প্রতিদিন ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত খাবার গ্রহণ করার উপকারিতা সম্পর্কে ৭ টি আশ্চর্যজনক তথ্য

Share With Your Friends

ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত খাবার

ম্যাগনেসিয়াম একটি খনিজ উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সাধারণত বিভিন্ন শাকসবজি, ডাল, বাদাম, ডার্ক চকলেট ইত্যাদি গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের শরীরে ম্যাগনেসিয়াম এর চাহিদা কে পূরণ করে থাকি। 

প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত খাবার গ্রহণ করলে আমাদের স্নায়ুতন্ত্র অনেক উন্নত হয়, আমাদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং হৃদয়ের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। তাই ম্যাগনেসিয়াম সাহায্য করে আমাদের শরীরকে সক্রিয় রাখতে। 

 

ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত খাবার : 

অনেক প্রকারের খাদ্যের মধ্যে ম্যাগনেসিয়ামের উপস্থিতি পাওয়া যায়। তবে আমাদের আলোচ্য বিষয় সব থেকে বেশি পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম যে খাদ্যগুলির মধ্যে পাওয়া যায় সেই খাদ্যগুলি সম্পর্কে। 

বিভিন্ন প্রকার বাদামের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। যেরকম, 

  • ১০০ গ্রাম আলমন্ড বাদামের মধ্যে ২৫৮ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। 
  • ১০০ গ্রাম কাজুর মধ্যে ২৫১ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। 
  • ১০০ গ্রাম চিনাবাদাম বা পিনাট এর মধ্যে ১৮০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। 
  • ১০০ গ্রাম আর কুমড়া বীজ বা পামকিন সিড এর মধ্যে ৫০০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। 

 

এছাড়াও বিভিন্ন ডালের মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায় যেরকম, 

  • ১০০ গ্রাম সয়াবিন দানার মধ্যে ২২৮ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। 
  • ১০০ গ্রাম গোটা মুগ ডালের মধ্যে ১৮৯ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। 
  • ১০০ গ্রাম ছোলার মধ্যে ৭৯ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। 

 

বিভিন্ন ফলের মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায় যেরকম : 

  • ১০০ গ্রাম খেজুরের মধ্যে ৫৪ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। 
  • ১০০ গ্রাম কলার মধ্যে ২৮ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। 
  • ১০০গ্রাম পাকা পেঁপের মধ্যে ২১ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। 
  • ১০০ গ্রাম পেয়ারার মধ্যে ২২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। 

 

এছাড়া অনেক শাকসবজির মধ্যে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায় যেরকম, 

  • ১০০ গ্রাম পালং শাকের মধ্যে ৭৯ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। 
  • ১০০ গ্রাম মিষ্টি আলুর মধ্যে ৭০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়।  
  • ১০০ গ্রাম কড়াইশুঁটির মধ্যে ৩৩ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়।

 

এছাড়াও দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্যের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। 

ডার্ক চকলেট এর মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। যদিও সেটি নির্ভর করে ভালো কোম্পানির ডার্ক চকলেটের উপর।

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : শীতকালে শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব কেন হয়?

 

দৈনিক ম্যাগনেসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা : 

প্রতিদিন আমাদের শরীরে কতটা ম্যাগনেসিয়ামের প্রয়োজন সেটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে আমাদের সঠিক বয়স, শরীরের ওজন এবং শারীরিক গঠনের উপর যদিও একটি সাধারণ তালিকা বর্ণনা করা হলো। 

  • সদ্যোজাত শিশুর থেকে ৬ মাস পর্যন্ত শিশুদের ৩০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম এর প্রয়োজন। 
  • ৭ মাস থেকে 12 মাস পর্যন্ত একটি শিশুর ৭৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম এর প্রয়োজন। 
  • ১ বছর থেকে ৩ বছর পর্যন্ত শিশুদের দৈনিক ৮০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়ামের প্রয়োজন। 
  • ৪ বছর থেকে ৮ বছরের শিশুদের দৈনিক ১৩০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম এর প্রয়োজন। 
  • ৯ থেকে ১৩ বছরের শিশুদের দৈনিক ২৪০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়ামের প্রয়োজন। 
  • ১৪ থেকে ১৮ বছরের যুবকদের জন্য ৪০০ মিলিগ্রাম এবং যুবতীর জন্য ৩১০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়ামের প্রয়োজন। 
  • ১৮ থেকে ৫০ বছরের পুরুষদের জন্য ৪০০ মিলিগ্রাম এবং মহিলাদের জন্য ৩১০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়ামের প্রয়োজন।
  • ৫০ বছরের উর্ধ্বে পুরুষদের জন্য ৪২০ মিলিগ্রাম এবং মহিলাদের জন্য ৩২০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়ামের প্রয়োজন। 

