পাতিলেবুর উপকারিতা সম্পর্কে অভূতপূর্ন ১০ টি তথ্য

Share With Your Friends

পাতিলেবু খাওয়ার উপকারিতা

পাতিলেবুর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন C পাওয়া যায়। নিয়মিত পাতিলেবু খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের হৃদয় সম্পর্কিত রোগ, কিডনি তে পাথর এবং অ্যানিমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই পাতিলেবুর উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সর্বপ্রথম পাতিলেবু পাওয়া যেত এশিয়া মহাদেশের তিনটি দেশে যেরকম, ভারতবর্ষ এবং মায়ানমার ও চীন দেশে। যদিও পাতিলেবুর পুষ্টিগত গুনাগুন অনেক বেশি যার জন্য এখন সারা বিশ্বে পাতিলেবু পাওয়া যায়। 

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পাতিলেবুর ব্যবহার অনেক বেশি যেরকম, আমরা বিভিন্ন খাদ্য প্রস্তুত করতে পাতিলেবু ব্যবহার করে থাকি, আমাদের চুলে এবং ত্বকে ব্যবহার করে থাকি, আমাদের ওজন কমাতে খেয়ে থাকি, শরীরে ভিটামিন C এর চাহিদা পূরণ করতে খেয়ে থাকি। 

কিন্তু নিয়মিত পাতিলেবু গ্রহনের পূর্বে আমাদের পাতিলেবুর উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে অবগত হওয়া খুবই প্রয়োজন তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় পাতিলেবুর উপকারিতা সম্পর্কে।

 

পাতিলেবু খাওয়ার উপকারিতা :

 ১০০ গ্রাম পাতিলেবুর পুষ্টিগত গুনাগুন বা নিউট্রেশন ফ্যাক্ট : 

  • ক্যালোরি ২৯ %
  • টোটাল ফ্যাট ০.৩ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট ৯.৩২ গ্রাম (ডায়েটেরি ফাইবার ২.৮ গ্রাম)
  • প্রোটিন ১.১ গ্রাম

 

এছাড়াও আছে কিছু ভিটামিন এবং মিনারেল যেরকম,

  • ভিটামিন C
  • ভিটামিন B৬
  • ভিটামিন B১২
  • ভিটামিন A
  • পটাশিয়াম
  • ক্যালসিয়াম
  • ম্যাগনেসিয়াম
  • ফসফরাস
  • কপার
  • সোডিয়াম
  • আয়রন ইত্যাদি।

 

