আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা সম্পর্কে ৮ টি সঠিক তথ্য

Share With Your Friends

আপেল সিডার ভিনেগার

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তার কারণ আপেল সিডার ভিনেগার এর মধ্যে পাওয়া যায় অনেক বেশি পরিমাণে অ্যান্টি-মাইক্রোবাল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান। 

আপেল সিডার ভিনেগার কি?

পরিস্কার আপেলের নির্যাস বা আপেলের ছোট ছোট টুকরো কে বিশুদ্ধ জলের ও চিনির সাথে কিছু সন্ধান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ রাখা হয়।

প্রথমে আপেলের ছোট ছোট টুকরো ইস্ট এর সাথে মেশানো হয় যা চিনি কে অ্যালকোহলে রূপান্তর করে এবং পরে কিছু ভালো ব্যাকটেরিয়া ঐ অ্যালকোহলকে অ্যাসিটিক অ্যাসিডে রূপান্তর করে এবং ঠিক এই ভাবে বিভিন্ন বড় এবং নামি কোম্পানিতে তৈরি হয় এই আপেল সিডার ভিনেগার বা এটি আপেল সিডার ভিনেগার তৈরির নিয়ম।

 

আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা :

আসুন আমরা জেনেনি ২০০ গ্রাম আপেল সিডার ভিনেগার এর উপাদান বা নিউট্রেশনাল ফ্যাক্ট :

  • ২২% ক্যালোরি
  • কার্বোহাইড্রেট ১.৮৬ গ্রাম (সুগার .৮০ গ্রাম)

কিছু মিনারেল ও আছে যেরকম,

  • ক্যালসিয়াম
  • আয়রন
  • ম্যাগনেসিয়াম
  • পটাসিয়াম
  • সোডিয়াম
  • জিংক

আর আছে ১৮৫ গ্রাম জল

  • আপেল সিডার ভিনেগার এর মধ্যে থাকে অ্যাসিটিক অ্যাসিড, যা আমাদের শরীরের চর্বি বা মেদকে কম করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় নিয়মিত আপেল সিডার ভিনেগার খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের দীর্ঘক্ষণ খিদে পাওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায় যার ফলে আমাদের খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ ও কম হয়ে যায়। আপেল সিডার ভিনেগার সাহায্য করে আমাদের শরীরের ওজন কম করতে অথবা শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে।
  • নিয়মিত আপেল সিডার ভিনেগার গ্রহণ করলে বা খেলে আমাদের শরীরে টাইপ-টু-ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। যখন আমাদের রক্তে সুগারের মাত্রা অনেক বেশি বেড়ে যায় তখন আমাদের মধ্যে টাইপ-টু-ডায়াবেটিস রোগ দেখা দেয়। আমাদের রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার মুখ্য কারণ আমাদের শরীরে ইনসুলিন এর সংবেদনশীলতা কমে যাওয়া অথবা নতুন ইনসুলিন উৎপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাওয়া। তাই আমাদের রক্তে সুগারের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপেল সিডার ভিনেগার খাবার উপকারিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • আমাদের রক্তে যদি ট্রাইগ্লিসারাইড এবং LDL ব্যাড কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তাহলে আমাদের মধ্যে দেখা দেয় হৃদয় সম্পর্কিত রোগ। আপেল সিডার ভিনেগার সাহায্য করে আমাদের রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড এবং LDL ব্যাড কোলেস্টেরল পরিমাণকে কম করতে অথবা নিয়ন্ত্রণে রাখতে। তাই নিয়মিত আপেল সিডার ভিনেগার খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের হৃদয় সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
  • আপেল সিডার ভিনেগার আমাদের ত্বকের PH ( পটেনশিয়াল অফ হাইড্রোজেন ) এর ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে আমাদের ত্বক অনেক বেশি রুক্ষ এবং শুষ্ক হয়ে যায় না। শুধু তাই নয় আপেল সিডার ভিনেগার এর মধ্যে অনেক বেশি অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান পাওয়া যায়। তাই আপেল সিডার ভিনেগার আমাদের ত্বকের উপরে ব্যবহার করলে আমাদের ত্বকে ব্যাকটেরিয়াল অথবা ফাঙ্গাল ইনফেকশন বা সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়। তাই আমাদের রূপচর্চার জন্য আপেল সিডার ভিনেগার এর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • আপেল সিডার ভিনিগার এর মধ্যে পাওয়া যায় প্রোটিন, এনজাইম এবং গুড ব্যাকটেরিয়া। আমরা জানি এনজাইম এবং গুড ব্যাকটেরিয়া সাহায্য করে আমাদের পাচনতন্ত্রকে বা ডাইজেস্টিভ সিস্টেম কে উন্নত করতে। তাই নিয়মিত আপেল সিডার ভিনেগার গ্রহণ করলে বা খেলে আমাদের মধ্যে গ্যাস, অম্বল বা অ্যাসিডিটি হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়।
  • চুলের খুশকি দূর করার জন্য আপেল সিডার ভিনেগার এর ভূমিকা অন্যতম। তার কারণ আপেল সিডার ভিনেগারের মধ্যে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং আন্টি-ফাংগাল উপাদান। তাই সামান্য পরিমাণ আপেল সিডার ভিনেগার আমাদের চুলে ব্যবহার করলে আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্প থেকে খুশকি দূর হয়। শুধু তাই নয় আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্পে কোন রকম ইনফেকশন বা সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
  • আপেল সিডার ভিনেগার ফল এবং সবজি সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয়। তাই অনেক সময় আপেল সিডার ভিনেগার সামান্য পরিমাণ জলে মিশিয়ে আমরা বিভিন্ন রকম সবজি এবং ফল কে ভালো করে ধুয়ে অথবা ওই জলে বেশ কিছুক্ষণ রেখে তারপর ব্যবহার করতে পারি অথবা ফ্রিজে রেখে দিতে পারি। তার ফলে ওই ফল এবং সবজির মধ্যে কোনরকম ব্যাকটেরিয়াল বা ফাঙ্গাল ইনফেকশন বা সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কারণ আপেল সিডার ভিনেগার এর মধ্যে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
  • যদি আমাদের শরীরে কোনরকম কৃমি বা পরজীবী বাস করে তাহলে দিন প্রতিদিন আমাদের শরীর দুর্বল এবং অসুস্থ হতে থাকে। আমরা কৃমি বা পরজীবী নাশ করার জন্য আপেল সিডার ভিনেগার খেতে পারি বা গ্রহণ করতে পারি। খালি পেটে আমরা যদি পরিমাণ অনুযায়ী আপেল সিডার ভিনেগার খাই বা গ্রহন করি তাহলে এই ভিনেগারের অ্যাসিটিক উপাদান আমাদের শরীরে উপস্থিত কৃমি বা পরজীবীকে নাশ করতে সাহায্য করে। যদিও এই বিষয় আরো অনেক পরীক্ষা এবং তথ্যের প্রয়োজন।

