চুল পড়া এখন খুবই সাধারণ একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরুষ এবং স্ত্রী উভয়ের জন্যই সমস্যা টি সমান এবং এখনকার দিনে প্রতিটি পরিবারের কোন এক সদস্যকে এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তবে আমাদের উচিত চুল পড়া সমস্যাটি কে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে সমাধান করা।
তবে চুল পড়া বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে বিস্তর আলোচনার পূর্বে আমাদের চুল পড়া সম্পর্কে কিছু বিষয় জেনে রাখা খুবই প্রয়োজন যেরকম,
চুল পড়া বলতে আমরা কি বুঝি?
প্রতিদিন আমাদের ৫০ থেকে ১০০ টা চুল পড়ে যায় এবং সেই জায়গায় আবার নতুন চুল উৎপন্ন হয় বা গজিয়ে ওঠে। তাই সামান্য পরিমাণ চুল প্রতিদিন পড়ে যাওয়া একটা খুব সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু যদি আমাদের প্রতিদিন অনেক বেশি পরিমাণ চুল পড়তে থাকে এবং সেই জায়গায় নতুন চুল উৎপন্ন না হয় তাহলে সেটি আমাদের চিন্তার কারণ হতে পারে এবং আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের চুল পড়ে যাওয়ার বা চুল উঠে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে।
চুল পড়ার কারণ কি কি হতে পারে?
চুল পড়া বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে আমাদের সঠিক তথ্য নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে আমাদের চুল পড়ার কারণ কি কি হতে পারে সেটা জেনে রাখা খুবই প্রয়োজন। আমাদের চুল বিভিন্ন কারণে পড়ে যেতে পারে যেরকম,
- আমাদের চুল পড়ার মুখ্য কারণ বংশগত বা জেনেটিক্যাল হতে পারে। আমরা দেখেছি কিছু মানুষের নির্দিষ্ট সময়ের পর থেকে চুল পড়া শুরু হয়ে যায় এবং কিছু সময়ের পর তাদের মাথায় চুলের পরিমাণ খুবই কম হয়। বংশগত বা জেনেটিক্যাল তাদের পূর্বপুরুষদেরও ঠিক একইভাবে নির্দিষ্ট সময়ের পর চুল পড়ে গিয়ে থাকবে এবং বংশানুক্রমে তাদেরও নির্দিষ্ট সময়ের পর চুল ওঠা বা চুল পড়া শুরু হয়ে যায়।
- কিছু মানুষের শারীরিক অসুস্থতা চুল পড়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। আমরা যদি নিয়মিত কোন রোগ বা সমস্যার জন্য ঔষধ বা মেডিসিন গ্রহণ করি তাহলে তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা সাইডএফেক্ট এর ফলে চুল পড়ে যাওয়া বা চুল উঠে যাওয়া শুরু হতে পারে। যেরকম ক্যান্সার, থাইরয়েড, হাই ব্লাড প্রেসার, ব্লাড সুগার ইত্যাদি রোগ গুলির কারণে আমাদের চুল উঠে যায়।
- আমাদের চুল পড়ার আরেকটি কারণ হতে পারে পুষ্টির অভাব বা নিউট্রিশন ডেফিসিয়েন্সি। আমরা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ খাওয়ার গ্রহন না করি তাহলে আমাদের শরীরে প্রয়োজনমতো ভিটামিন এবং মিনারেলস এর অভাব দেখা দেয়। ফলে আমাদের চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। দৈনিক আমাদের খাদ্যের তালিকায় বিভিন্ন ভিটামিন এবং মিনারেল যুক্ত খাবার গ্রহণ করলে আমাদের এই সমস্যার সমাধান হয়।
- আমরা যদি নিয়মিত আমাদের চুলের পরিচর্যা না করি তাহলে আমাদের চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। শুধু তাই নয় আমরা যদি প্রতিদিন কেমিক্যাল যুক্ত শ্যাম্পু বা দ্রব্যাদি আমাদের চুলে ব্যবহার করি তাহলেও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রূপে আমাদের চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
- অত্যাধিক মানসিক চিন্তায় এবং মানসিক চাপের জন্য আমাদের চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। প্রতিটি মানুষের এমন কিছু মুহূর্ত আছে যার জন্য তাদের চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়, যেরকম গর্ভবতী মায়েদের এবং ছয় মাসের ছোট বাচ্চাদের।
