প্রতিদিন আমাদের ৫০ থেকে ১০০ টা চুল পড়ে যায় এবং সেই জায়গায় আবার নতুন চুল উৎপন্ন হয়। এইভাবে একটি চক্র বা সাইকেল ক্রমাগত চলতে থাকে। প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ টি চুল পড়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। তবে আমাদের চিন্তার বিষয় যখন বিভিন্ন কারণে আমাদের চুল পড়ে যাওয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং নতুন চুল উৎপন্ন হওয়ার প্রবণতাও কমে যায় তার ফলে আমাদের মাথায় চুলের ঘনত্ব অনেক কমে যায়। তাই আমাদের চুল ঘন করার উপায় সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকার খুবই প্রয়োজন।
আমাদের চুল আমাদের রূপ এবং সৌন্দর্যের প্রধান অংশ। তাই আমাদের নিয়মিত চুলের যত্ন নেওয়া খুবই প্রয়োজন। সাধারণত আমাদের মাথার ত্বকে বা স্কাল্পে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার পর্যন্ত চুল থাকে এবং প্রতি স্কয়ার ইঞ্চিতে ২০০০ থেকে ২২০০ টি চুল থাকে। কিন্তু ক্রমাগত যখন আমাদের চুল পড়তে থাকে তখন আমাদের চুলের ঘনত্ব অনেক কমে যায় যার ফলে আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্প পরিষ্কারভাবে দেখা যায় যা আমাদের সৌন্দর্যের উপর ভীষণভাবে প্রভাব ফেলে। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় চুল ঘন করার উপায় সম্পর্কে।
চুল ঘন করার উপায় কি ?
আমাদের চুলে সব সময় প্রাকৃতিক এবং জৈব উপাদান ব্যবহার করা উচিত, যার ফলে আমাদের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। আমরা ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে আমাদের চুলকে ঘন করতে পারি যেরকম,
চুলকে ঘন করার উপায় ডিম ব্যবহার করে :
- ডিমের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায় যা আমাদের চুলের জন্য ভীষণ প্রয়োজনীয়। নিয়মিত ডিমের ব্যবহার আমাদের চুলের গোড়াকে শক্ত করে এবং চুল পড়া বন্ধ করে সাথে আমাদের চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই প্রতি সপ্তায় দুই দিন আমাদের চুলে ডিম ব্যবহার করা উচিত।
ব্যবহার : প্রতি সপ্তাহে দুই দিন একটি ডিমের কিছুটা অংশকে সরাসরি আমাদের মাথায় ৩০ মিনিটের জন্য ব্যবহার করতে হবে। তারপর জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে ভালো করে মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে।
চুল ঘন করার উপায় পেঁয়াজ ব্যবহার করে :
- পেঁয়াজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে যা আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্প কে বিভিন্ন ইনফেকশন বা সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে এবং আমাদের চুলের গোড়া শক্ত করে এবং চুল ভেঙে যাওয়ার প্রবণতাকে দূর করে।
ব্যবহার : প্রতি সপ্তায় এক থেকে দুই দিন এক টুকরো পেঁয়াজকে ভালো করে পেশাই করে যে নির্যাতিত রস পাওয়া যায় তার সাথে এক থেকে দুই চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে ৩০ মিনিটের জন্য আমাদের চুলে ব্যবহার করতে পারি। তারপর জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে আমাদের চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
অ্যালোভেরা দিয়ে চুল ঘন করার উপায় :
- অ্যালোভেরা জেল এর মধ্যে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে। যা আমাদের চুলকে বিভিন্ন ইনফেকশন এবং সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করে। শুধু তাই নয় নিয়মিত অ্যালোভেরার ব্যবহার আমাদের চুলের রুক্ষ এবং শুষ্ক ভাবকে ঠিক করে। আমাদের চুল কে শক্ত করে এবং চুল ঘন করতে সাহায্য করে।
ব্যবহার : অ্যালোভেরা পাতা থেকে জেল সংগ্রহ করে দুই চামচ নারকেল তেলের সাথে ভালো করে মিশিয়ে ৩০ মিনিটের জন্য আমাদের চুলে ব্যবহার করতে পারি। তারপর জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে ভালো করে আমাদের চুলকে ধুয়ে নিতে হবে।
নারকেল তেল ব্যবহার করে চুলকে ঘন করার উপায় :
- নারকেল তেল আমাদের চুল এবং ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তার কারণ নারকেল তেলের মধ্যে কিছু অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে শুধু তাই নয় নারকেল তেল আমাদের চুল এবং ত্বকের শুষ্ক এবং রুক্ষ ভাবকে দূর করে। আমাদের চুলের গোড়া শক্ত করে যার ফলে আমাদের চুল পড়া বন্ধ হয়। শুধু তাই নয় নিয়মিত নারকেল তেল ব্যবহার করলে আমাদের চুল অনেক বেশি ঘন হয়।
ব্যবহার : প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার আমাদের চুলে ভালো করে নারকেল তেল ব্যবহার করতে হবে ২ ঘন্টার জন্য। তারপর জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে ভালো করে আমাদের চুলকে ধুয়ে নিতে হবে।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : চুল পাকা বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে অবিশ্বাস্য ৮ টি তথ্য।
মাথার চুল ঘন করার উপায় মেথি ব্যবহার করে :
- মেথির মধ্যে প্রচুর পরিমাণ আয়রন এবং প্রোটিন থাকে যা আমাদের চুলের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। এছাড়াও মেথির মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে যা আমাদের চুলকে বিভিন্ন রোগ এবং সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। তাই নিয়মিত মেথির ব্যবহার আমাদের চুল কে শক্ত এবং ঘন করতে সাহায্য করে।
