অতিরিক্ত ঘুমের কারণ এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বিষয়ে জানা আছে তো?

Share With Your Friends

অতিরিক্ত ঘুমের কারণ

 

প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম সাহায্য করে আমাদের শারীরিক এবং মানসিক রোগ হবার প্রবণতাকে অনেক কম করতে। কিন্তু অতিরিক্ত ঘুম আমাদের জন্য ভালো নয় এবং অতিরিক্ত ঘুমের জন্য আমাদের মধ্যে নানান রকমের শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। 

অতিরিক্ত ঘুম বলতে কী বোঝায়? একজন মানুষ দৈনিক কতটা ঘুমাবে সেটি নির্ভর করে তার বয়স এবং শারীরিক অবস্থার উপর। তবে বয়স অনুযায়ী ঘুমের তালিকা অনুসারে দৈনিক একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বা মহিলার ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। এই ৭ থেকে ৮ ঘন্টার বেশি কোন মানুষ যদি প্রতিদিন ঘুমায় সেটা কে আমরা অতিরিক্ত ঘুম বলতে পারি। 

আমাদের প্রয়োজনের থেকে বেশি ঘুমানো বা অতিরিক্ত ঘুমানো কে হাইপারসোমনিয়া বলে। যেরকম খুব কম পরিমাণ ঘুমানো আমাদের শরীরের জন্য ভালো নয় ঠিক একই রকম অতিরিক্ত ঘুম আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় অতিরিক্ত ঘুমের কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে। 

 

অতিরিক্ত ঘুমের কারণ কি ? 

দৈনিক ১০ থেকে ১২ ঘন্টা ঘুমানোর পরেও আমাদের অনেক সময় শরীর ক্লান্ত মনে হয়। তার অন্যতম কারণ, আমরা কতক্ষণ ঘুমোচ্ছি তার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমাদের ঘুম কতটা গভীর। আমাদের যদি ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম হয় তাহলে তা যথেষ্ট আমাদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য। কিন্তু রাতে বিভিন্ন কারণ এর জন্য আমাদের যদি সঠিকভাবে গভীর ঘুম না হয় তাহলে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা ঘুমানোর পরও আমাদের ক্লান্ত মনে হয়, যা আমাদের অতিরিক্ত ঘুমের কারণ।

 

ঘুমের সমস্যা : 

অনেক সময় আমাদের শ্বাসনালীতে বাধা বা ব্লকেজ থাকে যার ফলে রাতের বেলা ঘুমানোর পর আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসে সামান্য অসুবিধা হয় এই রোগটিকে স্লিপ অ্যাপনিয়া বা নিদ্রাহীনতা বলে। সঠিকভাবে ঘুমাতে না পারার জন্য আমাদের পরবর্তী দিন ঘুম থেকে ওঠার পর অনেক বেশি ক্লান্ত এবং দুর্বল অনুভব হয় যা আমাদের অতিরিক্ত ঘুমের অন্যতম কারণ। 

 

অত্যাধিক দৈহিক পরিশ্রম : 

আমাদের কর্মক্ষেত্রের জন্য অনেক সময় আমাদের অনিয়মিত ভাবে অত্যাধিক দৈহিক পরিশ্রম করতে হয়। বেশি অর্থ উপার্জনের জন্য প্রতিদিন অনেক বেশি সময় বা ওভার টাইম কাজ করতে হয় যার ফলে আমাদের সঠিক সময়ে খাদ্য গ্রহণ এবং ঘুম হয় না। এই অনিয়মিত জীবন যাপনের ফলে আমাদের সঠিক সময় ঘুম এবং গভীর ঘুম হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায় যা আমাদের অতিরিক্ত ঘুমের কারণ। 

 

ঘুমের জন্য সঠিক পরিবেশ :

আমাদের ঘুমের জন্য যদি সঠিক পরিবেশ না হয় যেরকম, খুব বেশি শব্দ আমাদের ঘরে প্রবেশ করলে, ঘরের তাপমাত্রা যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে, আমাদের বিছানা যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না হয় অথবা মশা বা অন্যান্য কীটপতঙ্গের কামড় ঘুমের পরিবেশকে নষ্ট করে। যার ফলে আমাদের ঘুম আসার সম্ভাবনা অনেক কমে যায় বা ঘুম ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি হয়। তাই সঠিক সময় এবং সঠিকভাবে না ঘুমাতে পারার জন্য আমাদের গভীর ঘুম হয় না যা আমাদের অতিরিক্ত ঘুমের অন্যতম কারণ। 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : রাতে ঘুম না আসার কারণ সম্পর্কে আশ্চর্যজনক ১১ টি তথ্য

 

মানসিক দুশ্চিন্তা : 

অত্যাধিক মানসিক দুশ্চিন্তা আমাদের ঘুমের গুণমান বা কোয়ালিটি কে নষ্ট করে। মানসিক দুশ্চিন্তার ফলে আমাদের রাতে গভীর ঘুম হয় না যার ফলে দিনের বেলা আমাদের অনেক বেশি ক্লান্ত ও দুর্বল লাগে এবং তন্দ্রা আসার প্রবণতা বৃদ্ধি হয়। রাত্রি বেলা অপর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের জন্য দিনের বেলা ঘুমানোর পরিমাণ বেড়ে যায় যা আমাদের অতিরিক্ত ঘুমের কারণ। 

