চুল সোজা করার উপায় সম্পর্কে বিস্ময়কর ৮ টি তথ্য

Share With Your Friends

চুল সোজা করার উপায়

আমাদের চুল আমাদের সৌন্দর্যকে অনেক বেশি বৃদ্ধি করে। তার উপর আমরা যদি আমাদের চুল কে সোজা, শক্ত এবং সিল্কি করি তাহলে আমাদের কে দেখতে অনেক বেশি আকর্ষণীয় বা অ্যাট্রাক্টিভ হয়। তবে চুল সোজা করার উপায় নিয়ে আলোচনায় আমরা সর্বপ্রথম স্ট্রেটনারকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি।

স্ট্রেটনার ব্যবহারের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা আমাদের চুলকে সোজা করতে পারি কিছুদিনের জন্য এবং স্ট্রেটনার এর ব্যবহার খুবই সহজ। তবে আমাদের জেনে রাখা উচিত অত্যাধিক তাপ আমাদের চুলের জন্য একদম ভালো না। যার ফলস্বরূপ পরবর্তীকালে আমাদের চুল পড়তে থাকে। আমাদের চুল অনেক বেশি রুক্ষ এবং শুষ্ক হয়ে যায়। আমাদের কম বয়সে চুল পাকার প্রবণতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়।

প্রাকৃতিক ভাবে যদি আমরা আমাদের চুলকে সোজা করতে পারি তবে সেটি অনেক বেশি দীর্ঘস্থায়ী এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হীন। শুধু তাই নয় কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি আমাদের চুলে প্রয়োগ করলে, চুল অনেক বেশি শক্ত উজ্জ্বল এবং সোজা হয়। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় চুল সোজা করার ঘরোয়া উপায় নিয়ে। তবে একটা কথা বলে রাখা খুবই প্রয়োজন, ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুল সোজা করতে বেশ কিছুদিন সময় লাগে, একদিনের মধ্যে সম্পূর্ণ ফলাফল পাওয়া যায় না।

 

চুল সোজা করার উপায় কি ?

আমাদের মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকল গুলোর উপর নির্ভর করে আমাদের চুল উৎপন্ন হয়। আমাদের চুলগুলি আলফা-ক্যারেটিন নামক প্রোটিন দ্বারা সংঘটিত হয়। আমাদের চুলের জন্য সবথেকে বেশি প্রয়োজনীয় ভিটামিন হলো বায়োটিন যা একপ্রকার ভিটামিন B কমপ্লেক্সের উপাদান। তাই প্রতিদিন যথার্থ পরিমাণ প্রোটিন এবং ভিটামিন যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজন এবং চুল সোজা করার উপায় সম্পর্কে আলোচনায় আমাদের খাদ্যাভ্যাস এর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

দুধ এবং মধু দিয়ে চুল সোজা করার উপায় :

দুধের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন পাওয়া যায় এবং মধুর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং মিনারেল পাওয়া যায়। তাই নিয়মিত দুধ এবং মধুর মিশ্রণ আমাদের চুলে প্রয়োগ করলে আমাদের চুল অনেক বেশি শক্ত উজ্জ্বল এবং সোজা হয়। শুধু তাই নয় মধুর মধ্যে কিছু অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা আমাদের মাথার ত্বকে বিভিন্ন ভাইরাল এবং ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ বা ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা করে।

ব্যবহার : প্রতি সপ্তাহে দুই দিন অর্ধেক কাপ দুধের সাথে দুই চামচ মধু ভালো করে মিশিয়ে আমাদের চুলে ব্যবহার করতে হবে এক থেকে দুই ঘন্টার জন্য। তারপর জৈব শ্যাম্পু প্রয়োগ করে আমাদের চুল ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।

 

অ্যালোভেরা দিয়ে চুল সোজা করার উপায় :

নিয়মিত অ্যালোভেরা ব্যবহার আমাদের চুলকে অনেক বেশি শক্ত এবং সোজা করে। অ্যালোভেরার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ এনজাইম থাকে যা আমাদের চুলের রুক্ষ এবং শুষ্ক ভাবকে দূর করে এবং আমাদের বাঁকা বা কোঁকড়ানো চুলকে সোজা করতে সাহায্য করে।

