নিয়মিত টমেটো গ্রহণ করলে বা খেলে হতে পারে অনেক শারীরিক পরিবর্তন। তার কারণ টমেটোর মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট তাই টমেটোর উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সর্বপ্রথম টমেটো দক্ষিণ আমেরিকায় পাওয়া যায়, স্প্যানিশ ভাষা অনুযায়ী নাম হয় টমেটল এবং পরে ইউরোপের নাম অনুসারে ইংলিশ নাম হয় টমেটো। স্পেন, ইতালি এবং আরও অনেক দেশে টমেটোকে নিয়ে অনেক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তি সময়ে ঠিক একই ভাবে ইউরোপ, এশিয়া তথা আমাদের দেশেও টমেটো উৎপন্ন হয়।
সাধারত টমেটো শীতকালীন সময়ের সবজি কিন্তু আধুনিক কৃষি বিজ্ঞানের জন্যে এখন সারা বছর ধরে টমেটো পাওয়া যায়। আমরা যে কোন রান্নাতে এখন টমেটো ব্যাবহার করে থাকি যেরকম স্যালাড, চাটনি এবং বিভিন্ন তরকারিতে তাই টমেটো আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় এক সবজির মধ্যে পরে।
আমরা দৈনিক বিভিন্ন উপায় টমেটো গ্রহণ করে থাকি বা খেয়ে থাকি কিন্তু টমেটোর উপকারিতা সম্বন্ধে আমাদের জানা আছে কি? তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় টমেটোর উপকারিতা সম্পর্কে।
টমেটোর উপকারিতা কি কি ?
১০০ গ্রাম টমেটোর উপাদান বা নিউট্রিশন ফ্যাক্ট গুলো নিচে আলোচনা করা হল,
- কার্বোহাইড্রেট ৫.১ গ্রাম
- ফ্যাট ০.২ গ্রাম
- প্রোটিন ১.২ গ্রাম
- জল ৯৩ গ্রাম
টমেটো তে কি ভিটামিন আছে ?
টমেটো তে অনেক ভিটামিন ও মিনারেল আছে যেরকম,
- ভিটামিন A
- ভিটামিন B
- ভিটামিন C
- ভিটামিন E
- ভিটামিন K
- ক্যালসিয়াম
- আয়রন
- ম্যাগনেসিয়াম
- ফসফরাস
- পটাসিয়াম
- সোডিয়াম
- জিঙ্ক
টমেটোতে কিছু উপকারি নিউট্রিয়েন্ট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়, যেরকম :
- লাইকোপেন
- ফলিক অ্যাসিড
- আলফা লীপিক অ্যাসিড
- লুতেনিন
- টমেটোর মধ্যে লাইকোপেন নামক এক প্রকার রঞ্জক পদার্থ পাওয়া যায় এবং এই রঞ্জক পদার্থের জন্য টমেটোর রঙ লাল হয়। লাইকোপেন ক্যারোটিনয়েড এর অংশ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রূপে আমাদের শরীরে কাজ করে।
- মোবাইল, টিভি এবং কম্পিউটার থেকে এক প্রকার উজ্জল নীলাভ আলোকরশ্মি নির্গত হয় যা আমাদের চোখের জন্য ভীষণ ক্ষতিকারক। টমেটোতে থাকে লুতেনিন এবং জিক্সানথিন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা আমাদের চোখের জন্য খুবই উপকারী। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুলি আমাদের চোখকে উজ্জ্বল আলোকরশ্মি থেকে রক্ষা করে। তাই টমেটোর উপকারিতা আমাদের চোখের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- টমেটোতে তে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন A এবং E যা আমাদের ত্বক এবং চুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও টমেটোতে লাইকোপিন নামক এক প্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় যা সূর্যের প্রখর রৌদ্রের থেকে আমাদের ত্বক কে রক্ষা করে। এমনকি প্রখর রোদে পুড়ে যাওয়া স্কিন বা ত্বক কে পুনরায় সুস্থ এবং উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে তাই ত্বকে টমেটোর উপকারিতা আমাদের জন্য অসামান্য।
- টমেটোতে লাইকোপেন নামক এক প্রকার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান পাওয়া যায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সাহায্য করে আমাদের LDL ব্যাড কোলেস্টেরল কে কম করতে। আবার টমেটোতে থাকে ফাইবার, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন C যা আমাদের শরীরের রক্তচাপ কে নিয়ন্ত্রন করে ফলে আমাদের হৃদয় ভালো থাকে এবং হৃদয় সম্পর্কিত কোন সমস্যা হয় না।
- টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায়। এই ফাইবার সাহায্য করে আমাদের পাচনতন্ত্র অথবা ডাইজেস্টিভ সিস্টেম কে উন্নত করতে। তাই নিয়মিত টমেটো খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের হজম শক্তি অনেক উন্নত হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য বা কস্টিপেশনের সমস্যা হওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
- টমেটোতে পাওয়া যায় বেটা ক্যারেটিন এবং ভিটামিন সি। এই দুইটি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন রোগের সাথে লড়তে সাহায্য করে এবং আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই টমেটোর উপকারিতা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- টমেটোর মধ্যে থাকে লাইকোপেন এবং লুতেনিন নামক দুইটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। যা আমাদের শরীরে ফ্রি রেডিক্যাল গুলিকে কম করতে সাহায্য করে, যার ফলে আমাদের অক্সিডেটিভ স্ট্রেসও কম হয়। এছাড়াও অ্যাবনর্মাল কোষ যদি আমাদের শরীরে খুব বেশি পরিমানে ছড়াতে থাকে তাহলে সেখান থেকে ক্যান্সার হবার প্রবনতা বেড়ে যায় কিন্তু টমেটো তে যে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান গুলি রয়েছে যা ঐ অ্যাবনর্মাল কোষ গুলোকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা প্রদান করে।
টমেটোর অপকারিতা :
টমেটো খেলে আমাদের অ্যালার্জি হতে পারে, তাই টমেটো অল্প পরিমান খেয়ে দেখে নিতে হবে যে কোন অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায় কিনা আমাদের মধ্যে। যদি কিছু প্রতিক্রিয়া দেখতে পারেন তাহলে ডক্টরের কাছে অবশ্যই যাবেন।
কিছু দিন পূর্বে টমেটো জ্বর বা টমেটো ফিভার বলে এক রোগ এসেছিল যার জন্য অনেক মানুষ টমেটো খাওয়া পুরোপরিভাবে বন্ধ করে দেয় কিন্তু এখন তার প্রভাব সেরকম একটা নেই।
টমেটো কিভাবে রাখবেন?
বাজার থেকে নিয়ে আসার পর ভালো করে জলে ধুয়ে তার পর আমারা খেতে পারি। এখন সব সবজি তে রাসায়নিক সার প্রয়োগ হয় বেশি ফলনের জন্য তাই যে কোন সবজি খাবারের পূর্বে ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে।