পেঁয়াজ অ্যালিয়াম জাতীয় উদ্ভিদের অন্তর্গত। পেঁয়াজ খুবই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি সবজি। নিয়মিত পেঁয়াজ খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের হৃদয় সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়, রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং আমাদের ত্বক এবং চুলের জন্য খুবই উপকারী।
পেঁয়াজ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই উৎপাদিত হয়। তবে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় ভারত এবং চীনে। আমরা প্রতিদিন পেঁয়াজ বিভিন্ন তরকারির সাথে রান্না করে অথবা কাঁচা পেঁয়াজ স্যালাড জাতীয় খাদ্যের সাথে গ্রহণ করে থাকি। কিন্তু নিয়মিত পেঁয়াজ খাবার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের অবগত হওয়া খুবই প্রয়োজন।
পেঁয়াজ খাওয়ার উপকারিতা :
পেঁয়াজের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যালিয়াম সেপা। পেঁয়াজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান পাওয়া যায়, যা আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী। ১০০ গ্রাম পেঁয়াজের পুষ্টিগত গুনাগুন বা নিউট্রেশন ফ্যাক্ট,
- ক্যালোরি ৪০,
- প্রোটিন ১.১ গ্রাম,
- ফ্যাট ০.১ গ্রাম,
- ফাইবার ১.৭ গ্রাম,
এছাড়াও পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং মিনারেল বা খনিজ উপাদান,
- ভিটামিন সি ৭.৪ মিলিগ্রাম,
ভিটামিন এ, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং ভিটামিন কে,
- ক্যালসিয়াম ২৩ মিলিগ্রাম,
- আয়রন ০.২১ মিলিগ্রাম,
- পটাশিয়াম ১৪৬ মিলিগ্রাম,
- ম্যাগনেসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম,
- ফসফরাস ২৯ মিলিগ্রাম,
জিংক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ এবং সেলেনিয়াম ইত্যাদি।
হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে :
পেঁয়াজের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফ্লাভোনয়েড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান পাওয়া যায়। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান সাহায্য করে আমাদের ট্রাইগ্লিসারাইড এবং এল ডি এল ব্যাড কোলেস্টরেল এর পরিমাণ কে কম করতে। তাই নিয়মিত পেঁয়াজ খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হৃদয় সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
ব্লাড সুগার বা ডায়াবেটিস থাকে নিয়ন্ত্রণে :
পেঁয়াজের মধ্যে পাওয়া যায় ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। নিয়মিত পেঁয়াজ খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে যার ফলে ব্লাড সুগার অথবা ডায়বেটিস রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। তাই নিয়মিত পেঁয়াজ খাওয়ার উপকারিতা আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি :
পেঁয়াজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এবং অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান পাওয়া যায়। এছাড়াও পাওয়া যায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি, যা সাহায্য করে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে বৃদ্ধি করতে এবং বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের সাথে লড়তে। তাই নিয়মিত পেঁয়াজ খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক উন্নত হয়।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : কলমি শাকের উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে ৯ টি বিস্ময়কর তথ্য
হজম ক্ষমতার বৃদ্ধি :
পেঁয়াজ প্রিবায়োটিক এর উৎস। এই প্রিবায়োটিক সাহায্য করে আমাদের অন্ত্রে অবস্থিত গুড ব্যাকটেরিয়া গুলির পরিমাণ কে বৃদ্ধি করতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে। তাই নিয়মিত পেঁয়াজ খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের খাদ্য হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য বা কস্টিপেশন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
ত্বকের জন্য পেঁয়াজ :
পেঁয়াজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি পাওয়া যায়। নিয়মিত পেঁয়াজ খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে কোলাজেন সৃষ্টি হয় অথবা রক্ষণাবেক্ষণ হয়। এই কোলাজেন আমাদের শরীরের ত্বক এবং চুলের ফলিকল কে সৃষ্টি করতে সাহায্য করে। তাই উন্নত ত্বকের জন্য নিয়মিত পেঁয়াজ খাওয়া খুবই প্রয়োজন।
চুল পড়ার হ্রাস করে :
আমাদের চুল পড়া হ্রাস করা বা কমানো এবং চুল বৃদ্ধিতে পেঁয়াজ খুবই উপকারী। পেঁয়াজের মধ্যে রয়েছে সালফার যা চুল পড়া কম করতে সাহায্য করে। পেঁয়াজের মধ্যে থাকা সালফার চুল ভেঙ্গে পড়ার প্রবণতাকে কম করে এবং প্রাকৃতিকভাবে চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
শুধু তাই নয়, পেয়াজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান পাওয়া যায়। যা আমাদের মাথার ত্বক বা কাল্প কে বিভিন্ন ইনফেকশন বা সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করে যার ফলে আমাদের মাথায় অতিরিক্ত পরিমাণ খুশকি হওয়া বা ক্রমাগত চুল উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
এছাড়াও পেঁয়াজ ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। পিয়াজের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। যা আমাদের শরীরের ফ্রী রেডিকেল কে কম করতে সাহায্য করে যার ফলে আমাদের মধ্যে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। তাই নিয়মিত পেঁয়াজ খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। যদিও এ বিষয়ে আরো পরীক্ষা এবং তথ্যের প্রয়োজন আছে।
নিয়মিত পেঁয়াজ খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের মধ্যে অস্ট্রিওপরোসিস বা হাড় ক্ষয় কম হয়। যার ফলে আমাদের শরীরের হাড় এবং কাঠামো অনেক শক্ত এবং উন্নত হয়।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : কাঁচা হলুদের উপকারিতা সম্পর্কে ৮ টি আশ্চর্যজনক তথ্য
পেঁয়াজের অপকারিতা :
আমাদের মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টির অন্যতম কারণ হতে পারে অতিরিক্ত পরিমাণে পেঁয়াজ খাওয়া। কাঁচা পেঁয়াজে এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হল দীর্ঘ সময় ধরে মুখ ও শ্বাসকে দুর্গন্ধযুক্ত করে রাখা।
অতিরিক্ত পেঁয়াজ খেলে অনেক সময় এলার্জি সমস্যা দেখা দেয়। পেঁয়াজের জন্য যদি কারোর এলার্জি সমস্যা হয় তাহলে তাদের ত্বক ও চোখে নানান ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয় যেমন ত্বকে চুলকানি, শ্বাস গ্রহণে অসুবিধা ইত্যাদি। তাই এলার্জিযুক্ত ব্যক্তিদের পেঁয়াজ খাওয়া মোটেই উচিত নয়।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : পেঁয়াজ খাওয়ার পর যদি কোন রকমের কোন সমস্যার সম্মুখীন হন তাহলে অবশ্যই নিকটবর্তী ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Thank you everyone for coming to our website www.healthybangla.in and a warm welcome to all of you.
Hi, my name is Arunima Morial and I am from Kolkata, India.
I have been writing health related articles for the last 5 years.
All the articles me and my team write are always reviewed by Sagar Ghosh (Science Graduate, Location- Shyamnagar, West Bengal).
We always share the reference web page link from where we get correct information in the article.
Please feel free to contact me on my email ID sg133322@gmail.com