আদিও কি ড্রাগন ফল শরীরের জন্য ভালো? ড্রাগন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্ময়কর তথ্য

Share With Your Friends

ড্রাগন ফলের উপকারিতা

ড্রাগন ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ উপাদান পাওয়া যায়। তাই ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ড্রাগন ফল গ্রহণ করলে আমাদের হৃদয়কে শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে এবং পাশাপাশি আমাদের ত্বককেও ভালো রাখে। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এনজাইমগুলি ত্বককে এক্সফলিয়েট ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

ড্রাগন ফল হল গ্রীষ্মমন্ডলীয়  অঞ্চলের একটি ফল, এটি সাধারণত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকাতে পাওয়া যায়। এই ফলের বাইরের আবরণ লাল ও গোলাপি বা অনেক সময় হলুদ রঙেরও হয়ে থাকে এবং ভেতরের অংশ সাদা বা গোলাপি রঙের হয়ে থাকে ও ছোট ছোট কালো বীজ থাকে।

 

ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা :

ড্রাগন ফলের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম সহ বিভিন্ন খনিজ পদার্থ। ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের অবগত হওয়া খুবই প্রয়োজন। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে।

 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে :

ড্রাগন ফল হল ভিটামিন সি এর প্রধান উৎস। ভিটামিন সি হল শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বিভিন্ন ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত এই ফল খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধি পায়।

 

ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কম করে :

ড্রাগন ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায়, যা আমাদের ইনসুলিনের সংবেদনশীলতাকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে আমাদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণকে স্থিতিশীল রাখে। এর ফলে আমাদের হাই ব্লাড সুগার, ডায়াবেটিস ইত্যাদি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : শশা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অবিশ্বাস্য ৮ টি তথ্য

কোলেস্টেরল কম করতে সাহায্য করে :

ড্রাগন ফলের মধ্যে ফাইবার, সোডিয়াম, অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি উপাদান রয়েছে, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে বা কমাতে, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে সাহায্য করে। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান গুলির কাজ হল আমাদের শরীরে LDL ব্যাড কোলেস্টেরল এর পরিমাণকে কম করে গুড কোলেস্টেরল এর পরিমাণকে বৃদ্ধি করা। তাই ড্রাগন ফল খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের হৃদয় সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

 

হজম ক্ষমতা বা ডাইজেস্টিভ সিস্টেম উন্নত করে:

ড্রাগন ফলের মধ্যে পাওয়া যায় অনেক পরিমানে ফাইবার। এই ফাইবার সাহায্য করে আমাদের পেটের মধ্যে গুড ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণকে বৃদ্ধি করতে। যার ফলে আমাদের হজম ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পায়। 

এই ফল গ্রহণ করলে বা খেলে আমাদের পাচনতন্ত্র উন্নত হয় এবং হজম ক্ষমতা বা ডাইজেস্টিভ সিস্টেম অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। এই ফল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য বা কনস্টিপেশনের সমস্যা থেকে অনেকটা মুক্তি পাওয়া যায়।

 

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় :

আমাদের শরীরে ফ্রি রেডিকেল বৃদ্ধি পেলে অর্থাৎ ফ্রি রেডিকেল হল এমন এক ধরনের পদার্থ যা ক্যান্সার সৃষ্টি করার মুখ্য উপাদান। ড্রাগন ফলের মধ্যে পাওয়া যায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্ল্যাভোনয়েড, ফেনোলিক অ্যাসিড এবং বিটাসায়ানিন ইত্যাদি উপাদান। যা আমাদের শরীরে ক্যান্সার সেল বা কোষের ক্রমাগত বৃদ্ধিকে রোধ করে এবং আমাদের শরীরে ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতাকে কম করে। এটি ড্রাগন ফলের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা।

 

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে :

ড্রাগন ফল একটি কম ক্যালোরিযুক্ত ফল। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়। ফলটির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে জল রয়েছে যা আমাদের পূর্ণতা অনুভব করতে অর্থাৎ পেট ভর্তি রয়েছে অনুভব করতে সাহায্য করে এবং আমাদের ক্যালোরি গ্রহণ কমাতে সাহায্য করে। যেহেতু এই ফলে ক্যালোরির পরিমাণ অনেক কম তাই ওজন কমাতে এই ফল খাওয়ার উপকারিতা ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

 

চোখের জন্য উপকারী :

ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণ ক্যারোটিনয়েড  নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান পাওয়া যায়। বেটা-ক্যারোটিন, ক্যারোটিনয়েড এর একটি অংশ। আমাদের শরীর পরবর্তীকালে এই বেটা-ক্যারোটিন কে ভিটামিন A তে রূপান্তর করে। ক্যারোটিনয়েড সাহায্য করে চোখের দৃষ্টি শক্তি কে উন্নত করতে এবং চোখ সম্পর্কিত সমস্যা কে কম করতে। তাই ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা আমাদের দৃষ্টি শক্তি উন্নত করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

 

হাড়ের জন্য উপকারী :

ড্রাগন ফলের মধ্যে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস অনেক মাত্রায় রয়েছে। যা হাড়কে  শক্তিশালী করে এবং যেকোনো ধরনের ব্যথা আঘাত থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে। তাই যাদের হাড়ের রোগের সমস্যা রয়েছে তাদের নিয়মিত ড্রাগন ফল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কারন নিয়মিত এই ফল খাবার উপকারিতা আমাদের হাড়ের ব্যথা বা যন্ত্রণার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

ত্বকের জন্য উপকারী :

ড্রাগন ফল আমাদের ত্বকের জন্য ভীষণভাবে উপকারী। এরমধ্যে পাওয়া যায় অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ও অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান, যা আমাদের ত্বকের ব্রণ, ফুসকুড়ি, এলার্জি ইত্যাদি কে কমাতে সাহায্য করে। এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দূষণ স্ট্রেস ইত্যাদির ফলে হওয়া আমাদের ত্বকে যে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে তার সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করে অর্থাৎ আমাদের চেহারায় বয়সে ছাপ কমায় এবং কালচে ভাব দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : ডাবের জলের উপকারিতা সম্পর্কে ৯ টি আশ্চর্যজনক তথ্য

চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে :

ড্রাগন ফলের চুলের স্বাস্থ্য এবং চুল বৃদ্ধিতে যথেষ্ট পরিমাণে অবদান রয়েছে। ড্রাগন ফলের মধ্যে থাকা ভিটামিন সি কোলাজেন তৈরি করে ফলে চুলের গোড়া ও চুলের স্ট্র্যান্ড মজবুত হয় আর চুল ভাঙ্গা কম হয়। নিয়মিত এই ফল গ্রহণ করলে দূষণের ফলে এবং কৃত্রিম রং ব্যবহারের ফলে চুলের যে ক্ষতি হয় তা অনেকটা কমে। এছাড়াও আমাদের চুলকে নরম চকচকে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে ড্রাগন ফল খুবই উপকারী।

 

গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা :

গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা অনস্বীকার্য। এই ফল গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে থাকা ক্রমবর্ধমান ভ্রুনকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে। যা ভ্রুনের মস্তিষ্ক বিকাশে সহায়তা করে থাকে। 

এছাড়াও গর্ভবতী মহিলাদের কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাস্ট্রিক রোগ ইত্যাদি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

 

ড্রাগন ফলের ব্যবহার :

সুষম খাদ্যের অংশ হিসেবে ড্রাগন ফল আমরা প্রতিদিন খেতে পারি। কারণ এটি আমাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে, তাই নিয়মিত এই ফল খেলে বা গ্রহণ করলে সাধারণত কোন সমস্যা সৃষ্টি হয় না।

বাজার থেকে এই ফল কিনে এনে ভালো করে জল দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে ছুরি দিয়ে কেটে আমরা এটাকে খেতে পারি।

যদি এই ফলের বাইরের আবরণ ভীষণ পুরু এবং শক্ত হয় তাহলে ছুরি দিয়ে এর খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে কিউব করে কেটে আমরা খেতে পারি।

এছাড়াও ড্রাগন ফলের স্মুদি বানিয়ে আমরা খেতে পারি। অথবা অন্যান্য বিভিন্ন ফলের সাথে মিশিয়ে সালাদ বানিয়ে আমরা সেটিকে খেতে বা গ্রহণ করতে পারি।

 

ড্রাগন ফলের অপকারিতা :

এই ফল উচ্চ ফাইবার যুক্ত হওয়ায় বেশি পরিমাণে খেলে হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

বিভিন্ন মানুষের ফলে বা সবজিতে অ্যালার্জি থাকে, তাই এই ফল খেলেও কিছু মানুষের অ্যালার্জির সমস্যা অনুভব হতে পারে।

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য: ড্রাগন ফল খাওয়ার পূর্বে আপনার ডাক্তারের সাথে অবশ্যই একবার কথা বলে নেবেন।

 


Share With Your Friends