ভালো ঘুমের জন্য কি করা উচিত বিষয়ে জানা আছে তো?

Share With Your Friends

ভালো ঘুমের জন্য কি করা উচিত

আমরা সবাই জানি প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম আমাদের শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলিকে পুনরায় সুস্থ করে তুলতে সাহায্য করে এবং আমাদের মানসিক সুস্থতা বা মেন্টাল হেলথ কে উন্নত করে। তাই আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের খুবই প্রয়োজন। 

কিন্তু বিভিন্ন কারণের জন্য আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম হয় না যার ফলস্বরূপ আমাদের মধ্যে দেখা যায় শারীরিক এবং মানসিক অসুস্থতা। তাই আমাদের সকলেরই ভালো ঘুমের জন্য কি করা উচিত বিষয়টি নিয়ে একবারের জন্য হলেও ভাবা উচিত।

আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম নির্ভর করে শারীরিক অবস্থা, খাদ্যের অভ্যাস, আমাদের জীবনযাপন এবং মেলাটোনিন নামক একপ্রকার হরমোনের উপর। খুব কম পরিমাণ ঘুম বা খুব বেশি পরিমাণ ঘুম আমাদের জন্য ভালো নয়। একটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ অথবা মহিলার প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন আছে। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের জন্য সব থেকে বেশি প্রয়োজন সঠিক পরিবেশের তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় ভালো ঘুমের জন্য কি করা উচিত সম্পর্কে। 

 

ভালো ঘুমের জন্য কি করা উচিত ? 

ভালো ঘুমের জন্য সঠিক পরিবেশ : 

ভালো ঘুমের জন্য কি করা উচিত বিষয়ে আলোচনায় প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে ঘুমানোর জন্য সঠিক পরিবেশ তৈরি করা উচিত যেরকম, 

  • বিছানা অথবা শয্যা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। 
  • এয়ারকন্ডিশন অথবা পাখা ব্যবহার করে ঘরের তাপমাত্রাকে কমানো অথবা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। 
  • ঘরের মধ্যে যাতে কোন রকম কীটপতঙ্গ, যেমন মশা, আরশোলা ইত্যাদি না আসে তার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • ঘুমাতে যাবার পূর্বে ঘর কে অন্ধকার করতে হবে প্রতিটি লাইট অফ করে এবং দেখতে হবে যাতে কোন রকম লাইট বা আলো ঘরের মধ্যে না প্রবেশ করে। 
  • ঘরের মধ্যে খুব বেশি শব্দ যাতে না আসে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে তার কারণ খুব বেশি শব্দ আমাদের ঘুম না আসার অন্যতম কারণ। 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : অতিরিক্ত ঘুম কমানোর উপায় সম্পর্কে অবিশ্বাস্য ৯ টি তথ্য

 

ভালো ঘুমের জন্য অভ্যাস :  

