আমাদের শরীরের জন্য খাদ্য, জল এবং বায়ু বা বাতাস যতটা প্রয়োজন ততটাই প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের। আমরা যদি প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাই তাহলে আমাদের শরীর এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায় যার ফলে আমাদের জীবনের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে সুবিধা হয়।
ঠিক একই রকম কিছু মানুষ আছে যাদের ঘুমের পরিমাণ খুবই অল্প কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের অভাবে তাদের শরীরে নানান রকম সমস্যা হয়। ঘুমের অভাবে শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, আমাদের মধ্যে ভুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয় এবং স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অনেক সময় আমরা দেখেছি সঠিক সময় ঘুমোনোর চেষ্টা করেও আমাদের ঘুম আসতে চায়না এবং আমাদের মধ্যে নানান রকম দুশ্চিন্তা হয়। আমরা জানি বিভিন্ন ঔষধ বা মেডিসিন গ্রহণ করে আমরা দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে পারি তবে পরবর্তী সময়ে তার অনেক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় প্রাকৃতিক উপায়ে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার উপায় সম্পর্কে।
দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার উপায় কি?
অনেক মানুষের মধ্যে অনিদ্রার সমস্যা দেখা দেয় এবং রাতের পর রাত তারা অল্প বা কম ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয়। কিন্তু আমরা চাইলে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে পারি কিছু সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে, অভ্যাসকে পরিবর্তন করার মাধ্যমে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করার মাধ্যমে।
দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার জন্য সঠিক পরিবেশ :
- যে বিছানায় আমরা দৈনিক ঘুমাই বা ঘুমানোর জন্য চেষ্টা করি সেই বিছানা বা শয্যা কে সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নেওয়া উচিত প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে।
- আমরা যে কক্ষে বা রুম এ ঘুমাই বা ঘুমাতে যাই সেই ঘরের তাপমাত্রা কে নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই প্রয়োজন। আমাদের ঘুমের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যেহেতু বিভিন্ন জায়গায় তাপমাত্রা বিভিন্ন রকম তাই উষ্ণ তাপমাত্রা প্রবণ অঞ্চলে রুম বা ঘরের মধ্যে বাতাস বা হাওয়া চলাচলের ব্যবস্থা করা উচিত, এয়ারকন্ডিশন, ফ্যান বা পাখা ব্যবহারের মাধ্যমে যাতে ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- রুম বা কক্ষের লাইট সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়া উচিত। লাইট সম্পূর্ণ বন্ধ করলে আমাদের মস্তিষ্কে একপ্রকার সংকেত যায়, যার ফলে আমাদের দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
- আমাদের মাথায় রাখতে হবে যেই ঘরে বা কক্ষে আমরা ঘুমাবো সেইখানে যদি যানবাহন বা মানুষের খুব বেশি শব্দ আমাদের কানে আসে তাহলে আমাদের ঘুমাতে খুবই অসুবিধা হবে তাই খুব বেশি শব্দ যাতে আমাদের ঘরের মধ্যে না আসে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : বয়স ক্যালকুলেটর বা Age Calculator – Healthy Bangla.
দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার উপায় অভ্যাস পরিবর্তন এর মাধ্যমে :
- আমরা যদি প্রতিদিন ঘুমানোর পূর্বে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ এবং কম্পিউটার ব্যবহার করি তাহলে এই যন্ত্রাংশ গুলির মধ্যে থেকে একপ্রকার উজ্জ্বল রশ্মি আমাদের চোখে এসে পড়ে। যা আমাদের মস্তিষ্কে একপ্রকার সংকেত বা সিগন্যাল পাঠায় যার ফলে আমাদের দ্রুত ঘুম আসতে চায় না।
- প্রতিদিন ২ ঘণ্টার বেশি দুপুরে বা দিনের অন্যান্য সময় তন্দ্রা আমাদের রাতে দ্রুত ঘুম না আসার অন্যতম কারণ। তাই আমাদের চেষ্টা করতে হবে দুপুরে বা দিনের অন্যান্য সময় ২ ঘণ্টার বেশি না ঘুমানোর।
- রাতে ঘুমানোর পূর্বে ক্যাফাইন জাতীয় খাবার যেরকম কফি অথবা লিকার চা পান করা উচিত না। তার কারণ আমরা জানি কফি এবং লিকার চা আমাদের মনোযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে যার ফলে আমাদের মস্তিষ্কে সজাগ থাকার সংকেত পৌঁছায় এবং আমাদের দ্রুত ঘুম আসার প্রবণতা অনেক কমে যায়। তাই রাতে ঘুমানোর অন্ততপক্ষে দুই ঘন্টা পূর্বে কফি লিকার চা পান করা উচিত নয়।
