আজকালকার দিনে আমাদের মধ্যে খুব সাধারণ একটি সমস্যা দেখা দেয়, সেটি হল খুবই অল্প বয়সে চুল পেকে যাওয়া এবং তার জন্য আমাদের নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কিছু মানুষের কটু কথা অল্প বয়সে চুল পেকে যাওয়া নিয়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এবং সৌন্দর্যে যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। তাই আমাদের চুল পাকা বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণ সচেতন থাকার প্রয়োজন।
আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় খুব সহজে এবং ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুল পাকা বন্ধ করার উপায় নিয়ে। তবে আমাদের বিশেষ কিছু দিকের উপর নজর দেওয়া খুবই প্রয়োজন যেরকম, মাথার চুল পেকে যাওয়ার কারণ কি, মাথার চুল পেকে যাওয়ার সঠিক বয়স কোনটি এবং চুল পাকা বন্ধ করার উপায় কি কি, ইত্যাদি।
আমাদের মাথার ত্বকে বা স্কাল্পের মধ্যে ফলিকল অবস্থান করে। আর এই ফলিকলের উপর ভিত্তি করে আমাদের চুল উৎপন্ন হয়। আমাদের চুলের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন এবং নিউট্রিশন এই ফলিকলের মাধ্যমে সরবরাহ হয়। ফলিকলের মধ্যে কিছু পরিমাণ পিগমেন্ট সেল বা কোষ থাকে। পিগমেন্ট সেল বা কোষ প্রতিনিয়ত একপ্রকার কেমিক্যাল বা অজৈব পদার্থ উৎপন্ন করে সেটিকে আমরা মেলানিন বলে থাকি। এই মেলানিন আমাদের চুলের রং বা কালার কে নির্ধারিত করে। মেলানিন এর উপর নির্ভর করে আমাদের চুলের রং কালো, সাদা, বাদামি এবং লাল হয়।
চুল পাকা বন্ধ করার উপায় কি ?
- আমরা প্রতি সপ্তাহে দুইদিন করে আমলকি আমাদের চুলে ব্যবহার করতে পারি। আমলকির মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন C এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা আমাদের চুল কে বিভিন্ন রকম সংক্রমণ বা ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা করে এবং আমাদের চুল পাকা বন্ধ করতে অনেক সাহায্য কর
ব্যবহার : ২ টো কাঁচা আমলকি কে ভালো করে পেশাই করে দুই চামচ নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারি সপ্তাহে দুই দিন। এছাড়াও বিভিন্ন আমলকি তেল বাজারে পাওয়া যায় আমারা সেটিও ব্যবহার করতে পারি। তারপর ৩০ মিনিট পর ভালো করে চুল জৈব শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- পেঁয়াজের রসের মধ্যে অ্যান্টিফাঙ্গাল অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং চুলের জন্য ভীষণভাবে প্রয়োজনীয় নিউট্রিশন আছে। আমরা যদি প্রতি সপ্তাহে একদিন পেঁয়াজের রস আমাদের চুলে ব্যবহার করতে পারি তাহলে আমাদের চুল পাকা বন্ধ হতে পারে এবং আমাদের চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
ব্যবহার : একটি পেঁয়াজকে ভালো করে পেশাই করে নির্যাতিত রস দুই থেকে তিন চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে সপ্তাহে একবার ব্যবহার করতে পারি। বাজারে বিভিন্ন প্রকার পেঁয়াজ যুক্ত তেল বা অনিয়ন অয়েল পাওয়া যায়, আমারা সেটিও ব্যবহার করতে পারি তবে ব্যবহারের ১৫ মিনিট পর ভালো করে জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
- নারকেল তেল আমাদের চুলের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। নিয়মিত নারকেল তেল ব্যবহার করলে আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্পে কোনরকম ফাঙ্গাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ বা ইনফেকশন হবার সম্ভাবনা কমে যায়। শুধু তাই নয়, নিয়মিত নারকেল তেল ব্যবহার করলে আমাদের চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং চুল পাকা বন্ধ হয়।
ব্যবহার : প্রতি সপ্তাহে তিন দিন মাথায় নারকেল তেল ব্যবহার করতে হবে এক ঘন্টার জন্য। তারপর জৈব শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে। চুল পাকা বন্ধ করার তেল সম্পর্কিত আলোচনায় নারকেল তেলের ভূমিকা অন্যতম যা খুব সহজে এবং স্বল্প মূল্যে বাজারে পাওয়া যায়।
- অ্যালোভেরার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে। যা আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্পের জন্য খুবই উপকারী। বিভিন্ন সংক্রমণ বা ইনফেকশনের হাত থেকে আমাদের ত্বককে রক্ষা করতে পারে তাই অ্যালোভেরার ব্যবহার আমাদের চুল পাকা বন্ধ করার অন্যতম উপায়।
ব্যবহার : অ্যালোভেরার পাতা থেকে অ্যালোভেরা জেল সংগ্রহ করে দুই চামচ নারকেল তেলের সাথে ভালো করে মিশিয়ে প্রতি সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করতে পারি ৩০ মিনিটের জন্য এবং তারপর জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে ভালো করে চুল ধুয়ে নিতে হবে এবং এইটি অল্প বয়সে চুল পাকা বন্ধ করার সহজ উপায় যা আমাদের কাছে খুবই সহজলভ্য এবং ব্যবহারে সুবিধাজনক।
- কারি পাতার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন B১২, বেটা ক্যারেটিন এবং অ্যান্টি মাইক্রোবাল উপাদান রয়েছে। যা আমাদের ফলিকল গুলির মধ্যে অবস্থিত পিগমেন্ট কে উৎপন্ন এবং নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং আমাদের চুলের গোড়া শক্ত করতে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে। তার ফলে আমাদের চুল পেকে যাওয়ার প্রবণতা কমে যায় এবং চুল পড়া বন্ধ হয়।