  • যদি আমাদের শরীর বিভিন্ন খাদ্য থেকে আয়রনকে শোষণ করতে না পারে তাহলে আমাদের শরীরে আয়রনের পরিমাণ কমতে থাকে। যার ফলস্বরূপ পরবর্তীকালে আমাদের অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। পাতিলেবুর মধ্যে আয়রন পাওয়া যায় যা আমাদের শরীরে আয়রনের পরিমাণকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও পাতিলেবুতে পাওয়া যায় ভিটামিন C এবং সাইট্রিক অ্যাসিড যা সাহায্য করে আমাদের শরীরে আয়রনের শোষণকে বৃদ্ধি করতে যার ফলে আমাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি হয় না এবং অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়। 
  • কিডনিতে স্টোন বা পাথর হওয়ার একটি কারণ আমরা যে খাবার খেয়ে থাকি তার কিছু অবশিষ্ট আমাদের শরীর ডাইজেস্ট বা হজম করতে পারে না এবং পরবর্তীতে সেটি আমাদের কিডনিতে জমে গিয়ে ক্রিস্টাল বা পাথরের আকার ধারণ করে। লেবুতে প্রচুর পরিমাণ অর্গানিক অ্যাসিড থাকে এবং তার মধ্যে সবথেকে বেশি থাকে সাইট্রিক অ্যাসিড। এই সাইট্রিক অ্যাসিড আমাদের সাহায্য করে কিডনিতে স্টোন বা পাথর হবার প্রবণতাকে কম করতে। তাই পাতিলেবুর উপকারিতা আমাদের কিডনির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 
  • পাতিলেবুতে অনেক বেশি পরিমাণে সলিউবল ফাইবার বা দ্রাব্য শর্করা পাওয়া যায় তার মধ্যে মুখ্য পেকটিন নামক ফাইবার। এই সলিউবল ফাইবার সাহায্য করে আমাদের পেটের মধ্যে থাকা গুড ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণকে বৃদ্ধি করতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং আমাদের পাচনতন্ত্র বা ডাইজেস্টিভ সিস্টেমকে উন্নত করতে। তাই নিয়মিত পাতিলেবু গ্রহন করলে বা খেলে আমাদের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • পাতিলেবুর মধ্যে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান ফ্লাভোনয়েড এবং অ্যান্টি-ক্যান্সার উপাদান পাওয়া যায়। এই উপাদানগুলি ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে লড়তে এবং ক্যান্সার কোষ কে কম করতে সাহায্য করে। এছাড়াও লেবুর খোসার মধ্যে লিমোনয়েড নামক এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ পাওয়া যায়। এই রাসায়নিক পদার্থের উপর লেবুর স্বাদ নির্ভর করে। পরীক্ষায় দেখা গেছে এই লিমোনয়েড ক্যান্সার সেল বা কোষের ক্রমাগত বৃদ্ধিকে কম করতে সাহায্য করে। যদিও এই বিষয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন। 
  • একটি পাতিলেবুর মধ্যে যে পরিমাণ ভিটামিন C পাওয়া যায় তা আমাদের দৈনিক ভিটামিন C চাহিদার ৫০ শতাংশ। অর্থাৎ পাতিলেবুর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন C পাওয়া যায়। অনেক পরীক্ষায় দেখা গেছে ভিটামিন C আমাদের হার্ট বা হৃদয়ের জন্য খুব ভালো একটি উপাদান। এছাড়াও লেবুতে ফাইবার এবং প্লান্ট কেমিক্যাল পাওয়া যায় যা আমাদের শরীরে কোলেস্টেরল এর পরিমাণকে কম করতে সাহায্য করে। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ থাকলে আমাদের হৃদয় সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। তাই পাতিলেবুর উপকারিতা আমাদের হৃদয়ের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 
  • আমাদের ওজন কম করার জন্য বা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য উষ্ণ গরম জলের সাথে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে পান করতে পারি। তার কারণ পাতিলেবু তে থাকে পেকটিন নামক দ্রাব্য শর্করা বা সলিউবল ফাইবার। এই ফাইবার আমাদের কে দীর্ঘক্ষণ পেট ভর্তি অনুভব করায় এবং আমাদের খিদে পাওয়ার প্রবণতাকে কম করতে সাহায্য করে। এছাড়াও পাতি লেবুতে প্লান্ট কমপাউন্ড বা উদ্ভিদ যৌগ পাওয়া যায়, যা আমাদের শরীরের চর্বি বা ফ্যাটকে কম করতে সাহায্য করে। যদিও এই বিষয়ে আরো অনেক গবেষণার প্রয়োজন। 
  • যাদের শ্বাসকষ্ট বা অ্যাস্থামা আছে তাদের জন্য পাতিলেবুর উপকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার কারণ পাতিলেবুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন C থাকে যা আমাদের ফুসফুসের কার্যকারিতা কে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় ভিটামিন C বিভিন্ন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংঘটিত সংক্রমণ বা ইনফেকশনের হাত থেকে আমাদের ফুসফুস কে রক্ষা করে। তাই নিয়মিত পাতিলেবু খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের সাধারণ সর্দি, কাশি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 
  • পাতিলেবুতে ভিটামিন C এবং অর্গানিক অ্যাসিড থাকে। এই ভিটামিন C সাহায্য করে আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্প কে সুস্থ রাখতে এবং আমাদের মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকল গুলি কে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস ঘটিত সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে। তাই প্রতি সপ্তাহে অন্তত একদিন আমরা আমাদের চুলে পাতিলেবুর রস ব্যবহার করতে পারি যার ফলে আমাদের চুলের গোড়া অনেক শক্ত হয় আমাদের চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায় এবং আমাদের মাথায় খুশকি হওয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। 
  • পাতি লেবু মুখে মাখলে কি হয়? লেবুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন C পাওয়া যায়। আমাদের শরীরে কোলাজেন গঠন করতে ভিটামিন C এর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই কোলাজেন আমাদের স্কিন বা ত্বক কে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাই পাতি লেবুর রস আমাদের ত্বক বা স্কিনের উপর ব্যবহার করলে আমাদের ত্বকের উপরে থাকা মৃত কোষের পরিমাণ কমতে থাকে এবং আমাদের ত্বক অনেক উজ্জ্বল ও মসৃণ হয়। শুধু তাই নয় ভিটামিন C সাহায্য করে সূর্যের প্রখর রোদ থেকে আমাদের ত্বক বা স্কিন কে রক্ষা করতে। পাতিলেবুতে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমানে অর্গানিক অ্যাসিড। এই অ্যাসিড সাহায্য করে আমাদের স্কিন বা ত্বককে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস ঘটিত সংক্রমণ বা ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা করতে। 
  • পাতিলেবুতে থাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন C এবং আমরা জানি এই ভিটামিন C আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং আমাদের শরীর কে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে তাই নিয়মিত পাতি লেবু খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধি পায়।

 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অবাক করা ৮ টি তথ্য

পাতিলেবু তে কোন অ্যাসিড থাকে ?

