পুদিনা পাতার ৮ টি উপকারিতা ও অপকারিতা – Healthy Bangla

Share With Your Friends

পুদিনা পাতার উপকারিতা

 

পুদিনা পাতা বা মিন্ট লিভস প্রাচীন ভারতবর্ষের আয়ুর্বেদের এক অন্যতম ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পরবর্তী সময় পুদিনা পাতা বিভিন্ন খাদ্যের সাথে আমরা গ্রহণ করে থাকি পুদিনা পাতার সুগন্ধের কারণে। এমনকি এখনকার দিনে পুদিনা পাতা বিভিন্ন কসমেটিক্স এবং আইসক্রিম জাতীয় খাদ্যে ও ব্যবহৃত হয়।

পুদিনা পাতা আমরা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে থাকি, যেরকম পুদিনা পাতা থেকে তেল বা অয়েল তৈরি হয় যা আমরা আমাদের ত্বকের উপর ব্যবহার করে থাকি। এছাড়া তাজা পুদিনা পাতা আমরা বিভিন্ন খাদ্যের সাথে গ্রহণ করে থাকি যেরকম গ্রিন টি, স্যালাড এবং বিভিন্ন চাটনি বা সস তৈরি করতে। শুধু তাই না পুদিনা পাতার উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা দৈনন্দিন জীবনে নিয়মিত ভাবে পুদিনা পাতা খেয়ে বা গ্রহণ করে থাকি কিন্তু পুদিনা পাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের জানা আছে কি ? তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় পুদিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে।

 

আসুন আমরা জেনেনি ১০০ গ্রাম পুদিনা পাতার পুষ্টিগত গুণাগুণ বা নিউট্রিশনাল ফ্যাক্ট,

  • ক্যালরি ৭০
  • প্রোটিন ৩.৭৫ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট ১৪.৯ গ্রাম
  • ডায়েটারি ফাইবার ৮ গ্রাম
  •  টোটাল ফ্যাট ০.৯৪ গ্রাম
  • জল ৭৮.৬ গ্রাম

এছাড়াও আছে অনেক ভিটামিন এবং মিনারেল যেরকম,

  • ভিটামিন C
  •  ভিটামিন B৬
  •  ভিটামিন A
  •  ক্যালসিয়াম
  •  আয়রন
  •  ম্যাগনেসিয়াম
  •  ফসফরাস
  •  পটাশিয়াম
  • সোডিয়াম
  • কপার
  •  জিংক
  •  ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি।

পুদিনা পাতা খাওয়ার উপকারিতা কি ?

  • পুদিনা পাতা মধ্যে কিছু ডাইজেস্টিভ এনজাইম থাকে যা আমাদের খাদ্য পচনের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। শুধু তাই নয় নিয়মিত পুদিনা পাতা গ্রহণ করলে আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। পুদিনা পাতার তেল নিয়মিত গ্রহণ করলে আমাদের পেটে বা স্টমাক ইনফেকশন হবার প্রবণতা কমে যায় এবং পেটে ব্যথা ঠিক হয়ে যায়। পুদিনা পাতা গ্রহণ করলে বিভিন্ন রকম পেটের রোগ থেকে আমরা মুক্তি পাই যেরকম, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, বদহজম ইত্যাদি। তাই পুদিনা পাতার উপকারিতা আমাদের পেটের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

  • পুদিনা পাতার মধ্যে মেন্থল নামক এক উপাদান থাকে। এই মেন্থল আমাদের সর্দি-কাশি এবং শ্বাসকষ্টের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক উপাদান। আমাদের যদি খুব ঠান্ডা বা সর্দি কাশি হবার প্রবণতা থাকে তাহলে আমরা পুদিনা পাতা গ্রহণ করতে পারি। এরফলে আমাদের শ্বাস প্রশ্বাসে অনেক সুবিধা হয় এবং শরীর থেকে কফ জাতীয় পদার্থ বের হয়ে যায়। শুধু তাই নয় এই মেন্থল আমাদের শ্বাসকষ্ট বা অ্যাস্থমা সমস্যার থেকে আমাদেরকে অনেক আরাম দিতে পারে।

 

  • পুদিনা পাতার উপকারিতা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পুদিনা পাতার মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও মিনারেল যেরকম ভিটামিন A, ভিটামিন C, ভিটামিন B৬, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সোডিয়াম এবং অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিয়মিত পুদিনা পাতা গ্রহণ করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধি পায়।

 

  • পুদিনা পাতার মধ্যে রোজমারিনিক অ্যাসিড থাকে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান হিসেবে আমাদের শরীরে কাজ করে। পুদিনা পাতা থেকে আমরা যে তেল পাই তা আমাদের শরীরের অ্যালার্জি প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পুদিনা পাতার রোজমারিনিক অ্যাসিড আমাদের শ্বাসকষ্ট বা অ্যাস্থমার সমস্যাকে কম করতে পারে।

 

