খাদ্য তালিকায় দৈনিক রাখুন মাখনা আর দেখুন চমৎকার! মাখনা খাওয়ার উপকারিতা

Share With Your Friends

মাখনা খাওয়ার উপকারিতা

মাখনার মধ্যে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান এবং উচ্চমানের প্রোটিন। তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ মাখনা খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের হৃদয় সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়, আমাদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং শরীরের হাড় বা শারীরিক গঠন অনেক উন্নত হয়। 

জল পদ্ম এর বীজ থেকে প্রস্তুত হয় এই মাখনা। সারা পৃথিবীর প্রায় ৯০ শতাংশ মাখনা প্রস্তুত হয় ভারতবর্ষের বিহার রাজ্যে। মাখনা খাওয়ার উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ তাই মাখনা খাওয়ার চাহিদা বিশ্ববাজারে ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। 

 

মাখনা খাওয়ার উপকারিতা :

মাখনার পুষ্টিগত গুনাগুন অনেক বেশি তাই মাখনা কে সুপার ফুড ও বলা হয়ে থাকে। অনেকে তো আবার মাখনা কে আলমন্ড এবং কাজুবাদাম এর সাথে তুলনা করেন। ১০০ গ্রাম মাখনার পুষ্টিগত গুনাগুন বা নিউট্রিশন ভ্যালু

  • ক্যালোরি ৩৩২ 
  • প্রোটিন ১৫.৪ গ্রাম
  • ফ্যাট ১.৯৭ গ্রাম 
  • কার্বোহাইড্রেট ৬৪.৫ গ্রাম 

এছাড়াও পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং মিনারেল বা খনিজ উপাদান যেরকম, 

ভিটামিন এ, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি। 

 

রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ : 

মাখনার মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান এবং ফাইবার বা শর্করা পাওয়া যায়। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফাইবার বা শর্করা সাহায্য করে আমাদের শরীরে ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বা সেনসিটিভিটি কে উন্নত করতে যার ফলস্বরূপ আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং আমাদের মধ্যে হাই ব্লাড সুগার অথবা টাইপ টু ডায়াবেটিস বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 

 

হৃদয় সম্পর্কিত রোগ কম করে : 

নিয়মিত মাখনা গ্রহণ করা বা খাওয়া আমাদের হৃদয়ের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মাখনার মধ্যে পাওয়া যায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান যা আমাদের শরীরে ব্যাড (LDL) কোলেস্টেরল এর মাত্রা কে কম করতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। যার ফলস্বরূপ আমাদের মধ্যে হৃদয় সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 

 

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে : 

মাখনার মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণ প্রোটিন এবং ফাইবার পাওয়া যায়। এই প্রোটিন এবং ফাইবার যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করলে আমাদের দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরা অনুভব হয়। অর্থাৎ আমাদের মধ্যে অতিরিক্ত পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। যার ফলস্বরূপ আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই আমাদের শরীরের ওজন কে কম করতে মাখনা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি খাদ্য। 

 

বার্ধক্যের সমস্যা দূর করে : 

নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ মাখনা খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের বার্ধক্য নিয়ন্ত্রণের রাখা যায়। মাখনার মধ্যে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন যার মধ্যে গ্লুটামিন অন্যতম। এই গ্লুটামিন নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড টি সাহায্য করে আমাদের শরীরের ত্বক, চুল এবং নখ কে সঠিকভাবে গঠন করতে। অর্থাৎ মাখনার মধ্যে অ্যান্টি-এজিং উপাদান পাওয়া যায়, যা আমাদের বার্ধক্যকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। ]

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : কুমড়া খাওয়ার পর বীজ ফেলে দেন ? জেনে রাখুন কুমড়া বীজের উপকারিতা সম্পর্কে

 

শরীরের হাড়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ : 

১০০ গ্রাম মাখনার মধ্যে ৬০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ মাখনা খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। ফলস্বরূপ আমাদের শরীরের হাড় এবং শারীরিক কাঠামো অনেক উন্নত হয়। এছাড়াও মাখনার মধ্যে পাওয়া যায় অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে যেরকম হাঁটু, কোমর এবং জয়েন্টে ব্যাথা বা যন্ত্রণা কে কম করতে সাহায্য করে। 

 

হজম ক্ষমতা উন্নত করে : 

মাখনার মধ্যে পাওয়া যায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইবার বা শর্করা এবং গ্লুটামিন নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা সাহায্য করে আমাদের হজম ক্ষমতা বা ডাইজেস্টিভ সিস্টেম কে উন্নত করতে। এই ফাইবার বা শর্করা আমাদের অন্ত্রের গুড ব্যাকটেরিয়ার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। তাই নিয়মিত মাখনা খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য বা কনস্টিপেশনের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 

 

ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কে কম করে : 

মাখনার মধ্যে পাওয়া যায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান গ্যালিক অ্যাসিড, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড এবং এপিকেটেছিন। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান গুলি সাহায্য করে আমাদের ফ্রি-রেডিক্যাল কে প্রতিরোধ করতে যার ফলে আমাদের মধ্যে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। ফলস্বরূপ আমাদের মধ্যে কঠিন রোগ ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক কমে যায়। যদিও এ বিষয়ে আরো অনেক তথ্যের প্রয়োজন আছে। 

এছাড়াও মাখনার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান পাওয়া যায় তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ মাখনা খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের যকৃত এবং কিডনি পরিশুদ্ধ বা ডিটক্সিফিকেশন হয়। 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : প্রতিদিন ২ টি করে লবঙ্গ খেলে কমবে ৭ টি রোগ। লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা

 

মাখনা খাওয়ার অপকারিতা : 

আমরা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ মাখনা খাই বা গ্রহণ করি তাহলে আমাদের মাখনা খাবার কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখতে পাবো না, তবে অতিরিক্ত কোন কিছুই আমাদের জন্য ভালো নয়। 

  • মাখনার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান পাওয়া যায়। তাই মাখনা অনেক মানুষের এলার্জির কারণ হতে পারে। 
  • অতিরিক্ত পরিমাণ মাখনা খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের হজম ক্ষমতায় সমস্যা দেখা দিতে পারে, বমি ভাব, এমনকি ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
  • গর্ভবতী মায়েদের এবং ছোট বাচ্চাদের অতিরিক্ত মাত্রায় মাখনা খাওয়া একদমই উচিত নয়। 

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য : যদি আপনার পূর্বে থেকে হাই ব্লাড সুগার অথবা হাই ব্লাড প্রেসার থাকে তাহলে মাখনা খাবার পূর্বে অবশ্যই একবার আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেবেন।

 


Share With Your Friends

Leave a Comment