আমরা সবাই চাই আমাদের চুল কে অনেক বেশি শক্ত, ঘন এবং উজ্জ্বল করে তুলতে। তাই আমাদের জেনে রাখা উচিত চুলের গোড়া শক্ত করার উপায় গুলি সম্পর্কে। তার কারণ আমাদের চুলের গোড়া যদি শক্ত না হয় তাহলে আমাদের চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। যার প্রভাব আমাদের সৌন্দর্যের উপর পড়ে।
আমাদের মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকল থেকে আমাদের চুলের সৃষ্টি হয়। এই চুল উৎপন্ন করতে সব থেকে বেশি সাহায্য করে, কেরাটিন নামক এক প্রকার প্রোটিন। তাই আমরা যদি চেষ্টা করি আমাদের চুলের ফলিকল গুলির কার্যকারিতা কে সঠিকভাবে বৃদ্ধি করতে তাহলে আমাদের চুলের গোড়া অনেক বেশি শক্ত হবে এবং চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যাবে।
চুলের গোড়া শক্ত করার উপায় সম্পর্কে আলোচনায় একটি কথা আমাদের মাথায় রাখা খুবই প্রয়োজন, শুধুমাত্র বাহ্যিকভাবে কোন দ্রব্য আমাদের চুলে ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের চুলের গোড়া সম্পূর্ণ ভাবে শক্ত হয় না। দৈনিক নিউট্রিশন যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করে আমরা আমাদের চুলের গোড়াকে শক্ত করতে পারি।
চুলের গোড়া শক্ত করার উপায় কি?
নিয়মিত চুলে তেলের ব্যবহার :
প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন আমরা আমাদের চুলে তেল ব্যবহার করতে পারি। চুলে তেল ব্যবহারের সময় চার থেকে পাঁচ মিনিট আমরা আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্পকে ভালো করে ম্যাসাজ করতে পারি। যার ফলে আমাদের মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকল গুলির মধ্যে রক্ত সঞ্চালনের পরিমাণ বেড়ে যায় যা আমাদের ফলিকল গুলির কার্যকারিতা কে অনেক বেশি বৃদ্ধি করে।
আমাদের চুলে ব্যবহারযোগ্য তেল গুলির মধ্যে নারকেল তেল, অনিয়ন অয়েল বা পিঁয়াজ যুক্ত তেল, আলমন্ড অয়েল এবং ক্যাস্টর অয়েল সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এই তেল গুলি সাহায্য করে আমাদের চুলের গোড়াকে শক্ত করতে এবং বিভিন্ন ইনফেকশন বা সংক্রমনের হাত থেকে আমাদের চুলকে রক্ষা করতে। শুধু তাই নয় নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ তেল ব্যবহার করলে আমাদের চুলে খুশকি হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়। তাই চুলের গোড়া শক্ত করার উপায় সম্পর্কে আলোচনায় তেলের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
নিয়মিত চুলে শ্যাম্পু এর ব্যবহার :
প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার আমাদের চুলে জৈব শ্যাম্পু বা অর্গানিক শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারি। নিয়মিত শ্যাম্পু ব্যবহার করলে আমাদের চুলের গোড়া অনেক পরিষ্কার থাকে এবং আমাদের চুলে কোনরকম ময়লা বা অপরিষ্কার বস্তু থাকে না। যার ফলে আমাদের মাথার ত্বকে কোনরকম সংক্রমণ এবং খুশকি হবার প্রবণতা অনেক কমে যায়। চুলের গোড়া শক্ত করার উপায় বিষয়ে আলোচনায় নিয়মিত চুলে শ্যাম্পু এর ব্যবহার খুবই প্রয়োজনীয়।
তবে শ্যাম্পু ব্যবহারের পূর্বে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজন। কমবেশি যেকোন শ্যাম্পুতে কেমিক্যাল বা রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার হয় তবে আমাদের চেষ্টা করতে হবে সেই সব শ্যাম্পু ব্যবহার করতে যাদের মধ্যে রাসায়নিক পদার্থ বা কেমিক্যাল এর পরিমাণ কম। যেরকম অনিয়ন শ্যাম্পু বা পিঁয়াজ যুক্ত শ্যাম্প, অ্যালোভেরা শ্যাম্পু, নিম শ্যাম্পু এবং প্রোটিন যুক্ত শ্যাম্পু ইত্যাদি।
আমেরিকান একাডেমি অফ ডার্মাটোলজি এর কথা অনুসারে খুব বেশি শ্যাম্পু আমাদের চুলে ব্যবহার করলে আমাদের মাথায় অবস্থিত ফলিকল গুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার প্রভাব আমাদের মাথার ত্বক এবং চুলের উপর পড়ে।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : চুলের যত্ন নেওয়ার উপায় সম্পর্কে চমৎকার ৮ টি তথ্য।
নিয়মিত চুলে জৈব দ্রব্য ব্যবহার :
- ডিমের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেল পাওয়া যায়। তাই আমরা প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন ২০ থেকে ২৫ মিনিটের জন্য ডিম কে আমাদের চুলে সরাসরি ব্যবহার করতে পারি। তারপর জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে আমাদের চুল পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে।
- পেঁয়াজ এর রসের মধ্যে কিছু অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান পাওয়া যায় যা আমাদের মাথার ত্বককে বিভিন্ন সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও পিঁয়াজের রসে পাওয়া যায় কোলাজেন নামক একপ্রকার উপাদান। যা আমাদের মাথার ত্বকে নতুন কোষ উৎপন্ন করতে সাহায্য করে এবং আমাদের নতুন চুল গজানোর প্রবণতাকে বৃদ্ধি করে। তাই প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন, চার চামচ পেঁয়াজের রসের সাথে দুই চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে আমাদের চুলে ব্যবহার করতে পারি।
