চুল পড়া বন্ধ করার তেল সম্পর্কে ৯ টি অজানা তথ্য

Share With Your Friends

চুল পড়া বন্ধ করার তেল

আমাদের সৌন্দর্যের অনেকাংশই নির্ভর করে চুলের ওপর। আমাদের মাথায় যদি কম পরিমাণে চুল থাকে এবং সেটা রুক্ষ – শুষ্ক হয় তা আমাদের সৌন্দর্য কে অনেকটাই কমিয়ে দেয়। তাই আমরা সবাই চাই আমাদের চুল যাতে লম্বা ঘন ও সুন্দর হয়।

এই সুন্দর ঘন লম্বা চুল পেতে গেলে আমাদের সর্বপ্রথম চুল পড়া বন্ধ করতে হবে। সঠিক পদ্ধতিতে আমাদের চুলের যত্ন নিতে হবে। সঠিকভাবে চুলের পরিচর্যা করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। চুল পড়া বন্ধ করার তেল ব্যবহার করতে হবে এবং এর সাথে জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।

মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকল থেকে চুল উৎপন্ন হয়। কেরাটিন নামক এক প্রকার প্রোটিন সাহায্য করে চুল গঠন করতে এবং বায়োটির নামক এক প্রকার ভিটামিন, যা ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের অন্তর্গত, সাহায্য করে চুলকে বৃদ্ধি করতে। কিন্তু বর্তমানে পরিবেশ দূষণ ,রোদ ,অপুষ্টির কারণে চুল পড়ার সমস্যা বেড়েই চলেছে, কোনভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তাই আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয় হলো চুল পড়া বন্ধ করার তেল সম্পর্কে।

 

চুল পড়া বন্ধ করার তেল কি কি?

আমরা আমাদের চুলে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন তেলের ব্যবহার করতে পারি। তেল ব্যবহারের সময় আঙ্গুলের সাহায্যে মাথার স্ক্যাল্পে তিন চার মিনিট ম্যাসাজ করতে পারি। এর ফলে ফলিকল গুলির মধ্যে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। তেল ব্যবহারের ফলে আমাদের চুলের গোড়া অনেক শক্ত হয় এবং নানা রকম সংক্রমনের হাত থেকে চুল রক্ষা পায়। আজকে আমরা চুল পড়া বন্ধ করতে বিভিন্ন রকমের তেল যেমন, অনিয়ন অয়েল বা পেঁয়াজ যুক্ত তেল, ক্যাস্টর অয়েল, কোকোনাট অয়েল বা নারকেল তেল, নিম তেল, রোজমেরী অয়েল, অর্গান অয়েল, অলিভ অয়েল, থাইম ওয়েল ইত্যাদি বিভিন্ন তেলের বিষয়ে আলোচনা করব।

 

অনিওয়ান অয়েল বা পেঁয়াজ যুক্ত তেল :

চুল পড়া বন্ধ করার তেল হিসাবে অনিয়ন অয়েল বা পেঁয়াযুক্ত তেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই তেলের ব্যবহার আমাদের মাথার স্কাল্প বা ত্বককে অনেক সুস্থ রাখে। এর ফলে আরো নতুন চুল গজানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। পেঁয়াজের মধ্যে থাকে উচ্চমাত্রা সালফার যা চুল পড়া কমায় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। পেঁয়াজে উচ্চমাত্রা সালফার থাকার ফলে চুলের নানান সমস্যা গুলিও দূর করে এবং  অকালপতন থেকে চুলকে রক্ষা করে।

উপকারিতা :

বাজারেও বিভিন্ন রকমের অনিয়ন অয়েল বা পেঁয়াজ যুক্ত তেল পাওয়া যায় সেগুলি ব্যবহার করতে পারি অথবা দুই তিন চামচ পেঁয়াজের রস নিঃসরণ করে তার মধ্যে দুই তিন চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে বাড়িতে বানিয়ে যদি ব্যবহার করা যায় তাহলে উপকার আরো বেশি পাওয়া যায়।

পেঁয়াজের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা আমাদের চুলের মধ্যে হওয়া নানা ধরনের সংক্রমনের হাত থেকে চুলকে রক্ষা করে।

পিয়াজের মধ্যে থাকে উচ্চমাত্রার সালফার যা চুলের নানান ধরনের সমস্যাগুলোকে দূরে রাখে এবং চুলের পি-এইচ মাত্রা কে বজায় রাখে যা আমাদের নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। 

 