ব্যবহার : প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন অ্যালোভেরা জেলের সাথে দুই চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে আমাদের চুলে ব্যবহার করতে হবে ৩০ মিনিটের জন্য। তারপর জৈব শ্যাম্পু প্রয়োগ করে আমাদের চুল ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।

 

নারকেল তেল এবং পাতিলেবু দিয়ে কোঁকড়া চুল সোজা করার উপায় :

নারকেল তেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদানও রয়েছে। আর পাতি লেবুর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন C এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। তাই নিয়মিত নারকেল তেল এবং পাতি লেবুর ব্যবহার আমাদের চুল কে সোজা এবং শক্ত করতে সাহায্য করে। আমাদের চুলে খুশকি হবার প্রবণতা কে কম করে।

ব্যবহার : প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন চার চামচ পাতি লেবুর রসের সঙ্গে তিন চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে আমাদের চুলে প্রয়োগ করতে হবে দুই ঘন্টার জন্য। তারপর জৈব শ্যাম্পু প্রয়োগ করে আমাদের চুল ধুয়ে নিতে হবে।

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : চুল সিল্কি করার উপায় সম্পর্কে আশ্চর্যজনক ৮ টি তথ্য

 

ডিম ব্যবহার করে ঘরোয়াভাবে চুল সোজা করার উপায় :

ডিমের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলস এবং ফ্যাটি অ্যাসিড আছে। তাই নিয়মিত আমাদের চুলে ডিমের ব্যবহার আমাদের চুলকে অনেক বেশি শক্ত, উজ্জ্বল এবং সোজা করতে সাহায্য করে। ডিমের ব্যবহার আমাদের চুল ঘন করার অন্যতম উপায়

ব্যবহার : প্রতি সপ্তাহে একদিন ডিমকে ৩০ মিনিটের জন্য আমাদের চুলে ব্যবহার করতে হবে। তারপর জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।

 

ক্যাস্টর অয়েল দিয়ে বাঁকা চুল সোজা করার উপায় :

ক্যাস্টর অয়েলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন E পাওয়া যায়। যা আমাদের চুলকে সোজা, শক্ত এবং উজ্জ্বল করতে ভীষণ ভাবে সাহায্য করে। নিয়মিত ক্যাস্টর অয়েলের ব্যবহার আমাদের চুলের গোড়া শক্ত করে এবং চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতাকে কম করে। তাই ক্যাস্টর অয়েলকে আমরা চুল সোজা করার তেল হিসাবে ব্যবহার করতে পারি।

ব্যবহার : প্রতি সপ্তাহে দুই দিন এক ঘন্টার জন্য আমাদের চুলে ক্যাস্টর অয়েল প্রয়োগ করতে হবে। তারপর জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে আমাদের চুল ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।

 

কলা ব্যবহার করে বাঁকা চুল সোজা করার উপায় :

কলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার, সিলিকা, ভিটামিন এবং মিনারেলস রয়েছে যা আমাদের ভেঙে যাওয়া চুলকে পুনরায় শক্ত এবং সোজা করতে সাহায্য করে। নিয়মিত কলার ব্যবহার আমাদের চুলকে অনেক বেশি ঘন করে। আমাদের চুলে খুশকি হওয়ার প্রবণতাকে কম করে। চুলের গোড়াকে শক্ত করতে অনেক সাহায্য করে, যার ফলে আমাদের চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।

ব্যবহার : একটি সম্পূর্ণ পাকা কলা কে ভালোমতো পেশাই করে তার সাথে দুই চামচ মধু মিশিয়ে আমাদের চুলে সরাসরি প্রয়োগ করতে হবে ৩০ মিনিটের জন্য। তারপর জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে আমাদের চুল ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।

 

অ্যাপেল সিডার ভিনিগার ব্যবহারের মাধ্যমে চুল সোজা করার উপায় :

নিয়মিত অ্যাপেল সিডার ভিনিগার আমাদের চুলে ব্যবহার করলে আমাদের মাথার ত্বকের PH অথবা প্রোটেনশিয়াল অফ হাইড্রোজেন এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ থাকে। যার ফলে আমাদের মাথার ত্বকে কোনরকম ইনফেকশন বা সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। আমাদের চুল ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। আমাদের চুল সোজা এবং অনেক বেশি উজ্জ্বল হয়।