  • প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় ঘুমাতে যাওয়া উচিত এবং নির্দিষ্ট সময় ঘুম থেকে ওঠা উচিত, এমন কি ছুটির দিন গুলি তে ও। তার কারণ আমরা যদি প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় ঘুমাতে যাই এবং ঘুম থেকে উঠি তাহলে আমাদের মস্তিষ্কে একটি বার্তা প্রেরণ হয় এবং আমাদের মধ্যে তৈরি হয় অভ্যাস। যার ফলে আমাদের প্রতিদিন ঠিক একই সময় ঘুম পাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। 
  • প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার ৩০ মিনিট পূর্বে স্নান করা উচিত। তার কারণ রাতে স্নান করলে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা অনেক কমে আসে যার ফলে আমাদের মধ্যে অলসতা বৃদ্ধি পায় এবং গভীর ঘুম হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।  
  • ভালো ঘুমানোর জন্য প্রত্যেকদিন ঘুমাতে যাবার ২ ঘন্টা পূর্বে পর্যাপ্ত পরিমাণ রাতের খাবার খেয়ে নেওয়া উচিত। তার কারণ যত তাড়াতাড়ি আমরা রাতের খাবার খেয়ে নেব তত তাড়াতাড়ি আমাদের খাবার হজম হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। কিন্তু রাতে দেরি করে রাতের খাবার খেলে আমাদের বদহজম এবং অ্যাসিডিটি হবার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় যা আমাদের ডাইজেস্টিভ সিস্টেম এর জন্য খুবই খারাপ। শুধু তাই নয় রাতের খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্রহণ করা উচিত তার কারণ খুব বেশি খাবার যেমন আমাদের অস্বস্তির কারণ সেই রকম খুব কম পরিমাণ খেলে আমাদের ঘুম আসতে চাইবে না। তাই ওই সব সমস্যা রাতের বেলা হলে আমাদের সঠিকভাবে ঘুম হয় না। 
  • ভালো ঘুমের জন্য কি করা উচিত বিষয় আলোচনায়, একটি বিষয়ে আলোকপাত করা খুবই প্রয়োজন, ক্যাফাইন জাতীয় দ্রব্য যেরকম কফি, চা এবং অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য রাতে ঘুমোতে যাবার পূর্বে গ্রহণ করা উচিত নয়। তার কারণ ক্যাফাইন জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করলে আমাদের মাথায় কিছু সংকেত যায়, যার ফলে আমাদের মনোযোগ অনেক বৃদ্ধি পায় এবং ঘুম আসার প্রবণতা কমে যায়। ঠিক একই ভাবে অ্যালকোহল আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কে কমিয়ে দেয় যার ফলে পরবর্তীকালে আমাদের ঘুম আসতে চায়না বা স্লিপ ডিসঅর্ডার দেখা দেয়।
  • আমাদের অনেকেরই দুপুরবেলা অথবা দিনের অন্যান্য সময় ঘুম অথবা তন্দ্রা আসে। আমরা যদি দিনের বেলায় ঘুমিয়ে পড়ি তাহলে রাতে খুব সহজে আমাদের ঘুম আসতে চায়না। তাই আমাদের চেষ্টা করা উচিত যতটা সম্ভব দিনের বেলা অথবা দুপুর বেলা না ঘুমানোর। রাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরই ঘুমাতে যাওয়া উচিত। 
  • ভালো ঘুমের জন্য কি করা উচিত সম্পর্কিত আলোচনায় একটি বিষয়ে আমাদের কথোপকথন খুবই প্রয়োজন যেরকম, রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে আমাদের মস্তিষ্ক কে শিথিল অথবা চিন্তামুক্ত করে রাখা উচিত। রাতে ঘুমাতে যাবার ৩০ মিনিট পূর্বে আমরা খুব আস্তে বা স্লো সাউন্ড ব্যবহার করে গান শুনতে পারি, আমাদের প্রিয় বই গুলিকে পড়তে পারি, অথবা ১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য মেডিটেশন বা ধ্যান করতে পারি। যার ফলে আমাদের মস্তিষ্ক অনেক চিন্তা মুক্ত হবে যা আমাদের ভালো ঘুমের জন্য আদর্শ একটি বিষয়। 
  • প্রতিদিন ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ আমাদের শরীরের জন্য যেমন উপকারী তেমন উপকারী আমাদের ঘুমের জন্য। আমরা যদি নিয়মিত এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম করি তাহলে আমাদের রাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর শরীর অনেক বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং আমাদের মধ্যে অলসতা দেখা দেয়। যার ফলে রাতে নির্দিষ্ট সময়ের পর আমাদের তন্দ্রা বা ঘুম আসার প্রবণতা অনেক বেশি বেড়ে যায়। 
  • ভালো ঘুমের জন্য কি করা উচিত বিষয়ে আলোচনায় একটি কথা বলে রাখা খুবই প্রয়োজন, রাতে ঘুমাতে যাবার পূর্বে খুব বেশি জল গ্রহণ করা উচিত নয় তার কারণ আমরা যদি খুব বেশি জল পান করে রাতে ঘুমাতে যাই তাহলে আমাদের শারীরিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পায় এবং বারংবার বাথরুমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে রেচন কার্যের জন্য। যার ফলস্বরূপ আমাদের ঘুম বারবার ভেঙে যায় এবং গভীর ঘুম হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়। 
  • আমাদের ঘুমের জন্য সবথেকে প্রয়োজনীয় একটি হরমোন যার নাম মেলাটোনিন। এছাড়াও ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম এবং সেলেনিয়াম খুবই প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান আমাদের ঘুমের জন্য। যার চাহিদা আমরা বিভিন্ন খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে পূরণ করে থাকি। এর থেকে আমরা পরিষ্কার বুঝতে পারছি ভালো ঘুমের জন্য কি করা উচিত সম্পর্কিত আলোচনায় খাদ্যের ভূমিকা সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করা উচিত যার ফলে আমাদের সঠিক পরিমাণ ঘুম হবে এবং আমাদের শারীরিক সুস্থতা বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ কিছু খাদ্য যেগুলির মধ্যে প্রোটিন, ভিটামিন এবং উপরে উল্লেখিত মিনারেল বা খনিজ পদার্থ গুলি পাওয়া যায় যেরকম, বিভিন্ন প্রকার বাদাম, বিভিন্ন প্রকার মাছ এবং শাক সবজি এবং বিভিন্ন প্রকার ফলমূল আমাদের দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্রহণ করা উচিত।

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : ঘুম বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত ৭ টি তথ্য

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য : উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলোই আপনার দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগের পূর্বে আপনার ডক্টরের সাথে অবশ্যই একবার পরামর্শ করে নেবেন। 

 


Share With Your Friends

Leave a Comment