- অনেক সময় আমাদের শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণে আমরা খুব বেশি নিয়ন্ত্রণে খাদ্য গ্রহণ করি বা ডায়েট করি যার ফলে দিন প্রতিদিন আমাদের ওজন কমতে থাকে এবং সাথে আমাদের চুলও পড়তে থাকে তার অন্যতম কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এবং মিনারেলসের অভাব হয় আমাদের শরীরে। শুধু তাই নয় খুব দ্রুত ওজন কমানোর জন্য আমরা বিভিন্ন রকম ঔষধ বা মেডিসিন ব্যবহার করে থাকি যার জন্য আমাদের হরমোনের পরিবর্তন হয় বা হরমোনাল ইমব্যালেন্স হয় এবং তার ফলস্বরূপ আমাদের চুল পড়ার বা চুল উঠে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
- অনেক সময় আমাদের মাথার ত্বকে বা স্কাল্প এর মধ্যে কোনরকম ইনফেকশন বা সংক্রমণ দেখা দেয়। অথবা প্রচুর পরিমাণ খুশকি আমাদের চুল পড়ার অন্যতম কারণ। এছাড়াও আমাদের চুলে অনেক সময় পরজীবী বাস করে, যেরকম উকুন তার ফলেও আমাদের চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
চুল পড়া বন্ধ করার উপায় কি কি ?
সাধারণত চুল পড়া বন্ধ করার তিনটি উপায় আছে যেরকম,
- বিভিন্ন খাদ্য অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা চুল পড়া বন্ধ করতে পারি।
- বিভিন্ন দ্রব্যাদি আমরা চুলের উপর ব্যবহার করে আমাদের চুল পড়া বন্ধ করতে পারি।
- বিভিন্ন ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ এবং যোগ ব্যায়াম এর মাধ্যমে আমাদের চুল পড়া বন্ধ করতে পারি।
চুল পড়া বন্ধ করার উপায় খাদ্য অভ্যাসের মাধ্যমে :
আমরা যদি নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ না করি তাহলে আমাদের শরীরে পুষ্টির অভাব বা নিউট্রিশন ডেফিসিয়েন্সি হবার প্রবণতা বেড়ে যায় এর ফলে আমাদের চুল পড়ার প্রবণতা বাড়তে থাকে। প্রতিদিন আমরা কিছু পরিমান খাদ্য গ্রহণ করলে আমাদের চুল পড়ার পরিমাণকে কমাতে পারি যেরকম,
- নিয়মিত আমরা যদি ডিম খাই বা গ্রহণ করি তাহলে আমাদের চুল পড়া বন্ধ হতে পারে তার কারণ ডিমের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন থাকে এবং সঙ্গে থাকে বায়োটিন। এই বায়োটিন আমাদের শরীরে কেরাটিন উৎপন্ন করতে সাহায্য করে, যা একপ্রকার প্রোটিনের উৎস। প্রোটিন আমাদের চুলকে শক্ত এবং দৃঢ় করতে খুবই সাহায্য করে। এছাড়াও ডিমের মধ্যে জিংক, সিলেনিয়াম এবং আরো অনেক উপাদান রয়েছে তাই নিয়মিত ডিম খাওয়া বা গ্রহণ করা আমাদের চুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- গাজরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন A, ভিটামিন C, ক্যারোটিনয়েডস, পটাশিয়াম এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে যা আমাদের চুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপাদান। এই উপাদানগুলি আমাদের চুলের গোড়াকে অনেক শক্ত এবং উন্নত করতে সাহায্য করে। তাই আমাদের খাদ্যের তালিকায় গাজরকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সবজি রূপে যুক্ত করতে হবে।
- পালং শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন A, ভিটামিন C এবং আয়রন থাকে। ভিটামিন A এবং C আমাদের চুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুইটি উপাদান। যখন আমাদের শরীরে আয়রনের পরিমাণ কমে যায় তখন আমাদের চুল উঠে যাওয়ার বা চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কারণ আয়রন আমাদের পুরো শরীরে এবং ত্বকের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন এর মাত্রা পূর্ণ করতে সাহায্য করে। পালং শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ আয়রন পাওয়া যায় এবং এই আয়রন আমাদের ত্বকের মৃত কোষগুলিকে পুনরায় জীবিত এবং সতেজ করতে সাহায্য করে। তাই সপ্তাহে দুইবার পালং শাক গ্রহণ করা আমাদের চুলের জন্য খুবই উপকারী।
