প্রতিদিন ২ টি করে লবঙ্গ খেলে কমবে ৭ টি রোগ। লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা

Share With Your Friends

লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা

লবঙ্গ এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ পাওয়া যায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান ভিটামিন এবং মিনারেল। নিয়মিত লবঙ্গ খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত হয় এবং অতিরিক্ত সর্দি কাশি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

লবঙ্গ মূলত একটি মসলা, যা আমরা খাবারের স্বাদ বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করে থাকি। লবঙ্গের প্রধান উৎপাদক দেশগুলো হলো ইন্দোনেশিয়া, ভারত, শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ, পাকিস্তান। লবঙ্গ গাছের ফুলের কুঁড়িকে শুকিয়ে লবঙ্গ মসলাটা তৈরি করা হয়। 

লবঙ্গ গাছের নানা অংশ যেমন শুকনো ফুল ডাল ও পাতা আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। আমরা প্রতিনিয়ত লবঙ্গ কে আমাদের খাদ্য প্রস্তুত করতে অথবা খাদ্য রূপে গ্রহণ করে চলেছি। কিন্তু আমাদের লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জেনে রাখা খুবই প্রয়োজন।

 

লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা : 

বহু যুগ ধরে আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় লবঙ্গ ব্যবহার করা হয়। লবঙ্গের পুষ্টিগত গুনাগুন এবং ঔষধি গুনাগুন অনেক বেশি তাই নিয়মিত লবঙ্গ খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে অনেক কঠিন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। ১০০ গ্রাম লবঙ্গের পুষ্টিগত গুনাগুন বা নিউট্রিশন ভ্যালু, 

  • ক্যালোরি ২৭৪,
  • প্রোটিন ৫.৯৭ গ্রাম, 
  • ফ্যাট ১৩ গ্রাম,
  • কার্বোহাইড্রেট ৬৫.৩ গ্রাম, 
  • ফাইবার বা শর্করা ৩৩.৯ গ্রাম, 

এছাড়াও পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং মিনারেল বা খনিজ উপাদান যেরকম, 

ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ৬, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, কপার, সেলেনিয়াম ইত্যাদি। 

  • লবঙ্গের মধ্যে পাওয়া যায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা সাহায্য করে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উন্নত করতে এবং বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়তে। তাই নিয়মিত লবঙ্গ খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক উন্নত হয় এবং ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংঘটিত ইনফেকশন বা সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 
  • লবঙ্গের মধ্যে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ ফাইবার বা শর্করা এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। যা সাহায্য করে আমাদের শরীরে ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বা সেনসিটিভিটি কে বৃদ্ধি করতে। যার ফলে আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই নিয়মিত লবঙ্গ খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 
  • মুখের মধ্যে নানা ধরনের সমস্যা যেরকম বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস দ্বারা মুখে সংক্রমণ বা ইনফেকশন, দাঁতের গোড়াতে ইনফেকশন, মাউথ আলসার, অতিরিক্ত দাঁতে ব্যথা সমস্যা সমাধানের জন্য বহু প্রাচীন কাল থেকে লবঙ্গ ব্যবহার হয়ে আসছে। লবঙ্গ প্রাকৃতিক ব্যথানাশক আর অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। লবঙ্গের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান পাওয়া যায়। এটি মুখের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস গুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ফলে আমাদের মুখে ইনফেকশন বা সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।
  • লবঙ্গের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান। তাই নিয়মিত লবঙ্গ খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের ফুসফুস অথবা রেসপেক্টরি সিস্টেমে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্বারা ইনফেকশন বা সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। শুধু তাই নয় নিয়মিত লবঙ্গ খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের সর্দি-কাশি গলা ব্যথা, কফ, শ্বাসকষ্ট, গলা ফুলে যাওয়া ইত্যাদি থেকে দ্রুত উপশম হয়। 
  • লবঙ্গের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন কে ও ম্যাঙ্গানিজ যা আমাদের শরীরে হাড়ের গঠন ও শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাই আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় লবঙ্গ অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। লবঙ্গ হাড়ের স্বাস্থ্য বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। লবঙ্গের মধ্যে থাকে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা হাড়ের ব্যথা সারাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও জয়েন্ট পেন, পেশির ব্যথা, ফোলা ভাব ইত্যাদি কমাতেও এই ঘরোয়া ঔষধিটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই নিয়মিত লবঙ্গ খেলে বা গ্রহণ করলে হাড় সম্পর্কিত সমস্যা গুলি অনেকটাই কমে যায়।
  • লবঙ্গের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান পাওয়া যায়।  এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান গুলি সাহায্য করে আমাদের শরীরে ফ্রি-রেডিক্যাল দ্বারা ক্রমাগত কোষগুলির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনাকে কম করতে। যার ফলস্বরূপ আমাদের মধ্যে ক্যান্সার এর মত কঠিন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। শুধু তাই নয় নিয়মিত লবঙ্গ খেলে বা গ্রহণ করলে ক্রমাগত ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি কে নিয়ন্ত্রণ আনা যায়। প্রতিদিন এক টুকরো করে লবঙ্গ খেলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। যদিও এ বিষয়ে আরো অনেক পরীক্ষা এবং তথ্যের প্রয়োজন আছে। 
  • লবঙ্গের মধ্যে পাওয়া যায়, অ্যান্টি-মাইক্রোবাল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান। যা আমাদের পেটের মধ্যে আলসার হওয়ার সম্ভাবনাকে কম করে। শুধু তাই নয় নিয়মিত লবঙ্গ খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের লিভার বা যকৃত সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : দৈনিক দুপুর বেলা ১ টি করে এলাচ খেলে কি হয়? এলাচ খাওয়ার উপকারিতা

 

লবঙ্গ খাওয়ার অপকারিতা : 

সবকিছুই পরিমিত পরিমাণে ব্যবহার বা খাওয়া উচিত। উপকারিতা পাওয়ার জন্য কখনোই বেশি বেশি পরিমাণে লবঙ্গ খাওয়া উচিত নয়। অনেকেই বিনা কারণে মুখে অতিরিক্ত পরিমাণ লবঙ্গ দিয়ে রাখেন। যা উপকারিতার চেয়ে অপকারিতাই বেশি। অতিরিক্ত লবঙ্গ খেলে লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

  • লবঙ্গ আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই লবঙ্গ বেশি পরিমাণে খেলে বা গ্রহণ করলে রক্তে শর্করার মাত্রা বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া হবার সম্ভাবনা থাকে যা ভীষণভাবে ক্ষতিকারক।
  • যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তাদেরও লবঙ্গ খেলে ত্বকের বিভিন্ন অংশে লাল বা কালো দাগ বা চুলকানি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • লবঙ্গের মধ্যে অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান পাওয়া যায়। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে লবঙ্গ খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের পেটে সমস্যা. বমি ভাব, এমনকি ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : প্রতিদিন ডিম খাওয়া শরীরের জন্য ভালো? ডিম খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য : লবঙ্গ খাওয়ার পর আপনার যদি কোন রকম কোন সমস্যা সৃষ্টি হয় তাহলে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

 

 


Share With Your Friends