- অত্যাধিক ধূমপান অথবা অ্যালকোহল গ্রহণ করা আমাদের শরীরের জন্য ভীষণ ক্ষতিকারক। শুধু তাই নয় নিকোটিন এবং অ্যালকোহল গ্রহণ আমাদের ঘুম না আসার অন্যতম কারণ। ওই জাতীয় পদার্থ গুলি আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কে অনেক বেশি ক্ষতি করে যার ফলে আমাদের মধ্যে ইনসোমেনিয়া অথবা অনিদ্রার সমস্যা দেখা দেয়।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : রাতে ঘুম না আসার কারণ সম্পর্কে আশ্চর্যজনক ১১ টি তথ্য।
নিয়ম মেনে জীবন যাপনের মাধ্যমে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার উপায় :
- প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার ৩০ মিনিট পূর্বে স্নান করা দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার অন্যতম উপায়। তার কারণ যখনই আমরা ঘুমোতে যাওয়ার পূর্বে স্নান করে নেব তখন আমাদের শরীরের তাপমাত্রা অনেক কমে যাবে যার ফলে আমাদের শরীর অনেক আরামদায়ক অনুভব করবে এবং দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে।
- প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে আমরা যদি ধীর শব্দে অথবা স্লো সাউন্ড ব্যবহার করে গান শুনি তাহলে আমাদের দ্রুত ঘুম আসার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। তার কারণ ধীর শব্দে গান শুনলে আমাদের মস্তিষ্ক এবং শরীর কে অনেক বেশি শিথিল করে দেয় যার ফলে আমাদের দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার প্রবণতা অনেক বৃদ্ধি পায়।
- নিঃশ্বাস এবং প্রশ্বাসকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমরা আমাদের দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার প্রবণতা কে বৃদ্ধি করতে পারি। ৪ সেকেন্ডের জন্য বাতাসকে প্রশ্বাস করে ৭ সেকেন্ডের জন্য আমাদের শরীরের মধ্যে স্থির করে রেখে ৮ সেকেন্ড ধরে নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হয়। এই শ্বাসক্রিয়া পদ্ধতিটি অবলম্বন করলে আমাদের শরীর অনেক বেশি শিথিল হয়ে পড়ে এবং ঘুমিয়ে পড়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
- প্রতিদিন ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘন্টা ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করলে আমাদের শরীর অনেক বেশি সুস্থ থাকে। শুধু তাই নয় নিয়মিত এক্সারসাইজ করলে আমাদের শরীরে অনেক বেশি ক্যালোরি ক্ষয় হয় যার ফলে আমাদের শরীর অনেক বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং রাতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর আমাদের নিদ্রা আসার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় তাই এটি রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অন্যতম উপায়।
- প্রতিদিন ঘুমোতে যাবার পূর্বে আমরা যদি বই পড়ি তাহলে আমাদের ঘুম পাওয়ার প্রবণতা অনেক বৃদ্ধি পায় এবং আমাদের ঘুম অনেক উন্নত মানের হয়। প্রতিদিন বই পড়লে আমাদের মন অনেক ভালো থাকে যার ফলে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে দুশ্চিন্তার পরিমাণ অনেক কমে যায়।
- প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার অন্ততপক্ষে দুই থেকে এক ঘন্টা পূর্বে রাতের খাবার গ্রহণ করে নেওয়া উচিত। তার ফলে আমাদের নিদ্রা আসার প্রবণতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয় প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করা উচিত, কিন্তু খুব বেশি জল গ্রহণ করা উচিত নয়। যে হরমোন গুলি আমাদের সাহায্য করে ঘুম আসার জন্য সেই হরমোন গুলি কে সাহায্য করে কিছু উপাদান যা আমরা বিভিন্ন খাদ্য থেকে পেয়ে থাকি যেরকম, ম্যাগনেসিয়াম, মেলাটোনিন, এল-থেনাইন, গামা-অ্যামিনোবুটারিক-অ্যাসিড ইত্যাদি।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : অতিরিক্ত ঘুমের কারণ এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বিষয়ে জানা আছে তো?
বিশেষ দ্রষ্টব্য : উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলি দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একবার আপনার ডক্টরের সাথে পরামর্শ করে নেবেন।
Thank you everyone for coming to our website www.healthybangla.in and a warm welcome to all of you.
Hi, my name is Arunima Morial and I am from Kolkata, India.
I have been writing health related articles for the last 3 years.
All the articles me and my team write are always reviewed by Sagar Ghosh (Science Graduate, Location- Shyamnagar, West Bengal) and Dr Gautam Ghosh (B.H.M.S, M.D in Homoeopathy, Location- Shyamnagar, West Bengal).
We always share the reference web page link from where we get correct information in the article.
Please feel free to contact me on my email ID sg133322@gmail.com