 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : দই খাওয়ার উপকারিতা বিষয়ে ৭ টি অজানা তথ্য

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম বা ব্যাবহার বা কখন খেতে হয় ?

  • আমরা সাধারন ভাবে সরাসরি এই ভিনেগার খেতে পারি জলের সাথে মিশিয়ে যেরকম ১ গ্লাস জলে ১ চামচ করে খালি পেটে।
  • অ্যাপেল সিডার ভিনেগার অল্প পরিমানে তুলোতে মিশিয়ে সরাসরি আমাদের ত্বকের উপর প্রয়োগ করতে পারি।
  • দুই থেকে তিন চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার আমাদের চুলে ব্যবহার করতে পারি সামান্য পরিমাণ জলের সাথে মিশিয়ে। 

 

আপেল সিডার ভিনেগার কতদিন খাওয়া যায়?

সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৩ দিন বা তার কম।অনেকে বাজার থেকে সবজি বা ফল নিয়ে এসে আপেল সিডার ভিনেগারের জলে ভালো করে ধুয়ে তার পর সেটিকে ব্যাবহার করে তার কারণ আগেই বলেছি এই ভিনেগারের মধ্যে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে যা ঐ সবজি বা ফল কে বিশুদ্ধ করে। আমরা ২ চামচ ভিনেগার ব্যাবহার করতে পারি এক লিটার জলে।

 

আপেল সিডার ভিনেগার এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা?

খুব বেশি পরিমাণে অ্যাসিটিক অ্যাসিড আমাদের শরীরের জন্য ভালো না তাই আপেল সিডার ভিনেগার খুব বেশি পরিমানে গ্রহন করলে শরীরে অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায় ফলে আমাদের হজমে এবং আমাদের দাঁতে সমস্যা হতে পারে।

বেশি পরিমাণে আপেল সিডার ভিনেগার গ্রহন করলে আমাদের শরীরে পটাশিয়াম এর পরিমাণ কমতে থাকে এবং এমনকি পরবর্তীকালে আমাদের কিডনিতে ও সমস্যা হতে পারে।

 

আপেল সিডার ভিনেগার কি ভাবে রাখব?

আমরা এই ভিনেগার এমন জায়গায় রাখব যেখানে সরাসরি সূর্যের প্রখর রোদ বা আলো না আসে এবং যেখানে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে ওই ৩০° সেন্টিগ্রেট এর আশেপাশে থাকে অথবা ফ্রিজ এ।

 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : ক্যাপসিকামের উপকারিতা সম্পর্কে অবিশ্বাস্য ৯ টি তথ্য

বিশেষ দ্রষ্টব্য: সবসময় ডক্টরের সাথে আলোচনা করে তার পর আমাদের আপেল সিডার ভিনেগার গ্রহন করা উচিত।

 

 


Share With Your Friends