  • পুদিনা পাতার মধ্যে কিছু অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে যেগুলি আমাদের ত্বক বা স্কিনের উপরের ব্যাকটেরিয়াল বা ফাংগাল ইনফেকশন কে কম করতে পারে এমনকি বিভিন্ন সমস্যাকে দূর করে যেরকম ব্রণ, আঁচিল ইত্যাদি। পুদিনা পাতাতে ভিটামিন A থাকে যা আমাদের স্কিন বা ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

  • পুদিনা পাতার উপকারিতা আমাদের চুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ পুদিনা পাতাতে অ্যান্টি-মাইক্রোবোল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে যেগুলি আমাদের মাথার ত্বক বা স্ক্যাল্প কে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াল বা ফাংগাল সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং আমাদের চুল উঠে যাওয়াকে কম করে এবং আমাদের চুলের গোড়াকে শক্ত করে।

 

  • বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখে গেছে যে নিয়মিত পুদিনা পাতা গরম জলে ফুটিয়ে সেই বাষ্প বা ভাপ নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করলে আপনার আমাদের স্মৃতিশক্তি এবং সচেতনতা বৃদ্ধি পায় এবং আমাদের অলস ভাব কমে যায়।

 

  • যদি আমরা নিয়মিত পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেতে পারি তাহলে আমাদের মুখের মধ্যে সমস্যা হওয়ার প্রবণতা কমে যায়, যেরকম মুখের মধ্যে হওয়া কোন ব্যাথা বা ঘা বা যষ্ঠসা ইত্যাদি। এছাড়া পুদিনা পাতার সুগন্ধের কারণে আমাদের মুখে দুর্গন্ধ থাকে না।

পুদিনা পাতা খাওয়ার নিয়ম বা পুদিনা পাতা কিভাবে খাব?

যখনই আমরা বাজার বা মার্কেট থেকে তাজা পুদিনা পাতা কিনে আনি তখনই আমাদের চিন্তার বিষয় হয় যে এই পুদিনা পাতা কিভাবে খাওয়া যায়? আসুন আমরা আলোচনা করি পুদিনা পাতা খাওয়ার বিভিন্ন নিয়ম সম্পর্কে –

  • বাজার থেকে তাজা পুদিনা পাতা কিনে এনে ভালো করে ধুয়ে আমরা বিভিন্ন স্যালাড জাতীয় খাদ্যের সাথে পুদিনা পাতা মিশিয়ে খেতে বা গ্রহণ করতে পারি।

 

  • তাজা পুদিনা পাতা কে ভালো করে পেশাই করে চাটনি বা সস হিসেবে ব্যবহার করা যায় এবং বিভিন্ন স্পাইসি খাবারের সাথে খাওয়া যায়।

 

  • তাজা পরিষ্কার পুদিনা পাতাকে গরম জলে ভালো করে ফুটিয়ে সেই জলে গ্রিন টি এবং মধু মিশিয়ে আমরা গ্রহণ করতে পারি। আমাদের সর্দি কাশি বা ঠান্ডা লাগার প্রবণতার জন্য এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পানীয় উপাদান।

 

  • পুদিনা পাতা কে ভালো করে জলে ধুয়ে, পরিষ্কার কাপড়ের উপর আলোছায়া জায়গায় দুই দিন ভালো করে শুকিয়ে, তারপর পেশাই করে আমারা পাউডার তৈরি করে নিতে পারি। ভালো একটি কাঁচের কৌটোতে সেই পাউডার রেখে দিতে পারি দীর্ঘদিনের জন্য, এবং প্রয়োজনে সেই পাউডার বিভিন্ন খাদ্যের সাথে আমরা গ্রহণ করতে পারি। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে সরাসরি সূর্যের প্রখর রোদে আমরা পুদিনা পাতাকে শুকোতে দেব না।

পুদিনা পাতার অপকারিতা কি ?

সাধারণত পুদিনা পাতা খাওয়ার অপকারিতা বিশেষ কিছু পাওয়া যায়নি এবং সামান্য পরিমাণ পুদিনা পাতা নিয়মিত গ্রহণ করলে বিশেষ কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম তবে পুদিনা পাতার ক্ষতিকর দিক থাকতে পারে যেরকম,

 

  • পুদিনা পাতাতে মেন্থল জাতীয় পদার্থ বা উপাদান থাকে যা খুব বেশি গ্রহণ করলে আমাদের বমি ভাব বা ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।

 

  • পুদিনা পাতা গ্রহণ করা বা পেশাই করে ত্বকের উপর ব্যবহার করলে ক্ষতি হবার সম্ভাবনা খুবই কম তবে কিছু মানুষের অ্যালার্জি সমস্যা হতে পারে।

 

  • বিশেষ কিছু মানুষের পুদিনা পাতা গ্রহণ করা উচিত না যেরকম গর্ভবতী মায়েদের বা যে মায়েরা তাদের বাচ্চাদের বুকের দুধ বা ব্রেস্ট ফিডিং করায় তাদের। এছাড়াও যদি আপনার পূর্বে যকৃত বা লিভার সংক্রান্ত কোনো রোগ বা সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই পুদিনা পাতা গ্রহণের পূর্বে আপনার ডাক্তারের সাথে একবার কথা বলে নেওয়া উচিত।

Share With Your Friends

Leave a Comment