চিয়া বীজের মধ্যে পাওয়া যায় ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। এছাড়াও পাওয়া যায় অনেক বেশি পরিমাণে ফাইবার বা শর্করা। তাই নিয়মিত চিয়া বীজ খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে হৃদয় সম্পর্কিত রোগ হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায় এবং ডাইজেস্টিভ সিস্টেম বা হজম ক্ষমতা অনেক উন্নত হয়। তাই চিয়া বীজের উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
চিয়া বীজ কি ? সালভিয়া হিজপানিকা নামক উদ্ভিদের থেকে পাওয়া যায় এই চিয়া বীজ। সবথেকে বেশি পরিমাণ চিয়া বীজ দক্ষিণ আমেরিকার মেক্সিকোতে পাওয়া যেত তবে এই বীজের গুণগত মান জানার পর এখন সারা ইউরোপ মহাদেশের বিভিন্ন দেশগুলিতে চিয়া বীজ পাওয়া যায়।
চিয়া বীজের উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং দিন প্রতিদিন চিয়া বীজের চাহিদা বেড়েই চলেছে এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সংস্থাগুলি চিয়া বীজ কে একটি সুপার ফুড হিসাবে গণ্য করেছে। তবে চিয়া বীজ গ্রহণের পূর্বে আমাদের চিয়া বীজের উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জেনে রাখা খুবই প্রয়োজন। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় চিয়া বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
চিয়া বীজের উপকারিতা কি ?
১০০ গ্রাম চিয়া বীজ-এর পুষ্টিগুণ বা নিউট্রিশনাল ফ্যাক্ট,
- ৪৮৬ ক্যালোরি
- প্রোটিন ১৬.৫ গ্রাম
- টোটাল ফ্যাট ৩০.৭ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট ৪২.১ গ্রাম
- ডায়েটারি ফাইবার ৩৪.৪ গ্রাম
চিয়া বীজে কি কি ভিটামিন এবং মিনারেল আছে?
চিয়া বীজে আছে বিভিন্ন রকম ভিটামিন এবং মিনারেল যেরকম,
- ভিটামিন C
- ভিটামিন A
- ভিটামিন E
- ক্যালসিয়াম
- আয়রন
- ম্যাগনেসিয়াম
- ফসফরাস
- পটাশিয়াম
- সোডিয়াম
- জিংক
- ম্যাঙ্গানিজ
- সেলেনিয়াম ইত্যাদি।
- চিয়া বীজের উপকারিতা আমাদের ওজন কমাতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ তার কারণ চিয়া বীজের মধ্যে প্রায় ৩৮% ডায়েটারি ফাইবার এবং ১৫% প্রোটিন থাকে। খুব বেশি পরিমাণ ফাইবার এবং প্রোটিন থাকে বলে আমরা যদি চিয়া বীজ একবার গ্রহণ করি তাহলে অনেকক্ষণ পর্যন্ত আমাদের পেট ভরা থাকে। বেশি পরিমাণ ফাইবার থাকে এরকম খাদ্য গ্রহণ করলে আমাদের খিদে কম পায় এবং খাবার গ্রহণের পরিমাণও কমে যায়। যার ফলে দিন প্রতিদিন আমাদের ওজন কমতে থাকে। তাই নিয়মিত চিয়া বীজ গ্রহণ করলে আমাদের অত্যাধিক ওজন বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
- নিয়মিত চিয়া বীজ গ্রহণ করলে আমাদের লো-ডেনসিটি-লিপোপ্রোটিন বা LDL ব্যাড কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কমতে থাকে এবং হাই-ডেনসিটি-লিপোপ্রোটিন বা HDL গুড কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং আমাদের শরীরে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকে। আমরা জানি যখন আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে তখন আমাদের হৃদয় সম্পর্কিত রোগ হবার প্রবণতা কমে যায়, শুধু তাই নয় চিয়া বীজে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা আমাদের হৃদয়ের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। তাই চিয়া বীজের উপকারিতা আমাদের হৃদয়ের বা হার্ট এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- আমাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে গেলে আমাদের শরীরে নানান ধরনের সমস্যা দেখা যায় বিশেষ করে হৃদয় এবং কিডনি ঘটিত রোগ। চিয়া বীজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে তাই আমরা যদি নিয়মিত চিয়া বীজ গ্রহণ করি তাহলে আমাদের শরীরে ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়, যার ফলে আমাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই আমাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চিয়া বীজের উপকারিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- চিয়া বীজের মধ্যে প্রায় ৫% থেকে ৭% পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়, যার মধ্যে সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ওমেগা থ্রি এবং ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড। নিয়মিত ভাবে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড গ্রহণ করলে আমাদের হৃদয় বা হার্ট সুস্থ এবং সবল থাকে যার ফলে আমাদের হৃদয় সংক্রান্ত রোগ হওয়ার প্রবণতা কমে যায় যেরকম হার্ট অ্যাটাক। তাই আমাদের হৃদয়কে সুস্থ এবং সবল রাখতে চিয়া বীজের উপকারিতা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
- ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ম্যাগনেশিয়াম আমাদের শরীরের হাড় শক্ত ও দৃঢ় করতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে এবং চিয়া বীজের মধ্যে ওই তিনটি মিনারেল বা খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়। শুধু তাই নয় চিয়া বীজের মধ্যে এত পরিমাণ ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় যা আমাদের দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদাকে পূরণ করতে পারে। তাই নিয়মিত চিয়া বীজ গ্রহণ করলে আমাদের হাড় শক্ত ও দৃঢ় হয় এবং আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয় না।
- চিয়া বীজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যেরকম ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড, মাইরিসেটিন, কেমফেরল, ক্যাফেইক অ্যাসিড এবং কোয়ারসেটিন। প্রতিটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। যেরকম কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান আমাদের লিভার বা যকৃত এবং হৃদয় কে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে ঠিক ওরকমই কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান আমাদের শরীরের ব্যথার পরিমাণকে কম করে শুধু তাই নয় চিয়া বীজের মধ্যে কিছু অ্যান্টি ক্যান্সার উপাদান রয়েছে যা আমাদের ক্যান্সার হবার প্রবণতাকে কম করে।
- চিয়া বীজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে, এবং এই ফাইবার আমাদের শরীরে হজম ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে এবং আমাদের পাচন শক্তিকে অনেক উন্নত করে। আমাদের পেটে মধ্যে থাকা গুড ব্যাকটেরিয়াগুলিকে সাহায্য করে তাই নিয়মিত চিয়া বীজ গ্রহণ করলে আমাদের হজম ক্ষমতা বা ডাইজেস্টিভ সিস্টেম অনেক উন্নত হয় এবং আমাদের কন্সটিপেশন বা কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
- চিয়া বীজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেলস থাকে। তাই চিয়া বীজের পুষ্টিগত গুণাগুণ বা নিউট্রেশনাল ফ্যাক্ট অনেক বেশি। আমরা যদি নিয়মিত চিয়া বীজ গ্রহণ করি তাহলে আমাদের শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। শুধু তাই নয় প্রতিদিন একবার চিয়া বীজ গ্রহণ করলে আমাদের অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরা মনে হয় এবং খিদে কম পায় তাহলে এর থেকে বোঝা যায় চিয়া বীজের নিউট্রিশনাল ভ্যালু বা পুষ্টিগত গুণাগুণ অনেক বেশি।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : স্পিরুলিনার উপকারিতা সম্পর্কে ১০ টি বিস্ময়কর তথ্য।
চিয়া বীজ খাওয়ার নিয়ম কি ?
চিয়া বীজ খাওয়ার নিয়ম বা চিয়া বীজ কিভাবে খায় এই নিয়ে আমাদের মনে প্রচুর প্রশ্ন এসে থাকে আসুন আমরা আলোচনা করি চিয়া বীজ গ্রহণ করার পদ্ধতিগুলি নিয়ে। আমরা ১ থেকে ২ চামচ প্রতিদিন বিভিন্ন খাবারের সাথে চিয়া বীজ মিশিয়ে গ্রহণ করতে পারি। যেরকম,
- সকালে দুধ এর সাথে এক চামচ চিয়া বীজ ভালো করে মিশিয়ে আমরা গ্রহণ করতে পারি বা খেতে পারি।
- টক দইয়ের সাথে এক চামচ চিয়া বীজ ভালো করে মিশিয়ে দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর গ্রহণ করতে পারি।
- বিভিন্ন স্যালাড জাতীয় খাবারের সাথে আমরা চিয়া বীজকে মিশিয়ে সকালে এবং দুপুরে খাওয়ার পর গ্রহণ করতে পারি।
- সন্ধ্যেবেলা ওটস বা চিড়ের সাথে একটু দুধ মিশিয়ে তার সাথে এক চামচ চিয়া বীজ মিশিয়ে আমরা খেতে বা গ্রহণ করতে পারি।
চিয়া বীজের অপকারিতা কি ?