 

অসুস্থ শরীরের জন্য : 

অনেক সময় আমাদের বিভিন্ন রোগের কারণে প্রতিনিয়ত ঔষধ গ্রহণ করতে হয় সুস্থ থাকার জন্য যেরকম, হাই ব্লাড প্রেসার, হাই সুগার, অ্যাস্থমা বা শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। এই রোগ গুলি এবং ব্যবহৃত ঔষধ বা মেডিসিন গুলির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া স্বরূপ আমাদের রাতের বেলা ঘুম ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়, যার ফলে রাতে আমাদের গভীর এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম হয় না। তার পরবর্তী দিন আমাদের অনেক বেশি ক্লান্ত লাগে এবং তন্দ্রা বা ঘুম আসার প্রবণতা অনেক বেশি হয়। এছাড়া ও বিভিন্ন শারীরিক যন্ত্রণা বা ব্যথার ফলে আমাদের ঐরকম সমস্যা হতে পারে। 

 

খারাপ অভ্যাস : 

দীর্ঘদিন ধরে অত্যাধিক পরিমাণ অ্যালকোহল এবং তামাক জাতীয় দ্রব্য পান করলে আমাদের শরীর ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঠিক একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা যার ফলে আমাদের গভীর ঘুম হবার প্রবণতা অনেক কমে যায় এবং শরীর অনেক বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ে  যা আমাদের অতিরিক্ত ঘুমের মুখ্য কারণ। 

 

অতিরিক্ত ঘুমের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কি ? 

প্রতিদিন অতিরিক্ত ঘুমালে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে যেরকম, 

  • অতিরিক্ত ঘুমালে ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। 
  • আমাদের শরীরের যদি ওজন খুব বেশি বৃদ্ধি পায় তাকে আমরা ওবেসিটি বলে থাকি। অতিরিক্ত ঘুমের ফলে আমাদের ওবেসিটি বা ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। 
  • সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন এবং তার বেশি ঘুম হলে মাথা যন্ত্রণা বা হেডেক হবার প্রবণতা অনেক বৃদ্ধি পায়। 
  • আমাদের ঘুমানোর সঠিক পরিবেশ বা বিছানা যদি না হয় তাহলে অতিরিক্ত ঘুমালে আমাদের ব্যাক পেইন বা পিঠে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। 
  • বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে যে মানুষগুলির মধ্যে বিষন্নতা বা ডিপ্রেশন বেশি তারা দৈনিক অতিরিক্ত ঘুমায়। আনুমানিক ১৫ % মানুষ যারা বিষন্নতা বা ডিপ্রেশনে ভুক্তভোগী তারা দৈনিক প্রয়োজন থেকে অনেক বেশি ঘুমায়। 
  • যে মানুষগুলি দৈনিক ১১ ঘণ্টার বেশি ঘুমায় তাদের করোনারি হার্ট ডিজিজ অথবা হৃদয় সংঘটিত রোগ হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। 

 

তবে একটি কথা বলে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ শুধুমাত্র অতিরিক্ত ঘুমানোর জন্যই যে উপরে উল্লেখিত রোগ গুলি হয় বিষয়টি এইরকম নয়। অতিরিক্ত ঘুমালে ওই রোগ গুলি হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় যদিও এই বিষয় নিয়ে আরো অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন।  

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার উপায় সম্পর্কে চমৎকার ৭ টি তথ্য

 

অতিরিক্ত ঘুমের প্রতিকার কি? 

কিছু দৈনিক নিয়ম মেনে জীবন যাপনের মাধ্যমে আমরা আমাদের অতিরিক্ত ঘুমকে ঠিক করতে পারি। আমাদের যদি সঠিকভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ গভীর ঘুম বা নিদ্রা হয়, তাহলে সাত থেকে আট ঘন্টা আমাদের ঘুমের জন্য যথেষ্ট। আসুন আমরা আলোচনা করি দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার উপায় গুলি সম্পর্কে। 

  • পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেল এবং সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে।
  • দৈনিক ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘন্টা ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করে। 
  • ঘুমের জন্য সঠিক পরিবেশ তৈরি করে যেরকম, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বিছানা এবং ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা। 
  • প্রতিদিন ঘুমোতে যাওয়ার পূর্বে একবার স্নান করা। 
  • দৈনিক নির্দিষ্ট সময় খাদ্য গ্রহণ করা এবং ঘুমাতে যাওয়া। 
  • দৈনিক সীমিত পরিমাণ ক্যাফাইন জাতীয় দ্রব্য পান করা যেরকম কফি এবং লিকার চা। 
  • অ্যালকোহল এবং তামাক জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ না করা। 

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য: উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলি আপনার জীবনে ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একবার আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেবেন। 

 


Share With Your Friends

4 thoughts on “অতিরিক্ত ঘুমের কারণ এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বিষয়ে জানা আছে তো?”

  1. For my part, I applauded your effort, which mirrored my own sentiments. The drawing is elegant, and the authored material is fashionable. Still, you appear concerned with the prospect of participating in something regarded as unethical. I completely concur that you’ll be able to address this concern rapidly.

  2. I share your pain for the work you’ve completed. The sketch is refined, and the authored material is wonderfully written. However, you appear to be concerned about the possibility of embarking on a path that could be considered questionable. I believe you will be able to solve this matter in a timely manner.

Comments are closed.