শীতকালে চুলে অতিরিক্ত খুশকি কেন হয়? খুশকি দূর করার উপায়।

Share With Your Friends

অতিরিক্ত খুশকি কেন হয়

আমরা অনেকেই দেখেছি শীতকালে আমাদের চুলে খুশকির পরিমাণ অনেক বেশি বেড়ে যায়। অতিরিক্ত খুশকি আমাদের অস্বস্তির অন্যতম কারণ যার প্রভাব আমাদের সৌন্দর্যের উপর পড়ে।

এছাড়াও শীতকালে অতিরিক্ত খুশকির ফলে আমাদের ক্রমাগত মাথা চুলকানো, আমাদের ত্বকের বিভিন্ন প্রকার সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তাই শীতকালে অতিরিক্ত খুশকি হওয়ার কারণ এবং খুশকি দূর করার উপায় সম্পর্কে অবগত হওয়া খুবই প্রয়োজন। 

 

শীতকালে চুলে অতিরিক্ত খুশকি কেন হয়?

ম্যালাসেজিয়া নামক একপ্রকার ফাঙ্গাস এর জন্য আমাদের মাথায় খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি হয়। যখন আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্প শুষ্ক হয়ে পড়ে এবং উপরীতলার অংশ বা স্তর গুলি খোসা হয়ে উঠতে থাকে তখন তাকে আমরা খুশকি বলে থাকি।

  • শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা খুবই কমে যায়, যার ফলে আমাদের ত্বক অনেক বেশি শুষ্ক হয়ে পড়ে এবং খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। 
  • সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লিটার জল গ্রহণ করা উচিত। শীতকালে সাধারণত আমাদের অনেক কম জল পান করা হয়। যার ফলে আমাদের শরীরে জলের অভাব অথবা ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়। যা শীতকালে আমাদের মাথায় খুশকি হওয়ার অন্যতম কারণ। 
  • সাধারণত শীতকালে অত্যাধিক ঠান্ডার জন্য আমাদের মাথা কম ধোয়া হয়। তার কারণ অত্যাধিক ঠান্ডায় খুব বেশি মাথা পরিষ্কার করলে বা ধুলে আমাদের ঠান্ডা লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে দীর্ঘদিন জৈব শ্যাম্পু দিয়ে মাথা না ধুলে বা পরিষ্কার না করলে আমাদের মাথায় খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
  • শীতকালে সাধারণত আমরা মাথায় টুপি অথবা মাফলার ব্যবহার করি মাথা কে গরম রাখার জন্য। আমাদের মাথায় প্রচুর পরিমাণ অনুজীব থাকে যা গরমে ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়। যার ফলস্বরূপ আমাদের মাথায় সংক্রমণ বা ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তাই শীতকালে সব সময় যদি আমরা মাথায় টুপি বা মাফলার ব্যবহার করি গরমের জন্য, তাহলে মাথায় খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। 
  • শীতকালে সাধারণত আমাদের ঘরের ভেতর অনেক বেশি গরম হয় এবং বাইরে আবহাওয়া খুবই ঠান্ডা। শুধু তাই নয় শীতকালে আমরা অনেক বেশি গরম জল দিয়ে স্নান করি। এই আবহাওয়ার তাপমাত্রার বৈষম্যের জন্য আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্প কখনো ঠান্ডা হয় আবার কখনো গরম হয় যার ফলস্বরূপ আমাদের খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। 
  • আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্পে ক্রমাগত সামান্য পরিমাণ তেল উৎপন্ন করে, শীতকালে অত্যাধিক পরিমাণ ঠান্ডার জন্য আমাদের সঠিকভাবে চুল পরিষ্কার করা হয় না তাই ক্রমাগত তেল জমতে থাকায় আমাদের চুল অনেক বেশি অপরিষ্কার হয়ে পড়ে যা শীতকালে আমাদের চুলে খুশকি হওয়ার অন্যতম কারণ। 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : শক্ত, লম্বা এবং উজ্জ্বল চুলের জন্য, কতদিন অন্তর মাখবেন তেল?

 

খুশকি দূর করার উপায় : 

নিয়মিত আমাদের চুলকে শীতকালে জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে পরিষ্কার করে ধোয়া উচিত। এখানে জৈব শ্যাম্পু বলতে অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পুর কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও শীতকালে খুব বেশি গরম জল আমাদের মাথায় ব্যবহার করা উচিত না। 

  • শীতকালে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খুব বেশি খোলা চুলে যাওয়া উচিত না কারণ মাথার ত্বকে বা স্কাল্পে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে সংক্রমণ বা ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আমাদের চুলের উপর পাতলা পর্দা বা কাপড় ব্যবহার করা যেতে পারে। 
  • মাঝে মাঝে আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্প কে তেল দিয়ে ভালো করে ম্যাসাজ করা উচিত বা মালিশ করা উচিত যার ফলে আমাদের মাথার ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে। 
  • অনেক সময় আমরা আমাদের চুলকে সোজা বা স্ট্রেট করার জন্য স্ট্রেটনার নামক যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে থাকি। যা আমাদের চুলের তাপমাত্রা অনেক বাড়িয়ে দেয়। নিয়মিত এই যন্ত্রাংশের ব্যবহার আমাদের চুলের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। হঠাৎ মাথার ত্বকের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায় এবং খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তাই যদি আমাদের ক্রমাগত মাথায় খুশকি বৃদ্ধি হয় তাহলে স্ট্রেটনার ব্যবহার করা উচিত না। 
  • অনেকেই চুল ভেজা অবস্থায় চুলকে বেঁধে রাখে। ভিজে অবস্থায় চুল বেঁধে রাখলে চুলে ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস খুব দ্রুত বিস্তারিত করতে পারে যা পরবর্তীকাল খুশকি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই ভিজে অবস্থায় চুল বেঁধে রাখা একদম উচিত না। 

 

চুলে তেলের ব্যবহার: 

শীতকালে নিয়মিত চুলে তেল দেওয়া উচিত। মাথায় তেল ব্যবহার করলে, মাথার ত্বক বা স্কাল্পের আর্দ্রতা বজায় থাকে। যার ফলে আমাদের মাথায় খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 

শীতকালে নিয়মিত আমাদের চুলে নারকেল তেল,  পিঁয়াজ সমৃদ্ধ তেল বা অনিয়ন অয়েল, নিম অয়েল ব্যবহার করতে পারি এক থেকে দুই ঘন্টার জন্য তারপর জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে আমাদের চুল পরিষ্কার করে ধুয়ে নেওয়া উচিত। 

 

চুলে পাতিলেবুর ব্যবহার : 

নিয়মিত আমাদের চুলে পাতি লেবুর রস ব্যবহার করতে পারি। পাতিলেবুর রসের মধ্যে প্রচুর পরিমানে অর্গানিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এই অর্গানিক অ্যাসিড সাহায্য করে আমাদের মাথার ত্বকে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া বা ফাংগাস দ্বারা সংক্রমনের সম্ভাবনা কে কম করতে। 

প্রতি সপ্তাহে দুই চামচ পাতি লেবুর রস ব্যবহার করতে হবে এক ঘন্টার জন্য তারপর জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। 

 

চুলে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার এর ব্যবহার : 

প্রতি সপ্তাহে একবার করে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার আমাদের মাথার চুলে ব্যবহার করতে পারি। অ্যাপেল সিডর ভিনিগার ব্যবহার করলে আমাদের ত্বকে খুশকি হবার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 

সপ্তাহে একবার দুই চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনিগার আমাদের মাথার চুলে ব্যবহার করতে হবে ৩০ মিনিটের জন্য তারপর শ্যাম্পু ব্যবহার করে আমাদের মাথার চুল পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ :  খুশকি হওয়ার কারণ সম্পর্কে ৭ টি অজানা তথ্য

 

চুলে অ্যালোভেরা এর ব্যবহার : 

অ্যালোভেরার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান গুলি সাহায্য করে আমাদের ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাস দ্বারা সংক্রমণ বা ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা কে কম করতে। তাই নিয়মিত অ্যালোভেরা ব্যবহার করলে আমাদের চুলে খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। 

প্রতি সপ্তাহে একদিন আমাদের চুলে আমরা অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারি ৩০ মিনিটের জন্য তারপর জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে আমাদের চুলকে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। 

এছাড়াও আমাদের প্রতিদিন উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন এবং ভিটামিন যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। যার ফলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পাবে এবং আমাদের মাথার ত্বকে বিভিন্ন সংক্রমণ বা ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে।  

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য : উপরে উল্লেখিত কারণ ছাড়াও আমাদের মাথায় খুশকি হতে পারে তাই অতিরিক্ত মাত্রায় যদি আপনার মাথায় খুশকি হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই একবার আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া প্রয়োজন।

 


Share With Your Friends