লেবুতে প্রচুর পরিমাণ অর্গানিক অ্যাসিড থাকে এবং তার মধ্যে সবথেকে বেশি থাকে সাইট্রিক অ্যাসিড। সাইট্রিক অ্যাসিডের আমাদের শরীরের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কার্যকারিতা রয়েছে এবং তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।

 

পাতি লেবু খাওয়ার নিয়ম বা পাতিলেবু খাবার সঠিক সময়?

আমরা পাতি লেবু কে বিভিন্নভাবে গ্রহণ করি বা খেয়ে থাকি, যেরকম

  • সকালে উষ্ণ গরম জলের সাথে পাতিলেবুর রস এবং মধু মিশিয়ে খেয়ে থাকি আমাদের ওজন কমানোর জন্য।
  • আমরা দুপুরে খাওয়ারে ভাতের সাথে বা ডালের সাথে পাতিলেবু মিশিয়ে খেয়ে থাকি আমাদের মুখরোচক স্বাদের জন্য।
  • বিভিন্ন রান্নাতে আমরা পাতিলেবুর রস ব্যবহার করে থাকি সুস্বাদের জন্য। এছাড়াও বিভিন্ন স্যালাড জাতীয় খাদ্যের মধ্যে আমার লেবু ব্যবহার করে থাকি।
  • আমাদের ত্বক এবং চুলে আমরা সরাসরি পাতিলেবুর রস ব্যবহার করতে পারি। ত্বকে পাতিলেবুর রস ব্যবহার করলে আমাদের ত্বক অনেক উজ্জ্বল হয় এবং বিভিন্ন সংক্রমণ বা ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা পায়। আমাদের চুলে পাতিলেবু ব্যবহার করলে খুশকি হবার প্রবণতা অনেক কমে যায় এবং চুলের গোড়া অনেক বেশি শক্ত হয়। 

 

পাতিলেবুর অপকারিতা বা পাতিলেবুর ক্ষতিকর দিক কি?

  • খুব বেশি পরিমানে আমরা যদি পাতিলেবু জলের সাথে মিশিয়ে খাই বা গ্রহণ করি তাহলে আমাদের দাঁতের সমস্যা হতে পারে তার কারণ পাতিলেবুতে প্রচুর পরিমাণ অর্গানিক অ্যাসিড থাকে যা আমাদের দাঁতের জন্য খুব বেশি ভালো নয়।
  • কিছু মানুষ আছে যাদের শরীরে অ্যাসিডের সমস্যা আছে তারা যদি খুব বেশি পাতিলেবু মিশ্রিত জল গ্রহণ করে বা পান করে তাদের শরীরে অ্যাসিডের পরিমাণ আরো বাড়তে পারে ফলে তাদের খাবার হজমে অসুবিধা হতে পারে।
  • কিছু মানুষের পাতিলেবু খেলে অ্যালার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে যার ফল স্বরূপ তাদের মাথা যন্ত্রণা বা পেটে ব্যথার সম্ভাবনাও দেখা দিতে পারে।  

 

পাতিলেবু চেনার উপায় কি ?

বাজারে বা মার্কেটে প্রচুর প্রকারের লেবু পাওয়া যায় এবং তার মধ্যে পাতিলেবু কে খুঁজে বের করা খুব একটা কঠিন কাজ নয় তার কারণ পাতিলেবু আকারে অন্যান্য লেবুর তুলনায় খুবই ছোট হয়। পাতিলেবুর রং অনেকটা সবুজ এবং হলুদ মেশানো হয়। আমরা পাতিলেবুর ছবি উপরে দিয়ে দিয়েছি আপনাদের যাতে চিনতে সুবিধা হয় তার জন্য।

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : আমলকি খাওয়ার উপকারিতা বিষয়ে ৮ টি অবিশ্বাস্য তথ্য। 

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য: পাতিলেবু খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই একবার আপনার ডক্টরের সাথে কথা বলে নেবেন।

 

 

 


Share With Your Friends

Leave a Comment