কেন বেদানা কে সুপার ফুড বলা হয়? বেদানা খাওয়ার উপকারিতা

Share With Your Friends

বেদানা খাওয়ার উপকারিতা

বেদানা বা ডালিম এর মধ্যে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবার বা শর্করা। এছাড়াও পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। তাই নিয়মিত বেদানা খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের হৃদয় সম্পর্কিত রোগ এবং হজমে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 

বেদানাকে আমরা বিভিন্ন ফলের সাথে বা স্যালাড এর সাথে খেয়ে থাকি অথবা বেদনা থেকে রস নিঃসারিত করে জুস রূপে খেয়ে বা গ্রহণ করে থাকি। তবে নিয়মিত বেদানা খাওয়া বা গ্রহণ করার পূর্বে আমাদের বেদানার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে অবগত হওয়া খুবই প্রয়োজন। 

 

বেদানা খাওয়ার উপকারিতা : 

বেদানা বা ডালিম আমাদের সবারই কমবেশি প্রিয় বা পছন্দের ফল গুলির মধ্যে একটি। সাধারণত এই ফলটি সর্বপ্রথম পাওয়া যায় পারস্য দেশ অর্থাৎ ইরানে। কিন্তু বেদানার পুষ্টিগত গুণাগুণ এতটাই বেশি যে পরবর্তী সময়ে এই ফলটি বিভিন্ন দেশে উৎপাদন করা শুরু হয়। 

ভারতের মহারাষ্ট্রে সব থেকে বেশি বেদানা বা ডালিম উৎপন্ন করা হয়। শুধু তাই নয় বেদানার পুষ্টিগত গুনাগুন অনেক বেশি তাই এই ফলটিকে অনেক সময় সুপার ফুড বলা হয়। 

১০০ গ্রাম বেদানার পুষ্টিগত গুনাগুন বা নিউট্রেশনাল ফ্যাক্ট, 

  • ক্যালোরি ৮৩, 
  • প্রোটিন ১.৬৭ গ্রাম, 
  • ফ্যাট ১.১৭ গ্রাম, 
  • কার্বোহাইড্রেট ১৮.৭ গ্রাম, 
  • ফাইবার বা শর্করা ৪ গ্রাম, 

এছাড়াও পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং মিনারেল বা খনিজ উপাদান যেরকম, 

ভিটামিন সি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন কে, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, সেমিনিয়াম ইত্যাদি। 

  • বেদানা বা ডালিমের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান পলিফেনল পাওয়া যায়।  এই পলিফেনল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানটি সাহায্য করে আমাদের শরীরে এলডিএল (LDL) ব্যাড কোলেস্টেরলের পরিমাণ কে কম করতে এবং এইচ ডি এল (HDL) গুড কোলেস্টেরলের পরিমাণ কে বৃদ্ধি করতে। শুধু তাই নয় নিয়মিত বেদানা বা ডালিম খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই বেদানা খাওয়ার উপকারিতা আমাদের হৃদয়ের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। 
  • ১০০ গ্রাম বেদানার মধ্যে প্রায় ৪ গ্রাম ফাইবার বা শর্করা পাওয়া যায়। এই ফাইবার বা শর্করা সাহায্য করে আমাদের অন্ত্রের  মধ্যে অবস্থিত গুড ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণকে বৃদ্ধি করতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে। এছাড়াও ফাইবার সাহায্য করে আমাদের হজম ক্ষমতাকে উন্নত করতে। তাই নিয়মিত বেদানা খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের কনস্টিপেশন বা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 
  • বেদানা খেতে মিষ্টি তাই অনেকে মনে করে বেদানা খেলে আমাদের ব্লাড সুগার বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু এই ধারণা একদমই ভুল। হ্যাঁ এটা সত্যি যে বেদানার মধ্যে ন্যাচারাল সুগার থাকে। তবে বেদানার মধ্যে বিশেষ কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান এবং ফাইবার থাকে যা আমাদের শরীরে ইনসুলিনের সেনসিটিভিটি বা সংবিধানশীলতা কে বৃদ্ধি করে যার ফলে আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং আমাদের মধ্যে হাই ব্লাড সুগার অথবা টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 
  • যদি আমাদের রক্তে অক্সালেট, ক্যালসিয়াম এবং ফসফেট এর মাত্রা বৃদ্ধি পায় তাহলে আমাদের কিডনিতে স্টোন বা পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও আমাদের রেচন বা মূত্রাশয় সমস্যা হয়। বেদানার মধ্যে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ পলিফেনাল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা আমাদের রক্তে অক্সালেট, ক্যালসিয়াম এবং ফসফেট এর মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত আমরা যদি বেদানা বা ডালিমের রস বা জুস খাই বা গ্রহণ করি তাহলে আমাদের কিডনি সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।  
  • বেদানার মধ্যে পাওয়া যায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ফ্ল্যাভোনয়েড। এই ফ্ল্যাভোনয়েড সাহায্য করে ফ্রী-রেডিকেল এর দ্বারা আমাদের শরীরের কোষগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা কে কম করতে। ফলস্বরূপ আমাদের মধ্যে ক্যান্সার এর মত কঠিন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। শুধু তাই নয় নিয়মিত বেদানা বা ডালিম খেলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। যদিও এই বিষয়ে আরো অনেক পরীক্ষা এবং তথ্যের প্রয়োজন আছে। 
  • অনেক সময় আমাদের মুখের ভেতরে বিভিন্ন রকম ব্যাকটেরিয়া অথবা ভাইরাসের জন্য ইনফেকশন বা সংক্রমণ হয়, যেরকম দাঁতের গোড়ায় ব্যথা, মাউথ আলসার, মুখে দুর্গন্ধ ইত্যাদি। বেদানার মধ্যে পাওয়া যায় অনেক বেশি পরিমাণে অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান। তাই নিয়মিত বেদানা খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের মুখের মধ্যে সংক্রমণ বা ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 
  • বেদানার মধ্যে পাওয়া যায় অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান। এই উপাদান গুলি সাহায্য করে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে বা জয়েন্টের ব্যথা কে কম করতে। শুধু তাই নয় বেদনার মধ্যে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম যা আমাদের শরীরের হাড় এবং গঠনকে উন্নত করে। 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : আদিও কি ড্রাগন ফল শরীরের জন্য ভালো? ড্রাগন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্ময়কর তথ্য

 

বেদানা খাওয়ার অপকারিতা : 

সাধারণত বেদানা বা ডালিম খাওয়ার কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই তবে অতিরিক্ত কোন কিছুই খাওয়া আমাদের জন্য সঠিক নয়। 

  • অতিরিক্ত বেদনা খেলে আমাদের মধ্যে পেটের সমস্যা, বমি ভাব, এমনকি ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
  • অতিরিক্ত বেদানা খেলে আমাদের রক্তচাপ অনেক বেশি পরিমাণ কমে যেতে পারে। 
  • অনেক মানুষের বেদানা খেলে অ্যালার্জির সম্ভাবনা থাকতে পারে। 

তবে যে সকল মানুষের সদ্য কোনরকম সার্জারি বা অপারেশন হয়েছে তাদের জন্য অতিরিক্ত পরিমাণ বেদানা খাওয়া একদমই উচিত নয়। 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : শশা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অবিশ্বাস্য ৮ টি তথ্য

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য : আপনার যদি পূর্ব কোন রোগ থাকে যেরকম, লো ব্লাড প্রেসার, হাই ব্লাড সুগার, তাহলে বেদনা খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেবেন।

 

 


Share With Your Friends