- মিষ্টি আলুর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেল পাওয়া যায় যেরকম ভিটামিন A, ভিটামিন C, আয়রন, জিংক ইত্যাদি। এছাড়াও থাকে কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা আমাদের শরীরের ত্বককে ফ্রি রেডিক্যাল এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা করে। শুধু তাই নয় মিষ্টি আলুর মধ্যে থাকা প্রোটিন,ভিটামিন এবং মিনারেল যা আমাদের চুলকে শক্ত ও দৃঢ় করে এবং বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা করে। মিষ্টি আলুর মধ্যে বেটা-ক্যারোটিন উপাদান পাওয়া যায় যা আমাদের শরীরে ভিটামিন A উৎপন্ন করতে সাহায্য করে এবং ভিটামিন A আমাদের চুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।
- বিভিন্ন রকম বীজ আমরা যদি নিয়মিত গ্রহণ করি বা খাই তাহলে আমাদের চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। যেরকম তিসি বীজ, চিয়া বীজ, সূর্যমুখী বীজ ইত্যাদি। এই বীজ গুলির মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন E, জিঙ্ক, সিলোনিয়াম এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। ভিটামিন E এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের চুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাই নিয়মিত ওই বীজ গুলি গ্রহণ করলে আমাদের চুল পড়া বন্ধ হতে পারে।
- নিয়মিত দুগ্ধজাত দ্রব্য যেরকম দুধ, ঘি, মাখন, ছানা, পনির ইত্যাদি গ্রহণ করলে আমাদের চুল পড়া বা চুল উঠে যাওয়া বন্ধ হতে পারে। কারণ ওই জাতীয় দ্রব্যের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম এবং ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। ক্যালসিয়াম আমাদের চুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান যা আমাদের চুলকে শক্ত করতে খুবই সাহায্য করে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম নিয়মিত আমরা গ্রহণ করলে আমাদের চুল পড়ার প্রবণতা দিন প্রতিদিন কমতে থাকে।
- মাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। মাছের মধ্যে থাকা এই প্রোটিন এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের চুলের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। নিয়মিত মাছ গ্রহণ করলে বা খেলে আমাদের শরীরে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড পর্যাপ্ত পরিমাণ থাকে যা আমাদের নতুনভাবে চুল উৎপন্ন করতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, মাছ থেকে তৈরি করা ফিস ওয়েল সাপ্লিমেন্ট আমাদের চুলের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটি তেল।
- বিভিন্ন রকমের ডাল গ্রহণ করলে বা খেলে আমাদের চুল পড়ার প্রবণতা কমতে পারে যেরকম ছোলার ডাল, মুগের ডাল, মুসুর ডাল ইত্যাদি। এই ডাল গুলির মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, জিংক, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ফাইবার ইত্যাদি থাকে যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে যেরকম বৃদ্ধি করে, ঠিক একই রকম ভাবে আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্প কে বিভিন্ন সংক্রমণ বা ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা করে। এই ডাল গুলির মধ্যে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড এবং মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট আমাদের চুল কে উন্নত করতে ভীষণভাবে কার্যকর।
- অনেক রকম সবজি এবং ফলের মধ্যে ভিটামিন C খুব বেশি পরিমাণ থাকে যেরকম, ক্যাপসিকাম, আমলকি, পাতিলেবু, কমলালেবু ইত্যাদি। ভিটামিন সি আমাদের চুলের গোড়া শক্ত করতে এবং চুল ভেঙ্গে যাওয়া বা পড়ে যাওয়াকে পুরোপুরি বন্ধ করতে পারে। ভিটামিন সি আমাদের চুলের গোড়ায় সংক্রমন বা ইনফেকশন হওয়ার প্রবণতাকে কম করতে পারে এমনকি চুলের মধ্যে থাকা খুশকি এবং পরজীবীকে ও কম করতে পারে। তাই ওই জাতীয় ফল এবং সবজি আমাদের নিয়মিত গ্রহণ করা চুল পড়া বন্ধ করার অন্যতম উপায়।
