তিসির ৮ টি উপকারিতা ও অপকারিতা – Healthy Bangla

Share With Your Friends

তিসির উপকারিতা

 

সর্বপ্রথম তিসি বীজ ইজিপ্ট বা মিশরে পাওয়া যেত এবং তারপর তিসি বীজের গুণগত মান দেখে সারা বিশ্বে তিসির চাষ হয়। এখনকার দিনে সব থেকে বেশি পরিমাণ তিসির চাষ হয় ইউরোপ মহাদেশের বিভিন্ন দেশগুলিতে।

যেহেতু উন্নতমানের তিসি বীজ আমরা বিদেশ থেকে আমদানি করি তাই তিসি বীজের দাম তুলনামূলক ভাবে একটু বেশি। তবে তিসি বীজের একটি কৌটো আমরা বহুদিন ব্যবহার করতে পারব। কারণ তিসি বীজ আমরা দৈনিক এক চামচ বা তার কম ব্যবহার করি।

তিসির উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আমরা অনেকেই নিয়মিত তিসি গ্রহণ করি বা খেয়ে থাকি কিন্তু তিসি বীজের উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের সঠিক তথ্য জানা আছে কি? তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় তিসির উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে।

 

আসুন আমরা জেনেনি ১০০ গ্রাম তিসির পুষ্টিগত গুনাগুন বা নিউট্রেশনাল ফ্যাক্ট

  • ক্যালোরি ৫৩৪
  • প্রোটিন ১৮.৩ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট ২৮.৯ গ্রাম
  • ডায়েটারি ফাইবার ২৭.৩ গ্রাম
  • টোটাল ফ্যাট ৪২.২ গ্রাম

এছাড়াও রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং মিনারেল যেরকম

  • ভিটামিন C
  • ভিটামিন B৬
  • ভিটামিন E
  • ভিটামিন K
  • ক্যালসিয়াম
  • আয়রন
  • ম্যাগনেসিয়াম
  • ফসফরাস
  • সোডিয়াম
  • জিংক
  • কপার
  • ম্যাঙ্গানিজ
  • সিলোনিয়াম ইত্যাদি।

তিসি খাওয়ার উপকারিতা কি ?

  • তিসির উপকারিতা ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তার কারণ তিসি বীজের মধ্যে লিগনানস নামক জৈব যৌগ পদার্থ বা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। যা ক্যান্সার কোষের ক্রমাগত বৃদ্ধিকে বন্ধ করে এবং এর ফলে আমাদের শরীরে ক্যান্সার কোষের পরিমাণ হ্রাস পেতে থাকে। তিসি বীজের মধ্যে আলফা-লিনোলেনিক-অ্যাসিড থাকে যা এক ধরনের ওমেগা-৩ ফ্যাটি-অ্যাসিড। ওমেগা-৩ ফ্যাটি-অ্যাসিড আমাদের শরীরে অ্যাবনরমাল কোষ এবং অ্যাবনরমাল টিউমার বৃদ্ধি কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে এবং এর ফলে আমাদের বিভিন্ন রকমের ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা কমে যায় যেরকম, ব্রেস্ট ক্যান্সার, লান্স ক্যান্সার

 

  • তিসি বীজের মধ্যে ফাইটোস্টেরল উপাদান রয়েছে আমাদের রক্তে লো-ডেনসিটি-লিপোপ্রোটিন (LDL) বা ব্যাড কোলেস্টেরল এর পরিমাণকে কমাতে সাহায্য করে এবং আমাদের শরীরে গুড কোলেস্টেরল এর পরিমাণকে বাড়তে সাহায্য করে। আমরা জানি যখনই আমাদের শরীরে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে তখন আমাদের হৃদয় ঘটিত রোগ কম হয় যেরকম হার্ট অ্যাটাক, এবং বিভিন্ন পরীক্ষায় জানা গেছে ওমেগা ৩-ফ্যাটি-এসিড আমাদের কার্ডিওভাসকুলার বা হৃদয় ঘটিত রোগ কমাতে সাহায্য করে।

 

  • আমরা যদি নিয়মিত তিসি বীজ গ্রহণ করি বা খাই তাহলে আমাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ থাকে। কারণ তিসি বীজের মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে দ্রাব্য শর্করা বা সলিউবল ফাইবার থাকে যা আমাদের রক্তে ইনসুলিনের সংবিধানশীলতা কে বাড়িয়ে দেয় এবং আমাদের রক্তে অত্যাধিক সুগারকে শোষণ করে নেয়।এর ফলে আমাদের রক্তে সুগার সব সময় নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং আমাদের ব্লাড সুগার হবার প্রবণতা কমে যায়। শুধু তাই নয় নিয়মিত তিসি বীজ গ্রহণ করলে আমাদের ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং আমাদের স্ট্রোক হবার প্রবণতা কমে যায়।

