ওজন বাড়ানোর উপায় সম্পর্কে ৭ টি বিস্ময়কর তথ্য

Share With Your Friends

ওজন বাড়ানোর উপায়

আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকা খুবই প্রয়োজন। খুব বেশি শরীরের ওজন যেরকম আমাদের জন্য ভালো না, সেরকম ঠিক খুব কম ওজনও আমাদের শরীরের জন্য ভালো নয়। শুধু তাই নয় অনেক কম ওজন আমাদের শারীরিক গঠন কে খারাপ করে, যার প্রভাব আমাদের আত্মবিশ্বাসে পড়ে। তাই শরীরের ওজন বাড়ানোর উপায় সম্পর্কে আমাদের খুবই সচেতন হওয়া উচিত।

আমাদের শরীরের সঠিক ওজন কতটা হওয়া উচিত সেটি সম্পূর্ণভাবে নির্ধারণ করতে পারে BMI calculator বা বডি মাস ইনডেক্স ক্যালকুলেটর। সাধারণ বিএমআই ক্যালকুলেটরের ফলাফল নির্ভর করে আমাদের উচ্চতা, বয়স এবং ওজনের উপর। বিএমআই ক্যালকুলেটরের ফলাফল যদি ১৮.৫ এর কম আসে তাহলে আমাদের শরীরে মাংসের পরিমাণ কম থাকে যার ফলে আমরা আমাদের শরীরকে সর্বোচ্চভাবে ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে পারি না।

কিন্তু তার মানে এই নয় কেউ যদি খুব রোগা হয় সে অসুস্থ। এরকম সারা বিশ্বে প্রচুর মানুষ আছে যাদের ওজন অনেক কম তবে শারীরিকভাবে অনেক বেশি সক্রিয় এবং সুস্থ। তবে আমাদের চেষ্টা করা উচিত সঠিক পদ্ধতিতে আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।

ওজন বৃদ্ধির ঔষধ ব্যবহার করে আমাদের ওজন কে দ্রুত বাড়ানো সম্ভব কিন্তু তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা ক্ষতির দিক অনেক বেশি যা পরবর্তীকাল আমাদের শরীরকে আরও বেশি দুর্বল এবং বিভিন্ন রোগে জর্জরিত করে রাখে। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় প্রাকৃতিকভাবে বা ঘরোয়া পদ্ধতিতে ওজন বাড়ানোর উপায় নিয়ে।

 

ওজন বাড়ানোর উপায় কি ?

সাধারণত আমাদের ওজনকে দুইটি উপায় বাড়ানো সম্ভব যেরকম,

  • ওজন বাড়ানোর উপায় খাদ্যাভাসের মাধ্যমে।
  • ওজন বাড়ানোর উপায় নিয়মিত ব্যায়াম বা এক্সারসাইজের মাধ্যমে।

 

ওজন বাড়ানোর উপায় খাদ্যাভাসের মাধ্যমে :

খাদ্যাভাসের মাধ্যমে আমাদের ওজন বৃদ্ধি করতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা খুবই প্রয়োজন। ফাস্টফুড, প্রসেস ফুড এবং জাঙ্ক ফুড এই জাতীয় খাদ্য একদমই গ্রহণ করা যাবে না তার কারণ ওই জাতীয় খাদ্যে হেলদি ফ্যাট এর পরিমাণ খুবই কম থাকে এবং প্রতিনিয়ত এই জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে এলডিএল ব্যাড কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে যা আমাদের জন্য একদম ভালো না।

পর্যাপ্ত পরিমাণ জল গ্রহণ করে আমাদের ওজনকে খুবই সহজে বৃদ্ধি করতে পারি। নিয়মিত একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ৩ থেকে ৪ লিটার জল পান করা উচিত। তার ফলে আমাদের শরীরে জলের অভাব বা ডিহাইড্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। পর্যাপ্ত পরিমাণ জল গ্রহণ করলে আমাদের হজম ক্ষমতা বা ডাইজেস্টিভ সিস্টেম অনেক উন্নত হয় এবং আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালোরি যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করে আমরা আমাদের ওজনকে বৃদ্ধি করতে পারি। আমাদের চেষ্টা করতে হবে ৭০০ থেকে ১০০০ ক্যালোরি যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা যা আমাদের দ্রুত ওজন বাড়ানোর অন্যতম একটি উপায়।

 

কি কি খাবার খেলে ওজন বাড়বে?

