সুস্থ থাকার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমের প্রয়োজন। নিয়মিত আমরা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাই তাহলে আমাদের শরীর ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা অনেকাংশ বৃদ্ধি পায় এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম হওয়ার ফলে আমরা অনেক বেশি তরতাজা অনুভব করি।পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন আছে, কিন্তু শারীরিক সমস্যা, মানসিক সমস্যা এছাড়াও বিভিন্ন সমস্যার কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা পূরণ হয়ে ওঠে না। আমরা ঔষধ বা মেডিসিন গ্রহণ করে ঘুমিয়ে পড়তে পারি কিন্তু পরবর্তীকালে এর অনেক রকমের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। যা আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে কখনোই ভালো নয়। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় প্রাকৃতিকভাবে ঘুম বৃদ্ধির উপায় গুলি সম্পর্কে।
ঘুম বৃদ্ধির উপায় গুলি কি কি ?
অনেক মানুষের মধ্যেই দেখা যায় রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে বা অল্প সময় ঘুমিয়ে বা অনিদ্রা নামক সমস্যার ভুক্তভোগী হন। আমরা কিন্তু খুব সহজেই এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে পারি। যদি আমরা আমাদের চিরাচরিত কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারি, পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ করতে পারি, আর সামান্য সতর্কতা অবলম্বন করতে পারি তাহলে এই সমস্যা থেকে খুব সহজে বেরিয়ে আসা সম্ভব। তাহলে আসুন আমরা জেনে নিই ঘুম বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে কি কি করবেন আর কি কি করবেন না!
রুটিন মাফিক জীবন যাত্রা :
ঘুমের ক্ষেত্রে শরীর সুস্থ রাখতে আমাদের ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে রাত্রের বেলা যদি সঠিকভাবে ঘুম না হয় তাহলে দিনের বেশিরভাগ সময়ই ক্লান্তিতে কেটে যায়। যাদের রাতে ঘুমোতে সমস্যা হয় তারা যদি দিনের বেলা সেই ঘুম ঘুমিয়ে নেয় বা ঘুমের ঘাটতি পূরণ করে তার ফলে রাতের ঘুমে আরও ব্যাঘাত ঘটে। তাই দিনের বেলায় না ঘুমিয়ে রাতের বেলা একটা নির্দিষ্ট সময় ঘুমানোর রুটিন তৈরি করতে হবে। অর্থাৎ প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান এবং লক্ষ্য রাখুন আপনার ৭ থেকে ৮ ঘন্টা যাতে ঘুম হয়। ঘুম বৃদ্ধির উপায় বিষয়ে আলোচনায় ঘুমের নির্ধারিত সময় মেনে চলা অর্থাৎ রুটিন মাফিক জীবনযাত্রা ভীষণভাবে আবশ্যক।
বিছানায় যাবার পূর্বে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার বন্ধ করা :
ঘুমোতে যাওয়ার ৩০ মিনিট থেকে এক ঘন্টা আগে থেকে টিভি, স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ইত্যাদি থেকে দূরে থাকতে হবে। আমরা যদি প্রতিদিন ঘুমোতে যাওয়ার আগে টিভি, ফোন, ল্যাপটপ ইত্যাদি ব্যবহার করি তাহলে এই যন্ত্রাংশগুলো থেকে এক প্রকারের উজ্জ্বল আলোকরশ্মি আমাদের চোখে এসে পড়ে যা আমাদের মস্তিষ্কে একপ্রকার সিগন্যাল বা সংকেত প্রেরণ করে যার ফলে আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। মোবাইল ল্যাপটপ ইত্যাদি থেকে যে নীল আলো বের হয় তাতে আমাদের মেলাটনিন হরমোন উৎপাদনে সমস্যা সৃষ্টি হয়।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : অতিরিক্ত ঘুমের কারণ এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বিষয়ে জানা আছে তো?
