স্পিরুলিনার উপকারিতা সম্পর্কে ৮ টি বিস্ময়কর তথ্য

Share With Your Friends

 

স্পিরুলিনার উপকারিতা

 

স্পিরুলিনার মধ্যে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেলস। এছাড়াও স্পিরুলিনা তে পাওয়া যায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান যা সাহায্য করে আমাদের ব্লাড সুগার, কোলেস্টেরল এবং ব্লাড প্রেসার কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। তাই স্পিরুলিনার উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। 

স্পিরুলিনা কি ?  স্পিরুলিনা একটি সবুজ-নীল রঙের অ্যালগি। এই অ্যালগি উৎপন্ন হয় সায়ানো-ব্যাকটেরিয়া থেকে, যার বায়োমাস কে আমরা স্পিরুলিনা বলে থাকি যা কিনা একটি আদর্শ ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট।

আমরা জানি স্পিরুলিনা কে সুপার ফুড বলে তার গুণগতমান, নিউট্রেশনাল ফ্যাক্ট এবং উপকারিতার জন্য। কিন্তু স্পিরুলিনা গ্রহণ করা বা খাবার পূর্বে আমাদের জেনে রাখা উচিত স্পিরুলিনার উপকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা ক্ষতির দিকগুলি সম্পর্কে তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় স্পিরুলিনার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে। 

 

স্পিরুলিনার উপকারিতা কি ?

১০০ গ্রাম স্পিরুলিনার পুষ্টিগত গুনাগুন বা নিউট্রেশনাল ফ্যাক্ট,

  • ক্যালোরি ২৯০
  • প্রোটিন ৫৭.৫ গ্রাম
  • টোটাল ফ্যাট ৭.৭২ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট ২৩.৯ গ্রাম ( ডায়েটারি ফাইবার ৩.৬ গ্রাম )
  • জল ৪.৬৮ গ্রাম

 

এছাড়াও আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং মিনারেল যেরকম,

  • ভিটামিন C
  • ভিটামিন A
  • ভিটামিন E
  • ভিটামিন K
  • ক্যালসিয়াম
  • আয়রন
  • ম্যাগনেসিয়াম
  • ফসফরাস
  • পটাশিয়াম
  • সোডিয়াম
  • জিংক
  • কপার
  • ম্যাঙ্গানিজ
  • সিলোনিয়াম ইত্যাদি,

 

