রসুনের উপকারিতা সম্পর্কে আশ্চর্যজনক ৮ টি তথ্য

Share With Your Friends

রসুনের উপকারিতা

রসুন হলো এমন একটি উপাদান যা ঔষধি গুন সমৃদ্ধ। প্রাচীনকাল থেকে এই উপাদানটিকে ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে আসছে। রসুনের মধ্যে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। রসুনের মধ্যে রয়েছে অ্যালিসন নামক গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান যা ক্যান্সার সহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করতে সক্ষম।

নিয়মিত রসুন গ্রহণ করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয় রসুনের মধ্যে কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান রয়েছে, যা আমাদের সর্দি কাশি এবং ঠান্ডা কে কম করতে সাহায্য করে।

আমরা রসুন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নিয়মিত গ্রহণ এবং ব্যবহার করে থাকি কিন্তু রসুনের উপকারিতা এবং রসুনের ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের জেনে রাখা খুবই প্রয়োজন। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় রসুনের উপকারিতা সম্পর্কে।

 

রসুনের উপকারিতা কি?

প্রত্যহ সকালে যদি আমরা কাঁচা রসুন খাওয়ার অভ্যাস করতে পারি তাহলে অসংখ্য রোগ ও শারীরিক সমস্যা এড়াতে সক্ষম হব। আমরা যদি প্রত্যেকদিন কাঁচা রসুন খাওয়ার অভ্যাস করতে পারি তাহলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক উন্নত হবে এবং অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি সুস্থ থাকতে পারবো। 

 

১০০ গ্রাম রসুনের পুষ্টিগত গুনাগুন : 

  • প্রোটিন ৬.৩৬ গ্রাম 
  • কার্বোহাইড্রেট ৩১.১ গ্রাম
  • ফাইবার ২.১ গ্রাম 

এছাড়াও পাওয়া যায় কিছু ভিটামিন এবং মিনারেল যেরকম, 

  • ভিটামিন সি, থায়ামিন (ভিটামিন বি১), রাইবোফ্লাবইন ( ভিটামিন বি২), নিয়াসিন ( ভিটামিন বি ৩) এবং ভিটামিন কে। 
  • ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, সিলেনিয়াম।

তবে রসুন খুব বেশি রান্না করলে এর গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়, তাই রসুন থেকে সর্বাধিক উপকার পেতে এটি কাঁচা খাওয়া উচিত। এবার আসুন আমরা রসুনের উপকারিতা গুলি সম্পর্কে জেনেনি 

 

রসুন কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় :

রসুনের মধ্যে অ্যালিসন নামক উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের LDL ব্যাড কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কে কম করতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। আমরা জানি আমাদের ব্যাড কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ থাকলে হৃদয় সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 

এছাড়াও নিয়মিত রসুন গ্রহণ করলে আমাদের রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে এবং হৃদয়ের পেশীগুলোকে আরো শক্তিশালী করে। 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : অ্যালোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অজানা ১০ টি তথ্য

 

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে :

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন রকম ওষুধের ব্যবহার যেমন আমরা করতে পারি তার পাশাপাশি ঘরোয়া উপায় হিসেবে রসুনের ব্যাবহার ও করতে পারি। রসুনের মধ্যে থাকা অ্যালিসন নামক উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। 

তাই নিয়মিত রসুন খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। এছাড়াও রসুন রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে, হৃদস্পন্দনের হার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

 

সর্দি কাশিতে রসুনের ব্যবহার :

রসুনের মতন একটি উপকারী ভেষজ গ্রহণ করে সর্দি কাশির মতো সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব। রসুনের মধ্যে কিছু অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে যা আমাদের ঠান্ডা, সর্দি এবং কাশি কে কম করতে সাহায্য করে।

তাই নিয়মিত রসুন খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। যদিও আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ঠান্ডা, সর্দি এবং কাশি কমানোর জন্য রসুনের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। 

 

বাতের ব্যথা উপশমে রসুনের ব্যবহার :

বাতের ব্যথা উপশমে রসুনের ব্যবহার ভীষণভাবে কার্যকরী। এছাড়াও আর্থারাইটিসদের সমস্যা এবং নানা ধরনের ব্যথা এবং যন্ত্রণা যেমন গাটের ব্যথা ও আরো বহু রকমের যন্ত্রণায় রসুন তেল ভীষণভাবে উপকারী। 

রসুনের মধ্যে রয়েছে ডায়ালিল ডিসালফাইড নামক উপাদান যা আমাদের শরীরে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান রূপে কাজ করে যার ফলে আমাদের ব্যথা যন্ত্রণা অনেক কমে যায়। আমাদের শরীরের বিভিন্ন পেশীতে রক্ত চলাচল করতে সাহায্য করে। তাই হাতে পায়ে জয়েন্টে ব্যথা, কোমরে ব্যথা, বাতের ব্যথা ইত্যাদি ব্যথা যন্ত্রণাকে কম করতে রসুনের তৈরি তেল দারুনভাবে কার্যকর।

 

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে : 

রসুনের মধ্যে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট উপাদান পাওয়া যায়। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান সাহায্য করে আমাদের শরীরের ফ্রি রেডিক্যালস কে কম করতে যার ফলে আমাদের অক্সিডেটিভ ড্যামেজ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 

এই অক্সিডেটিভ ড্যামেজ এর জন্য আমাদের আলঝেইমার রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই নিয়মিত রসুন খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের আলঝেইমার রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায় এবং আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা অনেক উন্নত হয়। 

 

হাড়ের শক্তি বাড়ায় :