ক্যাস্টর অয়েল :

চুল পড়া বন্ধ করার তেল হিসেবে ক্যাস্টর অয়েলের ভূমিকাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্যাস্টর অয়েলের মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা চুলের জন্য খুবই উপকারী। চুল পড়া বন্ধ করতে এবং চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে ক্যাস্টর অয়েলের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

উপকারিতা :

ক্যাস্টর অয়েলের মধ্যে অ্যান্টিফাঙ্গল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে যার ফলে মাথার  ত্বক বা স্কাল্পের মধ্যে হওয়া বিভিন্ন চুলকানি বা খুশকির হাত থেকে চুলকে রক্ষা করে।

ক্যাস্টর অয়েলের মধ্যে ফ্যাটি এসিড থাকে, যার ফলে চুল খুব তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত এই তেল ব্যবহারের ফলে চুল পড়াও বন্ধ হয়।

অনেক সময় আমাদের চুল অনেক রুক্ষ শুষ্ক হয়ে পড়ে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারের মাধ্যমে চুল অনেক মসৃণ ও সিল্কি হয়। রুক্ষ ভাব অনেকাংশে দূর হয়ে যায় এবং চুলের গোড়া ফাটা সমস্যা থেকেও ক্যাস্টর অয়েল মুক্তি দেয়।

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : চুলে তেল দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্ময়কর ৭ টি তথ্য

 

কোকোনাট অয়েল বা নারকেল তেল :

চুল পড়া বন্ধ করার তেল হিসেবে আরেকটি অন্যতম তেল হল কোকোনাট অয়েল  বা নারকেল তেল। নারকেল তেলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ই এবং ওমেগা ৩ যা চুলকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। নারকেল তেলের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা চুলের গোড়াকে শক্ত এবং মজবুত করে। এই তেল চুলের শুষ্কতা দূর করে। তেল মাথার ত্বক এবং চুলের ফলিকল গুলোর আর্দ্রতা বজায় রাখে।

উপকারিতা :

নারকেল তেল চুলের উজ্জ্বলতা বজায় রাখে চুলকে মসৃণ করে। নিয়মিত এই তেল ব্যবহারের ফলে চুল ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়।

নারকেল তেল মাথার ত্বকে হওয়া খুশকির হাত থেকে রক্ষা করে। খুশকি হবার ফলে মাথার ত্বক ভীষণভাবে শুষ্ক হয়ে যায়। নারকেল তেল সেই শুষ্ক ত্বককে হাইড্রেট করতে পারে। যেকোনো ধরনের সংক্রমণ বা ইনফেকশনের হাত থেকে মাথার ত্বককে রক্ষা করতে পারে।

 

নিম তেল:

চুল পড়া বন্ধ করার তেল এর আলোচনায় মাথায় ব্যবহারযোগ্য নিম তেলের মতন উপকারী জিনিস খুবই কম আছে। চুলের যত্নে নিম তেলের উপকারিতা সম্পর্কে আজ আমরা আলোচনা করব। চুলের যে কোন রকম সমস্যা রোধ করার পাশাপাশি চুলকে সুন্দর সিল্কি করে তুলতে সাহায্য করে নিম তেল। নিমতেলে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা মাথার ত্বকে হওয়া বিভিন্ন চুলকানি এবং খুশকির হাত থেকে চুলকে রক্ষা করে। মাথার ত্বকে পুষ্টি যোগায়, রুক্ষ শুষ্ক চুলকে সুন্দর করে তোলে।

উপকারিতা :

নিয়মিত নিম তেল ব্যবহারে চুল পড়া বন্ধ হয়। নিম তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এর ফলে চুল তাড়াতাড়ি বাড়তে পারে।

নিম তেল খুব ভালোভাবে খুশকি সমস্যা রোধ করতে পারে। এছাড়াও মাথায় চুলকানি সমস্যা বা মাথার ত্বকে যদি ফুসকুড়ি বেরোয় এই সমস্ত কিছু থেকে নিম তেল ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা মুক্তি পেতে পারি।

 

রোজমেরী অয়েল :