- মাংসের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন এবং আয়রন থাকে। এই প্রোটিন আমাদের চুলকে অনেক শক্ত ও দৃঢ় করতে সাহায্য করে এবং আয়রন আমাদের চুলের ফলিকল এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ করতে সাহায্য করে। তাই সপ্তাহে অন্তত একবার মাংস গ্রহণ করা বা খাওয়া আমাদের চুলের জন্য খুবই উপকারী। তবে কিছু মানুষ যারা মাংস খান না বা গ্রহণ করেন না তারা মাংসের পরিবর্তে সয়াবিন ব্যবহার করতে পারেন। কারণ সয়াবিনের মধ্যেও প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন এবং আয়রন থাকে।
চুল পড়া বন্ধ করার উপায় দ্রব্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে :
- নারকেল তেল আমাদের চুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। নারকেল তেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায় যা আমাদের চুলের গোড়াকে শক্ত করে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রতি সপ্তাহে দুবার করে দুই থেকে তিন চামচ নারকেল তেল আমাদের চুলে এবং মাথার ত্বক বা স্কাল্পে ৩০ মিনিটের জন্য ব্যবহার করতে হবে। তারপর ভালো করে শ্যাম্পু এবং ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- আমরা প্রতি সপ্তাহে একবার একটি ডিমের সাথে এক চামচ মধু এবং এক চামচ অলিভ অয়েল ভালো করে মিশিয়ে আমাদের চুলে ব্যবহার করতে পারি। ৩০ মিনিট ধরে আমাদের চুলে মধু, ডিম এবং অলিভ অয়েল লাগিয়ে রাখতে হবে এবং পরে শ্যাম্পু ও ঠান্ডা জলে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- পাতি লেবু এবং আমলকির মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন C, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে যার জন্য আমাদের মাথার স্কাল্প বা ত্বকে কোনরকম সংক্রমণ বা ইনফেকশন এবং খুশকি ও পরজীবী প্রাণী যেরকম উকুন হবার প্রবণতা কমে যায়। প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দুইবার এক চামচ আমলকি তেল অথবা কাঁচা আমলকির রস এর সাথে একটি পাতি লেবু ভালো করে মিশিয়ে ৪৫ মিনিটের জন্য আমাদের মাথায় এবং চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগিয়ে রাখতে হবে। তারপর ভালো শ্যাম্পু ও ঠান্ডা জলের সাহায্যে মাথা ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
- গ্রিন টি আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পানীয় নিয়মিত গ্রীন টি পান করলে আমাদের শরীরে চর্বি বা ফ্যাট এর পরিমাণ কমতে থাকে এবং গ্রিন টি তে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর জন্য আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এই গ্রিন টি যদি আমরা আমাদের চুলে ব্যবহার করি তাহলে আমাদের চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং আমাদের চুলের গোড়া ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। একটি গ্রিন টি এর ছোট ব্যাগ অথবা ছোট এক চামচ গ্রিন টি কে এক কাপ গরম জলের সাথে ভালো করে মিশিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিট ধরে ঠান্ডা করে নিতে হবে। তারপর সেই ঠান্ডা গ্রিন টি জলকে আমাদের চুলে এবং চুলের গোড়াতে ভালো করে ব্যবহার করতে হবে। এক ঘন্টা ধরে গ্রিন টি ব্যবহারের পর ভালো করে ঠান্ডা জলে চুল ধুয়ে নিতে হবে।
- অ্যালোভেরা গাছের থেকে আমরা যে জেলি জাতীয় পদার্থ পেয়ে থাকি সেই পদার্থ কে আমরা অ্যালোভেরা জেল বলে থাকি। অ্যালোভেরা আমাদের চুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক উপাদান। প্রতি ১৫ দিনে একবার করে আমরা আমাদের চুলে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারি। তার ফলে আমাদের চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং আমাদের মাথার স্কাল্প বা ত্বকে মৃত কোষ কমে গিয়ে পুনরায় নতুন কোষের সৃষ্টি হয় এবং বিভিন্ন সংক্রমণ বা ইনফেকশন থেকে আমাদের ত্বক রক্ষা পায়। অ্যালোভেরা জেল সরাসরি আমাদের চুলে বা চুলের গোড়ায় ব্যবহার করতে হবে ৩০ মিনিটের জন্য তারপর ভালো করে শ্যাম্পু এবং ঠান্ডা জলের সাহায্যে চুল ধুয়ে নিতে হবে।