কাঁচা রসুন হাড় ক্ষয় প্রতিরোধ করতে ভীষণভাবে কার্যকরী। একটা বয়সের পর পুরুষ এবং মহিলাদের হাড় ক্ষয় হতে শুরু হয় এর কারণ ক্যালসিয়াম শোষণ ক্ষমতা কমতে থাকা। যার ফলে পরবর্তীকালে আমাদের মধ্যে অস্ট্রিওপরোসিস নামক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

কিন্তু ২০১৭ সালে একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে নিয়মিত রসুন খেলে আমাদের ক্যালসিয়ামের শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় যার ফলে হাড় ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায় যার ফলে অস্ট্রিওপরোসিস রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। 

 

হজম ক্ষমতা কে উন্নত করে : 

রসুনের মধ্যে কিছু অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান পাওয়া যায়। তাই নিয়মিত কাঁচা রসুন খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের পেটের মধ্যে কৃমি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 

শুধু তাই নয়, নিয়মিত রসুন খেলে আমাদের পেটের মধ্যে থাকা ব্যাড ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ কমতে থাকে এবং গুড ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। রসুনের মধ্যে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান যা আমাদের পেটে ব্যথা কে কম করতে সাহায্য করে। তাই রসুনের উপকারিতা আমাদের পাচনতন্ত্রের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। 

 

ত্বকের যত্নে রসুনের ব্যবহার :

স্বাস্থ্যের পাশাপাশি ত্বকের জন্য রসুন কিন্তু ভীষণভাবে উপকারী। রসুনের মধ্যে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং আন্টি এজিং উপাদান রয়েছে। রসুন ব্যবহার করে উজ্জ্বল ত্বক পাওয়া যায়। আমাদের ত্বকে ব্রণের দাগ দেখতে মোটেও ভালো লাগেনা, এই সমস্যা সমাধানে রসুন ভীষণভাবে উপকারী। 

এছাড়াও ত্বকে যাতে সহজে বয়সের ছাপ না পড়ে তার জন্য রসুন অত্যন্ত উপকারী। নিয়মিত রসুন ব্যবহার করলে ত্বকে বিভিন্ন প্রকার সংক্রমণ বা ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায় যার ফলে আমাদের ত্বক হয়ে ওঠে অনেক উজ্জ্বল এবং পরিষ্কার। 

এছাড়াও ফুসফুসে নানা কারণে সংক্রমণ হতে পারে। ফুসফুসের সংক্রমণ রোধে রসুন অত্যন্ত কার্যকর।

রসুন খেলে পেটের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, এর ফলে যকৃত মূত্রাশয় ইত্যাদির কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। শরীরকে ডিটক্স করতে সাহায্য করে। রসুন শরীরকে অনেক রোগের থেকে দূরে রাখে যেমন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি কমায়।

 

রসুন খাওয়ার নিয়ম :

  • সকালে খালি পেটে রসুন খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ভীষণ উপকারী। রসুন আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভীষণভাবে কার্যকারী তাই সকালে খালি পেটে কাঁচা রসুন খাওয়া যেতেই পারে।
  • রসুন খাওয়ার আদর্শ সময় হল সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে খালি পেটে রসুন খেলে গ্যাস অম্বল ইত্যাদি নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই যাদের এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তারা চাইলে ভরা পেটেও কাঁচা রসুন খেতে পারেন।
  • রসুনকে আমরা রান্নায় ব্যবহারের মাধ্যমেও গ্রহণ করতে পারি। তবে এর ভালো ফল পেতে গেলে অবশ্যই টাটকা কাঁচা রসুন সকালে খালি পেটে খেলে তার উপকার সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়।

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : চিয়া বীজের উপকারিতা  সম্পর্কে অবিশ্বাস্য ৮ টি তথ্য

 

রসুনের অপকারিতা :

কোন কিছুই অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মোটেই ভালো নয়। তেমনি সকালে খালি পেটে কাঁচা রসুন গ্রহণ করার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে তার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। যেমন

  • খালি পেটে অতিরিক্ত পরিমাণে রসুন গ্রহণ করলে অনেকেরই গ্যাস বুক জ্বালা বমি ভাব ইত্যাদি হতে পারে। এছাড়াও নিম্ন রক্তচাপের ফলে দুর্বলতা, মাথা ঘোরানো, বমি ভাবের মত সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
  • নিয়মিত রসুন গ্রহণের ফলে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হতে পারে। আসলে রসুনের মধ্যে রয়েছে সালফার যার কারণে মুখে দুর্গন্ধও হয়।
  • অতিরিক্ত রসুন সেবনের ফলে আমাদের যকৃতের ক্ষতি হতে পারে কারণ রসুনের মধ্যে রয়েছে অ্যালিসিন নামক এক প্রকারের উপাদান যার অতিরিক্ত গ্রহণ আমাদের যকৃতের ক্ষতি করতে পারে।
  • খালি পেটে মাত্রাতিরিক্ত রসুন একদমই খাওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত রসুন খাওয়ার ফলে আমাদের ডায়রিয়া হতে পারে। এছাড়াও রসুন সেবানের ফলে রক্তের ঘনত্ব কমে যায় এবং রক্ত ভীষণভাবে পাতলা হয়ে গিয়ে আভ্যন্তরীণ রক্তপাত শুরু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
  • এছাড়াও গর্ভবতী মহিলা এবং যে সকল মায়েদের ছোট শিশু রয়েছে ও তারা বুকের দুধ পান করে তাদের রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : বয়স ক্যালকুলেটর বা Age Calculator – Healthy Bangla. 

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য : রসুন গ্রহণের পূর্বে বা খালি পেটে রসুন গ্রহণ করার পর যদি কোন রকম কোন সমস্যা সম্মুখীন হন তবে অবশ্যই নিকটবর্তী কোন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

 


Share With Your Friends