ভিটামিন ই জাতীয় খাবার সম্পর্কে ৯ টি বিস্ময়কর তথ্য

Share With Your Friends

ভিটামিন ই জাতীয় খাবার

ভিটামিন ই এর অনেকগুলি রূপ আছে, যার মধ্যে আলফা টোকোফেরোল আমাদের শরীরে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রূপে কাজ করে। ভিটামিন ই তেলে দ্রাব্য বা ফ্যাট সলিউবল এবং ভিটামিন ই জাতীয় খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের শরীরে পৌঁছায়।

এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষ কে রক্ষা করে ফ্রি রেডিকেল এর থেকে। আমাদের শরীরে ওই ফ্রি রেডিকেল বা অবিভক্ত ইলেকট্রন বাড়তে থাকলে আমাদের মধ্যে কঠিন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যেরকম, হৃদয় সংক্রান্ত রোগ, ক্যান্সার, দৃষ্টি শক্তিতে সমস্যা ইত্যাদি।

প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ই জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম অনেক বেশি উন্নত হয় আমাদের চুল, ত্বক এবং চোখ সুস্থ থাকে। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় ভিটামিন ই জাতীয় খাবার গ্রহণ করা সম্পর্কে।

 

ভিটামিন ই জাতীয় খাবার কি কি?

যে খাদ্য গুলি ভিটামিন ই এর উৎস, তাদের আমরা খাদ্য গুলির গুণগত মান এবং বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি।

ভিটামিন ই যুক্ত ফল :

১০০ গ্রাম অ্যাভোকাডোর মধ্যে২.০৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই থাকে
১০০ গ্রাম আমের মধ্যে০.৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই থাকে
১০০ গ্রাম স্ট্রবেরি অথবা রাস্প বেরি এর মধ্যে০.৮৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই থাকে
১০০ গ্রাম পাকা পেঁপের মধ্যে০.৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই থাকে

 

ভিটামিন ই সমৃদ্ধ শাক এবং সবজি :

১০০ গ্রাম পালং শাকের মধ্যে২.০৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই থাকে
১০০ গ্রাম ক্যাপসিকাম এর মধ্যে১.৫৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই থাকে
১০০ গ্রাম কুমড়োর মধ্যে০.৬২ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই থাকে
১০০ গ্রাম টমেটোর মধ্যে০.৩২ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই থাকে
১০০ গ্রাম ব্রকলির মধ্যে০.১৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই থাকে

 

ভিটামিন ই জাতীয় অন্যান্য খাদ্য :

  • ১০০ গ্রাম সূর্যমুখী বীজের মধ্যে ২৬.১ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই থাকে।
  • ১০০ গ্রাম আলমন্ডের মধ্যে ২৩.৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই থাকে।
  • ১০০ গ্রাম চিনা বাদামের মধ্যে ৪.৯৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই থাকে।

 

এছাড়াও আমাদের খাবারের জন্য ব‍্যবহৃত বিভিন্ন তেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ই পাওয়া যায় যেরকম,

  • সানফ্লাওয়ার অয়েল বা সূর্যমুখী বীজের তেল।
  • উইট জার্ম অয়েল বা গম থেকে প্রস্তুত তেল।
  • রাইস ব্রান অয়েল বা ধান থেকে প্রস্তুত তেল।
  • কোকোনাট অয়েল বা নারকেল থেকে প্রস্তুত তেল।

এছাড়াও বিভিন্ন মাছের মধ্যে ভিটামিন ই পাওয়া যায় যা আমাদের শরীরে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এর কার্যকারীতা কে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার সম্পর্কে আশ্চর্যজনক ৮ টি তথ্য

 

ভিটামিন ই এর উপকারিতা কি ?