সাধারণত আমরা যদি নিয়মিত অল্প পরিমাণ চিয়া বীজ গ্রহণ করি তাহলে আমাদের খুব বেশি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা সাইডএফেক্ট দেখা দেয় না তবে খুব বেশি চিয়া বীজ গ্রহণ করলে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায় যেরকম,
- চিয়া বীজ কিছু মানুষের অ্যালার্জি এর কারণ হতে পারে। চিয়া বীজ গ্রহণ করলে যদি বমি ভাব, চুলকানি, ঠোট ফুলে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে চিয়া বীজ আপনার অ্যালার্জির কারণ। শুধু তাই নয় কিছু মানুষের চিয়া বীজ গ্রহণ করলে নিঃশ্বাস প্রশ্বাস অসুবিধা হয়, এমনকি শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত হয় তাই যে সকল মানুষের চিয়া বীজ অ্যালার্জির কারণ তাদের চিয়া বীজ না গ্রহণ করাই ভালো।
- চিয়া বীজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে এবং এই ফাইবার আমাদের হজম শক্তি বা ডাইজেস্টিভ সিস্টেমকে উন্নত করে। তবে আমরা যদি খুব বেশি পরিমাণ চিয়া বীজ গ্রহণ করি তাহলে আমাদের ডাইজেস্টিভ সিস্টেম বা হজম শক্তি খারাপ হতে পারে। তার কারণ খুব বেশি পরিমাণ ফাইবার আমাদের শরীরের জন্য ভালো নয়। তার ফলে আমাদের মধ্যে বমি ভাব, পেটে ব্যথা এমন কি ডায়রিয়া হবার প্রবণতা বেড়ে যায়।
- চিয়া বীজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। আমরা যদি খুব বেশি পরিমাণ চিয়া বীজ গ্রহণ করি তাহলে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের রক্তকে পাতলা করে দিতে পারে এমনকি আমাদের ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপ কমে যেতে পারে। যদিও এই বিষয়ে আরো সঠিক তথ্যের প্রয়োজন।
- যদি আপনি কোন রোগের কারণে নিয়মিত মেডিসিন বা ঔষধ গ্রহণ করেন তাহলে আপনার চিয়া বীজ গ্রহণ না করাই ভালো। তার কারণ চিয়া বীজ এর মধ্যে কিছু অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান রয়েছে, যা ওই ঔষধ বা মেডিসিনের সাথে প্রতিক্রিয়া করতে পারে এবং আমাদের সমস্যার কারণও হতে পারে।
- ছোট বাচ্চাদের এবং গর্ভবতী মায়েদের চিয়া বীজ গ্রহণ না করাই ভালো তার কারণ চিয়া বীজের মধ্যে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলি রয়েছে সেগুলি ছোট বাচ্চা এবং গর্ভবতী মায়েদের জন্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণ হতে পারে।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : তিসির উপকারিতা সম্পর্কে চমৎকার ৮ টি তথ্য।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: চিয়া বীজ গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই একবার আপনার ডক্টরের সাথে পরামর্শ করে নেবেন।
Thank you everyone for coming to our website www.healthybangla.in and a warm welcome to all of you.
Hi, my name is Arunima Morial and I am from Kolkata, India.
I have been writing health related articles for the last 3 years.
All the articles me and my team write are always reviewed by Sagar Ghosh (Science Graduate, Location- Shyamnagar, West Bengal) and Dr Gautam Ghosh (B.H.M.S, M.D in Homoeopathy, Location- Shyamnagar, West Bengal).
We always share the reference web page link from where we get correct information in the article.
Please feel free to contact me on my email ID sg133322@gmail.com