ঘুমের জন্য উপযুক্ত আদর্শ পরিবেশ :
আমাদের ঘুমের জায়গা অর্থাৎ বেডরুমের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে সেই ঘর যেন অন্ধকার হয়, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং অতিরিক্ত জিনিসপত্রে ঠাসা না হয়। আমাদের ঘুমের জন্য ঘরের আদর্শ তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আমাদের নজর রাখতে হবে যাতে ঘরের মধ্যে হাওয়া চলাচলের ব্যবস্থা থাকে এবং এয়ারকন্ডিশন অথবা ফ্যান ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
যে বিছানায় আমরা ঘুমাই, ঘুমোতে যাওয়ার পূর্বে সেই বিছানা ভালোভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে নিতে হবে। অর্থাৎ ঘুমোতে যাওয়ার পূর্বে আরামদায়ক বিছানা ও বালিশ ব্যবহার করতে হবে।
ঘুমোতে যাওয়ার পূর্বে বেডরুমের লাইট সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিতে হবে। লাইট বন্ধ করে দেওয়ার ফলে আমাদের মস্তিষ্কে একপ্রকারের সংকেত যাবে যার ফলে দ্রুত আমরা ঘুমিয়ে পড়তে পারবো। ঘুম বৃদ্ধির উপায় গুলির মধ্যে অন্যতম হলো ঘুমের জন্য আদর্শ পটভূমি তৈরি করা। আমাদের বেডরুমের মধ্যে যাতে ঘুমের উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে ওঠে সেদিকে নজর দিতে হবে।
খাদ্যাভ্যাস এর পরিবর্তন :
রাতের বেলা খুব তেল মশলা যুক্ত ভারী খাবার বা চিনি যুক্ত খাবার না খাওয়াই ভাল, রাতে হালকা খাবার খেলে তা যেমন শরীরের জন্য ভালো তেমনি এই ধরনের খাবার খেলে বদহজম, গ্যাস ইত্যাদি সমস্যা গুলো কম হয়। একেবারে ভরপেট খেয়ে শুতে গেলে আমাদের ঘুমের অসুবিধা হতে পারে। আবার খালি পেটে শুয়ে পড়লে খিদে পাওয়ার ফলে ঘুম নাও আসতে পারে। তাই আমাদের ঘুমের ২ ঘন্টা পূর্বে রাতের খাবার খেয়ে নিতে হবে এবং যতটা সম্ভব হালকা খাবার খেতে হবে। তাই ঘুম বৃদ্ধির উপায় বিষয়ে আলোচনায় খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শুধু তাই নয় প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করতে হবে, কিন্তু খুব বেশি জল গ্রহণ করা উচিত নয়। যে হরমোন গুলি আমাদের সাহায্য করে ঘুম আসার জন্য, সেই হরমোন গুলি কে সাহায্য করে কিছু উপাদান যা আমরা খাদ্য থেকে পেয়ে থাকি যেরকম, ম্যাগনেসিয়াম, মেলাটোনিন, এল-থেনাইন, গামা-অ্যামিনোবুটারিক-অ্যাসিড ইত্যাদি। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন, ফাইবার এবং ভিটামিন যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
উত্তেজক পানীয় গ্রহণ না করা :
অনেকেরই অভ্যাস থাকে ঘুমানোর পূর্বে চা, কফি পান করার, কিন্তু এই ধরনের অভ্যাস যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বর্জন করা উচিত। ঘুমানোর পূর্বে চা, কফি পান করলে এতে থাকা ক্যাফাইন আমাদের ঘুমকে অনেক কমিয়ে দেয়। আমরা জানি চা, কফি আমাদের মনঃসংযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং এর ফলে আমাদের মস্তিষ্কে এক প্রকার সংকেত পৌঁছায় ও আমাদের ঘুম আসতে দেরি হয়। তাই রাতে ঘুমের দু-তিন ঘন্টা পূর্বে চা, কফি বা ক্যাফাইন আছে এমন পানীয় পান করা উচিত নয়।
