শীতকালের ৬ টি সুপারফুড যা নিয়মিত খাওয়া খুবই প্রয়োজন!

Share With Your Friends

শীতকালের ৬ টি সুপারফুড

শীতকালে প্রায় সকলেরই কমবেশি জ্বর, সর্দি, কাশি লেগেই থাকে অথবা দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বৃদ্ধি পায় তার অন্যতম কারণ আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া। 

তাই শীতকালে আমাদের খাদ্য তালিকার মধ্যে এমন কিছু খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম সাথে সর্দি, কাশির মতন রোগকে দূরে রাখতে সক্ষম।

শীতকালে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি এবং ফলমূল পাওয়া যায়। সুস্থ থাকতে হলে শাকসবজি এবং ফলমূল খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। সেই জন্য প্রতিদিন আমাদের খাদ্য তালিকায় এই মরশুমি শাকসবজি এবং ফলমূল অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। 

 

শীতকালের ৬ টি সুপারফুড : 

সুপারফুড বলতে সেই সমস্ত খাদ্য কে বোঝায় যেগুলির মধ্যে ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান অনেক বেশি। যে সবজি বা ফলগুলি খেলে আমাদের শরীরে মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টের অভাব হয় না, এবং আমাদের শরীর অনেক বেশি সুস্থ থাকে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় সেই সমস্ত খাদ্যগুলোকেই আমরা সুপার ফুড বলে থাকি। 

 

পালং শাক :

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পালং শাককে আমরা বিভিন্নভাবে খেয়ে থাকি। শীতকালে পালং শাক খুব বেশি পরিমাণে চাষ হয় তাই খুব সহজেই বাজারে পালং শাক পাওয়া যায়। পালং শাকের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে মিনারেলস বা খনিজ পদার্থ। নিয়মিত পালং শাক খেলে আমাদের শরীরে পটাশিয়ামের অভাব হবে না। 

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য পালং শাক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ পাওয়া যায়, যা আমাদের চোখের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। পালং শাকের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা আমাদের রক্তে ইনসুলিনের সংবেদনশীলতাকে বাড়িয়ে দেয় ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে। তাই ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের জন্য পালং শাকের উপকারিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

পালং শাকের মধ্যে ভিটামিন এ পাওয়া যায়। ভিটামিন এ আমাদের ত্বকের জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। নিয়মিত পালং শাক গ্রহণ করা আমাদের ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

গাজর :

গাজরের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেল যা আমাদের শরীরের জন্য ভীষণভাবে প্রয়োজনীয়। গাজরের মধ্যে ভিটামিন এ অনেক বেশি পরিমাণে থাকে যা আমাদের চোখ ও ত্বকের জন্য খুবই ভালো। তাই আমাদের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত গাজর রাখা উচিত। 

গাজরের মধ্যে থাকে অনেক বেশি পরিমাণে পটাশিয়াম, আয়রন যা আমাদের রক্ত সঞ্চালনের জন্য ভীষণভাবে উপকারী। আমাদের যদি রক্ত সঞ্চালন ঠিকভাবে হয় তাহলে ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে ফলে হৃদয় ভালো থাকে এবং হৃদয় ঘটিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

গাজরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ও ভিটামিন সি পাওয়া যায়, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : শীতের জন্য ৫ টি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার সম্পর্কে বিস্ময়কর তথ্য

 

সজনে পাতা :

সজনে গাছের পাতাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান পাওয়া যায়। শুধুমাত্র খাদ্য উপাদান নয়, সজিনাতে ঔষধিগুণ বর্তমান। সজনে পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যামিনো অ্যাসিড থাকায় এটি ত্বক ও চুলের জন্য ভীষণভাবে উপকারী। 

সজনে পাতার উপকারিতা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সজনে গাছের পাতাকে বলা হয় সুপার ফুড। সজনে পাতাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট থাকে।

সজনে পাতা নিয়মিত গ্রহণ করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত হয় এবং আমাদের শরীরে কোন প্রকার ভিটামিন ও মিনারেলসের অভাব ঘটে না। সজনে পাতায় রয়েছে ক্লোরোজানিক অ্যাসিড। যা সাহায্য করে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে। 

সজনে পাতার উপকারিতা আমাদের হৃদয় বা হার্টের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত সজনে পাতা খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের হৃদয় বা হার্ট সুস্থ থাকে।

 

বেদানা : 

শীতকালের আরেকটি সুপারফুড হলো বেদানা। যার মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও ফলিক অ্যাসিড। তাই নিয়মিত বেদানা খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। 

বেদানাতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যার ফলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি, সাইট্রিক অ্যাসিড ট্যানিন সমৃদ্ধ বেদানা আমাদের ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে।

 

কমলালেবু :

কমলালেবুর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি। 

কমলালেবুতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। কমলালেবু সাহায্য করে আমাদের শরীরের ব্যাড কোলেস্টেরলের পরিমাণকে কম করতে। 

এছাড়াও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য কমলালেবু ভীষণ উপকারী।স্বাস্থ্য সচেতন প্রতিটি মানুষই কমলালেবু খাওয়ার মাধ্যমে নিজেদের সুস্থ রাখতে চেষ্টা করে। তাই শীতকালে কমলা লেবু অবশ্যই খাওয়া উচিত।

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : ১০ টি সব থেকে বেশি প্রোটিন জাতীয় খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

 

আমলকি :

আমলকিকে বলা হয় শীতের রাজা। আমলকিতে রয়েছে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং অন্যান্য সংক্রমনের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। আমলকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল, এছাড়াও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান এর উপস্থিতি যা একে আরো মূল্যবান করে তুলেছে।

আমলকির মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। ফাইবার আমাদের পাচনতন্ত্রকে এবং পেটের মধ্যে অবস্থিত গুড ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত আমলকি খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের হজম ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 

তবে ফাইবারের পরিমাণ অনেক বেশি থাকায় খুব বেশি পরিমাণে আমলকি গ্রহণ করলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এছাড়া অনেক রকমের শাকসবজি, ফলমূল ও অন্যান্য খাবার রয়েছে যাদের পুষ্টিগত গুনাগুন  বা নিউট্রিশনাল ভ্যালু অনেক বেশি। তাই শীতকালে আমরা আমাদের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত এই খাবারগুলি অন্তর্ভুক্ত করতে পারি। 

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য : উপরোক্ত খাদ্যগুলো গ্রহণের পূর্বে বা খাওয়ার পর কোন অসুবিধা হলে অবশ্যই  একবার আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেবেন।

 


Share With Your Friends