ব্যবহার : অর্ধেক কাপ জলের সাথে চার চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে আমাদের চুলে প্রয়োগ করতে হবে ৩০ মিনিটের জন্য। তারপর জৈব শ্যাম্পু প্রয়োগ করে আমাদের চুল ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।

 

চুল সোজা করার অন্যান্য উপায় :

আমরা প্রতিদিন স্নানের পর আমাদের চুল ভালো করে মুছে নিয়ে রোলার চিরুনি ব্যবহার করে আমাদের চুলকে ভালোমতো আঁচড়ে নিতে পারি। রোলার চিরুনি ব্যবহার করলে আমাদের চুল দিন প্রতিদিন সোজা হতে থাকে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে আমাদের চুলকে রোলার চিরুনি দিয়ে ভালোমতো আঁচড়িয়ে শক্তভাবে বেঁধে দিতে হবে অথবা হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। এই ঘরোয়া পদ্ধতিটি ব্যবহার করে আমরা আমাদের চুলকে সোজা করতে পারি।

সম্পর্কিত প্রবন্ধ :  প্রাকৃতিক ভাবে নতুন চুল গজানোর উপায় সম্পর্কে অবাক করা ৭ টি তথ্য

 

কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর :

ছেলেদের চুল সোজা করার উপায় কি ?

উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলি আলোচনার সময় আমরা ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের কথাই মাথায় রেখে লিখেছি। নিয়মিত কলার ব্যবহার, অ্যালোভেরা ব্যবহার এবং ক্যাস্টর অয়েলের ব্যবহার আমাদের চুলকে সোজা করে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা চুলের ক্ষতি ছাড়া। তাই চুল সোজা করার উপায় ছেলেদের জন্য ওই একই পদ্ধতিগুলি অবলম্বন করে সম্ভব।

 

চুল সোজা করার জেল কি?

আমরা আমাদের আলোচনায় কোনরকম কেমিক্যাল যুক্ত দ্রব্যের কথা আলোচনা করিনি। আমরা আমাদের চুলে কিছু জৈব পদার্থ ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছি যেরকম, মধু, নারকেল তেল, দুধ এবং পাতি লেবু। যা আমাদের চুলকে সোজা করতে সাহায্য করে কোনরকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়া।

 

চুল সোজা করার চিরুনি কি?

বাজারে প্রচুর প্রকারের চুল সোজা করার চিরুনি পাওয়া যায় তার মধ্যে কিছু তে ইলেকট্রিক বা বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হয় যা থেকে প্রচুর পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হয়। যা আমাদের চুলকে সোজা করতে সাহায্য করে। তবে তাপ আমাদের চুলের জন্য একদমই ভালো নয়। তাই আমরা স্নানের পর এবং ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে সাধারণ রোলার চিরুনি ব্যবহারের কথা বলেছি।

 

সোজা করা কি আপনার চুলের জন্য ভালো?

প্রাকৃতিক উপায় জৈব পদার্থ ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা যদি আমাদের চুলকে সোজা করি তাহলে তার কোন ক্ষতির দিক বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে না। তবে স্ট্রেটনার ব্যবহার করা আমাদের চুলের জন্য একদমই ঠিক নয় তার কারণ স্ট্রেইটনার থেকে অনেক বেশি পরিমাণ তাপ নির্গত হয় যা আমাদের চুলের জন্য ভালো না

 

সোজা করা কতক্ষণ স্থায়ী হয়?

এটি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে আমরা কোন প্রকারের স্ট্রেটনার ব্যবহার করছি। কিছু স্ট্রেইটনার আছে যা আমাদের চুলকে কিছু দিন এমনকি কিছু মাসের জন্য সোজা করতে পারে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে। তবে তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা ক্ষতির দিক অনেক বেশি। প্রাকৃতিক উপায় আমাদের চুলকে সোজা করতে একটু সময় লাগে ঠিকই তবে তা অনেক বেশি দীর্ঘস্থায়ী এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হীন।

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য : উপরে উল্লেখিত দ্রব্যগুলি ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একবার আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেবেন।

 

 

 


Share With Your Friends

Leave a Comment