 

  • তিসি বীজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন B৬ এবং ফাইবার থাকে এবং ওই ফাইবার বা শর্করাকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করে থাকি সলিউবেল বা দ্রাব্য এবং ইনসলিউবেল বা অদ্রাব্য শর্করা। এই ভিটামিন B৬ এবং ফাইবার আমাদের খাদ্য বা খাবার কে হজম করতে সাহায্য করে। তাই তিসির উপকারিতা আমাদের হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি নিয়মিত তিসি বীজ খাই বা গ্রহণ করি তাহলে আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য বা কনস্টিপেশন রোগ হওয়ার প্রবণতা কমে যায়।

 

  • আমরা যদি তিসি বীজ নিয়মিত গ্রহণ করি বা খাই তাহলে আমাদের ওজন কমাতে অনেক সুবিধা হয়, কারণ তিসি বীজ এ প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে এবং এই ফাইবার আমাদের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করার সাথে আমাদের খিদে পাওয়ার প্রবণতাকে কম করে, একবার তিসি বীজ খেলে বা গ্রহণ করলে আমরা অনেকটা সময় কিছু না খেয়েও থাকতে পারি। শুধু তাই নয় নিয়মিত গ্রহণ করলে আমাদের বডি-মাস-ইনডেক্স (BMI) নিয়ন্ত্রণে থাকে এমনকি আমাদের বেলী ফ্যাট বা ভুড়ি কমতে থাকে। তাই তিসির উপকারিতা আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

  • তিসি বীজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং মিনারেল রয়েছে যা আমাদের শরীরে ভিটামিন এবং মিনারেল বা খনিজ পদার্থের চাহিদা পূরণ করে। বিশেষ করে ভিটামিন C, ওমেগা-৩ ফ্যাটি-অ্যাসিড এবং কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধি করতে অনেক সাহায্য করে। তিসি বীজের মধ্যে থাকা মিনারেল যেরকম ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়াম যা আমাদের শরীরের হাড়কে শক্ত এবং দৃঢ় করতে অনেক সাহায্য করে।

 

  • তিসি বীজের মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্লামেশন উপাদান রয়েছে, তাই আমরা যদি নিয়মিত তিসি বীজ খাই বা গ্রহণ করি তাহলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকমের ব্যাথা কমে যাবে যেরকম হাঁটুতে ব্যথা, কোমরে ব্যথা এছাড়াও বিভিন্ন জয়েন্ট পেন। বিভিন্ন পরীক্ষায় জানা গেছে তিসি বীজ আর্থ্রাইটিস এর ব্যথার জন্য ভীষণভাবে কার্যকরী। তিসি বীজের মধ্যে থাকে আলফা-লিনোলেনিক-অ্যাসিড যা আর্থ্রাইটিস ব্যথা কমাতে অনেক সাহায্য করে। তিসির উপকারিতা আমাদের বিভিন্ন ব্যথা কমাতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

 

  • কৃমি নাশকের জন্য তিসি বীজ এক ঘরোয়া ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আমাদের পেটের মধ্যে যদি কৃমি বা পরজীবী বেড়ে যায় তাহলে আমাদের নানান রকম রোগের সম্মুখীন হতে হয় যেরকম পেটে ব্যথা, খুব দ্রুত গতিতে ওজন কমে যাওয়া, শরীরে পুষ্টির অভাব ইত্যাদি। আমরা যদি নিয়মিত তিসি বীজ গ্রহণ করি তাহলে আমাদের পেটের মধ্যে থাকা কৃমি বা পরজীবী প্রাণীগুলি মারা যায় এবং আমাদের শরীরে ওই জাতীয় কোন সমস্যা হয় না।

তিসি খাওয়ার নিয়ম কি ?

বাজার বা মার্কেট থেকে তিসি বীজ কিনে আনার পর আমাদের মনে একটি প্রশ্ন থাকে যে তিসি কিভাবে খাওয়া যায় বা তিসি বীজ খাওয়ার নিয়ম?

