ব্যথা, খাদ্য হজমে সমস্যা ইত্যাদি। অতিরিক্ত ঘুমালে ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া ও অতিরিক্ত ঘুমের কারণে হতে পারে ডিপ্রেশন ও। তাই আজ আমরা জেনে নেব কিভাবে ঘুমকে নিয়ন্ত্রণে রাখবো এবং ঘুম কমানোর উপায় বিষয়ে কি কি পন্থা অবলম্বন করব।

 

ঘুমের নির্ধারিত সময় মেনে চলা :

শরীর সুস্থ রাখতে আমাদের ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। সেজন্য রাতের বেলা ঘুম খুবই প্রয়োজনীয়, আমাদের যদি রাতের বেলা সঠিকভাবে ঘুম না হয় তাহলে দিনের বেলা শরীর ক্লান্ত লাগে, ঘুম ভাব লাগে। তাই আমাদের নির্দিষ্ট সময় মতো ঘুমোতে যাওয়া উচিত অর্থাৎ প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটা সময়ে ঘুমোতে যেতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময় ঘুম থেকে উঠতে হবে। প্রতিদিন যদি আমরা এই পদ্ধতি অবলম্বন করি তাহলে আমাদের  অভ্যাস হয়ে যাবে। ঘুম কমানোর উপায় বিষয়ে আলোচনায় ঘুমের নির্ধারিত সময় মেনে চলা ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

 

ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের ব্যবহার বন্ধ করা :

আমরা যদি প্রতিদিন ঘুমোতে যাওয়ার আগে টিভি, ফোন, ল্যাপটপ ইত্যাদি ব্যবহার করি তাহলে এই যন্ত্রাংশ গুলো দেখতে আমাদের অনেকটা সময় চলে যায়, তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নেয়া হয় না। সেজন্যই সকালের ঘুম ভাঙতে চায় না,  আমাদের ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়। তাই ঘুমোতে যাওয়ার ৩০ মিনিট থেকে এক ঘন্টা আগে থেকে এই সমস্ত যন্ত্রাংশ থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে। 

এছাড়াও এই যন্ত্রাংশগুলো থেকে এক প্রকারের উজ্জ্বল নীল আলো আমাদের চোখে এসে পড়ে যা আমাদের মস্তিষ্কে একপ্রকার সিগন্যাল প্রেরণ করে যার ফলে আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে যায়। মোবাইল ল্যাপটপ ইত্যাদি থেকে যে নীল আলো বের হয় তাতে আমাদের শরীরে মেলাটোনিন হরমোন উৎপাদনে সমস্যা সৃষ্টি হয়। আমাদের গভীর ঘুমের জন্য এই মেলাটোনিন হরমোন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই ঘুমোতে যাওয়ার পূর্বে এই সমস্ত ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ দূরে রেখে দিতে হবে।

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : ঘুম বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত ৭ টি তথ্য

 

জল ও চা, কফি ইত্যাদি পানীয় গ্রহণ করা :

নিয়মিত সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে জল গ্রহণ করলে ঘুম অথবা অলসতা অনেকটাই কেটে যায়। সকালে খালি পেটে জল খেলে আমাদের ডাইজেস্টিভ সিস্টেম বা হজম শক্তি অনেক উন্নত হয়। রাতে ঘুমানোর ফলে হজমের ক্রিয়া ধীরগতিতে হতে থাকে ফলে সকাল সকাল উঠে খালি পেটে জল খেলে হজম প্রক্রিয়া আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ ছাড়াও যদি আমরা রাত্রিবেলা পর্যাপ্ত পরিমাণ জল খেয়ে ঘুমোই তাহলে সকাল বেলা বাথরুম যাওয়ার জন্য আমাদের ঘুমটা ভেঙে যাবে। 

অনেকেই খালি পেটে চা কফি খেয়ে থাকেন ঘুম ভাবটা কাটানোর জন্য। চা বা কফি এই জাতীয় পানীয় গ্রহণ করলে আমাদের ঘুম ভাব বা অলসতা হয়তো সত্যি কেটে যায় এবং আমাদের শরীর অনেক বেশি তরতাজা লাগে, তবে একটি কথা আমাদের মাথায় রাখা খুবই প্রয়োজন, খালি পেটে চা, কফি খাওয়া কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো নয়।

 

নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস করা :

সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে নিয়মিত আমরা যদি এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম করতে পারি তাহলে আমাদের এই ঘুম ভাব বা অলসতা কেটে যাবে। এছাড়াও নিয়মিত এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম করলে আমাদের শরীর অনেক সুস্থ থাকবে, আমাদের শরীর থেকে ক্যালোরি অনেক বেশি মাত্রায় ক্ষয় হবে। নিয়মিত এক্সারসাইজ করলে রাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর আমাদের শরীরে একটা ক্লান্তি ভাব আসবে এবং এর ফলে আমাদের ঘুম আসার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। তাহলে আমরা একটা নির্দিষ্ট সময় ঘুমাতে যেতে পারবো এবং নির্দিষ্ট সময় ঘুম থেকে উঠতে পারবো। ঘুম কমানোর উপায় হিসেবে নিয়মিত শরীর চর্চার অভ্যাস করা অন্যতম।

 

কার্যতালিকা প্রস্তুত করে রাখা :

  • ঘুমানোর আগে পরের দিন কি কি কাজ করতে হবে তার একটা কার্যতালিকা বানিয়ে রাখতে হবে অর্থাৎ একটা রুটিন বানিয়ে নিতে হবে যে সকাল থেকে সন্ধ্যা অব্দি কি কি কাজ আমাদের করতে হবে। আগের দিন রাতে আমাদের এই কাজটা করে রাখতে হবে পরের দিন সকালে আমাদের উঠতে মন না চাইলেও আগের দিন রাতে আমরা যে কার্যতালিকা প্রস্তুত করে রেখেছি  তার উপর নির্ভর করে আমরা সকাল সকাল উঠতে বাধ্য হবো।
  • এছাড়াও ঘুম থেকে ওঠার পর আমরা গান শুনতে পারি। গান আমাদের মন ও মস্তিষ্ককে সক্রিয় করে তোলে এর ফলে আমাদের ঘুম ভাবটা কেটে যায়। তাই আপনারা চাইলে ঘুম কমানোর উপায় হিসেবে আপনাদের প্রিয় গানগুলো শুনতে পারেন।
  • ঘুমোতে যাবার আগে আমাদের সমস্ত চিন্তা এবং কাজকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে যার ফলে আমাদের মস্তিষ্ক চিন্তা মুক্ত হয়। ঘুমানোর আগে আমরা মেডিটেশন করতে পারি, এর ফলে শরীর অনেক রিল্যাক্স বা শিথিল হয়ে পড়ে এবং আমাদের গভীর ঘুম হয়। আর আমরা যত তাড়াতাড়ি ঘুমোতে পারব সকালে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর ঠিক ততই তাড়াতাড়ি উঠে পড়তে পারব।
  • আমাদের বেডরুমের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যাতে ঘরের মধ্যে হাওয়া চলাচল সঠিকভাবে হয়। এছাড়াও যে বিছানায় আমরা ঘুমাবো সেই বিছানা যেন ভালোভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে। 
  • বেডরুমের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। লাইট, সাউন্ড সমস্ত কিছু যেন বন্ধ থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে কারণ শান্ত এবং নিঃশব্দ পরিবেশ হলে তবেই আমাদের ঘুম ভালো হবে।
  • রাতের বেলা আমাদের হালকা খাবার খেতে হবে, ভারী তেল মশলাযুক্ত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলাই ভালো। তাই রাতে ভালোভাবে ঘুমাতে হালকা খাবার খেতে হবে যার ফলে অ্যাসিডিটি অথবা গ্যাস এর সমস্যা হবার সম্ভাবনা থাকবে না। 
  • রাতের বেলা আমাদের ভালোভাবে ঘুমের প্রয়োজন। রাতের বেলা আমাদের শরীর যদি উপযুক্ত রেস্ট পায় তাহলে সকালে উঠার পর আমাদের আর ঘুম ভাব বা অলসতা অনুভব হবে না।  তাই রাতের বেলা তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়তে হবে এবং রাত জাগার অভ্যাস আমাদের বন্ধ করতে হবে। কারণ রাতের বেলা আমরা যত তাড়াতাড়ি ঘুমাবো আমাদের শরীর তত ভালো ভাবে রেস্ট পাবে এবং আমরা সকালে তাড়াতাড়ি উঠে পড়তে পারব।
  • অনেকেরই টেনশন বা ডিপ্রেশনের কারণে রাতের বেলা ঘুম হয় না যার  ফলে তাদের ঘুমের জন্য মেডিসিন নিতে হয়। আর এই মেডিসিন গ্রহণের জন্য শরীরের মধ্যে ক্লান্তি ভাব থাকে এবং সারাদিন ঘুম ভাব বা অলসতা বৃদ্ধি পায়। তাই আমাদের দৈনিক নিয়ম মেনে জীবন যাপনের মাধ্যমে এই ঘুমকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমাদের যদি সঠিকভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ গভীর ঘুম  হয়, তাহলে সাত থেকে আট ঘন্টা আমাদের ঘুমের জন্য যথেষ্ট।
  • সকালে ঘুম থেকে ওঠার ব্যাপারটা উপভোগ করতে হবে। এটা যেন কারোর কাছে কষ্টকর বা বিরক্তিকর না হয়। রাতের ঘুম যেন আরামদায়ক হয় তাহলে সকাল বেলা উঠতে কোন কষ্টই হবে না।

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : অতিরিক্ত ঘুমের কারণ এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বিষয়ে জানা আছে তো?

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য: উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলি আপনার জীবনে ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একবার আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেবেন। 

 


Share With Your Friends

Leave a Comment