প্রাকৃতিক ভাবে নতুন চুল গজানোর উপায় সম্পর্কে অবাক করা ৭ টি তথ্য

Share With Your Friends

নতুন চুল গজানোর উপায়

আমাদের সৌন্দর্যের উপর চুলের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু বিভিন্ন কারণে আমাদের চুল পড়তে থাকে এবং সেই জায়গায় নতুন চুল উৎপন্ন হয় না। যার ফলে আমাদের মাথায় চুলের ঘনত্ব অনেক কমে যায় এবং যার প্রভাব আমাদের সৌন্দর্যের উপর পড়ে।

সাধারণত আমাদের দৈনিক 50 টি থেকে ১০০ টি চুল উঠে যায়। যার পরিবর্তে নতুন চুল উৎপন্ন হয় এবং এটি খুবই সাধারণ। কিন্তু কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণের জন্য যদি আমাদের চুল পড়তে থাকে এবং পরিবর্তে নতুন চুল উৎপন্ন না হয় তবে সেটা আমাদের কাছে খুবই চিন্তার কারণ।

আমরা বিভিন্ন রকম চুল গজানোর ঔষধ ব্যবহার করে থাকি কিন্তু পরবর্তী সময় তার বিশেষ কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আমাদের সামনে আসতে পারে। তাই আমরা চেষ্টা করছি ঘরোয়া পদ্ধতিতে বা প্রাকৃতিক ভাবে নতুন চুল গজানোর উপায় নিয়ে বিস্তর আলোচনা করতে।

 

নতুন চুল গজানোর উপায় কি ?

আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্পে প্রচুর পরিমাণ ফলিকল থাকে এবং এই ফলিকলের উপর নির্ভর করে আমাদের চুল উৎপন্ন হয়। আমাদের চুল উৎপন্ন হওয়া বা গজানোর অনুপাত নির্ভর করে অনেকগুলি বিষয়ের উপর যেরকম,

  • মাথায় চুল গজানোর উপায় নিয়মিত চুলের যত্ন করে,
  • মাথায় চুল গজানোর উপায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেল এবং নিউট্রিশন বা পুষ্টি যুক্ত খাবার গ্রহণ করে,
  • মাথায় চুল গজানোর উপায় দৈনিক ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করে,

 

নতুন চুল গজানোর উপায় নিয়মিত চুলের যত্ন করে :

  • ডিমের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ‍্যাসিড পাওয়া যায়। তাই নিয়মিত ডিম আমাদের চুলে ব্যবহার করলে আমাদের মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকলগুলি অনেক বেশি সক্রিয় হয় যার ফলে আমাদের নতুন চুল গজানোর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আমাদের চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং চুল পড়া কমে।

ব্যবহার : প্রতি সপ্তাহে দুই দিন, তিন থেকে চার চামচ ডিম সরাসরি আমাদের মাথায় প্রয়োগ করতে পারি ৩০ মিনিটের জন্য। তারপর জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে আমাদের চুল ভালো মতো ধুয়ে নিতে হবে।

 

  • মাথায় চুল গজানোর উপায় হিসেবে নিয়মিত অ‍্যালোভেরা জেল এর ব্যবহার আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অ্যালোভেরা জেল এর মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান থাকে যা আমাদের মাথার ত্বককে বিভিন্ন ইনফেকশন বা সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করে এবং আমাদের ফলিকল গুলির ওপর জমে থাকা স্তর গুলিকে সরিয়ে নতুন চুল গজাতে বা উৎপন্ন হতে সাহায্য করে।

ব্যবহার : প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন অ্যালোভেরা গাছের থেকে জেল সংগ্রহ করে সরাসরি আমাদের চুলের গোড়ায় প্রয়োগ করতে হবে ৩০ মিনিটের জন্য। তারপর জৈব শ্যাম্পু প্রয়োগ করে আমাদের চুল ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।

 

  • চুল গজানোর তেলের নাম কি ? ক্যাস্টর অয়েলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন E এবং ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। তার ফলে ক্যাস্টর অয়েল প্রয়োগে আমাদের মাথায় অবস্থিত ফলিকল গুলির কার্যকারিতা পুনরায় বৃদ্ধি পায়। আমাদের চুলের গোড়া শক্ত হয়, চুল পড়া বন্ধ হয় এবং নতুন চুল গজানোর বা উৎপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

ব্যবহার : প্রতি সপ্তায় দুই দিন আমরা আমাদের চুলে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করতে পারি এক ঘন্টার জন্য। তারপর জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে আমাদের চুল ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।

 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : চুল ঘন করার উপায় সম্পর্কে অভূতপূর্ন ৯ টি তথ্য

 

  • নারকেল তেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায় এবং নারকেল তেলের মধ্যে অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদানও রয়েছে। তাই নিয়মিত নারকেল তেল ব্যবহার আমাদের চুলের গোড়াকে শক্ত করে এবং চুল পড়ে যাওয়ার প্রবনতাকে কম করে। শুধু তাই নয় নারকেল তেল দিয়ে আমরা যদি আমাদের মাথার ত্বককে ভালো করে অঙ্গমর্দন বা ম্যাসাজ করি তাহলে আমাদের ফলিকল গুলোর মধ্যে রক্ত সঞ্চালনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যার ফলে আমাদের নতুন চুল উৎপন্ন হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

ব্যবহার : প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন আমাদের চুলে নারকেল তেল প্রয়োগ করে দুই থেকে তিন ঘন্টা রেখে দিতে হবে। তারপর জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে ধুয়ে ফেলতে হবে।