আমরা বিভিন্নভাবে তিসি বীজ খেয়ে বা গ্রহণ করে থাকি যেরকম,

  • সকালে ব্রেকফাস্ট বা খাবারের সাথে আমরা এক চামচ গোটা তিসি বীজ গ্রহণ করতে পারি বিভিন্ন খাবারের সাথে মিশিয়ে। আবার আমার তিসি বীজ গুলিকে ভালো করে পেশাই করে পাউডার বা গুঁড়ো তৈরি করতে পারি যা আমরা টক দই এর সাথে মিশিয়ে খেতে পারি।

 

  • পেশাই করা এক চামচ তিসি বীজ উষ্ণ গরম জলে ভালো করে মিশিয়ে আমরা সকালে খেতে বা গ্রহণ করতে পারি। তার ফলে আমাদের শরীরে অনেক বেশি শক্তি বা এনার্জি উৎপন্ন হয় এবং আমাদের দৈনন্দিন কাজের জন্য শক্তি বা এনার্জির প্রয়োজনীয়তা কে পূরণ করে।

 

  • গোটা তিসি বীজ কে আমরা বিভিন্ন খাবার যেরকম ডাল বা বিভিন্ন তরকারিতে ব্যবহার করতে পারি এবং দুপুরে লাঞ্চ বা খাবারের সাথে গ্রহণ করতে পারি তবে আমরা চেষ্টা করব তিসি বীজ রাতের বেলা না খেতে বা গ্রহণ করতে কারণ তিসি তে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার এবং প্রোটিন থাকে যা আমাদের এনার্জি বা শক্তির উৎস তাই রাতের বেলা তিসি বীজ গ্রহণ করলে আমাদের ঘুমের সমস্যা হতে পারে।

তিসি খাওয়ার অপকারিতা কি ?

আমরা যদি নিয়মিত অল্প পরিমাণ তিসি খাই বা গ্রহণ করি তাহলে খুব বেশি কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখতে পাবো না। তিসির উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু আমরা যদি খুব বেশি তিসি গ্রহণ করি বা খাই তাহলে আমরা অনেক রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখতে পাব যেরকম,

 

  • তিসি খেলে বা গ্রহণ করলে যদি আমাদের চুলকানি হয় বা ছোট ছোট কালো এবং লাল দাগ আমাদের ত্বকের উপর দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে তিসি অ্যালার্জির কারণ এবং যাদের তিসি খেলে বা গ্রহণ করলে অ্যালার্জি হয় তাদের তিসি খাওয়া বা গ্রহণ করা একদম উচিত না।

 

  • তিসির মধ্যে ওমেগা থ্রি – ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা আমাদের মস্তিষ্ক হৃদয়ের এবং শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক উপাদান। কিন্তু খুব বেশি ওমেগা থ্রি- ফ্যাটি-অ্যাসিড আমাদের রক্ত তঞ্চনে বা জমাট বাঁধতে অসুবিধা করে তার ফলে আমাদের রক্তক্ষরণের প্রবণতা বেড়ে যায় যা আমাদের জন্য একদম ভালো না।

 

  • তিসি বীজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য ভালো, তবে খুব বেশি তিসি বীজ গ্রহণ করলে আমাদের পেটে ব্যথা বমি ভাব এমনকি ডায়রিয়া হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় তার কারণ খুব বেশি পরিমাণ ফাইবার আমাদের হজম ক্ষমতা বা ডাইজেস্টিভ সিস্টেমকে নষ্ট করতে পারে।

 

  • যদি আপনি কোন রোগের কারণে নিয়মিত ঔষধ বা মেডিসিন গ্রহণ করেন তাহলে তিসি বীজ আপনার একদমই গ্রহণ করা উচিত না তার কারণ তিসি বীজ সায়ানাইড কম্পাউন্ড বা উপাদান এর উৎস যা আপনার অন্যান্য ঔষধের সাথে প্রতিক্রিয়া করে এবং আপনার শরীরে ক্ষতির কারণ হতে পারে।

 

  • গর্ভবতী মায়েদের এবং একদম ছোট বাচ্চাদের তিসি বীজ একদমই গ্রহণ করা উচিত না। তার কারণ তিসি বীজের মধ্যে অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান রয়েছে, যা গর্ভবতী মায়েদের এবং ছোট বাচ্চাদের জন্য খুবই ক্ষতিকারক হতে পারে।

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য: তিসি বীজ খাওয়ার বা গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সাথে একবার পরামর্শ করে নেবেন।


Share With Your Friends

2 thoughts on “তিসির ৮ টি উপকারিতা ও অপকারিতা – Healthy Bangla”

Leave a Comment