চুল লম্বা না হওয়ার কারণ কি? এক্ষুনি জেনে নিন ৯ টি তথ্য

Share With Your Friends

চুল লম্বা না হওয়ার কারণ

আমরা সবাই চাই যে আমাদের চুল অনেক লম্বা এবং ঘন এবং উজ্জ্বল হোক। লম্বা, ঘন এবং উজ্জ্বল  চুল আমাদের সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কিন্তু অনেক চেষ্টার পরেও যখন আমাদের চুল লম্বা হয় না তখন আমাদের মাথায় একটি প্রশ্নই আসে যে চুল লম্বা না হওয়ার কারণ কি? 

বিভিন্ন দ্রব্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা আমাদের চুলকে যত্ন করে থাকি। কিন্তু আমাদের চুল শুধুমাত্র বাহ্যিক যত্নের ফলে লম্বা হয় না। চুল লম্বা না হওয়ার কারণ আমাদের শারীরিক অবস্থা, পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন যুক্ত খাদ্য গ্রহণ এবং অন্যান্যভাবে চুলের যত্ন নেওয়ার উপর নির্ভর করে। 

অনেক সময় আমরা অনেক রাসায়নিক বা কেমিক্যাল যুক্ত তেল, শ্যাম্পু ব্যবহারের মাধ্যমে চুলকে লম্বা করার চেষ্টা করে থাকি। প্রথমদিকে সামান্য চুল লম্বা হলেও পরবর্তীকালে খুব বেশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে যেরকম চুল উঠে যাওয়া অথবা অল্প বয়সে চুল পেকে যাওয়া। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় চুল লম্বা না হওয়ার কারণ গুলি সম্পর্কে। 

 

চুল লম্বা না হওয়ার কারণ কি?

থাইরয়েডের সমস্যা : 

যখন আমাদের থাইরয়েড গ্ল্যান্ড পর্যাপ্ত পরিমাণ হরমোন তৈরি করতে পারে না অথবা প্রয়োজনের থেকে অনেক বেশি হরমোন তৈরি করতে থাকে তাকে আমরা থাইরয়েডের সমস্যা বলে থাকি। থাইরয়েডের সমস্যার ফলে আমাদের চুলে নানান রকম সমস্যা দেখা যায় যেরকম, চুল পড়ে যাওয়া এবং চুল লম্বা না হওয়া ইত্যাদি।

 

মানসিক দুশ্চিন্তা : 

কাজকর্ম, পড়াশোনা এবং পরিবার সম্বন্ধীয় বিভিন্ন কারণে আমাদের মধ্যে মানসিক দুশ্চিন্তা হয়ে থাকে। কিছু কিছু সময় এই দুশ্চিন্তার পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়, যার ফলে আমাদের শারীরিকভাবে অনেক বেশি ক্ষতি হয়, এমনকি ক্ষতি হয় আমাদের চুলের। মানসিক দুশ্চিন্তার ফলে আমাদের মাথার ত্বকে  অবস্থিত ফলিকলগুলির কার্যকারিতা অনেক কমে যায়। যার ফলে আমাদের নতুন চুল উৎপন্ন হয় না এবং চুল লম্বা না হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। 

 

বার্ধক্য জনিত সমস্যা :

সময়ের সাথে যখন আমাদের বয়স বাড়তে থাকে তখন আমাদের শারীরিক কার্যক্ষমতা ও অনেক কমে যায়। বয়স বাড়লে আমাদের চুল উঠে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় নতুন চুল গজানোর প্রবণতা কমে যায় এবং চুল লম্বা না হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। যদিও সঠিকভাবে চুলের পরিচর্যা এবং খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যার কিছুটা সমাধান করা সম্ভব। 

 

হরমোনাল ইমব্যালেন্স অথবা অসামঞ্জস্যতা : 

মানুষের মধ্যে বিভিন্ন কারণে হরমোনাল সমস্যা দেখা যায় বিশেষ করে মেয়ে বা মহিলাদের মধ্যে। সব থেকে বেশি হরমোনাল ইমব্যালেন্স হয় থাইরয়েডের সমস্যা, পি-সি-ও-এস এবং গর্ভবতী অবস্থায়। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে মেয়ে বা মহিলাদের হরমোনাল পরিবর্তন দেখা যায়। তাই হরমোনাল ইমব্যালেন্স আমাদের চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা কে অনেক বেশি বৃদ্ধি করে এবং আমাদের চুল লম্বা না হওয়ার কারণ। 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : চুলে কি দিলে চুল ভালো থাকে? জেনে নিন অবাক করা ৭ টি তথ্য

 

জেনেটিক্স অথবা বংশানুক্রমিক বৈশিষ্ট্য :