- অ্যালোভেরার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেল এবং আন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান পাওয়া যায়। তাই নিয়মিত অ্যালোভেরার জেল আমাদের চুলে ব্যবহার করলে আমাদের চুলের গোড়া অনেক বেশি শক্ত হবে এবং চুল পড়ে যাওয়ার বা চুল ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যাবে। প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন, এক ঘন্টার জন্য আমাদের চুলে সরাসরি অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারি। তারপর জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে আমাদের চুল ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
- গরুর দুধের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ডি, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স পাওয়া যায় বিশেষ করে বায়োটিন। এছাড়াও পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন এবং মিনারেল। ভিটামিন ডি সাহায্য করে আমাদের ফলিকল থেকে নতুন চুল উৎপন্ন করতে এবং আমাদের চুলের বৃদ্ধিতে বায়োটিনের ভূমিকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রতি সপ্তাহে একদিন দুধ আমাদের চুলে সরাসরি প্রয়োগ করতে পারি। তারপর ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে, চুল ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
প্রাকৃতিকভাবে চুলের গোড়া শক্ত করার উপায় সম্পর্কিত আলোচনায় উপরে উল্লেখিত দ্রব্য গুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দৈনিক খাদ্যের অভ্যাস :
আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি আমাদের চুল তৈরি করতে কেরাটির নামক এক প্রোটিনের ভূমিকা সব থেকে বেশি তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন প্রোটিন যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা। দৈনিক প্রোটিন যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করলে আমাদের মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকলগুলি নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে এবং চুলের গোড়া অনেক বেশি শক্ত হয়।
প্রতিদিন ভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করলে আমাদের মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকল গুলির কার্যকারিতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। আমরা জানি বায়োটিন যা ভিটামিন বি এর একটি অংশ আমাদের চুলের জন্য সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়াও ভিটামিন এ, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন সি সাহায্য করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে যার ফলে আমাদের মাথার ত্বকে কোনরকম সংক্রমণ বা ইনফেকশন হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়। যার ফলে আমাদের ফলিকল গুলি সুস্থ থাকে এবং ফলিকল গুলির কার্যকারিতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। তাই চুলের গোড়া শক্ত করার উপায় সম্পর্কে আলোচনায় দৈনিক প্রোটিন, ভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : চুল লম্বা না হওয়ার কারণ কি? এক্ষুনি জেনে নিন ৯ টি তথ্য।
কিছু সতর্কতা অবলম্বন :
অত্যধিক পরিমাণ তাপ আমাদের চুলের জন্য ভালো নয়। চুলে খুব বেশি তাপ প্রয়োগ করলে আমাদের মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকল গুলি অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় যার ফলে আমাদের চুলের গোড়া শক্ত হয় না এবং চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তাই আমাদের উচিত খুব বেশি তাপ থেকে আমাদের চুলকে রক্ষা করা যেরকম,
- চুলকে সোজা করার প্রাকৃতিক উপায় থাকা সত্ত্বেও আমরা আমাদের চুলকে হেয়ার স্ট্রেইটনার অথবা তাপ উৎপাদনকারী যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে থাকি যা আমাদের চুলের জন্য খুব ক্ষতিকারক।
- প্রাকৃতিকভাবে আমাদের চুলকে আমরা ভিজা অবস্থা থেকে শুকিয়ে নিতে পারি কিন্তু সময়ের অভাবে আমরা হেয়ার ড্রায়ার বা তাপ উৎপাদনকারী যন্ত্র ব্যবহার করে থাকি। যা আমাদের চুলের জন্য একদমই ভালো না।
- সূর্যের প্রখর তাপ থেকে আমাদের চুলকে সবসময় রক্ষা করা উচিত ছাতা অথবা টুপি ব্যবহার করে, যাতে আমাদের মাথায় সরাসরি সূর্যের প্রখর তাপ এসে না পড়ে।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : বয়স ক্যালকুলেটর বা Age Calculator – Healthy Bangla.
বিশেষ দ্রষ্টব্য: উপরে উল্লেখিত দ্রব্য গুলি ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একবার আপনার ডাক্তার সাথে পরামর্শ করে নেবেন।
Thank you everyone for coming to our website www.healthybangla.in and a warm welcome to all of you.
Hi, my name is Arunima Morial and I am from Kolkata, India.
I have been writing health related articles for the last 3 years.
All the articles me and my team write are always reviewed by Sagar Ghosh (Science Graduate, Location- Shyamnagar, West Bengal) and Dr Gautam Ghosh (B.H.M.S, M.D in Homoeopathy, Location- Shyamnagar, West Bengal).
We always share the reference web page link from where we get correct information in the article.
Please feel free to contact me on my email ID sg133322@gmail.com