  • নিয়মিত স্পিরুলিনা গ্রহণ করলে আমাদের এল-ডি-এল বা ব্যাড কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমতে থাকে এবং গুড কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়তে থাকে। তার ফলে আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ থাকলে আমাদের হৃদয় ঘটিত বা হার্ট ডিজিজ প্রবণতা কমে যায়। পরীক্ষায় দেখা গেছে নিয়মিত এক গ্রাম করে স্পিরুলিনা গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে দশ শতাংশ লো-ডেনসিটি-লিপোপ্রোটিন বা ব্যাড কোলেস্টেরল কমে যায়।
  • স্পিরুলিনার উপকারিতা আমাদের ব্যথা এবং যন্ত্রণার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তার কারণ, স্পিরুলিনা তে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে তার মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ফাইকোসায়ানিন। এই ফাইকোসায়ানিন উপাদানের জন্য স্পিরুলিনা নীল-সবুজ রঙের হয় এবং এটি অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান। তাই আমরা যদি নিয়মিত স্পিরুলিনা গ্রহণ করতে পারি তাহলে আমাদের ব্যথা এবং যন্ত্রণার অনেকটাই উপশম হয়। স্পিরুলিনা তে থাকা এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলি আমাদের অক্সিডেটিভ ড্যামেজ বা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
  • অনেক সময় আমাদের মুখের মধ্যে নানান ধরনের সমস্যা দেখা দেয় যেরকম জ্বরঠুসা বা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ এবং এইসব সমস্যার কারণে আমাদের খাবার খেতে বা গ্রহণ করতে খুবই অসুবিধা হয় কিন্তু আমরা যদি নিয়মিত স্পিরুলিনা গ্রহণ করি তাহলে আমাদের মুখের মধ্যে কোনরকম সংক্রমণ বা সমস্যা হয় না তার কারণ স্পিরুলিনা তে অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান রয়েছে যা ওই ইনফেকশনের সাথে লড়তে পারে এবং আমাদেরকে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা করে। শুধু তাই না স্পিরুলিনার মধ্যে কিছু অ্যান্টি-ক্যান্সার উপাদান রয়েছে যা আমাদের মুখে মধ্যে ক্যান্সার বা মাউথ ক্যান্সার হবার প্রবণতাকে কম করে।
  • আমাদের যদি রক্ত চাপ বা ব্লাড প্রেসার দিন প্রতিদিন বেড়ে যায় তাহলে আমাদের বিভিন্ন রোগের সম্মুখীন হতে হয় যে যেরকম হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, এমনকি কিডনির সমস্যা। কিন্তু আমরা যদি নিয়মিত এক গ্রাম করে স্পিরুলিনা গ্রহণ করি তাহলে আমাদের রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকে। তার কারণ স্পিরুলিনা নাইট্রিক অক্সাইড উৎপন্নের হার কে বাড়িয়ে দেয় ফলে আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং আমাদের ওই জাতীয় রোগ হবার প্রবণতা কমে যায়।
  • স্পিরুলিনার উপকারিতা আমাদের চোখের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তার কারণ স্পিরুলিনা তে প্রচুর পরিমাণ বেটা ক্যারাটিন উপাদান রয়েছে এবং আমাদের শরীর সেই বেটা ক্যারাটিন কে ভিটামিন A রূপান্তর করে। বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে ভিটামিন A আমাদের চোখের জন্য মুখ্য উপাদান। আমরা যদি  নিয়মিত ভিটামিন এ গ্রহণ করি তাহলে আমাদের চোখের রেটিনা এবং ফটো-রিসেপ্টর এর ক্ষতি হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। তাই আমরা যদি নিয়মিত স্পিরুলিনা গ্রহণ করি তাহলে আমাদের চোখ সুস্থ এবং ভালো থাকে।
  • অনেক সময় আমাদের ধুলোবালি, ঘরের বিভিন্ন ময়লা পরিষ্কার করলে এবং বিভিন্ন খাবার খেলে আমাদের নানান ধরনের সমস্যা দেখা দেয় যেরকম শরীরের উপর লাল এবং কালো রঙের ছোট ছোট দাগ এবং চুলকানি আবার অনেক সময় শ্বাসকষ্ট বা অ্যাস্থমা সমস্যা অথবা হাঁচি এবং নাক দিয়ে জল পড়া ইত্যাদি হয় অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার কারণে। আমরা যদি নিয়মিত স্পিরুলিনা গ্রহণ করি তাহলে আমাদের অ্যালার্জির সমস্যার সমাধান হয়ে যায় তার কারণ স্পিরুলিনা গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে হিস্টামিন এর পরিমাণ কমতে থাকে। হিস্টামিনের পরিমাণ কমে গেলে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া অল্প অল্প করে কমে যায়। অ্যালার্জি প্রতিকারের জন্য স্পিরুলিনার উপকারিতা বা ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • স্পিরুলিনা এমন একটি খাদ্য যার মধ্যে বিভিন্ন রকমের ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। তাই নিয়মিত স্পিরুলিনা গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে ভিটামিন এবং মিনারেলসের ঘাটতি পূরণ হয়। ভিটামিন C এবং ভিটামিন A যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেমকে উন্নত করতে খুবই সাহায্য করে এবং ভিটামিনের অভাবে কোন রোগ বা সমস্যা হবার প্রবণতাকে কম করে।
  • নিয়মিত স্পিরুলিনা গ্রহণ করলে আমাদের পেটের মধ্যে থাকা গুড ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং আমরা জানি গুড ব্যাকটেরিয়ার আমাদের খাদ্য পচনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শুধু তাই নয় স্পিরুলিনা তে অল্প পরিমাণ ফাইবার থাকে যা আমাদের হজম শক্তি বা ডাইজেস্টিভ সিস্টেমকে উন্নত করতে অনেক সাহায্য করে। যেহেতু আমরা খুব অল্প পরিমাণ স্পিরুলিনা গ্রহণ করি তাই খুব অল্প পরিমাণ ফাইবারই আমাদের শরীরে আমরা স্পিরুলিনা থেকে পেয়ে থাকি যদিও ফাইবারের আরো অনেক উৎস আছে।

 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : তিসির উপকারিতা সম্পর্কে চমৎকার ৮ টি তথ্য

স্পিরুলিনা খাওয়ার নিয়ম কি ?

