সারাক্ষণ ঘুম ঘুম পাচ্ছে! শীতকালে অতিরিক্ত ঘুমের কারণ এবং ফলাফল জানা আছে তো?

Share With Your Friends

অতিরিক্ত ঘুমের কারণ এবং ফলাফল

আমরা সকলেই জানি দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম আমাদের শরীরের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। উন্নত স্বাস্থ্য এবং শারীরিক বিকাশের জন্য প্রতিটি মানুষের পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম ভীষণভাবে প্রয়োজন।

কিন্তু শীতকালে আমাদের ঘুম ঘুম ভাব বেশি পায় আর আলস্য বেশি অনুভব হয়। এর কারণ হলো এই সময় তাপমাত্রা অনেকটাই কমে যায়, বিছানা ছেড়ে উঠতে আমাদের ইচ্ছা হয় না ফলে এই সময় স্বাভাবিকের চেয়ে ঘুম বেশি পরিমাণে হয়।

 

শীতকালে অতিরিক্ত ঘুমের কারণ?

শীতকালে দিন ছোট এবং রাত অনেক বড় হয়। দিন ছোট হওয়ার জন্য সূর্যের আলো অনেক কম পাওয়া যায় এবং রাত অনেকটাই বড় হয়। ফলে আমাদের শরীর অনেকটা বেশি ঘুমোতে চায়। আমরা সকলেই জানি পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম নির্ভর করে আমাদের শরীরের মেলাটনিন হরমোনের উপর। এছাড়াও ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ঘুমের সময়েরও পরিবর্তন হয়।

কম পরিমাণে ঘুম আমাদের শরীরের জন্য যেমন ভালো নয় তেমনি খুব বেশি পরিমাণে ঘুমও আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের অভাব হলে বা সঠিকভাবে ঘুমোতে না পারলে পরের দিন ঘুম থেকে ওঠার পর আমাদের অনেক বেশি ক্লান্ত ও দুর্বল অনুভব হয় যা আমাদের অতিরিক্ত ঘুমের অন্যতম একটি কারণ।

শীতকালে অত্যাধিক ঠান্ডা থাকার জন্য অনেকেই প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বেরোয় না এর ফলে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যের আলো লাগেনা, যার ফলে অনেক সময় ভিটামিন ডি এর অভাব ঘটে।

এছাড়াও অনেকেরই অসুস্থতার জন্য বিভিন্ন প্রকারের ওষুধ গ্রহণ করতে হয়। এর ফলে ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার জন্য অনেকেরই রাতের বেলা গভীর এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম হয় না। এইজন্য পরের দিন অনেক বেশি ক্লান্ত লাগে এবং ঘুম আসার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। তাই এই সমস্ত শারীরিক অসুস্থতা অতিরিক্ত ঘুমের অন্যতম কারণ।

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : রাতে ঘুম না আসার কারণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

 

অতিরিক্ত ঘুমের ফলাফল কি হতে পারে?

আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য ঘুম ভীষণ প্রয়োজন। কিন্তু একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন।  পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হলে যেমন শরীর ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়, তেমনি প্রতিদিন অতিরিক্ত ঘুমালেও কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন,

 

ওজন বেড়ে যায় 

প্রতিদিন অতিরিক্ত ঘুমের ফলে আমাদের ওজন বৃদ্ধি পায়। তার কারণ অতিরিক্ত ঘুমালে আমাদের ক্যালোরি কম ক্ষয় হয়, যা পরবর্তীকালে আমাদের শরীরের ফ্যাটকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই বেশি ঘুমালে শরীরের ফ্যাট বা চর্বি বৃদ্ধি পায়, যার ফলে আমাদের ওজন বৃদ্ধি পায়।

 

মাথা যন্ত্রণা বা হেডেক হবার সম্ভাবনা বাড়ে

একজন সাধারণ মানুষের সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। তার বেশি ঘুমালে মাথা যন্ত্রণা বা হেডেক হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত পরিমাণে ঘুম মাথা যন্ত্রণা বা মাইগ্রেন সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।

 

হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে

প্রতিদিন যদি কোন মানুষ ৯ থেকে ১১ ঘণ্টার বেশি ঘুমায় তাহলে তাদের হৃদয় সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত ঘুমানোর ফলে হৃদরোগের আশঙ্কা বেড়ে যায়।

 

ব্যাক পেইন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে

যেহেতু শীতকাল তাই আমরা সকলেই সে সময় লেপ বা কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমাই আর এই ঘুমের সময় যদি সঠিক পরিবেশ বা সঠিক বিছানা না হয় তাহলে অতিরিক্ত ঘুমের ফলে অনেকেরই ব্যাক পেইন বা পিঠে ব্যথার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

এছাড়াও অতিরিক্ত ঘুমের ফলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় এবং অতিরিক্ত ঘুমের ফলে আলঝাইমার রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে যে সকল মানুষ ডিপ্রেশনে ভোগেন তারাই দৈনিক অতিরিক্ত ঘুমায়। অর্থাৎ অতিরিক্ত ঘুম ডিপ্রেশনের কারণ হতে পারে।

অতিরিক্ত ঘুম আমাদের ক্লান্ত করে দেয়, ফলে দিনের বেলায় কাজের ক্ষমতা অনেক কমে যায়। অতিরিক্ত পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়ার ফলে আমাদের পেশি ও স্নায়ু শক্ত হয়ে যায়।

তবে অতিরিক্ত ঘুমের ফলেই যে উপরিউক্ত রোগগুলি হবে বা হয় সেরকম নয়। অতিরিক্ত ঘুমের ফলে এই সমস্ত রোগের সম্ভাবনা অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : ভালো ঘুমের জন্য কি করা উচিত বিষয়ে জানা আছে তো?

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য: উপরে উল্লেখিত সমস্যাগুলির সম্মুখীন যদি আপনি হন তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।


Share With Your Friends