অনেক সময় চুলের সঠিক পরিচর্যা করার পরেও একটি বয়সের পর আমাদের চুল উঠে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় অথবা জন্ম থেকে আমাদের চুল অনেক বেশি কোঁকড়ানো থাকে। তার কারণ আমাদের পূর্বপুরুষ এর বৈশিষ্ট্য যা আমরা বহন করে চলেছি। বংশানুক্রমে আমাদের চুল উঠে যাওয়া বা কোঁকড়ানো হবার প্রবণতা থাকলে একটি বয়সের পর আমাদের চুল পড়ে যাবে অথবা কুঁকড়ে যাবে। ঠিক একই রকম ভাবে আমাদের চুল কতটা লম্বা হবে সেটি নির্ভর করে আমাদের জেনেটিক্স বা বংশানুক্রমিক বৈশিষ্ট্যের উপর। 

 

ভুল পদ্ধতিতে চুলের যত্ন : 

অনেক সময় আমরা চুলের যত্ন নিতে গিয়ে বিভিন্ন প্রকার কেমিক্যাল অথবা রাসায়নিক যুক্ত শ্যাম্পু, তেল এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করে থাকি। প্রতিনিয়ত এই রাসায়নিক যুক্ত দ্রব্যাদি ব্যবহারের ফলে আমাদের চুলের গোড়া নষ্ট হয়ে যায় এবং পরবর্তীকালে আমাদের নতুন চুল গজানোর প্রবণতা কমে যায় এবং দিন প্রতিদিন আমাদের চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয় সুন্দর দেখার জন্য আমরা আমাদের চুলকে তাপ উৎপাদনকারী যন্ত্র বা স্ট্রেইটনার ব্যবহার করে থাকি যার ফলে ও ওই একই রকম সমস্যা আমাদের চুলে দেখা দেয় এবং যা আমাদের চুল লম্বা না হওয়ার অন্যতম একটি কারণ। 

 

হেয়ার কাটিং অথবা চুল কাটা : 

প্রতি এক থেকে দুই মাস অন্তর আমাদের চুলের অগ্রভাগ সামান্য কেটে ফেলা উচিত। তার কারণ বিভিন্ন পরিবেশের মধ্যে দিয়ে আমাদের দৈনিক জীবন যাপন করতে হয় যার ফলে আমাদের চুলের অগ্রভাগ ভেঙে যায় অথবা বিভক্ত হয়ে যায়। যেখান থেকে আমাদের চুল আর লম্বা হতে পারে না। তাই প্রতি এক থেকে দুই মাস অন্তর আমাদের চুলের অগ্রভাগ সামান্য কেটে দিলে সেখান থেকে চুল খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই যারা দুই মাস অন্তর চুল কাটে না তাদের চুল লম্বা হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়। 

 

ভুল খাদ্যের অভ্যাস : 

আমাদের চুলের জন্য প্রোটিন এবং বায়োটিন সমৃদ্ধ খাদ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এবং মিনারেল যতটা গুরুত্বপূর্ণ আমাদের শরীরের জন্য ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ আমাদের চুলের জন্য। এখনকার দিনের অনিয়মিত এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ আমাদের চুলকে প্রতিনিয়ত ক্ষতি করে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রকার ফাস্টফুড যেরকম পিজ্জা, বার্গার এবং প্যাকেজ ফুড আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। তাই আমাদের উচিত ভিটামিন, মিনারেল এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা। 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ :  চুল সোজা করার উপায় সম্পর্কে বিস্ময়কর ৮ টি তথ্য

 

শারীরিক অসুস্থতা : 

অনেক সময় আমাদের মধ্যে নানান রকম রোগ বা সমস্যা দেখা দেয় যেরকম হাই ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপ সুগার ডায়াবেটিস এছাড়াও বিভিন্ন রকম সার্জারি যার ফলে আমাদের প্রতিদিন ঔষধ গ্রহণ করতে হয় সুস্থ থাকার জন্য। ক্রমাগত ঔষধ গ্রহণের ফলে অনেক সময় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া স্বরূপ আমাদের চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হয় এবং যা আমাদের চুল লম্বা না হওয়ার অন্যতম কারণ। 

 

উপসংহার :  উপরে উল্লেখিত কারণগুলির জন্য আমাদের চুল সঠিকভাবে লম্বা হতে পারে না। কিন্তু আমরা চেষ্টা করলে আমাদের চুলকে সঠিকভাবে যত্ন নিতে পারি প্রাকৃতিক উপায়। যদিও সেই সম্পর্কিত অনেক তথ্য ইতিমধ্যে আমরা আমাদের ওয়েব সাইটে পাবলিশ করেছি। 

 

 


Share With Your Friends