বিভিন্ন এসেন্সিয়াল অয়েল এর মধ্যে রোজমেরী অয়েল হলো এক অনবদ্য অয়েল। এই তেলের টেক্সচার ভীষণ হালকা হয়। এই তেল মাথায় নতুন চুল গজাতে যেমন সাহায্য করে তেমনি এই তেল নিয়মিত ব্যবহারের ফলে রুক্ষ শুষ্ক চুলে হয়ে ওঠে ভীষণ নরম এবং সিল্কি। চুল পড়া বন্ধ করার তেল সম্পর্কে আলোচনায় রোজমেরী অয়েল অনবদ্য। এই তেল ব্যবহারের ফলে মাথার ত্বক তেল চিটচিটে হয় না, এই তেল ভীষণ হালকা হওয়ায় মাথার ত্বকের ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে যায় না। তাই যাদের ত্বক একটু বেশি অয়েলি তাদের জন্য রোজমেরী অয়েল সবথেকে ভালো মাথায় ব্যবহারযোগ্য একটি তেল। 

উপকারিতা :

এই তেল ব্যবহারে চুলের গোড়া শক্ত হয় যার ফলে চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়।

এই তেল ব্যবহারের সময় হালকা হাতে ম্যাসাজ করলে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন ভালোভাবে হয়। যার ফলে চুল খুব তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পায়।

চুলের যে কোন ক্ষতি খুব সহজে এই তেল ব্যবহারের মাধ্যমে কমিয়ে ফেলা সম্ভব হয়।

 

অর্গান অয়েল :

অর্গান অয়েলের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা চুলের উজ্জ্বলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এই তেল চুলকে সূর্যের প্রখর রৌদ্রের হাত থেকে রক্ষা করে। অর্গান অয়েল ভিটামিন ই সমৃদ্ধ যা চুলের ফ্রিজিনেস কমিয়ে দেয়।

উপকারিতা :

অর্গান অয়েল চুলের যত্নে দারুন উপকারি। ফ্রিজি চুলের সমস্যা দূর করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

শুষ্ক প্রাণহীন নিস্তেজ চুলের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য নিয়মিত অর্গান তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। নিয়মিত এই তেলের ব্যবহার চুল পাকা বন্ধ করার অন্যতম একটি উপায়।

সম্পর্কিত প্রবন্ধ :  চুলের গোড়া শক্ত করার উপায় সম্পর্কে অভূতপূর্ন ৭ টি তথ্য। 

 

অলিভ অয়েল :

অলিভ অয়েল চুলের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি তেল। নিয়মিত অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে খুশকি এবং চুল পড়ার মতন সমস্যা থেকে খুব সহজে মুক্তি পাওয়া যায়। চুল পড়া বন্ধ করার তেল সম্পর্কে আলোচনায় অনবদ্য একটি তেল হল অলিভ অয়েল। অলিভ অয়েল চুলের যেকোনো ক্ষতি থেকে চুলকে রক্ষা করে, অলিভ অয়েলের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান যা চুলকে রক্ষা করার পাশাপাশি চুলকে করে তোলে সতেজ প্রাণবন্ত ও চুলের হারিয়ে যাওয়া উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে।

উপকারিতা :

অলিভ অয়েল এর মধ্যে রয়েছে চুলের সমস্ত প্রয়োজনীয় উপাদান গুলি। আর মাথার ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতে এবং শুষ্কতা দূর করতে অলিভ অয়েল অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান।

চুলকে নরম ও মসৃণ এবং উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে এবং চুলকে হাইড্রেট রাখে। চুলে সঠিক পুষ্টি বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে।

 

থাইম অয়েল :

থাইম ওয়েল হল একটি এসেনশিয়াল ওয়েল। এই তেলের টেক্সচার ও ভীষণ হালকা। চুল পড়া বন্ধ করা তেল বিষয়ে আলোচনায় একটি অনবদ্য তেল হল থাইম অয়েল। এই তেল চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। চুল পড়া কম করতে সাহায্য করে।

উপকারিতা :

চুলের ফলিকল গুলোকে উদ্দীপ্ত করে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে।

 

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য :

উপরে উল্লেখিত তেল গুলো ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একবার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেবেন, কারণ এই তেলগুলি চুলে ব্যবহারের জন্য উপকারী হলেও এর বেশি ব্যবহারে মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, স্কিনে ছোটো লাল লাল ফুসকুড়ি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে, তাই নিজের শরীরের দিকে ধ্যান রাখবেন। এছাড়াও যে সমস্ত এসেনশিয়াল অয়েল গুলি রয়েছে সেগুলি সরাসরি ব্যবহার করা যায় না কোন তেলের সঙ্গে মিশিয়ে তবেই ব্যবহার করবেন। তাই আমাদের চুলের তেল দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা খুবই প্রয়োজন। 

 

 


Share With Your Friends

Leave a Comment