- পিঁয়াজের রসের মধ্যে বিশেষ কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা আমাদের চুলের ফলিক্যাল এর মধ্যে রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা কে বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে আমাদের ফলিক্যালে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন এবং নিউট্রেশন পৌঁছাতে পারে তার ফলে আমাদের চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং উজ্জ্বল হয়। পিঁয়াজের রস আমাদের চুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। আমরা প্রতি সপ্তাহে একবার পিঁয়াজের রস ভালো করে পেশাই করে আমাদের চুলের গোড়ায় ব্যবহার করতে পারি। তবে পিঁয়াজের রস ব্যবহার করার ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের পর ভালো করে শ্যাম্পু এবং ঠান্ডা জল দিয়ে আমাদের চুল ধুয়ে নিতে হবে।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা: এখানে শ্যাম্পু বলতে আমরা অর্গানিক বা জৈব শ্যাম্পুর কথা বলেছি। আমরা চুলের কোনরকম কেমিক্যালস ব্যবহার করার কথা বলছি না। আমরা চুল পরিষ্কার করার জন্য সব সময় ঠান্ডা অথবা সামান্য গরম তাপমাত্রার জল ব্যবহার করব তার কারণ গরম জল আমাদের চুলের জন্য ভীষণ ক্ষতিকারক।
চুল পড়া বন্ধ করার উপায় ব্যায়াম বা এক্সারসাইজের মাধ্যমে :
আমরা যদি নিয়মিত ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ অথবা যোগাসন করি তাহলে আমাদের চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায় তার কারণ নিয়মিত ব্যায়াম অথবা যোগাসন করলে আমাদের শরীরে এবং স্কাল্প বা ত্বকের প্রতিটি কোষে রক্ত সরবরাহ খুব বেশি পরিমাণ হতে থাকে এবং আমাদের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন ও নিউট্রিশন এর অভাব হয় না ফলে আমাদের চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
নিয়মিত ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ অথবা যোগাসন করলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগ বা সমস্যা হওয়ার প্রবণতা কমতে থাকে যেরকম ব্লাড সুগার, ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপ, যকৃত বা লিভার সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগ এবং হৃদয় সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগ কমতে থাকে। ওই রোগ গুলি পরোক্ষভাবে আমাদের চুল উঠে যাওয়ার অন্যতম কারণ তাই ওই রোগ গুলি কমে গেলে আমাদের চুল ওঠার প্রবণতাও ধীরে ধীরে কমে যায়। কিছু ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ অথবা যোগাসন সম্পর্কে উদাহরণ,
- নিয়মিত সকালে অথবা সন্ধ্যেবেলায় এক থেকে দুই কিলোমিটার হাটা এবং জগিং করা।
- ভালো করে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশগুলি যেরকম ঘাড়, হাত, পা, কোমর ঘড়ির কাটার দিকে এবং উল্টোদিকে পাঁচবার করে ঘুরানো উচিত। তার ফলে আমাদের শরীরের পেশীগুলো সংকুচিত এবং প্রসারিত হয়।
- ভালো করে আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্পকে অঙ্গমর্দন বা মাসাজ করা উচিত তার ফলে আমাদের স্কাল্প বা ত্বকের মধ্যে রক্ত এবং অক্সিজেন এর সরবরাহ খুব ভালোমতো হয়।
- প্রত্যেকদিন যোগাসন করা উচিত যেরকম কপালভাতি, সূর্য প্রণাম, অধোমুখ শবাসন ইত্যাদি। নিয়মিত এই যোগ আসন গুলি করলে আমাদের দুশ্চিন্তাকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব এবং আমাদের শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়তে থাকে নিঃশ্বাস এবং প্রশ্বাসের মাধ্যমে। শুধু তাই নয় নিয়মিত আসন গুলি করলে আমাদের চুল পড়া এবং অন্যান্য রোগ হওয়ার প্রবণতা কমতে থাকে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলি ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একবার আপনার ডক্টরের সাথে পরামর্শ করে নেবেন।