অত্যাধিক পরিমাণে অ্যালকোহল বা ধূমপান গ্রহণ করা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। ওই জাতীয় পদার্থগুলো আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কে অনেক ক্ষতি করে। এর ফলে অনিদ্রার সমস্যা দেখা দেয়। তাই ভালো ঘুমের প্রস্তুতি শুরু হয় বিছানাতে যাওয়ার পূর্বে থেকে বা অনেক আগে থেকে। সেই কারণে এই সমস্ত উত্তেজক পানীয় গ্রহণ না করাই উচিত।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : রাতে ঘুম না আসার কারণ সম্পর্কে আশ্চর্যজনক ১১ টি তথ্য।
ঘুম বৃদ্ধির অন্যান্য উপায় :
- এছাড়াও ঘুমোতে যাওয়ার এক থেকে দুই ঘন্টা আগে থেকে সমস্ত চিন্তা এবং কাজ কে দূরে সরিয়ে রেখে নিজের সাথে কিছুটা সময় কাটান। ঘুমোতে যাওয়া ৩০ মিনিট আগে হালকা গরম জলে স্নান করতে পারেন যার ফলে সারাদিনের ক্লান্তি অনেক কমে যাবে। শরীরের তাপমাত্রা অনেক কমে যাবে এবং শরীরে আরামদায়ক অনুভব হবে।
- ঘুমের ১০-১৫ মিনিট আগে মেডিটেশন করতে পারেন যার ফলে শরীর রিলাক্স বা শিথিল হবে এবং ঘুমও খুব ভালোভাবে হবে।
- শুতে যাওয়ার আগে একটু হালকা গান শুনতে পারেন। স্লো সাউন্ড ব্যবহার করে হালকা গান শুনলে আমাদের মাথা থেকে অনেক চিন্তা কমে যায় এবং আমাদের মস্তিষ্ক অনেক বেশি রিল্যাক্স বা শিথিল হয়ে পড়ে, যার ফলে আমাদের ঘুম খুব ভালো হয়।
- ঘুমের আগে বাদাম ও দই খেতে পারেন যার ফলে মেলাটনিন হরমোন নিঃসরণ খুব ভালোভাবে হয়। মেলাটোনিন হরমোনের উপর নির্ভর করে আমাদের ঘুমের গুণগত মান বা কুয়ালিটি।
- নিয়মিত এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম ঘুমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি আমরা প্রতিদিন ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা এক্সারসাইজ করতে পারি তাহলে আমাদের শরীর অনেক সুস্থ থাকবে। রাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর আমরা অনেক বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়বো যার ফলে খুব শীঘ্রই আমাদের ঘুম পেয়ে যাবে।
ঘুম বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কিত আলোচনায় কিছু বিষয় উল্লেখ করা খুবই প্রয়োজন যেরকম, প্রতিদিন ঘুমোতে যাবার পূর্বে আমাদের এমন কিছু একটা করতে হবে যাতে আমাদের শরীরও মন চাপমুক্ত থাকে। যারা গান শুনতে ভালোবাসেন তারা লো সাউন্ডে গান শুনতে পারেন, কেউ কেউ বই পড়তে পারেন, আবার মেডিটেশন বা ধ্যানও করতে পারেন।নিয়মিত এই বিষয় গুলি করতে থাকলে শরীর ও মস্তিষ্ক কিছু সংকেত পাবে যে আমাদের এখন ঘুমাবার সময় হয়েছে। এগুলো নিয়মিত করতে থাকলে আমাদের ঘুম অনেক ভালো হবে, ঘুম বৃদ্ধি পাবে এবং যাদের অনিদ্রার সমস্যা রয়েছে সে সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলি দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একবার আপনার ডক্টরের সাথে পরামর্শ করে নেবেন।
Thank you everyone for coming to our website www.healthybangla.in and a warm welcome to all of you.
Hi, my name is Arunima Morial and I am from Kolkata, India.
I have been writing health related articles for the last 3 years.
All the articles me and my team write are always reviewed by Sagar Ghosh (Science Graduate, Location- Shyamnagar, West Bengal) and Dr Gautam Ghosh (B.H.M.S, M.D in Homoeopathy, Location- Shyamnagar, West Bengal).
We always share the reference web page link from where we get correct information in the article.
Please feel free to contact me on my email ID sg133322@gmail.com