  • ভিটামিন ই এর উপকারিতা আমাদের ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ই আমাদের শরীরে খুবই শক্তিশালী একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রূপে কাজ করে যা আমাদের ত্বক কে বিভিন্ন ভাইরাল এবং ব্যাকটেরিয়াল সংক্রামন বা ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা করে যেরকম একজিমা এবং অন্যান্য স্কিন ইনফেকশন জাতীয় রোগ। 
  • যদি আমাদের শরীরে রক্তচাপ এবং এল-ডি-এল কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যায় তাহলে আমাদের হৃদয় সংক্রান্ত রোগ হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। আমরা যদি নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ই গ্রহণ করি তাহলে আমাদের রক্তচাপ এবং রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ থাকে যার ফলে আমাদের হৃদয় সংক্রান্ত রোগ হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। 
  • বিভিন্ন কারণের জন্য আমাদের লিভার বা যকৃতে ফ‍্যাট জমতে থাকলে পরবর্তীকালে আমাদের ফ্যাটি লিভার অথবা ননঅ্যালকোহলিক ফ্যাটিলিভার হবার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। আমরা যদি নিয়মিত ভিটামিন ই জাতীয় খাবার গ্রহণ করি তাহলে আমাদের রক্তে লিপিড এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে যার ফলে ফ্যাটি লিভার হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। 
  • অ্যালজাইমার রোগের কারণে আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা অনেক কমে যায়। আমাদের মধ্যে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় এবং খুব সহজ কাজগুলি ও আমরা করে উঠতে পারি না। নিয়মিত ভিটামিন ই গ্রহণ করলে আমাদের অ্যালজাইমার রোগ হবার প্রবণতা কমে যায়। 
  • যদি আমাদের শরীরে ফ্রি র‍্যাডিকেল বেড়ে যায় তাহলে আমাদের মধ্যে নানান ধরনের কঠিন রোগ দেখা দেয় যেরকম ক্যান্সার। আমরা যদি নিয়মিত ভিটামিন ই যুক্ত খাবার গ্রহণ করি তাহলে আমাদের শরীরে ফ্রি র‍্যাডিকেল বাড়তে পারে না এবং ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। যদিও ভিটামিন ই এবং সিলেনিয়াম প্রোস্টেট ক্যান্সার এর জন্য কতটা কার্যকরী এই নিয়ে অনেক গবেষণা চলছে। 
  • ভিটামিন ই আমাদের শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রূপে কাজ করে তাই নিয়মিত ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে ভিটামিন ই আমাদের ফুসফুস এর জন্য খুবই ভালো। নিয়মিত ভিটামিন-ই গ্রহণ আমাদের ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং অ্যাস্থমা বা শ্বাসকষ্ট হওয়ার প্রবণতাকে কম করে। 
  • মানুষের বার্ধক্যের জন্য নানা সমস্যা সম্মুখীন হতে হয় তাই সাধারণত বলা হয় বয়স বাড়লে আমাদের শারীরিক কার্যকারিতা কমতে থাকে। তবে সব থেকে বেশি প্রভাব পড়ে আমাদের দৃষ্টিশক্তিতে। নিয়মিত ভিটামিন ই গ্রহণ করলে আমাদের দৃষ্টিশক্তি অনেক উন্নত হয়।

  

ভিটামিন ই এর অভাবে কি হয় ?

ভিটামিন ই আমাদের শরীরে খুব শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রূপে কাজ করে যা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন রোগ অথবা শারীরিক সমস্যার থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ না করলে আমাদের মধ্যে নানান ধরনের সমস্যা দেখা দেয় যেরকম,

  • ভিটামিন ই এর অভাবে আমাদের দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হতে পারে। তার কারণ ভিটামিন ই সাহায্য করে আমাদের চোখের ভেতর অবস্থিত রেটিনার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে। 
  • আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে উন্নত করতে ভিটামিন ই এর ভূমিকা অনেক বেশি। ভিটামিন ই আমাদের শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রূপে কাজ করে। তাই ভিটামিন ই এর অভাবে আমাদের শরীরে অক্সিডেটিভ ট্রেস বাড়তে থাকে যার ফলে আমাদের কার্যক্ষমতা অনেক কমে যায় এবং মাংসপেশী দুর্বল হয়ে পড়ে। 
  • যেহেতু ভিটামিন ই এর সাথে আমাদের স্নায়ুতন্ত্র এর সরাসরি সম্পর্ক আছে। তাই ভিটামিন ই এর অভাবে আমাদের শারীরিক ভারসাম্য হারানোর সম্ভাবনা থাকে। আমাদের স্মৃতিশক্তি অনেক দুর্বল হয়ে যায় এবং খুব সহজ কাজগুলিও আমাদের কাছে খুব কঠিন হয়ে পড়ে। 
  • ভিটামিন ই সহায়তা করে বিভিন্ন ইনফেকশন বা সংক্রমণের হাত থেকে আমাদেরকে রক্ষা করতে তাই ভিটামিন ই এর অভাবে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে এবং আমাদের মধ্যে বিভিন্ন রকম রোগ বা শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : ভিটামিন এ জাতীয় খাবার সম্পর্কে অবাক করা ১০ টি তথ্য

 

ভিটামিন ই কতটা খাওয়া উচিত?

  • প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১৪ বছরের উপরের কিশোর এবং কিশোরীদের জন্য ১৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই প্রতিদিন গ্রহণ করা উচিত।
  • ১ থেকে ৩ বছরের শিশুদের ৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন-ই প্রতিদিন গ্রহণ করা উচিত।
  • ৪ থেকে ৮ বছরের শিশুদের ৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন-ই প্রতিদিন গ্রহণ করা উচিত।
  • ৯ থেকে ১৩ বছরের শিশুদের ১১ মিলিগ্রাম ভিটামিন-ই প্রতিদিন গ্রহণ করা উচিত।

 

ভিটামিন ই বেশি খেলে কি হয় ?

 অল্প পরিমাণ ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিন গ্রহণ করলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবার প্রবণতা খুবই কম। তবে ভিটামিন ই তেলে দ্রাব্য বা ফ্যাট সলিউবল তাই খুব বেশি অথবা ১০০০ মিলিগ্রামের বেশি পরিমাণ ভিটামিন ই গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে যেরকম,

  • বমি ভাব, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া
  • মাথা যন্ত্রণা এবং মাথা ঘুরানো
  • ত্বকের উপর চুলকানো ভাব, ফুসকুড়ি ইত্যাদি।

 

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য : উপরে উল্লেখিত খাদ্যগুলি গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই একবার আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেবেন।

 


Share With Your Friends