ওজন বাড়ানো উপায় কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করে :

আমরা যখন কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করি তখন সেই কার্বোহাইড্রেট আমাদের শরীরে এনার্জি বা শক্তিতে রূপান্তর হয় যা আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তিকে যোগান দিতে সাহায্য করে। এই কার্বোহাইড্রেট এর মধ্যে কিছু পরিমাণ ফাইবার বা শর্করা পাওয়া যায় যা আমাদের শরীরের মাংসপেশি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। নিয়মিত ফাইবার গ্রহণ করলে আমাদের হজমশক্তি অনেক বৃদ্ধি পায় এবং আমাদের মধ্যে খিদে পাওয়ার প্রবণতা ও বৃদ্ধি পায়। তাই নিয়মিত কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা আমাদের ওজন বাড়ানোর জন্য খুবই প্রয়োজনীয় যেরকম, 

  • ভাত, ব্রাউন রাইস, আটার রুটি, পাউরুটি বা ব্রেড, আলু, মিষ্টি আলু, কলা, ওটস ইত্যাদি।

 

ওজন বাড়ানোর সহজ উপায় প্রোটিন যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করে :

আমাদের ওজন বাড়ানোর জন্য সবথেকে বেশি প্রয়োজন প্রোটিন যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে মাংসপেশী বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং আমাদের শরীর অনেক বেশি শক্ত এবং সবল হয়। নিয়মিত প্রোটিন গ্রহণ করলে আমাদের শরীরের গঠন অনেক উন্নত হয় এবং আমাদের ওজন বাড়তে থাকে। আমাদের শরীরের ওজন অনুযায়ী প্রতিদিন (০.৮ গ্রাম প্রতি কিলো গ্রামে) প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে। একটি উদাহরণস্বরূপ যদি কোন মানুষের ওজন ৭৫ কিলোগ্রাম হয় তাহলে তার প্রতিদিন ৬০ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে। তবে একটি কথা আমাদের মাথায় সবসময় রাখতে হবে খুব বেশি প্রোটিন যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করলে আমাদের হৃদয় সংক্রান্ত রোগ হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। কিছু প্রোটিন যুক্ত খাদ্য যেরকম, 

  • মাছ, ডিম, মুরগি মাংস, দুধ বা পনির, পালং শাক, বিভিন্ন প্রকার ডাল যে রকম ছোলার ডাল, মুগ ডাল, মসুর ডাল ইত্যাদি।

 

ওজন বাড়ানোর ঘরোয়া উপায় ফ্যাট জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করে :

আমরা জানি খুব বেশি ফ্যাট আমাদের জন্য ভালো না তবে কিছু ফ্যাট আছে যা আমাদের শরীরের জন্য ভালো এবং আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বা অর্গান কে ভালো এবং সুস্থ রাখতে অনেক সাহায্য করে এবং আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কিছু ফ্যাট আছে যা আমাদের শরীরে লো-ডেনসিটি-লিপোপ্রোটিন কোলেস্টেরল বা ব্যাড কোলেস্টেরলকে বৃদ্ধি করে আমাদের শরীরকে ক্ষতি করে। আবার কিছু ফ্যাট আছে যাদেরকে আমরা হেলদি ফ্যাট বা আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বলি যেরকম, মনো-আনস্যাচুরেটেড এবং পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট।

  • হেলদি ফ্যাট যেরকম, অলিভ অয়েল, সানফ্লাওয়ার অয়েল, সয়াবিন অয়েল, ঘি, বাটার বা মাখন, বিভিন্ন রকম বাদাম যেরকম কাজুবাদাম, পেস্তা বাদাম, আখরোট, চিনা বাদাম, আমন্ড ইত্যাদি।

 

ওজন বাড়ানো উপায় ভিটামিন এবং মিনারেল যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করে:

কিছু ফলমূল এবং শাকসবজির মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং মিনারেলস থাকে যা আমাদের শরীরের ওজন বাড়ানোর জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এবং মিনারেলস যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, আমাদের শরীর অনেক বেশি সতেজ এবং সুস্থ থাকে। ভিটামিন এবং মিনারেল যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে শক্তি বা এনার্জি অনেক বেশি বেড়ে যায়, আমাদের ত্বক অনেক বেশি উজ্জ্বল হয় এবং শারীরিক গঠন অনেক উন্নত হয়।

  • ভিটামিন এবং মিনারেল যুক্ত খাদ্য যেরকম, অ্যাপেল, পেয়ারা, কলা, পাতিলেবু, খেজুর, বেদানা এছাড়াও বিভিন্ন শাকসবজি যেরকম, গাজর, ক্যাপসিকাম, মিষ্টি আলু, পালং শাক ইত্যাদি।

 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে ২০ টি আশ্চর্যজনক তথ্য

 

কোন ভিটামিন খেলে ওজন বাড়ে ?