ব্যবহার : কিছু পরিমাণ কারিপাতা কে ভালো করে পেশাই করে দুই থেকে তিন চামচ নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে এক ঘন্টার জন্য আমাদের চুলে ব্যবহার করতে পারি তারপর জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে ভালো করে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি অল্প বয়সে চুল পাকা বন্ধ করার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপায়।
- পাতিলেবুর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন C এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা আমাদের চুলের গোড়াকে অনেক শক্ত করে এবং আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্পে বিভিন্ন সংক্রমণ বা ইনফেকশন হওয়ার প্রবণতাকে কম করে। শুধু তাই নয় আমাদের ফলিকলগুলির কার্য শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই পাতি লেবু দিয়ে পাকা চুল কালো করার উপায় খুবই সহজ এবং গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যবহার : একটি পাতিলেবু থেকে দুই থেকে তিন চামচ রস পাওয়া যায় এবং সেই রসকে দু চামচ নারকেল তেলের সাথে ভালো করে মিশিয়ে সরাসরি আমাদের মাথায় ব্যবহার করতে পারি। অন্ততপক্ষে ব্যবহারের দু’ঘণ্টা পর জৈব শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে আমাদের মাথা বা চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : বয়স ক্যালকুলেটর বা Age Calculator – Healthy Bangla.
- আলমন্ড এরমধ্যে প্রচুর পরিমাণ স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ভিটামিন E, ভিটামিন K, ফাইটোস্টেরল পাওয়া যায়। যা আমাদের চুলের জন্য ভীষণভাবে প্রয়োজনীয় তাই আমরা যদি নিয়মিত আলমন্ড তেল বা অয়েল ব্যবহার করি তাহলে আমাদের চুল পেকে যাওয়া বা চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। কারণ ভিটামিন E, ভিটামিন K আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্প এর মধ্যে থাকা ফলিকলগুলি কে সক্রিয় রাখতে খুব সাহায্য করে।
ব্যবহার : রাতের বেলা ঘুমোতে যাওয়ার পূর্বে আলমন্ড অয়েল বা তেল ভালো করে আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্প এবং চুলের গোড়ায় প্রয়োগ করে সকালে জৈব শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- ব্ল্যাক টি এবং গ্রিন টি আমরা আমাদের চুলে ব্যবহার করতে পারি। ব্ল্যাক টি এবং গ্রিন টি এরমধ্যে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি মাইক্রোবাল উপাদান রয়েছে যা আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্পকে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াল বা ফাঙ্গাল সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করে শুধু তাই নয় আমাদের চুলের গোড়াকে শক্ত করে এবং অল্প বয়সে চুল পেকে যাওয়াকে কম করে। তাই ব্ল্যাক টি এবং গ্রিন টির আমাদের চুল পাকা বন্ধ করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
ব্যবহার : জলকে ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে তার মধ্যে এক চামচ ব্ল্যাক টি অথবা গ্রিন টি মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর জলটি কে ঠান্ডা করে আমাদের চুল এবং মাথায় প্রয়োগ করতে হবে ৩০ মিনিটের জন্য। তারপর জৈব শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে মাথা টিকে ধুয়ে ফেলতে হবে।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : চুল লম্বা করার উপায় সম্পর্কে চমৎকার ১০ টি তথ্য।
খাদ্য অভ্যাসের জন্য অল্প বয়সে চুল পাকলে করণীয় কি?
চুল পাকা বন্ধ করার খাবার যেগুলি প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেল বা খনিজ পদার্থের চাহিদা পূরণ হয়। যার ফলে আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্পের প্রতিটি ফলিকলে যথার্থ পরিমাণ অক্সিজেন এবং নিউট্রিশন পৌঁছাতে পারে তাই আমাদের চুল পেকে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। শুধু তাই নয় নিয়মিত বিভিন্ন ফল, মাছ, মাংস, সয়াবিন, বিভিন্ন প্রকার ডাল গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে ভিটামিন, মিনারেলস, প্রোটিন এবং ফাইবারের চাহিদা পূরণ হয় ফলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম অনেক উন্নত হয়। আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্পে সংক্রমণ বা ইনফেকশন হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। আমাদের চুল পেকে যাওয়া এবং চুল পড়ে যাবার প্রবণতা ও অনেক কম হয়।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : খুশকি দূর করার উপায় সম্পর্কে ১১ টি বিস্ময়কর তথ্য।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : উপরে উল্লেখিত দ্রব্যগুলি ব্যবহারের পূর্বে আপনার ডক্টরের সাথে অবশ্যই একবার পরামর্শ করে নেবেন।
Thank you everyone for coming to our website www.healthybangla.in and a warm welcome to all of you.
Hi, my name is Arunima Morial and I am from Kolkata, India.
I have been writing health related articles for the last 3 years.
All the articles me and my team write are always reviewed by Sagar Ghosh (Science Graduate, Location- Shyamnagar, West Bengal) and Dr Gautam Ghosh (B.H.M.S, M.D in Homoeopathy, Location- Shyamnagar, West Bengal).
We always share the reference web page link from where we get correct information in the article.
Please feel free to contact me on my email ID sg133322@gmail.com