আমার যে ফল অথবা সবজি খেয়ে থাকি তার মধ্যে পেঁপে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সবজি। আমাদের দেশে সারা বছর পেঁপে পাওয়া যায় এবং যার মূল্য অন্যান্য সবজি তুলনায় অনেক কম। পেঁপে কাঁচা এবং পাকা অবস্থায় আমরা গ্রহণ করতে পারি এবং আমাদের শরীরের জন্য পেঁপের উপকারিতা অনেক বেশি।
সাধারণত আমাদের পেটের কোন সমস্যা হলে আমাদের কাঁচা পেঁপের তরকারি বা পাকা পেঁপে খেতে বলা হয় এবং তার জন্য বিশেষ কারণ ও আছে। আসুন জানা যাক পেঁপের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদন এবং পেঁপের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
পেঁপের উপকারিতা কি?
আমরা ৩০০ গ্রাম পেঁপের নিউট্রেশন বা গুনাগুন উপাদান নিয়ে আলোচনা করছি। পেঁপেতে আছে :
- ক্যালোরি ৪৩
- কার্বোহাইড্রেট ৩০ গ্রাম
- ফ্যাট ০.২৬ গ্রাম
- প্রোটিন ০.৪৭ গ্রাম
এছাড়া আছে ভিটামিন ও মিনারেল যেরকম,
- ভিটামিন A
- ভিটামিন B
- ভিটামিন C
- ভিটামিন E
- ভিটামিন K
- ক্যালসিয়াম
- ম্যাগনেসিয়াম
- সোডিয়াম
- পটাশিয়াম
- জিঙ্ক ইত্যাদি।
- যদি আমাদের শরীরে ফ্রি রেডিকেল বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে আমাদের মধ্যে দেখা দেয় অক্সিডেটিভ স্ট্রেস। যা পরবর্তীকালে আমাদের মধ্যে আলঝেইমার রোগের কারণ হয়। আলঝেইমার একপ্রকার রোগ যা আমাদের স্মৃতিশক্তি কে পুরোপুরি কমিয়ে দেয়।পেঁপের মধ্যে পাওয়া যায় ক্যারোটিনয়েড নামক এক প্রকার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা আমাদের শরীরে ফ্রি রেডিকেল কে বৃদ্ধি পেতে দেয় না। যার ফলে আমাদের আলঝেইমার রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
- পেঁপেতে থাকে প্রোটিওলাইটিক, প্যাপাইন, চাইমোপ্যাপাইন এনজাইম যা আমাদের পাচনতন্ত্র বা ডাইজেস্টিভ সিস্টেমকে অনেক উন্নত করে। আমাদের খিদে বাড়াতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য বা কনস্টিপেশনের অসুবিধে ঠিক করে। আমাদের পেটে ব্যথা বা পেটে জ্বালা করা ইত্যাদির সমস্যা হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়। তাই পেঁপের উপকারিতা আমাদের পাচনতন্ত্রের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- বেটা ক্যারোটিন এক প্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা অনেক বেশি মাত্রায় পেঁপের মধ্যে পাওয়া যায়। বেটা ক্যারোটিন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট টি আমাদের অ্যস্থামা বা শ্বাস জনিত সমস্যা কে কমাতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত পেঁপে খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের মধ্যে অ্যস্থামা বা শ্বাসজনিত সমস্যা হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়।
- পেঁপেতে কিছু অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যেরকম লিউকোপেনি যা এক প্রকার ক্যারোটিনয়েড এবং বেটা-ক্যারোটিন যা আমাদের শরীরে ফ্রি রেডিক্যাল গুলিকে কম করতে সাহায্য করে এবং আমাদের শরীরে অ্যাবনরমাল কোষ অথবা ক্যান্সার সেল কে কম করতে সাহায্য করে। যার ফলে আমাদের মধ্যে ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়।
- পেঁপের মধ্যে থাকে অনেক বেশি পরিমাণ ফাইবার, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন K যা আমাদের রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে এবং রক্তচাপ কে নিয়ন্ত্রণ রাখে। শুধু তাই নয় পেঁপে তে থাকে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। তাই নিয়মিত পেঁপে খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে LDL ব্যাড কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমতে থাকে। যার ফলে আমাদের হৃদয় সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
- পেঁপের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। ফাইবার সাহায্য করে আমাদের রক্তে অবস্থিত ইনসুলিন গুলির সংবেদনশীলতাকে বৃদ্ধি করতে। যার ফলে আমাদের মধ্যে ব্লাড সুগার এবং ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। তাই নিয়মিত পেঁপে গ্রহণ করলে আমাদের মধ্যে ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়।
- পেঁপের মধ্যে ভালো পরিমাণে জিক্সানথিন নামক একপ্রকার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান থাকে। এছাড়াও থাকে ভিটামিন E এবং ভিটামিন C। এই জিক্সানথিন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট টি আমাদের চোখকে উজ্জ্বল আলোকরশ্মির ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং ভিটামিন E এবং ভিটামিন C আমাদের চোখে কোনরকম সংক্রমণ বা ইনফেকশন হওয়ার প্রবণতাকে কম করে। তাই পেঁপের উপকারিতা আমাদের চোখের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
- পেঁপের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন C, ভিটামিন A এবং ভিটামিন E এছাড়াও অনেক প্রকারের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা আমাদের সাহায্য করে বিভিন্ন রোগের সাথে লড়তে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেমকে উন্নত করতে। তাই পেঁপের উপকারিতা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- পেঁপের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন K। ভিটামিন K এবং ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের হাড় কে উন্নত এবং শক্ত করতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন K আমাদের শরীরের জন্যে খুবই উপকারি তাই নিয়মিত পেঁপে গ্রহন করলে বা খেলে আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয়।
পেঁপে কিভাবে রাখবো?
পেঁপে কে বাজার থেকে কিনে এনে ভালো করে ধুয়ে কিছুক্ষণ শুকিয়ে তারপর আমরা খেতে পারি বা ফ্রিজে রেখে পরে খেতে পারি।
পেঁপের অপকারিতা :
কিছু মানুষ আছে যাদের ল্যাটেক্স অ্যালার্জি আছে, তাদের জন্য পেঁপে খুব একটা ভালো না, কারণ পেঁপে তে খুব বেশি এনজাইম থাকে যার জন্য প্রতিক্রিয়া হতে পরে এবং কাঁচা পেঁপের অপকারিতা ও থাকতে পারে। অল্প পরিমান খেয়ে দেখে নিতে পারেন যদি অসুবিধে না হয় তাহলে বুঝতে হবে যে আপনার পেঁপে তে কোনো অ্যালার্জি নেই।