আমাদের ওজন বৃদ্ধিতে সবথেকে বেশি ভূমিকা ভিটামিন B এর। ভিটামিন B কমপ্লেক্স এর মধ্যে ভিটামিন B১ বা থায়ামিন, B৯, B১২ সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়াও ভিটামিন D যা আমরা সূর্যের আলোক রশ্মি থেকে পেয়ে থাকি যা আমাদের শরীরের হাড়কে অনেক বেশি শক্ত করতে সাহায্য করে এবং আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেমকে উন্নত করে।

ভিটামিন C আমাদের শরীরকে বিভিন্ন ইনফেকশন বা সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করে। আমাদের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাকে অনেক উন্নত করে। নিয়মিত ভিটামিন C গ্রহণ করলে আমাদের বিপাকীয় হার বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে যা আমাদের ওজন বাড়াতে অনেক সাহায্য করে।

 

কত ক্যালোরিতে ১ কেজি ওজন বাড়ে?

বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে ৭০০০ অ্যাডিশনাল ক্যালোরিজের প্রয়োজন এক কেজি ওজন বৃদ্ধি করার জন্য। তবে ১ কেজি ওজন বৃদ্ধি করতে বেশ কিছুদিন সময় লাগে এবং আমাদের মাথায় রাখা উচিত হেলদি ফুড গ্রহণের মাধ্যমে আমরা আমাদের ওজনকে বৃদ্ধি করব না হলে আমাদের বিভিন্ন রকম শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।

 

ওজন বাড়ানোর উপায় প্রতিদিন ব্যায়াম বা এক্সারসাইজের মাধ্যমে:

প্রতিদিন ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করলে আমাদের প্রচুর পরিমাণ ক্যালোরি ক্ষয় হয় এবং আমাদের খিদে পাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। আমাদের শরীরে রক্ত সঞ্চালনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন এবং নিউট্রিশন পৌঁছাতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করলে আমাদের মাংসপেশি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ বা অর্গান ভালো এবং সুস্থ থাকে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত তিন থেকে চার মাস ব্যায়াম করলে আমাদের ওজন অনেক বাড়ে এবং শারীরিক গঠন অনেক উন্নত হয়।

 

কখন ব্যায়াম করলে ওজন বাড়ে ?

সাধারণত সকালে এবং বিকেলের সময় ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করলে সবথেকে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তবে আমাদের একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে আমরা যখনই ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করি না কেন তার অন্ততপক্ষে ১ ঘন্টা পূর্বে কিছু প্রোটিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা উচিত কারণ খালি পেটে ব্যায়াম করা একদমই সঠিক নয়।

 

ওজন বাড়ে না কেন ?

অনেক সময় আমাদের প্রচুর চেষ্টার পরেও আমাদের ওজন বাড়ে না এবং আমরা ওজন বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন উপায় খুঁজে বেড়াই তবে ওজন না বাড়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে যেরকম,

 

  • আমাদের জেনেটিক গঠন কিছুটা আমাদের পূর্বপুরুষের উপর নির্ভরশীল। অনেক সময় আমাদের বংশগত শরীরের গঠন রোগা বা পাতলা হয় যার ফলে আমাদের অনেক চেষ্টার পরও ওজন বাড়ে না।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ না করলে আমাদের শরীরে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ভিটামিন এবং মিনারেল পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে না, যার ফলে আমাদের ওজন বৃদ্ধি পায় না। দিন প্রতিদিন আমাদের শরীরে নানান রকম সমস্যা এবং দুর্বলতা দেখা দেয়। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেল যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা আমাদের ওজন বাড়ানোর জন্য খুবই প্রয়োজন।
  • অনেক সময় আমাদের শরীরে অনেক বেশি পরিমাণ পরজীবী বাস করে যেরকম কৃমি। ওই পরজীবী প্রাণীগুলি আমাদের পেটের মধ্যে বসবাস করে এবং আমাদের শরীর থেকে প্রয়োজন মত নিউট্রিশন গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। তাই আমাদের শরীরে কৃমির পরিমাণ বেড়ে গেলে আমাদের নিউট্রিশন ঘাটতি দেখা দেয় ফলে আমাদের ওজন বাড়ে না।
  • আমরা যদি কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ি তাহলেও আমাদের ওজন বাড়ে না। আমাদের শরীরের প্রচুর পরিমাণ এনার্জি বা শক্তি ক্ষয় হয় ওই রোগগুলির সাথে লড়তে বা প্রতিরোধ করতে। তাই প্রচুর পরিমাণ ক্যালোরি আমাদের শরীরের খরচা হয়ে যায় এবং এর ফলস্বরূপ আমাদের ওজন বাড়ে না। ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, হাই অ্যাসিডিটি, হাই ব্লাড প্রেসার, এছাড়াও আমাদের শরীরে বিভিন্ন অর্গান বা অঙ্গ যদি সঠিকভাবে কাজ না করে তাহলে আমাদের ওজন বাড়ে না।

 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ সম্পর্কে অবাক করা ১০ টি তথ্য

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য : উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলি ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একবার আপনার ডক্টরের সাথে পরামর্শ করে নেবেন।

 

 


Share With Your Friends

Leave a Comment