সাধারণত আমরা স্পিরুলিনা দুরকম ভাবে পেয়ে থাকি, এক: পাউডার ফর্মে, দুই: ট্যাবলেট ফর্মে। সাধারণত প্রত্যহ ১০ থেকে ২০ গ্রাম স্পিরুলিনা গ্রহণ করা যায়। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে যদি আমরা ১০ গ্রাম স্পিরুলিনা নিয়মিত গ্রহণ করি তাহলে খুব বেশি হলে ৬ মাস পর্যন্ত গ্রহণ করতে পারি, আর যদি আমরা ২০ গ্রাম স্পিরুলিনা নিয়মিত গ্রহণ করি তাহলে ৩ মাস পর্যন্ত গ্রহণ করতে পারি।

  • যে স্পিরুলিনা আমরা পাউডার ফর্মে পাই তা আমরা বিভিন্ন শরবত বা ফ্রুট জুসের সাথে খেতে পারি অথবা হালকা উষ্ণ গরম জলে এক চামচ স্পিরুলিনা মিশিয়ে গ্রহণ করতে পারি।
  • স্পিরুলিনা ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম হল এক গ্লাস জলের সাথে একটি ক্যাপসুল। তবে খালি পেটে স্পিরুলিনা না গ্রহণ করাই ভালো।
  • রাতে ডিনার বা খাবারের পর স্পিরুলিনা গ্রহণ করলে বা খেলে আমাদের ঘুমের সমস্যা হতে পারে তাই রাতে স্পিরুলিনা গ্রহণ না করাই উচিত।
  • স্পিরুলিনা গ্রহণের সঠিক সময় সকালে খাবারের বা ব্রেকফাস্ট এর এক ঘন্টা পর এবং দুপুরে খাওয়ার বা লাঞ্চের একঘন্টা পর।

 

স্পিরুলিনার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি ?

স্পিরুলিনার উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তবে স্পিরুলিনার ক্ষতিকর দিক আছে যেরকম,

  • স্পিরুলিনা জলে থাকা একরকম অ্যালগি তাই স্পিরুলিনা গ্রহণ করলে বা খেলে আপনার অ্যালার্জি হতেই পারে। স্পিরুলিনা খেলে বা গ্রহণ করলে যদি আপনার শরীরে কোন লাল বা কালো ছোট ছোট দাগ বের হয় বা চুলকানি হয় তাহলে বুঝতে হবে স্পিরুলিনা আপনার অ্যালার্জির কারণ এবং সেই সব ব্যক্তিদের স্পিরুলিনা না গ্রহণ করাই উচিত।
  • খুব বেশি পরিমাণ স্পিরুলিনা গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে নানান রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে যেরকম, মাথা ঘুরানো, বমি ভাব এবং পেটে ব্যথা বা গ্যাসের সমস্যা তাই স্পিরুলিনা খুব সামান্য পরিমাণ গ্রহণ করাই উচিত।
  • যে সমস্ত ব্যক্তিদের ফেনাইলকেটোনুরিয়া রোগের সমস্যা আছে তাদের স্পিরুলিনা গ্রহণ করা একদমই উচিত না। তার কারণ স্পিরুলিনার মধ্যে ফেনিল্যালানাইন নামক এক ধরনের অ্যামাইনো এসিড উপস্থিত যা ওই রোগীদের জন্য ভীষণভাবে অপকারী।
  • যদি কোন রোগের বা সমস্যার কারণে আপনি নিয়মিত মেডিসিন বা ঔষধ গ্রহণ করেন তাহলে স্পিরুলিনা আপনার গ্রহণ করা ঠিক নয় তার কারণ স্পিরুলিনার মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আপনার মেডিসিন বা ঔষধের সাথে প্রতিক্রিয়া করতে পারে। 
  • গর্ভবতী মায়েদের এবং ছোট বাচ্চাদের স্পিরুলিনা গ্রহণ করা একদম উচিত না তার কারণ স্পিরুলিনা তে বিভিন্ন রকমের মাইক্রোবাল উপাদান রয়েছে যার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অনেক বেশি।

 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : কাঁচা হলুদের উপকারিতা সম্পর্কে ৮ টি আশ্চর্যজনক তথ্য

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য: স্পিরুলিনা গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই একবার আপনার ডক্টরের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত।

 

 

 

 


Share With Your Friends

Leave a Comment