 

ম্যাগনেসিয়াম এর উপকারিতা : 

  • ম্যাগনেসিয়াম সাহায্য করে আমাদের রক্তের ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বা সেনসিটিভিটি কে বৃদ্ধি করতে। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত খাবার গ্রহণ করলে আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে যার ফলে আমাদের মধ্যে হাই ব্লাড সুগার অথবা টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 
  • ম্যাগনেসিয়াম সাহায্য করে আমাদের রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে যার ফলে আমাদের উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। শুধু তাই নয় ম্যাগনেসিয়াম সাহায্য করে আমাদের রক্তের ব্যাড (LDL) কোলেস্টেরলের মাত্রা কম করতে এবং গুড (HDL) কোলেস্টেরলের মাত্রা কে বৃদ্ধি করতে। ফলস্বরূপ আমাদের মধ্যে হৃদয় সম্পর্কিত রোগ এবং স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 
  • যাদের শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের অভাব দেখা দেয় তাদের মধ্যে খুব দ্রুত হারে হাড় ক্ষয় হয় এবং অস্ট্রিওপরোসিস রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করলে আমাদের শরীরের হাড় এবং শারীরিক গঠন অনেক উন্নত হয়। আমাদের শরীরে হাড়ের ঘনত্ব বা বোন ডেনসিটি অনেক বেশি উন্নত হয়। 
  • অনেক মানুষের রাতের বেলা সঠিকভাবে ঘুম আসে না, অথবা অনিদ্রার সমস্যা দেখা দেয়। ম্যাগনেসিয়াম সাহায্য করে আমাদের স্নায়ুতন্ত্র বা নার্ভ সিস্টেম এর যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করতে যার ফলস্বরূপ আমাদের গভীর ঘুম হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় এবং আমাদের মধ্যে অনিদ্রার সমস্যা কম হয়। 
  • যদি আমাদের শরীরে কর্টিসল নামক হরমোন বৃদ্ধি পায় তাহলে আমাদের মধ্যে অতিরিক্ত মানসিক চিন্তা বা স্ট্রেস বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু আমরা যদি প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত খাবার গ্রহণ করি তাহলে আমাদের শরীরে কর্টিসল হরমোন কমতে থাকে বা নিয়ন্ত্রণ থাকে যার ফলে আমাদের মধ্যে অতিরিক্ত মানসিক চিন্তা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। 
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করলে আমাদের স্নায়ুতন্ত্র বা নার্ভ সিস্টেমের কার্যকারিতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয় আমাদের মাথায় পর্যাপ্ত পরিমাণ রক্ত সঞ্চালনে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে ম্যাগনেসিয়াম। তাই অতিরিক্ত মাথা যন্ত্রণা বা মাইগ্রেন এর যন্ত্রণার জন্য ম্যাগনেসিয়াম বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : শীতকালের ৬ টি সুপারফুড যা নিয়মিত খাওয়া খুবই প্রয়োজন!

 

ম্যাগনেসিয়ামের অভাবজনিত লক্ষণ : 

সাধারণত আমরা যে খাদ্যগুলি দৈনিক গ্রহণ করি তার মধ্য থেকে আমাদের শরীরে ম্যাগনেসিয়াম এর চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। তবুও অনিয়মিত জীবনযাপনের জন্য অনেক সময় আমাদের মধ্যে ম্যাগনেসিয়াম এর অভাব দেখা দেয়। 

  • ম্যাগনেসিয়াম এর অভাবে আমাদের মাংসপেশিতে টান বা ক্রাম্প হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। 
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম না গ্রহণ করলে আমাদের অস্ট্রিওপরোসিস রোগ বা হাড় ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। যার ফলস্বরূপ আমাদের শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট এবং কোমরে ব্যথা বা যন্ত্রণা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
  • ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে আমাদের রক্তচাপ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে যার ফলে আমাদের হৃদয় সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয় আমাদের মধ্যে টাইপ টু ডায়াবেটিস বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
  • ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে আমাদের মধ্যে আস্থামা বা শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
  • ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে আমাদের স্নায়ুতন্ত্র বা নার্ভ সিস্টেম এর মধ্যে যোগাযোগ সম্পর্কিত সমস্যা বৃদ্ধি পায় যার ফলে আমাদের দুশ্চিন্তা বা স্ট্রেস বৃদ্ধি পায়। 

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য : উপরে উল্লেখিত খাদ্য গুলি গ্রহণ করার পূর্বে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সাথে একবার পরামর্শ করে নেবেন।

 

 


Share With Your Friends

Leave a Comment