 

  • পেঁয়াজের রস নিয়মিত আমাদের চুলে ব্যবহার করলে আমাদের চুলের গোড়া শক্ত হয়, আমাদের চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা কমে যায় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। তার কারণ পেঁয়াজের মধ্যে অটো-ইউনিয়ন কন্ডিশনকে রোধ করার ক্ষমতা আছে। অনেক সময় আমাদের শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আমাদেরই মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকল গুলিকে আক্রমণ করে যার ফলে আমাদের নতুন চুল উৎপন্ন হয় না। প্রতি সপ্তাহে দুই দিন পেঁয়াজের রস আমাদের চুলে প্রয়োগ করলে সেই সমস্যা সমাধান হয়।

ব্যবহার : একটি পেঁয়াজকে ভালো করে পেশাই করে তার থেকে নির্যাতিত রস কে সংগ্রহ করতে হবে। তারপর দুই থেকে তিন চামচ পেঁয়াজের রসের সাথে দুই চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে আমাদের চুলে প্রয়োগ করতে হবে ৩০ মিনিটের জন্য। তারপর জৈব শ্যাম্পু প্রয়োগ করে আমাদের চুল ধুয়ে নিতে হবে।

 

  • পাতি লেবুর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন C এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। যা আমাদের মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকল গুলিকে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাল ইনফেকশন বা সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করে। শুধু তাই নয় আমাদের নতুন চুল গজানোর সম্ভাবনাকে বৃদ্ধি করে এবং আমাদের চুলের গোড়াকে শক্ত করে।

ব্যবহার : দুই থেকে তিন চামচ পাতি লেবুর রসের সাথে দুই চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে আমাদের চুলে প্রয়োগ করতে হবে এক ঘন্টার জন্য। তারপর জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে আমাদের চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।

 

  • মাথার সামনে চুল গজানোর উপায় হিসেবে নিয়মিত রোজমেরি তেলের ব্যবহার একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রোজমেরি অয়েল এরমধ্যে প্রচুর পরিমাণ ‍অ‍্যান্টি-মাইক্রোবাল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেটিভ উপাদান রয়েছে। যা আমাদের মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকল গুলিকে বিভিন্ন সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে এবং ফলিকল গুলির সক্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত রোজমেরি অয়েল ব্যবহার আমাদের চুল গজানোর বা উৎপন্ন হওয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ব্যবহার : প্রতি সপ্তায় এক থেকে দুই দিন এক চামচ রোজমেরি অয়েল আমাদের চুলের গোড়ায় ভালো করে প্রয়োগ করতে হবে এক ঘন্টার জন্য। তারপর জৈব শ্যাম্পু প্রয়োগ করে আমাদের চুল ধুয়ে নিতে হবে।

 

মাথার চুল গজানোর উপায় পুষ্টিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করে :

আমরা যদি প্রতিদিন যথার্থ পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করি তাহলে আমাদের নতুন চুল গজানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। তার কারণ আমরা যদি পুষ্টিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করি, তাহলে আমাদের মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকল গুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন এবং নিউট্রিশন পৌঁছাতে পারে যার ফলে আমাদের ফলিকল গুলি থেকে নতুন চুল উৎপন্ন হয়।

এর থেকে আমরা বুঝতে পারছি খুব বেশি ডায়েট বা নিয়ন্ত্রণে খাদ্য গ্রহণ করলে আমাদের ফলিকল গুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন এবং নিউট্রিশন পৌঁছাতে পারে না যার ফলে আমাদের চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ কিছু ভিটামিন এবং মিনারেল যা আমাদের নতুন চুল গজানোর জন্য খুবই প্রয়োজনীয় যেরকম, ভিটামিন E, ভিটামিন A, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন C, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম ইত্যাদি।

তাই আমাদের মাথার চুল গজানোর উপায় সম্পর্কিত আলোচনায় পর্যাপ্ত পরিমাণ নিউট্রিশন বা পুষ্টি যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

 

মাথার চুল গজানোর উপায় দৈনিক ব্যায়ামের মাধ্যমে :

আমরা যদি দৈনিক ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করি তাহলে আমাদের শরীরে রক্ত সঞ্চালনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। তার ফলে আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন এবং নিউট্রেশন রক্তের মাধ্যমে পৌঁছাতে পারে। ঠিক ঐরকম ভাবেই আমাদের মাথার ত্বকের প্রতিটি ফলিকলে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন নিউট্রিশন রক্তের মাধ্যমে পৌঁছায় যার ফলে আমাদের নতুন চুল গজানোর বা উৎপন্ন হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

নিয়মিত ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করলে আমাদের শরীরের গঠন পরিবর্তন হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ বা অর্গান সঠিকভাবে কাজ করে এবং আমাদের শরীর বা স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

এখানে উল্লেখ করা উচিত দৈনিক ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ বলতে শুধুমাত্র জিমে যাওয়া বা ভারি লৌহ বস্তু দ্বারা প্রশিক্ষণ করা নয়। নিয়মিত ৩০ মিনিটের জন্য হাঁটাহাঁটি বা জগিং করা, সাঁতার, প্রাণায়াম এবং যোগাসন ইত্যাদিও হতে পারে।

 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : চুল পাকা বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে অবিশ্বাস্য ৮ টি তথ্য

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য : উপরে উল্লেখিত দ্রব্য গুলি ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একবার আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেবেন।

 

 


Share With Your Friends

Leave a Comment