ব্যবহার : এক কাপ জলের মধ্যে দুই চামচ মেথি অন্ততপক্ষে ১২ ঘন্টার জন্য ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর মেথি গুলিকে ভালো করে পেশাই করে দুই চামচ নারকেল তেলের সাথে সরাসরি আমাদের চুলে ব্যবহার করতে হবে, এক থেকে দুই ঘন্টার জন্য। তারপর জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে আমাদের চুলকে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
অলিভ অয়েল এবং ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারের মাধ্যমে পাতলা চুল ঘন করার উপায়:
- চুল ঘন করার তেলের নাম কি? অলিভ অয়েলের মধ্যে প্রচুর পরিমান ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। ক্যাস্টর অয়েলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন E এবং ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। তাই অলিভ অয়েল এবং ক্যাস্টর অয়েল আমাদের চুলের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ওই দুই অয়েল বা তেলের ব্যবহার আমাদের চুলের গোড়াকে শক্ত করে এবং চুল ঘন করতে সাহায্য করে। তাই অলিভ অয়েল এবং ক্যাস্টর অয়েল আমাদের মাথায় ব্যবহারযোগ্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুটি তেল।
ব্যবহার : প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন অলিভ অয়েল অথবা ক্যাস্টর অয়েল যেকোনো একটি আমাদের চুলে ১ ঘণ্টার জন্য ব্যবহার করতে হবে। তারপর জৈব শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
পাতি লেবু ব্যবহারের মাধ্যমে সামনের চুল ঘন করার উপায়:
- পাতি লেবুর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন C এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা আমাদের চুলের খুশকি দূর করতে ভীষণভাবে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় নিয়মিত পাতি লেবুর ব্যবহার আমাদের চুল পড়ার প্রবণতাকে কম করে এবং আমাদের চুল ঘন করতে সাহায্য করে।
ব্যবহার : প্রতি সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন দুই চামচ পাতি লেবুর রসের সাথে দুই চামচ নারকেল তেল ভালোমতো মিশিয়ে আমাদের চুলে ব্যবহার করতে হবে 30 মিনিটের জন্য। তারপর জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে আমাদের চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
অর্গানিক হেনা ব্যবহারের মাধ্যমে চুল ঘন করার উপায়:
- এখনকার দিনে বাজার বা মার্কেটে প্রচুর পরিমাণ জৈব হেনা বা অর্গানিক হেনা পাওয়া যায়। ওই হেনা প্রতি সপ্তাহে অন্তত একদিন আমাদের চুলে ব্যবহার করলে আমাদের চুলের গোড়া অনেক শক্ত হয়, চুল পড়া বন্ধ হয় এবং চুলের ঘন হতে থাকে। শুধু তাই নয় নিয়মিত হেনা ব্যবহার করলে আমাদের চুলে খুশকির পরিমাণ কমতে থাকে, আমাদের চুল অনেক শক্ত হয় এবং আমাদের চুল ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
ব্যবহার : প্রতি সপ্তাহে একদিন করে আমরা আমাদের চুলে অর্গানিক হেনা ব্যবহার করতে পারি। চার থেকে পাঁচ চামচ হেনা ১২ ঘন্টার জন্য অর্ধেক কাপ জলের সাথে মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ব্যবহারের পূর্বে হেনার সাথে ২ চামচ পাতি লেবুর রস, ২ চামচ নারকেল তেল, এবং দুই চামচ ডিমের সাদা অংশ ভালো করে মিশিয়ে সরাসরি আমাদের চুলে ব্যবহার করতে পারি দুই ঘন্টার জন্য। তারপর জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে আমাদের চুল ভালো করে ধরে নিতে হবে।
খাদ্যাভাসের মাধ্যমে আমাদের চুল ঘন করার উপায় :
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজন। বিশেষ করে ভিটামিন E, ভিটামিন A, ভিটামিন B৬, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন যুক্ত খাদ্য আমাদের প্রতিদিন গ্রহণ করা ভীষণভাবে প্রয়োজন আমাদের চুল কে ঘন করার জন্য। আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্প এ প্রচুর পরিমাণ ফলিকল থাকে যার উপর ভিত্তি করে আমাদের চুল উৎপন্ন হয় এবং আমাদের চুলে যথার্থ পরিমাণ অক্সিজেন এবং নিউট্রিশন পৌঁছাতে পারে তাই আমরা যদি প্রতিদিন যথার্থ পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করি তাহলে আমাদের ফলিকল গুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিউট্রিশন এবং অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে যার ফলে আমাদের চুলের গোড়া শক্ত হয়, নতুন চুল উৎপন্ন হয় এবং আমাদের চুল ঘন হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : চুল লম্বা করার উপায় সম্পর্কে চমৎকার ১০ টি তথ্য।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : উপরে উল্লেখিত দ্রব্য গুলি ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একবার আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেবেন।
Thank you everyone for coming to our website www.healthybangla.in and a warm welcome to all of you.
Hi, my name is Arunima Morial and I am from Kolkata, India.
I have been writing health related articles for the last 3 years.
All the articles me and my team write are always reviewed by Sagar Ghosh (Science Graduate, Location- Shyamnagar, West Bengal) and Dr Gautam Ghosh (B.H.M.S, M.D in Homoeopathy, Location- Shyamnagar, West Bengal).
We always share the reference web page link from where we get correct information in the article.
Please feel free to contact me on my email ID sg133322@gmail.com